ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
পলিথিন ব্যবহার ও জনসচেতনতা
আমাদের ছোটবেলায়, এমনকি কৈশোরেও বাজারে চটের ব্যাগ নিয়ে যেতাম। অনেকের হাতে দেখতাম কাপড়ের ব্যাগ। মাছ-মাংস ও তরিতরকারি সে ব্যাগে ভরেই বাসায় ফিরতাম। তখন পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ বাজারে আসেনি। কিন্তু বাজার বইতে কোনো অসুবিধা হয়নি। সে সময় কোমল পানীয় কাচের বোতলে বাজারজাত করা হতো। যতটা মনে আছে, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম প্লাস্টিক বোতলজাত পানি বাজারে আসে। শুরু হয় পলিথিনের শপিং ব্যাগ তৈরি ও ব্যবহার। তখন সচেতনতার অভাবে এই আমরাই ভাবতাম, জীবনকে কত সহজ করে দিয়েছে পলিথিন!
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্লাস্টিক ও পলিথিন ছড়িয়ে যেতে থাকে যত্রতত্র, যা পরিবেশের জন্য সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করতে শুরু করে। ২০০২ সালে পলিথিন
উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়। মনে পড়ে, তখন পলিথিন উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সময় চাইলে দুই বছরের জন্য এ আইনের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে দুই যুগ পার হতে চললেও উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার তো কমেইনি, বরং পরিবেশের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে উঠেছে। এখন বাজারে গেলে প্রতিটি আইটেম পৃথক পৃথক পলিথিনে ভরিয়ে দেওয়া হয়। আর তথাকথিত অফিস-আদালত অথবা মিটিং-সিটিংয়ে প্লাস্টিক বোতলজাত পানির ছড়াছড়ি। অপরিকল্পিতভাবে পলিথিন আর প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার এবং তা যত্রতত্র ফেলার ফলে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে অনেক আগেই। কারণ, পলিথিন-প্লাস্টিক অপচনশীল বিধায় মাটিতে মেশে না, বরং মাটির
উর্বরা শক্তিকে নষ্ট করছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া মশা-মাছির বংশবৃদ্ধি এবং রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে ভয়ানকভাবে। অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ শহর ও শহরতলির ড্রেনেজ সিস্টেম। অপরিকল্পিতভাবে পলিথিন পোড়ানোর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে। নৌযান থেকে প্লাস্টিক দ্রব্য ফেলার ফলে নদীর তলদেশে প্লাস্টিক বর্জ তৈরি হচ্ছে, যা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে মহাবিপর্যয় দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর ও ওয়েস্ট কনসার্নের এক যৌথ গবেষণায় জানা গেছে, প্রতিদিন দেশে ৩ হাজার টন পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়, যার মাত্র ৩৬ শতাংশ পুনঃব্যবহার হয়, ৩৯ শতাংশ ল্যান্ডফিলে যায় এবং ২৫ শতাংশ নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে জমা হয়। পলিথিন ও প্লাস্টিকের অপব্যবহার বিদেশেও দেখতাম। মিটিং-সিটিংয়ে প্লাস্টিক বোতলে পানি আর শপিংমলে পলিথিন ব্যাগের
ব্যবহার ছিল অন্য দেশেও। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে পরিবর্তন দেখেছি। শপিংমলে ফ্রি পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে কাপড় অথবা উন্নতমানের বহু ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ কিনতে হয়েছে জিনিসপত্র বহন করতে। দেখেছি, মিটি-সিটিংয়ে প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে কাচের সুদৃশ্য বোতল ও গ্লাস। পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতি ও বিকল্প বিষয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সব উদ্যোগ এক রকম ব্যর্থই বলতে হবে, আমাদের অসচেতনতার কারণে। আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সূচনাতেই এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে, যার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় কাচের বোতলে পানি পরিবেশন করা হচ্ছে। এছাড়া আজ ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যবহার
বন্ধ এবং ১ নভেম্বর থেকে সারা দেশে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু নাগরিক সচেতনতা ছাড়া এর শতভাগ বাস্তবায়ন কঠিন হবে। ব্যাপক প্রচার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা অসম্ভবই বলতে হবে। আইন প্রয়োগ করে যে আমাদের দেশে অনেক সিদ্ধান্তই কার্যকর করা সম্ভব হয়নি, সে অভিজ্ঞতা তো অনেক পুরোনো। এম এ হালিম : সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি halim_64@hotmail.com
উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়। মনে পড়ে, তখন পলিথিন উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সময় চাইলে দুই বছরের জন্য এ আইনের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে দুই যুগ পার হতে চললেও উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার তো কমেইনি, বরং পরিবেশের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে উঠেছে। এখন বাজারে গেলে প্রতিটি আইটেম পৃথক পৃথক পলিথিনে ভরিয়ে দেওয়া হয়। আর তথাকথিত অফিস-আদালত অথবা মিটিং-সিটিংয়ে প্লাস্টিক বোতলজাত পানির ছড়াছড়ি। অপরিকল্পিতভাবে পলিথিন আর প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার এবং তা যত্রতত্র ফেলার ফলে পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে অনেক আগেই। কারণ, পলিথিন-প্লাস্টিক অপচনশীল বিধায় মাটিতে মেশে না, বরং মাটির
উর্বরা শক্তিকে নষ্ট করছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া মশা-মাছির বংশবৃদ্ধি এবং রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে ভয়ানকভাবে। অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ শহর ও শহরতলির ড্রেনেজ সিস্টেম। অপরিকল্পিতভাবে পলিথিন পোড়ানোর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে। নৌযান থেকে প্লাস্টিক দ্রব্য ফেলার ফলে নদীর তলদেশে প্লাস্টিক বর্জ তৈরি হচ্ছে, যা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে মহাবিপর্যয় দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর ও ওয়েস্ট কনসার্নের এক যৌথ গবেষণায় জানা গেছে, প্রতিদিন দেশে ৩ হাজার টন পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়, যার মাত্র ৩৬ শতাংশ পুনঃব্যবহার হয়, ৩৯ শতাংশ ল্যান্ডফিলে যায় এবং ২৫ শতাংশ নদীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে জমা হয়। পলিথিন ও প্লাস্টিকের অপব্যবহার বিদেশেও দেখতাম। মিটিং-সিটিংয়ে প্লাস্টিক বোতলে পানি আর শপিংমলে পলিথিন ব্যাগের
ব্যবহার ছিল অন্য দেশেও। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে পরিবর্তন দেখেছি। শপিংমলে ফ্রি পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে কাপড় অথবা উন্নতমানের বহু ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ কিনতে হয়েছে জিনিসপত্র বহন করতে। দেখেছি, মিটি-সিটিংয়ে প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে কাচের সুদৃশ্য বোতল ও গ্লাস। পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতি ও বিকল্প বিষয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সব উদ্যোগ এক রকম ব্যর্থই বলতে হবে, আমাদের অসচেতনতার কারণে। আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সূচনাতেই এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে, যার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় কাচের বোতলে পানি পরিবেশন করা হচ্ছে। এছাড়া আজ ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যবহার
বন্ধ এবং ১ নভেম্বর থেকে সারা দেশে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু নাগরিক সচেতনতা ছাড়া এর শতভাগ বাস্তবায়ন কঠিন হবে। ব্যাপক প্রচার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা অসম্ভবই বলতে হবে। আইন প্রয়োগ করে যে আমাদের দেশে অনেক সিদ্ধান্তই কার্যকর করা সম্ভব হয়নি, সে অভিজ্ঞতা তো অনেক পুরোনো। এম এ হালিম : সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি halim_64@hotmail.com