আবাসন সংকটে ডিএমপি, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আতঙ্কে রাত কাটে পুলিশের – ইউ এস বাংলা নিউজ




আবাসন সংকটে ডিএমপি, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আতঙ্কে রাত কাটে পুলিশের

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১২ আগস্ট, ২০২৫ | ৭:৪৩ 20 ভিউ
পুকুরের পূর্বপাশে তাঁবু দিয়ে ঘেরা পাশাপাশি দুটি গোডাউনের মতো ঘর। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, মালপত্র রাখার জন্য বানানো হয়েছিল; পরে ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে পড়ে। তবে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ব্যবহারের অনুপযোগী এই তাঁবুতেই বাস করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা। তাও খোদ রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। গত ২ জুলাই দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, সামনে টানানো দড়িতে কয়েকটি পোশাক ঝুলছে। রোদে শুকানোর জন্য এগুলো দেওয়া হয়েছে। তাঁবুর ভেতরে প্রবেশপথের কাপড় ছেঁড়া, এটিকেই দরজা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ছেঁড়া তাঁবু সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, লম্বা তিন সারিতে ৩৪টি চিকন চৌকি পাতা। কোনো চৌকিতে কেউ শুয়ে আছেন, কোনোটি ফাঁকা। দুটি

চৌকির মাঝে শুধু দাঁড়ানোর মতো জায়গা। তার পাশে বাঁশ ও পাইপ লম্বা করে বাঁধা। তাতে টানানো রয়েছে মশারি। তাঁবুর খুঁটিতে টানানো রশিতে ঝুলছে জামা, গেঞ্জি, প্যান্ট, লুঙ্গি, গামছাসহ ব্যবহৃত পোশাক। দুপাশের চৌকির মাঝখান দিয়ে লম্বা সরু পথ। তা দিয়ে একজন হাঁটলে আরেকজন পাশ কাটানোর সুযোগ নেই। এই পরিবেশেই বাধ্য হয়ে বাস করছেন তারা। শুধু এই তাঁবুতেই নয়, পরিত্যক্ত ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কে রাত কাটে আরও অনেকের। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ২০টি ব্যারাকের প্রায় অভিন্ন চিত্র। এসব ব্যারাকের ধারণক্ষমতা ৯ হাজার ২৯৫ জনের। কিন্তু সেখানে বাস করছেন ১৩ হাজার ১১৩ জন; অতিরিক্ত অবস্থান করছেন তিন হাজার ৮১৮ জন। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার

চেয়ে ৪১ শতাংশ সদস্য বেশি বাস করছেন। এসব ব্যারাকে এসআই থেকে কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্যরা থাকেন। ডিএমপির পুলিশ কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারের সংকটের চিত্রও ভয়াবহ। এ ছাড়া ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে ১৪টির কার্যক্রম চলে ভাড়া বাড়িতে। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের ব্যারাক ও বাসা সংকট অনেক বছর ধরে চলে আসছে। ব্যারাকে ধারণক্ষমতার বেশি থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে উঠেছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানা সময় কথা বললেও সমাধান হয়নি। যারা ব্যারাকে বাস করেন, তারা সাধারণত দীর্ঘদিন পরিবারের সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান না। এতে তাদের মধ্যে হতাশা, অস্থিরতা এবং ভয়ংকর মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। গত ৮ জুলাইয়ে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ডিএমপিতে জনবল

৩৪ হাজার ২৪ জন। এর মধ্যে বর্তমানে ৩২ হাজার ৩১৯ জন কর্মরত। এর মধ্যে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত পদমর্যাদার ৩০ হাজার ৪৪৩ জন। তাদের বিপরীতে কোয়ার্টারে ফ্ল্যাট রয়েছে ৮২৯টি, যা মোট জনবলের ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। ৯৭ দশমিক ২৮ শতাংশ জনবলেরই জন্য সরকারি বাসা নেই। মোট জনবলের মধ্যে কনস্টেবল ও নায়েক ২১ হাজার ৮০২ জন। তাদের জন্য কোয়ার্টারে ফ্ল্যাট ৩৫৪টি। তিন হাজার ৮৮৩ জন এএসআইর বিপরীতে ৬০টি বাসা রয়েছে। তিন হাজার ৯২৩ জন এসআই ও সার্জেন্টের জন্য বরাদ্দ ৩২৭টি। ৫৯৫ জন পরিদর্শকের বিপরীতে বাসা সংখ্যা ১০। ২৪০ জন এডিসি ও সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) বিপরীতে বাসা বরাদ্দ

