‘আমরা এখনো শ্রদ্ধার স্বর্ণ শিখরে রেখেছি শিক্ষকদের’
শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর পালন করা হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দেশের সব শিক্ষক সমাজের নিকট এদিনটি অত্যন্ত গৌরব ও মর্যাদার। শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। এ শিক্ষা যারা দান করেন, তাদের বলা হয় শিক্ষাগুরু। একটি জাতির মেরুদণ্ড দৃঢ় ও সোজা রাখতে হলে শিক্ষাগুরুর সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। পৃথিবীতে যত পেশা আছে, তার মধ্যে শিক্ষকতাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার চোখে দেখা হয়। শিক্ষকদের সম্মান করা শিক্ষার একটি অংশ।
দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামোগতভাবে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। একই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বেড়েছে সুযোগ সুবিধা। নব্বই দশকের আগের তুলনায় বেড়েছে শিক্ষকদের বেতন ও বিভিন্ন ধরনের ভাতা। শিক্ষকরাও পাচ্ছেন সরকারের বিভিন্ন সুযোগ
সুবিধা। নব্বই দশকের সময় ছাত্র-শিক্ষকের যে মধুর সম্পর্ক ছিল তা এখনো বিদ্যমান রয়েছে বলে জানান শিক্ষক সমাজ। তখনকার সময়ের শিক্ষকরা তাদের নিজের সন্তানের মতো মায়া স্নেহ ও শাসন করে পড়ালেখা শেখাতেন। তেমনিভাবেই ছাত্ররাও তাদের পিতার পরেই শিক্ষকের মর্যাদা দিতেন। রাখতেন পিতৃতুল্য মর্যাদায়। তৎকালীন সময়ের ছাত্র অর্থাৎ নব্বই দশকের সময়ের ছাত্ররা জানান, শিক্ষকের প্রতি তাদের এখনো শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। আর বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, বর্তমানে শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে সেতুবন্ধন সম্পর্ক আছে। ২০০১ সালে অবসরে যাওয়া শিক্ষক সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের বিদ্যালয় পরিদর্শক ছিলেন। ১৯৬৯ সালে বোয়ালমারি জর্জ একাডেমির সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিজেকে মহান পেশা শিক্ষকতায়
যোগ করেন। এরপর বালিয়াকান্দি কলেজের বাংলা প্রভাষক, গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক, মাদারীপুর ইউনাইটেড স্কুল অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, ফরিদপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালের আগের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে স্মৃতিচারণ করে এই গুণী শিক্ষক সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন,, তখন তো সুযোগ সুবিধা কম ছিল। আমরা প্রতিষ্ঠা হওয়ার জন্য অনেক সাধনা করছি। অনেক প্রতিকূল পরিবেশ ডিঙ্গিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। তখন তো অনেক অসুবিধা ছিল। এখন অনেক সুবিধা। আমরা স্কুল করতাম কারো বাড়ি থেকে চেয়ার আনতাম
এবং অন্যান্য অনেক সামগ্রী এনে স্কুল করতাম। আর এখন তো টাকা পয়সাও আছে এবং সুযোগ সুবিধাও আছে। আমরা খুবই অসুবিধার মধ্যে স্কুল করেছিলাম। ‘আমরা এখনো শ্রদ্ধার স্বর্ণ শিখরে রেখেছি শিক্ষকদের’ আ ব ম আব্দুল মালেক, একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি তিনি বলেন, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক তখনো ভালো ছিল এখনো ভালো আছে। এখনো ছেলেমেয়ে যথাযথ ভদ্র শিক্ষকদের সম্মান করে। তখনো একদল ছাত্ররা শিক্ষকদের সম্মান করত না। এখনো করে না। দুই রকমই আছে। আমি গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকা কালে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম টাকা পয়সার অভাবে পড়া বাদ দিতে পারবে না কেউ। যার সমস্যা আছে আমি দেখব। আমার সময়ে সৈকত নামে এক ছাত্র বেতন
