ইরানের কাছে যেভাবে ‘ধরাশায়ী’ ইসরাইল – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইরানের কাছে যেভাবে ‘ধরাশায়ী’ ইসরাইল

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৫ জুন, ২০২৫ | ৫:০৬ 8 ভিউ
ইসরাইল টানা ১২ দিনের বিমান হামলার পরও ইরানের বিরুদ্ধে তার ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘লক্ষ্য পূরণ’ এর দাবিকে ‘গোলমেলে’ আখ্যা দিয়ে আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে অরি গোল্ডবার্গ তুলে ধরেছেন ইসরাইলের কৌশলগত সীমাবদ্ধতা এবং ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতা। অরি গোল্ডবার্গ দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে ইরান এবং ইসরাইলের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছেন। তিনি একজন ইসরাইলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভাষ্যকার। গোল্ডবার্গ ওই প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, ইসরাইল ইরানের ‘সরকার পরিবর্তন’ ও দেশটির ‘পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানাসহ বেশ কয়েটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধ শুরু করলেও শেষমেশ কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে। পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানা কী সম্ভব হয়েছে? সম্ভবত

এর উত্তর হলো ‘না’। মনে করা হচ্ছে ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আক্রান্ত ফোর্ডো স্থাপনা থেকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক উপাদান সরিয়ে নিয়েছিল। এই উপাদানগুলোই পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে জরুরি অংশ। তাই, পারমাণবিক কর্মসূচির লাগাম টানার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কতটা ক্ষতি করেছে, সেটাও পরিষ্কার নয়। ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে পেরেছিল বাঙ্কার-বাস্টিং বোমা, ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের হামলায় এর বেশি কোনো সাহায্য করেনি। হামলার ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, তা বের করা কঠিন হবে, কারণ ইরান সম্ভবত বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। ‘সরকার পরিবর্তন’ কী সম্ভব হয়েছিল? সহজ কথায় বলতে গেলে—ইসরাইল

যা চেয়েছিল তার উল্টো ফল হয়েছে। ইসরাইল ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সামরিক নেতাদের হত্যা করে সরকার বিরোধী বিদ্রোহ শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, শত্রুর ঊর্ধ্বতন নেতাদের হত্যা করলে তাদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু এই কৌশল কখনো সফল হয়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু, যা তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছিল, কিন্তু সেটার সঙ্গে লেবাননের ভেতরের রাজনীতিরও অনেক সম্পর্ক ছিল। অন্য সব ক্ষেত্রে ইসরাইলের এমন হত্যাযজ্ঞ কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারেনি। ইরানের ক্ষেত্রে এই হত্যাকাণ্ডগুলো সরকারের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরাইল যদিও ইরানি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যা করেছে, যারা সম্ভবত বর্তমান ইরানি রাজনীতির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও একই

সঙ্গে ইসরাইলের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। তবুও অনেক ইরানি যারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ও বিশেষ করে আইআরজিসি-এর ঘোর বিরোধী, তারাও এই পরিস্থিতিতে সরকারকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছে। ইরানিরা শুধু ‘সরকার’ নয়, বরং পুরো ইরানকেই আক্রমণের মুখে দেখেছিল। ইসরাইলের ‘শাসনের প্রতীক’ হিসেবে কিছু স্থানে বোমা ফেলার চেষ্টাও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। তারা কুখ্যাত এভিন কারাগারে বিমান হামলাকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামের অংশ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ইসরাইলের বোমা হামলা উল্টো বন্দীদের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছিল, কারণ কর্তৃপক্ষ তাদের অনেককে অজানা জায়গায় সরিয়ে নিয়েছিল। ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আইআরআইবি-তে বোমা হামলাও অযৌক্তিক ছিল। ইসরাইল দাবি করেছিল, এটি সরকারের প্রচার বন্ধ করার চেষ্টা। তবে অনেক

ইসরাইলিই বলেছেন, এই হামলা ইরানিদের জন্য ইসরাইলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকেও হুমকি দেওয়ার অজুহাত তৈরি করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সমর্থন ও গাজার প্রভাব: যদি ইসরাইল তাদের ঘোষিত যুদ্ধ লক্ষ্য অর্জন করতে না পারে, তাহলে কি তারা অন্তত বিশ্বকে নিজেদের পেছনে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছে? যাতে সবাই গাজার কথা ভুলে যায় ও ইসরাইলকে আবারও ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধে লড়াইকারী হিসেবে দেখতে পায়? এটা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল। এর ফলে তারা আন্তর্জাতিক আইনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকতে পারে। তবে ট্রাম্প ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেননি। হামলার পরপরই মার্কিন কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসে। বোমা

