ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক: ইউনূসের ইসলামাবাদপন্থী নীতিতে উদ্বেগ
মেট্রোরেলের ২৭৪ কোটি টাকার কাজ ৪৬৫ কোটি টাকায় পেল ভারতীয় কোম্পানি: সমালোচনার ঝড়
বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা: ১০০ মিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র মোতায়েন পরিকল্পনা আরকান আর্মির
বিপর্যয়ের পথে অর্থনীতি: মূল্যস্ফীতির আগুনে পুড়ছে জনজীবন, নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা চরমে
রাজধানীতে বনলতা এক্সপ্রেস থেকে বিপুল অস্ত্র-গুলি উদ্ধার
ছাত্রদল সভাপতি পাভেলের নেতৃত্বে পদ্মা রেল প্রকল্পের শত কোটি টাকার লোহা লুটপাট
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের লোহা ও বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়মিতভাবে লুটপাট ও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যেই। দাঙ্গার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে এ পর্যন্ত এক-দেড়শ কোটি টাকার লোহা অবৈধভাবে লোপাট করা হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।
জানা যায়, ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল মোল্লার নেতৃত্বে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য এবং চায়না প্রকল্পের নিরাপত্তাকর্মীদের যোগসাজশে এই চুরির কাজ চলছে। কেরানীগঞ্জে অবস্থিত প্রকল্পের সাইট অফিস থেকেই এসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
চক্রের মাঠ পর্যায়ের অংশের মূল নেতৃত্বে রয়েছেন কাজীরগাঁও গ্রামের লিটন ও সজীব। তাদের সহায়তায় ফরিদ দেওয়ান, ফয়সাল, রিয়াদ, রানা,
আশিক, ব্রাহ্মণগাঁওয়ের সজীব ও জুয়েলসহ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরা এ কাজে যুক্ত। আর লুটপাটের অপারেশন সুচারুভাবে পরিচালনা, ব্যাঘাত ঘটানো ছাড়া নিরাপদে বিক্রি ও নগদ অর্থ সংগ্রহের অংশটি পরিচালনা করছেন ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল মোল্লা। পাভেলের নেতৃত্বে থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব জুয়েল, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক অয়ন ইসলাম রনি, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাকির দেওয়ান, থানা শ্রমিক দলের নেতা সোবাহান, ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সেলিম এবং থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি উজ্জ্বল মোল্লাসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা এই অপারেশনের অর্থের ভাগ পাচ্ছেন। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেললাইন স্থাপনের এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার ও চীনের মধ্যে জিটুজি (সরকার-থেকে-সরকার) চুক্তির আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়
চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। ঠিকাদারি দায়িত্বে রয়েছে চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)। প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ সম্পন্ন হলে রেললাইনটি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত পৌঁছাবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা—এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি এবং অবশিষ্ট ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। ৬ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালে। কিন্তু গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপিসহ সরকারবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীর সহিংসতা, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ৫ই আগস্ট সরকারের পতন ঘটানোর
পর থেকে রেললাইন সংযোগের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। কাজ স্থগিত থাকার কারণে প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা লোহা ও সরঞ্জাম নিয়মিত চুরি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিল, তারাই এখন এই লুটপাটের মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্যপূরণ করছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাজীরগাঁও এলাকায় অবস্থিত সিআরইসির অফিসটি বিশাল এলাকায় স্থাপিত এবং চারপাশে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী রয়েছে। কিন্তু বেষ্টনীর মধ্য থেকেও কীভাবে শত শত কোটি টাকার লোহা চুরি হচ্ছে? এলাকাবাসী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে রাতের অন্ধকারে শুরু হয় প্রকল্পের লোহালক্কড় চুরি। প্রতিদিন ৪-৫টি ট্রাকে এসব লোহা তুলে নিয়ে যাওয়া এবং বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি ট্রাকে ১৫-২০ টন পর্যন্ত লোহা পরিবহন করা হয়। ৩০-৪০ জন শ্রমিক প্রতিদিন গ্যাসকাটারে কেটে লোহার টুকরো ছোট করে রাখছে। কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীরগাঁও এলাকায় লিটন ও সজীবের বাড়ির সামনে এসব লোহা জমা করা হয়। পরে স্থানীয় থানা-পুলিশের নীরব সমর্থনে ট্রাকগুলো সেখান লোহা বোঝাই করে নিয়ে যায় পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের চৌধুরী মার্কেটে অবস্থিত এনএস ট্রেডার্সে, যা নয়ন শেখ ও তার বাবা স্বপন শেখের মালিকানাধীন। দোকানের সামনের অংশসহ আশপাশের এলাকায় প্রকল্পের লোহা আনলোড করা হয়। দোকানের কর্মচারীরা এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে লোহা বিক্রেতার ছদ্মবেশে নয়ন শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে লোহার নমুনা দেখতে চান। প্রকল্পের লোহার
