চেনা দখলদার, জিডি করেই দায় সারে গৃহায়ন – ইউ এস বাংলা নিউজ




চেনা দখলদার, জিডি করেই দায় সারে গৃহায়ন

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৭ আগস্ট, ২০২৫ | ৫:৪৯ 62 ভিউ
নিজেদের জমির দখল ধরে রাখতে পারছে না জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ওয়াকফ এস্টেট বা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ বোর্ডের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে একের পর এক প্লট দখল করে নিচ্ছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। আর গৃহায়ন দায় সারছে শুধু থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলার মাধ্যমে। বাস্তবে বেদখল জমি উদ্ধার তো দূরের কথা, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও অনাগ্রহী সরকারি এ দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা। বরাদ্দ পাওয়া বহু মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী ও সাধারণ নাগরিক বছরের পর বছর প্লট বুঝে না পেয়ে ঘুরছেন থানা, ডিসি অফিস ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে। অথচ প্রশাসন নির্বিকার। ভূমিদস্যুরা দখল করা সেই জমিতে গড়ে তুলছে ঘর, গ্যারেজ, অফিস, আর সেগুলোর পাহারা দিচ্ছে গৃহায়নেরই নিয়োজিত আনসার

সদস্যরা। যদিও শুরুতে আনসাররা বাধা দিতে গিয়ে দখলদারদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সব নিয়ম মেনে মিরপুরের রূপনগর থানাধীন দুয়ারীপাড়া এলাকায় একটি প্লট বরাদ্দ নেন যুদ্ধাহত ‘ক’ শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিউদ্দিন। কিন্তু স্থানীয় এক ভূমিদস্যু চক্র সেই প্লট দখল করে নিয়েছে। একটি বাহিনীর গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত শফিউদ্দিনের ছেলে জমি উদ্ধারে থানায়, ডিসি অফিসে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিকদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো সহায়তা পাননি। শফিউদ্দিন শুধু একা নন, এমন অনেকে আছেন যারা গৃহায়নের কাছ থেকে সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে প্লট কিনে আজও তা বুঝে পাননি। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫/৭২-৭৩ এলএ কেসের ভিত্তিতে মিরপুরের রূপনগর থানাধীন দুয়ারীপাড়া এলাকার ‘ক’ ও ‘খ’

ব্লকে প্রায় ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সেসব জমিতে ৪৭৪টি প্লট তৈরি করে বিক্রি করে গৃহায়ন; কিন্তু নিজেদের অধিগৃহীত জমি দখলে নিতে ব্যর্থ হয় সংস্থাটি। ফলে প্লট বিক্রি করেও ক্রেতাদের জমির দখল বুঝিয়ে দিতে পারেনি। ২০০৯ ও ২০১৯ সালে দু’দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর পর থেকেই স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সঙ্গে এক ধরনের চোর-পুলিশ খেলা চলছে। দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে প্লট বরাদ্দ পাওয়া মালিকরা জমি বুঝে পাচ্ছেন না। বিগত সরকারের সময় এসব জমির দখল ছিল স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ইলিয়াস মোল্লার অনুসারীদের হাতে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দখলদারদের হাতও বদলায়।

পুরোনো দখলদাররা এলাকা ছেড়ে গেলেও এসব প্লট দখলমুক্ত হয়নি। নতুন একটা গ্রুপ এসব দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছে। গৃহায়নের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে গৃহায়নের প্লট দখলের উৎসব চলছে। নানা স্তরের প্রভাবশালীরা এসব জমি দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বলতে গেলে এখন প্রায় পুরো এলাকাই ভূমিদস্যুদের দখলে। তারা সেখানে ভাড়া দেওয়ার জন্য প্লট তৈরি করেছে, বানিয়েছে ২০টির বেশি রিকশা গ্যারেজ। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জমির নিরাপত্তায় আনসার সদস্য মোতায়েন করলেও তাদের ওপর একাধিকবার হামলা করা হয়েছে। জানা গেছে, নিজেদের জমি উদ্ধারে রূপনগর থানায় বেশ কয়েকটি জিডি ও মামলা করেছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২০২৫ সালের ২৮ জানুয়ারি করা ৩টি জিডিতে ‘ক’ ব্লকের ৫ নম্বর রোডের ১১, ২৬ ও ২৮

নম্বর এবং ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর প্লট বেদখলের কথা বলা হয়। ৭ এপ্রিল করা জিডিতে ৬ নম্বর রোডের ১০ নম্বর প্লট এবং ২৭ মার্চের জিডিতে ৭ নম্বর রোডের ২৯ নম্বর প্লট দখলের অভিযোগ করা হয়। ১৫ মে করা আরেক জিডিতে ৭ নম্বর রোডের ৩২ নম্বর প্লট এবং ৩ মার্চের জিডিতে ‘বি’ ব্লকের ১ নম্বর রোডের ২৩, ২৫ ও ২৭ নম্বর প্লট দখলের অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া গৃহায়নের আনসারদের ওপর হামলা, ঘর ভাঙচুরসহ একাধিক ঘটনায় মামলাও হয়েছে। কিন্তু আইনি প্রতিকার চেয়ে করা এসব জিডি বা মামলায় দৃশ্যত কার্যকর তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। দখলদারদের তালিকা, জমির বিবরণসহ একাধিক প্রতিবেদন জাতীয় গৃহায়ন

কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন মিরপুর-১ সার্কেলের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি পাঠানো এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের উচ্ছেদ অভিযানে সেকশন-৮ (দুয়ারীপাড়া), ব্লক ‘ক’ ও ‘খ’ এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্লট মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত সাত-আট মাসে ওই এলাকাতেই ফের দখল শুরু করে একটি ভূমিদস্যু চক্র। আনসার সদস্যদের উপস্থিতিতে কয়েকবার ইটের দেয়াল, গেট ভেঙে দেওয়া এবং একাধিক জিডি করা হয়। এর পরও ওই এলাকায় ৩২টি সাইনবোর্ড, ৯টি টিনশেড ঘর, ১২টি অবৈধ টিনঘর, ১০টি টিনের বেড়া ও ২০টির মতো রিকশার গ্যারেজ গড়ে তোলা হয়েছে। এসব জায়গায় চলছে দীর্ঘদিনের অবৈধ ব্যবসা। প্রতিবেদনে চিহ্নিত ১৮ জন ভূমিদস্যুর নামও রয়েছে। তারা হলো—আজিজুল

হক, সোহেল আনসারী, আবুল কালাম আনসারী, মো. বাশার মিয়া, মোবারক মেম্বার গং, শফিক গং, শিবু মোল্লা গং, জহিরুল ইসলাম গং, সাইফুল ইসলাম গং, জসিম ওরফে জামাই জসিম, সোহেল, ইউসুফ, সেলিম গং, আরিফ, জান্নাতুল ফেরদৌস সুমি, শারমিন আক্তার, শিল্পী ওরফে খালিদা এবং মো. দুলাল। এই চক্রের মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন এম আশরাফুল ইসলাম ও বিল্লাল চেয়ারম্যান নামে দুজন। এ ছাড়া গৃহায়নের ঢাকা ডিভিশন-১-এর ৮ নম্বর সেকশনের সার্ভেয়ার আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুসারে, দুর্বল প্লট মালিকদের তালিকা তিনি ওই দখলদার চক্রকে সরবরাহ করেন। যুদ্ধাহত ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিউদ্দিনের বরাদ্দ পাওয়া ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর প্লটটি ৫ আগস্টের পর ‘ওয়াকফ এস্টেট’-এর সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দখল করে নেয় চক্রটি। বর্তমানে সেখানে দখলদাররা ভবন নির্মাণ করছে। গৃহায়নের কিস্তি পরিশোধ করা এবং ব্যাংক ঋণ নিয়ে ঘর তোলার পরিকল্পনা থাকলেও এখন শফিউদ্দিন নিজেই প্লটে পা রাখতে পারছেন না। তার সন্তান বহু জায়গায় ধরনা দিয়েও কোনো সহায়তা পাননি। রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকাম্মেল হক বলেন, ‘গৃহায়নের জায়গা ঠিক আছে, তবে এখানে আরও কয়েকটি পক্ষ রয়েছে। ওয়াকফ এস্টেট, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পক্ষসহ প্রায় পাঁচটি গ্রুপ রয়েছে, যারা লড়াই করছে। জমির বিষয়গুলো দেওয়ানি মামলা, আদালতের বিষয়। তবে ফৌজদারি মামলা আমরা দেখছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিচ্ছি বলেই এখনো কিছু জমি রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, না হলে সব চলে যেত।’ এ প্রসঙ্গে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা উপ-বিভাগ-১-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দুয়ারীপাড়া ‘ক’ ও ‘খ’ ব্লকের কিছু জমি ও প্লট দখল হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে রূপনগর থানায় বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি ও মামলা করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, শিগগির সব দখলকৃত জমি উদ্ধার করা হবে।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আমির হামজা হচ্ছে সেরা বেয়াদব, বললেন তাহেরী ব্যস্ততার কারণে জামায়াতের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজির খোঁজ নিতে পারছেন না আমির শফিকুর জামায়াত-শিবিরের খুনি চক্র বেকসুর খালাস: রাবি ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যা মামলার রায়ে ক্ষোভ ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে আনার দাবি তাজুলের ইতালিতে ড. ইউনূসের অপ্রয়োজনীয় সফর: বিশ্ব খাদ্য ফোরামে অংশগ্রহণ নিয়ে সমালোচনার ঝড় পাকিস্তানের বিমান হামলার জবাব দিলো আফগানিস্থান: ১৫ পাকি সেনা হত্যা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রযোজনায় মানবাধিকার লংঘন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা এবং আরএসওকে মদদ দিচ্ছে বিজিবি: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির হুঁশিয়ারি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বনাম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন: পার্থক্য কী? যাচ্ছে না থামানো অর্থনীতির ধস: রপ্তানি আয়ে টানা পতন, দিশেহারা খাত সংশ্লিষ্টরা ভারতীয় ট্রাক ঢোকার পরে একশো’র নিচে নামলো ৫০০ টাকার কাঁচামরিচ আবারও পশ্চিমবঙ্গে মেডিকেল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম রাজধানীতে জাপা নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ‘ট্রাইব্যুনালের চার্জশিটে নাম আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জন সেনা হেফাজতে’ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণার আগেই ফাঁস! তদন্তে কর্মকর্তারা সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ মেক্সিকোতে আকস্মিক বন্যায় মৃত বেড়ে ২৮, নিখোঁজ অনেকে ৬ বিভাগে ভারি বর্ষণের আভাস সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৪১৩