বাকি থাকায় পরীক্ষা দিতে পারেনি। এরপর আমি নিজের টাকা দিয়ে তাকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ছেলেটা পরে জর্জ কোর্টের কেরানি ছিল। সারাজীবন আমার প্রতি তার কৃতজ্ঞতাবোধ ছিল, এখনো আছে। খুব স্মরণ করে আমাকে। এই গুণী শিক্ষক আরও বলেন, আমার অনেক ছাত্র আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আর শিক্ষকরা তখনো প্রাইভেট পড়াতো এখনো প্রাইভেট পড়ায়। তখনো টাকা পয়সা ছাড়া অনেকেই পড়াতো এখনো টাকা পয়সা ছাড়া অনেকেই পড়ায়। এখন যে ছাত্ররা সব খারাপ হবে তা আমি মনে করি না। তবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে খুব কষ্ট করা লাগত। সরকারের টাকা পয়সা ছিল কম। বেতন ছিল কম। শিক্ষক সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান যুগে অনলাইনে ছাত্ররা
ক্লাস করে। পৃথিবী বিজ্ঞানের দিক থেকে এগিয়ে গেছে। এটা ভালো একটা দিক। ৫০ বছর পর আরো উন্নত হবে। আমি ছিলাম স্কুলের ফার্স্ট বয়। এখন যে স্কুলে ফার্স্ট বয় হয় তারা আমার চেয়ে বেশি নম্বর সে পায়। আমার চেয়ে তারা বেশি মেধাবী। এখনকার শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বুদ্ধি অনেক বেশি। এক কথায় বলতে গেলে, আগের শিক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উন্নত। অনেক ফলপ্রসূ। যত দিন যাবে তত উন্নতি হবে। ২০০০ সালে অবসরে যাওয়া কাইমদ্দিন ওরফে কিয়াম মাস্টার রাজবাড়ির দক্ষিণ ধোপাগাথী সরকারি প্রাথমিক ব্যিালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০০০ সালের আগের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আগেকার যুগে শিক্ষকদের যে কার্যক্রম ছিল
আর বর্তমান যুগের শিক্ষকদের কার্যক্রম অনেক পার্থক্য হয়ে গেছে। আমরা যখন লেখাপড়া করিয়েছি একটা ধারাবাহিক পাঠ্যক্রমে ১০/২০ বছর চলত। ছাত্ররা শিক্ষকদের বেশ মান্য করত। পথে ঘাটে তাদের দেখা হলে এখনো আমাকে সালাম দেয়। আর এখনকার শিক্ষাক্রম আলাদা হয়ে গেছে। এখন আধুনিক যুগের যে শিক্ষাক্রম আমাদের সঙ্গে খাপ খায় না। আমি বলতে চাই এই শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে শিশুদের নীতি নৈতিকতা শেখানো দরকার। এখন শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে ভালোবাসার অভাব আছে। এখন অনেক শিক্ষার্থী উশৃঙ্খল হয়ে গেছে। নব্বই দশকের সময়ের ছাত্র আবুল হোসেন মোল্লা বলেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমাদের একটা নিয়মশৃঙ্খলা ছিল। স্কুল শেষ করে বাড়িতে ফিরে খেলাধুলা করতাম। খেলাধুলা শেষে মাগরিবের আগেই আমরা বাড়িতে ফিরে যেতাম। নিয়মিত পড়াশোনা করেছি। আধুনিক যে গেম বের হয়েছে এগুলো আমাদের সময়ে ছিল না। আমরা পাঠ্য বই পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন গল্পের বই পড়তাম। এতে আমাদের মেধা বিকশিত হতো। এখনকার ছেলে মেয়েরা কিন্তু আধুনিক যুগে মোবাইল কম্পিউটার বিভিন্ন গেম খেলাধুলা করে পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি করছে। এটা থেকে বের হতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে পুনরায় খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনতে হবে। ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতির মধ্যে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। মজিবর রহমান খান জুয়েল নামে একজন বলেন, আমরা যারা নব্বই দশকের ছাত্র। তখনকার সময়ে আমরা বাবা-মায়ের পরেই শিক্ষকদের সম্মান করতাম। আমাদের সময়ের যে শিক্ষকরা ছিল তারা অত্যন্ত কোয়ালিটি ফুল ছিল। তারা যেভাবে আমাদের স্নেহ করে পড়াতেন সেটা এখন আর দেখা যায় না। বর্তমানে শিক্ষক-ছাত্রের ভেতরে অনেক দুরত্ব। আমাদের সময়ে এমন ছিল না। শিক্ষকরা আমাদের সন্তানের মতো দেখতেন। আমরা এখনো শ্রদ্ধার স্বর্ণ শিখরে শিক্ষকদের রেখেছি। শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার বলেন, বর্তমান কারিকলাম অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। ধারাবাহিক মূল্যায়ন আছে। এই ধারাবাহিক মূল্যায়ন আমাদের বর্তমান শিক্ষার্থীর জন্য ভালো দিক না। কারিকলাম সংশোধন করা দরকার বলে আমি মনে করি। আগে শিক্ষার্থীরা ভয় পেতো বেতের কারণে কিন্তু ভালোবাসার কারণে না। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ভয় পায় না আমাদের ভালোবাসার কারণে। আমরা চেষ্টা করি ছাত্রদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে নৈতিকতা ও তার নীতিগত পরিবর্তন করা যায় কি না। বর্তমান সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষক রেহেনা আক্তার বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আগের শিক্ষাব্যবস্থা অবশ্যই একাডেমিক ছিল। সেটা শুধু বিদ্যালয়ে পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ ছিল। তখন ডিজিটিাল ডিভাইস কিংবা মোবাইল ছিল না। এ কারণে শিশুদের আনন্দ ও শিক্ষার জায়গা সবই বিদ্যালয়ে ছিল। আর এখন আনন্দের জায়গা বিদ্যালয়ের মধ্যে না। বিদ্যালয়ের বাইরেও ডিভাইস ব্যবহার করে নেট ব্যবহার করছে। আর আগে তো বিদ্যালয়ে আনন্দ আছে দেখেই উপস্থিতি বেশি হতো। এখন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হয়। কারণ তারা বিদ্যালয়ের বাইরে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে। আর ইন্টারনেটের কারণে বিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা দিন দিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী মিথিলা বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস করি। এর পর বাসায় ফিরে আবারো দুটা প্রাইভেট পড়তে যেতে হয়। প্রাইভেট শেষ হয় বিকেলে। পড়ালেখার চাপে খেলাধুলা করার টাইম পাই না। নিজের রেস্ট নেওয়ারও সময় পাই না। সারাদিনই পড়াশোনার মধ্য দিয়ে দিন কেটে যায়। তেমন ভালো লাগে না। মাঝে মধ্যে সাংস্কৃতিক বা খেলাধুলা করলে মনটা ভালো থাকতো কিন্তু ক্লাস ও প্রাইভেটের চাপে সময় পাই না। স্কুলপড়ুয়া বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সজিব খান বলেন, সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কোচিং করতে হয়। এরপর স্কুল। তারপর বিকেলে আবারো প্রাইভেট পড়তে হয়। আর বিশেষ করে স্কুলের স্যারদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়। তাই আমরা বাধ্য হয়ে স্কুলের স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়ি। কোচিং আর প্রাইভেটের চাপাচাপিতে আমরা প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
সুবিধা। নব্বই দশকের সময় ছাত্র-শিক্ষকের যে মধুর সম্পর্ক ছিল তা এখনো বিদ্যমান রয়েছে বলে জানান শিক্ষক সমাজ। তখনকার সময়ের শিক্ষকরা তাদের নিজের সন্তানের মতো মায়া স্নেহ ও শাসন করে পড়ালেখা শেখাতেন। তেমনিভাবেই ছাত্ররাও তাদের পিতার পরেই শিক্ষকের মর্যাদা দিতেন। রাখতেন পিতৃতুল্য মর্যাদায়। তৎকালীন সময়ের ছাত্র অর্থাৎ নব্বই দশকের সময়ের ছাত্ররা জানান, শিক্ষকের প্রতি তাদের এখনো শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। আর বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, বর্তমানে শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে সেতুবন্ধন সম্পর্ক আছে। ২০০১ সালে অবসরে যাওয়া শিক্ষক সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের বিদ্যালয় পরিদর্শক ছিলেন। ১৯৬৯ সালে বোয়ালমারি জর্জ একাডেমির সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিজেকে মহান পেশা শিক্ষকতায়
যোগ করেন। এরপর বালিয়াকান্দি কলেজের বাংলা প্রভাষক, গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক, মাদারীপুর ইউনাইটেড স্কুল অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, ফরিদপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালের আগের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে স্মৃতিচারণ করে এই গুণী শিক্ষক সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন,, তখন তো সুযোগ সুবিধা কম ছিল। আমরা প্রতিষ্ঠা হওয়ার জন্য অনেক সাধনা করছি। অনেক প্রতিকূল পরিবেশ ডিঙ্গিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। তখন তো অনেক অসুবিধা ছিল। এখন অনেক সুবিধা। আমরা স্কুল করতাম কারো বাড়ি থেকে চেয়ার আনতাম