ছবি পাঠালে নয়ন শেখ জানান, তিনি রেলওয়ের লোহা প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কেনেন। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটা ধারণা নেওয়া হয়। প্রতি ট্রাকে যদি কমপক্ষে ১০-১৫ টন লোহা আনা হয়, তার মুল্য হবে অন্তত ৭-৮ লাখ টাকা। দিনে ৩ ট্রাক লোহা বিক্রি হলে মাসে ৬-৭ কোটি টাকার লোহা পাচার হচ্ছে। এভাবে এক বছরে অন্তত ৮০ কোটি টাকার লোহা ও সরঞ্জাম অবৈধভাবে বিক্রি। যদিও তথ্য বলছে, পাভেল মোল্লার ট্রাকগুলোতে অন্তত ২০ টন লোহা পরিবহন করা হচ্ছে। সেই হিসেবে পাচার হওয়া লোহার মূল্য অন্তত দেড়শ কোটি টাকারও বেশি। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট এলাকা থেকে লোহা সরানোর
প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সংগঠিতভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের সাবেক নিরাপত্তা ইনচার্জ সাকানুর হাসান জানান, তিনি বর্তমানে প্রকল্পে কর্মরত নন। ঘটনাটি প্রকাশের পর পুরো সিকিউরিটি টিম পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে নাজমুল হুদা খান প্রকল্পের নতুন নিরাপত্তা ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে তিনি জানান। নাজমুল হুদা খান বলেন, “ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল মোল্লাসহ স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী এ চুরির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আমি প্রায়ই অজ্ঞাত নম্বর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পাই। পরিবারের নিরাপত্তার ভয়ে মুখ খুলতে চাই না।” অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের দোভাষী ও নিরাপত্তা ইনচার্জকে ‘ম্যানেজ’ করেই এসব লোহা প্রকল্প এলাকা থেকে চোরাই পথে বের করা হয়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের এক প্রভাবশালী বিএনপির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রকল্পের মালামাল চুরি হচ্ছে, বিষয়টি জানি। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি, কয়েকটি ট্রাকও আটকে দিই। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আমাকে ফোন করেন।” তার দাবি, পাভেল মোল্লার মাধ্যমে শুধু দলীয় নেতারা নন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও এই চুরির অর্থ থেকে ভাগ পান। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আখতার হোসেন জানান, তিন মাস আগে তিনি থানায় যোগ দেন এবং এরপর থেকেই লোহা চুরির বিষয়টি তার নজরে আসে। তার ভাষায়, “প্রায় প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে। কখনো কখনো দিনে ১০-১২ ট্রাক পর্যন্ত লোহা বের হয় বলে তথ্য পেয়েছি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে কয়েকটি স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।” তবে ওসি দাবি করেন, তার থানার কোনো পুলিশ সদস্য এই চোরচক্রের সঙ্গে জড়িত নয় বা তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না।
আশিক, ব্রাহ্মণগাঁওয়ের সজীব ও জুয়েলসহ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতরা এ কাজে যুক্ত। আর লুটপাটের অপারেশন সুচারুভাবে পরিচালনা, ব্যাঘাত ঘটানো ছাড়া নিরাপদে বিক্রি ও নগদ অর্থ সংগ্রহের অংশটি পরিচালনা করছেন ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল মোল্লা। পাভেলের নেতৃত্বে থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব জুয়েল, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক অয়ন ইসলাম রনি, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাকির দেওয়ান, থানা শ্রমিক দলের নেতা সোবাহান, ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সেলিম এবং থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি উজ্জ্বল মোল্লাসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা এই অপারেশনের অর্থের ভাগ পাচ্ছেন। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেললাইন স্থাপনের এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার ও চীনের মধ্যে জিটুজি (সরকার-থেকে-সরকার) চুক্তির আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়
চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। ঠিকাদারি দায়িত্বে রয়েছে চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)। প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ সম্পন্ন হলে রেললাইনটি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত পৌঁছাবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা—এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি এবং অবশিষ্ট ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। ৬ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালে। কিন্তু গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপিসহ সরকারবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীর সহিংসতা, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ৫ই আগস্ট সরকারের পতন ঘটানোর