৭৮টি। শতকরা হিসাবে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ এডিসি ও এসি পদমর্যাদা কর্মকর্তার বাসা রয়েছে। ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ পরিদর্শক, ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ এসআই ও সার্জেন্ট, ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ এএসআই এবং ১ দশমিক ৬২ শতাংশ কনস্টেবল ও নায়েকদের বাসা রয়েছে, যেখানে তারা পরিবার নিয়ে থাকার সুযোগ পান। তবে শূন্য পদের এক হাজার ৭০৫ জন যোগদান করলে বরাদ্দের হার আরও কমবে। রাজারবাগ ব্যারাকে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত সদস্য রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ব্যারাক সংখ্যা ৯। এর ধারণক্ষমতা পাঁচ হাজার ২১৫ জন হলেও সেখান বাস করেন আট হাজার। ধারণক্ষমতার ৩০ শতাংশ সদস্য অতিরিক্ত বাস করেন। তাঁবু দিয়ে ঘিরে ঘরের আদলে করা চারটি ঘরে থাকেন

১৮১ জন। একটি পরিত্যক্ত ভবনে ব্যারাক করা হয়েছে, সেটিও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এটি একসময় অস্ত্রাগার ভবন ছিল। অস্ত্রাগার স্থানান্তরিত হওয়ার পর পাঁচতলা ভবনটি ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে ৮৯৯ জন থাকেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ২ জুলাই সেখানে সরেজমিন দেখা যায়, ভবনের ছাদের তলদেশ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। তিনতলায় ঢুকে দেখা গেল, দুই পাশে সারিবদ্ধ চিকন চৌকি। একটির সঙ্গে আরেকটি প্রায় লাগানো। এই ভবনের বাসিন্দাদের আতঙ্কে রাত কাটে। কনস্টেবল শামীম আহমেদ বলেন, ভবনে ওঠার আগেই জেনেছি, এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও উঠেছি। কারণ, থাকার জায়গা নেই। পুকুরপাড়ের তাঁবুতে থাকা কনস্টেবল পিয়ার মাহমুদ বলেন, তাঁবুতে একে তো প্রচণ্ড গরম, তার ওপর মাঝের সারিতে ফ্যান