এবং অন্যান্য অনেক সামগ্রী এনে স্কুল করতাম। আর এখন তো টাকা পয়সাও আছে এবং সুযোগ সুবিধাও আছে। আমরা খুবই অসুবিধার মধ্যে স্কুল করেছিলাম। ‘আমরা এখনো শ্রদ্ধার স্বর্ণ শিখরে রেখেছি শিক্ষকদের’ আ ব ম আব্দুল মালেক, একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি তিনি বলেন, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক তখনো ভালো ছিল এখনো ভালো আছে। এখনো ছেলেমেয়ে যথাযথ ভদ্র শিক্ষকদের সম্মান করে। তখনো একদল ছাত্ররা শিক্ষকদের সম্মান করত না। এখনো করে না। দুই রকমই আছে। আমি গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকা কালে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম টাকা পয়সার অভাবে পড়া বাদ দিতে পারবে না কেউ। যার সমস্যা আছে আমি দেখব। আমার সময়ে সৈকত নামে এক ছাত্র বেতন
বাকি থাকায় পরীক্ষা দিতে পারেনি। এরপর আমি নিজের টাকা দিয়ে তাকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ছেলেটা পরে জর্জ কোর্টের কেরানি ছিল। সারাজীবন আমার প্রতি তার কৃতজ্ঞতাবোধ ছিল, এখনো আছে। খুব স্মরণ করে আমাকে। এই গুণী শিক্ষক আরও বলেন, আমার অনেক ছাত্র আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আর শিক্ষকরা তখনো প্রাইভেট পড়াতো এখনো প্রাইভেট পড়ায়। তখনো টাকা পয়সা ছাড়া অনেকেই পড়াতো এখনো টাকা পয়সা ছাড়া অনেকেই পড়ায়। এখন যে ছাত্ররা সব খারাপ হবে তা আমি মনে করি না। তবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে খুব কষ্ট করা লাগত। সরকারের টাকা পয়সা ছিল কম। বেতন ছিল কম। শিক্ষক সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান যুগে অনলাইনে ছাত্ররা
ক্লাস করে। পৃথিবী বিজ্ঞানের দিক থেকে এগিয়ে গেছে। এটা ভালো একটা দিক। ৫০ বছর পর আরো উন্নত হবে। আমি ছিলাম স্কুলের ফার্স্ট বয়। এখন যে স্কুলে ফার্স্ট বয় হয় তারা আমার চেয়ে বেশি নম্বর সে পায়। আমার চেয়ে তারা বেশি মেধাবী। এখনকার শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বুদ্ধি অনেক বেশি। এক কথায় বলতে গেলে, আগের শিক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক উন্নত। অনেক ফলপ্রসূ। যত দিন যাবে তত উন্নতি হবে। ২০০০ সালে অবসরে যাওয়া কাইমদ্দিন ওরফে কিয়াম মাস্টার রাজবাড়ির দক্ষিণ ধোপাগাথী সরকারি প্রাথমিক ব্যিালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০০০ সালের আগের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আগেকার যুগে শিক্ষকদের যে কার্যক্রম ছিল
আর বর্তমান যুগের শিক্ষকদের কার্যক্রম অনেক পার্থক্য হয়ে গেছে। আমরা যখন লেখাপড়া করিয়েছি একটা ধারাবাহিক পাঠ্যক্রমে ১০/২০ বছর চলত। ছাত্ররা শিক্ষকদের বেশ মান্য করত। পথে ঘাটে তাদের দেখা হলে এখনো আমাকে সালাম দেয়। আর এখনকার শিক্ষাক্রম আলাদা হয়ে গেছে। এখন আধুনিক যুগের যে শিক্ষাক্রম আমাদের সঙ্গে খাপ খায় না। আমি বলতে চাই এই শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে শিশুদের নীতি নৈতিকতা শেখানো দরকার। এখন শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে ভালোবাসার অভাব আছে। এখন অনেক শিক্ষার্থী উশৃঙ্খল হয়ে গেছে। নব্বই দশকের সময়ের ছাত্র আবুল হোসেন মোল্লা বলেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমাদের একটা নিয়মশৃঙ্খলা ছিল। স্কুল শেষ করে বাড়িতে ফিরে খেলাধুলা করতাম। খেলাধুলা শেষে মাগরিবের আগেই আমরা বাড়িতে ফিরে যেতাম। নিয়মিত পড়াশোনা করেছি। আধুনিক যে গেম বের হয়েছে এগুলো আমাদের সময়ে ছিল না। আমরা পাঠ্য বই পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন গল্পের বই পড়তাম। এতে আমাদের মেধা বিকশিত হতো। এখনকার ছেলে মেয়েরা কিন্তু আধুনিক যুগে মোবাইল কম্পিউটার বিভিন্ন গেম খেলাধুলা করে পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি করছে। এটা থেকে বের হতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে পুনরায় খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনতে হবে। ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতির মধ্যে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। মজিবর রহমান খান জুয়েল নামে একজন বলেন, আমরা যারা নব্বই দশকের ছাত্র। তখনকার সময়ে আমরা বাবা-মায়ের পরেই শিক্ষকদের সম্মান করতাম। আমাদের সময়ের যে শিক্ষকরা ছিল তারা অত্যন্ত কোয়ালিটি ফুল ছিল। তারা যেভাবে আমাদের স্নেহ করে পড়াতেন সেটা এখন আর দেখা যায় না। বর্তমানে শিক্ষক-ছাত্রের ভেতরে অনেক দুরত্ব। আমাদের সময়ে এমন ছিল না। শিক্ষকরা আমাদের সন্তানের মতো দেখতেন। আমরা এখনো শ্রদ্ধার স্বর্ণ শিখরে শিক্ষকদের রেখেছি। শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার বলেন, বর্তমান কারিকলাম অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। ধারাবাহিক মূল্যায়ন আছে। এই ধারাবাহিক মূল্যায়ন আমাদের বর্তমান শিক্ষার্থীর জন্য ভালো দিক না। কারিকলাম সংশোধন করা দরকার বলে আমি মনে করি। আগে শিক্ষার্থীরা ভয় পেতো বেতের কারণে কিন্তু ভালোবাসার কারণে না। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ভয় পায় না আমাদের ভালোবাসার কারণে। আমরা চেষ্টা করি ছাত্রদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে নৈতিকতা ও তার নীতিগত পরিবর্তন করা যায় কি না। বর্তমান সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষক রেহেনা আক্তার বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আগের শিক্ষাব্যবস্থা অবশ্যই একাডেমিক ছিল। সেটা শুধু বিদ্যালয়ে পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ ছিল। তখন ডিজিটিাল ডিভাইস কিংবা মোবাইল ছিল না। এ কারণে শিশুদের আনন্দ ও শিক্ষার জায়গা সবই বিদ্যালয়ে ছিল। আর এখন আনন্দের জায়গা বিদ্যালয়ের মধ্যে না। বিদ্যালয়ের বাইরেও ডিভাইস ব্যবহার করে নেট ব্যবহার করছে। আর আগে তো বিদ্যালয়ে আনন্দ আছে দেখেই উপস্থিতি বেশি হতো। এখন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হয়। কারণ তারা বিদ্যালয়ের বাইরে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে। আর ইন্টারনেটের কারণে বিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা দিন দিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী মিথিলা বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস করি। এর পর বাসায় ফিরে আবারো দুটা প্রাইভেট পড়তে যেতে হয়। প্রাইভেট শেষ হয় বিকেলে। পড়ালেখার চাপে খেলাধুলা করার টাইম পাই না। নিজের রেস্ট নেওয়ারও সময় পাই না। সারাদিনই পড়াশোনার মধ্য দিয়ে দিন কেটে যায়। তেমন ভালো লাগে না। মাঝে মধ্যে সাংস্কৃতিক বা খেলাধুলা করলে মনটা ভালো থাকতো কিন্তু ক্লাস ও প্রাইভেটের চাপে সময় পাই না। স্কুলপড়ুয়া বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সজিব খান বলেন, সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কোচিং করতে হয়। এরপর স্কুল। তারপর বিকেলে আবারো প্রাইভেট পড়তে হয়। আর বিশেষ করে স্কুলের স্যারদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়। তাই আমরা বাধ্য হয়ে স্কুলের স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়ি। কোচিং আর প্রাইভেটের চাপাচাপিতে আমরা প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি।