সমতলে বিকৃত ইতিহাসের “রিসেট বাটন” ন্যারেটিভ এর মতো পাহাড়েও চলছে ইতিহাসের বিকৃতি – ইউ এস বাংলা নিউজ




সমতলে বিকৃত ইতিহাসের “রিসেট বাটন” ন্যারেটিভ এর মতো পাহাড়েও চলছে ইতিহাসের বিকৃতি

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৭ অক্টোবর, ২০২৫ | ১০:৫৭ 22 ভিউ
পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও অশান্ত । আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘাত । এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই লেখা । ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য হেমা চাকমা লিখেছেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নতুন করে বেশকিছু সংকট তৈরি হয়েছিল৷ সেগুলোর একটা হলো, বিভিন্ন জাতিসত্তার আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। বাংলাদেশে বসবাসরত মূলধারার জনগোষ্ঠীর বাইরে পার্বত্য চট্টগ্রামে আরও ১৩টি জাতিসত্তার বসবাস আছে। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবের দ্বারা তাদের নিজেদের জাতিগত পরিচয়ের বাইরে রাষ্ট্রকর্তৃক আরেকটা পরিচয় চাপিয়ে দেওয়া হলো, বলা হলো,”তোরা সব বাঙালি হয়ে যা।” শেখ মুজিবের বলা এই আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ বাক্যটি পাহাড়ি মানুষদের আত্মপরিচয় ধারণ করার গণতান্ত্রিক অধিকারকে অস্বীকার করে। এই বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষগুলোর নিজস্ব সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, বর্ণমালা থাকার

পরও যে বাঙালিত্বের আধিপত্য রাষ্ট্র দেখালো, সেটা তারা মানতে চায় না। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যকার সময়ে রাষ্ট্রের সাথে নানাফ্রন্টের আলাপে যখন সমাধান মিললো না, তখন এই অঞ্চলে ক্ষোভ ও বিদ্রোহের আভাস শুরু হলো। ০৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর ‘রিসেট বাটন’-এর নামে দীর্ঘ সময় ধরে চলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে স্বাধীনতাবিরোধীরা নতুন ন্যারেটিভ নিয়ে সকলকে বিভ্রান্ত করে তাদের লক্ষ্য পূরণে মোক্ষম সময় এখন, কারণ রাষ্ট্রযন্ত্র পুরোপুরি তাদের দখলে। পাহাড়ি ছাত্র-যুবাদেরও তারা বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আজকের লেখার সারবস্তু নেওয়া হয়েছে চাকমাদের দ্বারা প্রকাশিত ‘মাওরুম, এম এন লারমা, বিশেষ সংখ্যা’ থেকে, যার প্রকাশকাল নভেম্বর ২০০৭। এই সংখ্যায় সৈয়দ আবুল মকসুদ,

পংকজ ভট্টাচার্য, ড. কামাল হোসেন সহ আরও জাতীয় নেতৃবৃন্দের লেখা রয়েছে। এবার আসি সমস্যার মূল কারণ নিয়ে। এটা সকলের জানা, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ ও ১৯৬২ সালে বাঁধের সব গেট বন্ধ করে দেওয়ায় ৭৭৭ বর্গ কিলোমিটার জীবন-জনপদ প্লাবিত হয়ে বাস্তুচ্যুত হয় অধিবাসীরা। পাকিস্তানিরা এই বাঁধ নির্মাণ করে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের সম্মতিতে, যার পুরস্কার হিসেবে তাকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তান সরকারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তানজানিয়ায় নিযুক্ত হন এবং পাকিস্তানি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। সুতরাং এই সমস্যা তৈরি করে তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার এবং চাকমা রাজা এতে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাকমা জাতির সঙ্গে বেঈমানি করেন। এটা প্রমাণিত যে

পাকিস্তানি শোষণ, বঞ্চনার শিকার হন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিবাসীগণ, যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো চাকমা রাজার বেঈমানি। মুক্তিযুদ্ধে কিছু পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভূমিকা উল্লেখ না করেই আসা যাক বাংলাদেশ সরকারের শুরুর দিকে তাদের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। আবুল মকসুদ লিখেছেন, ‘৭২-এ সংবিধান রচনার সময় গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ও ৭৩-এ যখন প্রথম জাতীয় সংসদ অধিবেশন বসে, তাকে প্রায়শই দেখতাম করিডোরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হাস্য-রসিকতাও করতেন।’ ১৯৭৪ সালে পংকজ ভট্টাচার্য বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এম. এন. লারমার একান্ত বৈঠকের আয়োজন করেন। দীর্ঘ আলাপচারিতায় বঙ্গবন্ধু লারমাকে বলেন, বাকশালে গভর্নর হিসেবে যোগ দিয়ে নিজের মতো করে পাহাড়ি জনগণের সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ভাষা, ঐতিহ্য রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন এবং

স্থানীয় সরকার হিসেবে অনেকাংশে স্বশাসন প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। বঙ্গবন্ধু যদি নিহত না হতেন, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস হতো পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ইচ্ছারই প্রতিফলন। ড. কামাল হোসেন লিখেছেন, ‘লারমাকে আমরা আশ্বস্ত করেছিলাম যে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর কোনো বৈষম্য করা হবে না। তাকে তার উন্নয়ন পরিকল্পনা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনে তুলে ধরার পরামর্শ দিলে তিনি তা করেন।’ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লারমার সাক্ষাৎ হওয়ার প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, ‘লারমার উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার বৈঠকের ব্যবস্থা করলাম। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লারমার সে বৈঠক খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল। লারমার পরিকল্পনা শুনে বঙ্গবন্ধু বলে উঠলেন, এসব খুবই যুক্তিসঙ্গত। বঙ্গবন্ধু আমাকে তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিয়েছিলেন লারমার প্রস্তাবনার আলোকে

বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করতে।’ এছাড়াও বঙ্গবন্ধু পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছে বিশেষ প্রস্তাবনা দেওয়ার নির্দেশনাও দেন। এবার আসি আরেক বিতর্কিত প্রচারণা নিয়ে। সেটা হলো সকল পাহাড়ির বাঙালি হওয়া নিয়ে। ড. কামাল বলেন, ‘এটা দীর্ঘ অনুভূতির ব্যাপার। একটা রাষ্ট্রের জন্য জাতিগত স্বীকৃতির জন্য আমাদেরকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল। জাগো বাঙালি জাগো বলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। বাঙালি জাতির স্বীকৃতির জন্য আমাদের রক্তাক্ত যুদ্ধও করতে হয়েছিল। বাঙালি পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র মুক্ত হতে পারেনি। … আমাদের বাঙালি হওয়া অন্য কাউকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় ছিল না। পাহাড়িদের স্বাতন্ত্র্য পরিচয়, তাদের নিজস্ব পরিচিতি বাঙালি জাতির পরিচয়ের সঙ্গে বিরোধজনক হবে,

সে চিন্তা আমরা করিনি।’ এই বিষয়ে ড. কামাল আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা মাওরুমেই লিখেছেন। এছাড়াও এই বিষয়ে জাতীয় সংসদে দীর্ঘ আলোচনাও মাওরুমে লেখা হয়েছে, যা মূলত মীমাংসিত। উল্লেখ্য, লারমার ‘জুম্ম জাতি’ বিষয়টি কিন্তু ১৩টি উপজাতির আলাদা পরিচিতি যেভাবে তিনি এক জাতীয় পরিচয়ের ছাতার নিচে আনতে চেয়েছিলেন, তা কি সরকারের কাছে বার্গেইনিং চিপ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তবে যাই হোক না কেন, ৭২-এর সংবিধানে সকল জাতিসত্তার সম-অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সুবিধার সুযোগ রয়েছে, যার ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তথা পাহাড়িদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। বর্তমানের পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির সূচনা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরবর্তী সময় থেকেই। পাকিস্তানিদের লারকানা নীলনকশা যেভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, একইভাবে পাকিস্তানি মদদে বাঙালি সেটলারদের জিয়াউর রহমান পাঠিয়েছিলেন। এই সেটলারদের সংখ্যা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চেয়ে বেশি। পিতা যেমন পাহাড়িদের প্রতি সংবেদনশীল ছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের চলে আসা সংঘাত নিরসন করেন শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের সাক্ষরিত শান্তি চুক্তির মাধ্যমে। আজকে চাকমা তথা সব পাহারি জনগোষ্ঠির ছাত্র-যুবারা নিজেদের অজান্তেই তাদের শত্রুদের ন্যারেটিভ দ্বারা প্রভাবিত, যা তাদের জন্য ক্ষতিকর। যত তাড়াতাড়ি তারা এটা বুঝতে পারবে, ততই তাদের মঙ্গল বয়ে আনবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বড় ছাঁটাই আসছে বাজারে সবজির সেঞ্চুরি: ১০০ টাকার নিচে মিলছে না কিছুই রাজনৈতিক অস্থিরতায় রপ্তানিতে ধাক্কা, বিনিয়োগে স্থবিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি: ভয়াবহ সংকটে অর্থনীতি পুলিশি বাধায় চারুকলার পর গেণ্ডারিয়াতেও পণ্ড ‘শরৎ উৎসব’: ১৯ বছরের ধারাবাহিকতায় ছেদ তালেবান মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর কাবুলে দূতাবাস চালুর ঘোষণা ভারতের, ভারতকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ আখ্যা আওয়ামী লীগ কি সশস্ত্র সংগ্রাম করবে? কারাবন্দীদের উপর নির্যাতন: সংবিধান ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি বেবিচকের এ কেমন সংস্কার! দুদকের মামলার একদিন পরই আসামী উল্টো পুরস্কৃত, পেলেন আরও বড় দায়িত্ব নৃশংস বর্বরতা আর নরকীয়তার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল – নূরুল মজিদ হুমায়ূনের নিথর দেহে হাতকড়া লাগিয়ে। ন্যায়বিচারের পথে এক ধাপ এগোল বাংলাদেশ ট্রাম্প নয় শান্তিতে নোবেল পেলেন ভেনেজুয়েলার মারিয়া ট্রাম্পকে হারিয়ে নোবেল জেতা কে এই মাচাদো? শিশুদের ‘নোবেল’ শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত সাতক্ষীরার তরুণ সুদীপ্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে ৬৫ ভরি স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার ২ টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ ১৯ বছর ধরে ইসরায়েলে বন্দি কে এই ‘দ্বিতীয় ইয়াহিয়া সিনওয়ার’? হংকংয়ের কাছে হেরেও যে সমীকরণে এশিয়ান কাপে খেলবে বাংলাদেশ মিরপুরে কুড়িয়ে পাওয়া ককটেল বিস্ফোরণ, শিশু আহত শাহবাগ এলাকা থেকে ৩ লাশ উদ্ধার