নেই। তাঁবু দিয়ে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে। পোশাক সব ঝুলছে। মশার উপদ্রব তো আছেই। ১ নম্বর ব্যারাকে গিয়ে দেখা যায়, চৌকির ওপর পোশাক ঝুলছে। ট্রাঙ্ক রাখার জায়গা ও থাকার জায়গারও সংকট। একজন ডিউটিতে গেলে আরেকজন সেই বিছানায় থাকেন। কনস্টেবল নাজিবুল্লাহ হৃদয় বলেন, অনেক সময় সহকর্মীর সঙ্গে সিট ভাগাভাগি করে থাকতে হয়। আবার একজন ডিউটিতে গেলে তাঁর ফাঁকা সিটে আরেকজন বিশ্রাম নেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইন ব্যারাকে থাকেন এসআই মজনু মিয়া। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর স্ত্রী বাস করেন গ্রামের বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলায়। ঢাকায় অতিরিক্ত বাসা ভাড়াসহ যাবতীয় ব্যয় বেশি হওয়ায় তিনি পরিবারকে ঢাকায় আনেননি। মজনু মিয়া বলেন, সন্তান-স্ত্রী থেকে দূরে একা থাকা কষ্টের। তারপরও ব্যয়ের কথা চিন্তা করে মেনে নিতে হয়। ঢাকায় পরিবার রেখে খরচ চালানো কষ্টকর। বছরে তিন-চারবার ছুটি নিয়ে বাড়ি যাই। মিরপুর পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) পূর্ব বিভাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের ব্যারাকের তিনটি ফ্লোরে থাকার ব্যবস্থা ১৮০ জন ফোর্সের, যা প্রতি তলায় ধারণক্ষমতা ৬০ জন। কিন্তু প্রতি তলায় থাকছেন ১০৫ জন। তিন ফ্লোরে মোট ৩১৫ জন। বেশি আছেন ১৩৫ জন। মিরপুর পিওএম পুলিশ লাইনে পশ্চিম বিভাগের তিনটি ব্যারাকে ইউনিট সংখ্যা ২১। প্রতি ইউনিটে ৫০ জন করে এক হাজার ৫০ জন থাকার কথা। এসব ইউনিটে অবস্থান করছেন এক হাজার ৩৬৩ জন। মিরপুর পিওএম পুলিশ লাইনে উত্তর বিভাগের ব্যারাকে ইউনিট আছে ২৯টি। প্রতি ইউনিটে ৫০ জন হিসাবে থাকার ব্যবস্থা এক হাজার ৪৫০ জনের। অথচ বাস করছেন এক হাজার ৭৩৬ জন। পিওএম দক্ষিণ বিভাগের ব্যারাকের ইউনিট সংখ্যা ২৮। প্রতি ইউনিটে ৫০ জন করে এক হাজার ৪০০ জন থাকার কথা থাকলেও বাস করতে হচ্ছে এক হাজার ৬৯৯ জনকে। পিওএমের যুগ্ম কমিশনার খন্দকার ফরিদুল ইসলাম বলেন, পিওএমের ২ নম্বর ব্যারাক ভবন অনেক পুরাতন। ভবনটির পরিস্থিতি নাজুক। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই ফোর্স থাকছে। এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে ফোর্স রাখার জায়গা পাব কোথায়? থানা-ফাঁড়ি চলছে ভাড়া বাড়িতে নিজস্ব জায়গা বা ভবন না থাকায় ডিএমপির অনেক থানা ও ফাঁড়ি ভাড়া বাসায় কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রতিবছর ভাড়া দিতে হয় প্রায় পাঁচ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ৫০টি থানার মধ্যে নিজস্ব ভবন রয়েছে ২৫টির। ১৪টি ভাড়া বাড়িতে থানার কার্যক্রম চলছে। ছয়টি থানার কাজ চলছে ফাঁড়িতে। অন্য স্থাপনায় রয়েছে পাঁচটি থানা। ৫২টি ফাঁড়ির মধ্যে আটটি রয়েছে ভাড়া করা ভবনে। নিজস্ব জায়গায় রয়েছে ১৫টি। অন্যান্য স্থাপনায় রয়েছে ২৯টি। এ ছাড়া ডিএমপির আটটি ক্রাইম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) কার্যালয়ের মধ্যে লালবাগ কার্যালয় ভাড়া ভবনে। ডিসি ট্রাফিক বিভাগের আটটির মধ্যে তিনটিই ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চলছে– লালবাগ, মিরপুর ও গুলশান বিভাগের কার্যালয়। ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, জনবল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন ভবন বা ব্যারাক নির্মাণ করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া থানার নিজস্ব ভবনের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সপ্তাহখানেকের মধ্যে একীভূত হচ্ছে ৫ ইসলামী ব্যাংক: গভর্নর সহস্র বছরের জ্ঞানের বাতিঘর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় এবার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬৩.৫০ বিলিয়ন ডলার ইন্দোনেশিয়ায় ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প সাবেক স্ত্রীকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা, যুবক গ্রেফতার কুষ্টিয়া খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে নৈশপ্রহরীর লাশ উদ্ধার গাজায় আশা জাগাতে ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টা’ কাজে লাগাচ্ছে তুরস্ক: এরদোগান ইমরানের জামিন আবেদন নিয়ে পাঞ্জাব সরকারকে নোটিশ দিল সুপ্রিম কোর্ট নিজের লিভার দিয়ে সতীনকে বাঁচালেন সৌদি নারী যুক্তরাজ্যে সহপাঠীদের ওপর নজরদারি চালায় চীনা শিক্ষার্থীরা! রাজ-শুভশ্রী-রুক্মিণীর কাছে ক্ষমা চাইলেন দেব বাবরকে পেছনে ফেলে শীর্ষে গিল সবসময় ভেবেছি শিল্পীসত্তা যেন বিক্রি না হয়ে যায়: ঋতাভরী ইসির হারানো ক্ষমতা ফিরছে, জোট হলেও ভোট নিজ প্রতীকে আবাসন সংকটে ডিএমপি, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আতঙ্কে রাত কাটে পুলিশের স্থলপথে বাংলাদেশের আরও ৪ পাটপণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বেলুচিস্তানের মাজিদ ব্রিগেডকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, খুবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি রাবি উপাচার্যের বাসভবনের গেটে তালা দিলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা ডাকসুর মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু মঙ্গলবার