পর থেকে রেললাইন সংযোগের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। কাজ স্থগিত থাকার কারণে প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা লোহা ও সরঞ্জাম নিয়মিত চুরি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিল, তারাই এখন এই লুটপাটের মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্যপূরণ করছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাজীরগাঁও এলাকায় অবস্থিত সিআরইসির অফিসটি বিশাল এলাকায় স্থাপিত এবং চারপাশে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী রয়েছে। কিন্তু বেষ্টনীর মধ্য থেকেও কীভাবে শত শত কোটি টাকার লোহা চুরি হচ্ছে? এলাকাবাসী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে রাতের অন্ধকারে শুরু হয় প্রকল্পের লোহালক্কড় চুরি। প্রতিদিন ৪-৫টি ট্রাকে এসব লোহা তুলে নিয়ে যাওয়া এবং বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি ট্রাকে ১৫-২০ টন পর্যন্ত লোহা পরিবহন করা হয়। ৩০-৪০ জন শ্রমিক প্রতিদিন গ্যাসকাটারে কেটে লোহার টুকরো ছোট করে রাখছে। কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীরগাঁও এলাকায় লিটন ও সজীবের বাড়ির সামনে এসব লোহা জমা করা হয়। পরে স্থানীয় থানা-পুলিশের নীরব সমর্থনে ট্রাকগুলো সেখান লোহা বোঝাই করে নিয়ে যায় পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের চৌধুরী মার্কেটে অবস্থিত এনএস ট্রেডার্সে, যা নয়ন শেখ ও তার বাবা স্বপন শেখের মালিকানাধীন। দোকানের সামনের অংশসহ আশপাশের এলাকায় প্রকল্পের লোহা আনলোড করা হয়। দোকানের কর্মচারীরা এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে লোহা বিক্রেতার ছদ্মবেশে নয়ন শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে লোহার নমুনা দেখতে চান। প্রকল্পের লোহার
ছবি পাঠালে নয়ন শেখ জানান, তিনি রেলওয়ের লোহা প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কেনেন। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটা ধারণা নেওয়া হয়। প্রতি ট্রাকে যদি কমপক্ষে ১০-১৫ টন লোহা আনা হয়, তার মুল্য হবে অন্তত ৭-৮ লাখ টাকা। দিনে ৩ ট্রাক লোহা বিক্রি হলে মাসে ৬-৭ কোটি টাকার লোহা পাচার হচ্ছে। এভাবে এক বছরে অন্তত ৮০ কোটি টাকার লোহা ও সরঞ্জাম অবৈধভাবে বিক্রি। যদিও তথ্য বলছে, পাভেল মোল্লার ট্রাকগুলোতে অন্তত ২০ টন লোহা পরিবহন করা হচ্ছে। সেই হিসেবে পাচার হওয়া লোহার মূল্য অন্তত দেড়শ কোটি টাকারও বেশি। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট এলাকা থেকে লোহা সরানোর
প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সংগঠিতভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের সাবেক নিরাপত্তা ইনচার্জ সাকানুর হাসান জানান, তিনি বর্তমানে প্রকল্পে কর্মরত নন। ঘটনাটি প্রকাশের পর পুরো সিকিউরিটি টিম পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে নাজমুল হুদা খান প্রকল্পের নতুন নিরাপত্তা ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে তিনি জানান। নাজমুল হুদা খান বলেন, “ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল মোল্লাসহ স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী এ চুরির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আমি প্রায়ই অজ্ঞাত নম্বর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পাই। পরিবারের নিরাপত্তার ভয়ে মুখ খুলতে চাই না।” অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের দোভাষী ও নিরাপত্তা ইনচার্জকে ‘ম্যানেজ’ করেই এসব লোহা প্রকল্প এলাকা থেকে চোরাই পথে বের করা হয়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের এক প্রভাবশালী বিএনপির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রকল্পের মালামাল চুরি হচ্ছে, বিষয়টি জানি। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি, কয়েকটি ট্রাকও আটকে দিই। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আমাকে ফোন করেন।” তার দাবি, পাভেল মোল্লার মাধ্যমে শুধু দলীয় নেতারা নন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও এই চুরির অর্থ থেকে ভাগ পান। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আখতার হোসেন জানান, তিন মাস আগে তিনি থানায় যোগ দেন এবং এরপর থেকেই লোহা চুরির বিষয়টি তার নজরে আসে। তার ভাষায়, “প্রায় প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে। কখনো কখনো দিনে ১০-১২ ট্রাক পর্যন্ত লোহা বের হয় বলে তথ্য পেয়েছি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে কয়েকটি স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।” তবে ওসি দাবি করেন, তার থানার কোনো পুলিশ সদস্য এই চোরচক্রের সঙ্গে জড়িত নয় বা তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না।