হামলার আগে ও পরে ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে একটি চুক্তির আকাঙ্ক্ষা বারবার প্রকাশ করেছেন, যেখানে ইসরাইলও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মনে হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরাইলকে তার নিজের স্বার্থ ও উপসাগরের মিত্রদের স্বার্থ রক্ষায় সাহায্য করেছেন। যদিও কিছু বিশ্বনেতা, বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ মার্কিন হামলা এবং ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করেছেন, তবুও কেউ ইসরাইলের কঠোর দাবি, যেমন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার ক্ষমতা না থাকার কথা মেনে নেয়নি। বিশ্ব এখন ‘পারমাণবিক অস্ত্র নয়’ নীতিতে ফিরে এসেছে, যা ইরানও মেনে চলতে প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ব ইরানকে ব্যবসার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। এটি ইসরাইলের জন্য একটি

পরাজয় ও ইরানের জন্য একটি বিজয়। ইসরাইলের নিজস্ব ক্ষতি ও ইরানের বিজয়: ইসরাইলের ভেতরের ক্ষয়ক্ষতিও বিবেচনা করা দরকার। ইসরাইল দ্রুত ইরানের আকাশসীমায় আধিপত্য বিস্তার করে প্রায় ইচ্ছামতো হামলা চালিয়েছে। তবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বারবার ইসরাইলের বিখ্যাত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে পেরেছে, ইসরাইলের কেন্দ্রস্থলসহ সারা দেশে আঘাত হেনেছে। এতে অভূতপূর্ব সংখ্যক হতাহতের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরাইলের কাছে ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব ছিল ও দ্রুত সেগুলো তৈরি করারও কোনো আশা ছিল না। ইসরাইলি অর্থনীতি দ্রুত স্থবির হয়ে পড়ছিল। এটিও ইরানের জন্য আরেকটি জয়। শত শত হতাহত এবং দেশজুড়ে অবিরাম বোমাবর্ষণে অনেক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও ইরান যুদ্ধ ও বোমাবর্ষণ থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু বিশাল ইসরাইলি বাহিনীর মুখোমুখি হয়েও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ভেঙে পড়েনি। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সফলভাবে ইসরাইলে আঘাত হেনেছে। ইরানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়নি (কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই এটিকে ইসরাইলি হামলার শিকার হিসেবে দেখেছে)। ইরানের পাল্টা আক্রমণের বিকল্পগুলো খুব বেশি সীমিত ছিল না। কাতারে তার সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিন হামলার ‘প্রতিশোধ’ সম্পর্কে আগাম সতর্ক করে ইরান সফলভাবে উত্তেজনা কমাতে পেরেছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হচ্ছে দেখে ইসরাইলকে হামলা না করার জন্য সতর্ক করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে ছিল ইরান। ইরান এখন এমনভাবে আবির্ভূত হয়েছে, যা তারা পছন্দ করে—এখনও শক্তিশালী অবস্থানে আছে ও ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
মোংলায় গাড়ি খালাসের প্রস্তাব, উদ্বিগ্ন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সিরিয়ায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ যুদ্ধবিরতির মধ্যেও আকাশপথ বন্ধ, বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ইরানের বিমান চলাচল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু কাল, মানতে হবে ১০ নির্দেশনা সাবেক সিইসি হাবিবুল আওয়াল গ্রেপ্তার, কাল তোলা হবে আদালতে কাতারের আমিরের কাছে দুঃখ প্রকাশ ইরানের ইরানের কাছে যেভাবে ‘ধরাশায়ী’ ইসরাইল ট্রাম্পের ১২ পোস্টে ১২ দিনের যুদ্ধ যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইসরাইল চরম অস্ত্র সংকটে ইরানে ৭ শতাধিক ইসরাইলি গুপ্তচর গ্রেপ্তার, ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর দুই মোটর সাইকেলের সংঘর্ষে প্রকৌশলী ও কলেজছাত্র নিহত আইএইএ’র সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিতে সম্মতি ইরানের পার্লামেন্টের যুক্তরাষ্ট্র থেকে পারসা বললেন, হেরে গেলে চলবে না আমের বাজার ভালো না ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার নেপথ্যে যা ঘটেছিল মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে কে জিতল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা ট্রাম্পের, দু’পক্ষে লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসরায়েল হামলা না করলে ইরানও করবে না: মাসউদ পেজেশকিয়ান যাচাই-বাছাই ছাড়াই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন হাসনাত: দুদক চা খেতে এক লাখ টাকা করে চাওয়া শুরু করেছে দুদক, অভিযোগ হাসনাতের