ঢাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা অসহায়! – ইউ এস বাংলা নিউজ




ঢাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা অসহায়!

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৩ জুলাই, ২০২৫ | ১০:১৯ 25 ভিউ
রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার বড় ধরনের গলদ আবারও ধরা পড়ল উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায়। সোমবার স্কুলটিতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩১ জনের প্রাণহানি হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ১৯ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাকিরা মারা যান চিকিৎসাধীন অবস্থায়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা থাকলে হয়তো এত প্রাণহানি এড়ানো যেত। রাজধানীতে চারটি মেডিকেল কলেজ ও দুটি জেনারেল হাসপাতাল থাকলেও এর মধ্যে মাত্র একটিতে ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালিটি সার্ভিস (ওএসইসি) বিদ্যমান রয়েছে। পাঁচটি হাসপাতালে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যে দুটি হাসপাতাল রয়েছে

এর মধ্যে একটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, অন্যটি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল। এ দুটি হাসপাতালেই দুর্যোগ মোকাবিলায় এ ধরনের কোনো সক্ষমতা নেই। হাসপাতাল দুটি তাদের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দিয়ে শিক্ষার্থীসহ অন্য আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারত, সে কাজটিও তারা করেনি। দুর্ঘটনাস্থল থেকে যত দ্রুত রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব তাদের বাঁচানোর সুযোগ তত বেড়ে যায়; কিন্তু সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ সে কাজটি করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, এক ঘণ্টা আগে হাসপাতালে নেওয়া গেলে দগ্ধ রোগীদের অন্তত ৫০ শতাংশ প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ থাকে। এক ঘণ্টা আগে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে তাদের পর্যাপ্ত পানিশূন্যতার ঘটনা ঘটত না। দগ্ধ রোগীদের শরীরে পানিশূন্যতা থেকে সেপটিক

শক, হাইপোলিউকেমিক শক, এমনকি কিডনি বিকল হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। অথচ ঢালাওভাবে বলা হয়ে থাকে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে, বিষয়টি একেবারেই সত্য নয়। এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট ক্রাইসিস সেন্টার গড়ে ওঠেনি। যারা হাসপাতালে কাজ করছেন তাদের কার কী দায়িত্ব, সেটিও তারা জানেন না। হাসপাতালে কর্মীদের মধ্যে ক্লিনিক্যাল স্টাফ এবং নন-ক্লিনিক্যাল স্টাফদের জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না। এটি একটি সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষণ, যা সবার ক্ষেত্রে প্রয়োজন। সে ধরনের প্রশিক্ষণ থাকলে এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওএসইসি এমন একটি ব্যবস্থাপনা, যেখানে কমপক্ষে ২৯ শয্যার একটি

জরুরি বিভাগ থাকবে (প্রচলিত জরুরি বিভাগ নয়)। সেখানে সব ধরনের প্রয়োজনীয় অনুসর্গ এবং মিনি ল্যাব থাকবে, থাকবে সব ধরনের লাইভ সেভিং পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যন্ত্রপাতি। ওএসইসিতে চিকিৎসাধীন কোনো রোগীর জন্য বাইরে থেকে কিছুই কিনে আনতে হবে না। প্রয়োজনীয় সব লজিস্টিক এখানকার ছোট স্টোরে সংরক্ষিত থাকবে। একমাত্র রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ধরনের সুবিধা রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো জরুরি পরিস্থিতিতে রোগীদের গুরুত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। রাজধানীর

ছয়টি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। বাকি ইনস্টিটিউট, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস রয়েছে। অথচ সোমবারের ঘটনায় দেখা গেল দগ্ধ শিশুদের নিয়ে বাবা-মা আহাজারি করছেন, একটা যানবাহনের জন্য করুণ আর্তনাদ করছেন, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারি যানবাহনের সুবিধা না পাওয়া গেলে যানবাহনগুলোর প্রয়োজনীয়তা কী? এটা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকছে। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো পুল চিকিৎসক। মাইলস্টোন স্কুলে যে দুর্ঘটনায় ঘটেছে, এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেসব চিকিৎসকের প্রয়োজন তার একটি পুল থাকতে হবে। কোন হাসপাতালে কতজন বার্ন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, কতজন প্লাস্টিক সার্জন রয়েছে, কতজন কিডনি বিশেষজ্ঞ

রয়েছেন, কতজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন—তার একটি পুল থাকলে এবং একটি গ্রুপে তারা সম্পৃক্ত থাকলে একটি মেসেজ দিয়ে সবাইকে বিষয়টি জানানো এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া সম্ভব। ডা. সামন্ত লাল সেন বার্ন ইনস্টিটিউটে কর্মরত থাকাকালে তিনি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জনদের একটি পুল তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বিপুলসংখ্যক রোগীকে সঠিক সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসকের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ও কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ক্রাইসিস সেন্টার বলে কিছু নেই। ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার নামে যে সেবাটি চালু আছে সেটি নারীদের বিশেষ সেবার ব্যবস্থা, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সেবা

প্রদানের জন্য নয়। আমাদের হাসপাতালগুলোয় জরুরি বিভাগ থাকলেও সেখানে জরুরি সেবাদানের সক্ষমতা নেই। তারা মূলত কোনো রোগী এলে তাকে বিভিন্ন বিভাগে রেফার করা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করেনি। নামমাত্র জরুরি বিভাগ থাকলেও তাদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কেও অবহিত নয়। তিনি বলেন, এইটা শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর ন্যস্ত করলে হবে না। এর সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে যুক্ত করতে হবে। কেননা স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে এত বড় দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোয় ট্রায়জ স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে বড় ধরনের দুর্যোগে আক্রান্ত রোগীদের কাকে কোন পরিস্থিতিতে আগে চিকিৎসা দিতে হবে, কাকে কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। অধ্যাপক জাকির আরও বলেন, একটি আইন রয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক কর্মী বা শিক্ষার্থী থাকে, সেখানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক রাখতে হবে। বাংলাদেশের গার্মেন্টসগুলোয় এ আইনটি প্রতিপালিত হলেও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মাইলস্টোন স্কুলে এ ধরনের একজন চিকিৎসক থাকলে তিনিও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারতেন। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোয় বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জনে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
চমকপ্রদ রূপে ফিরছে টাটা ন্যানো, থাকছে দুর্দান্ত সব ফিচার! বিমান বিধ্বস্ত: হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সবশেষ তথ্য ওবামা রাষ্ট্রদ্রোহী, প্রমাণ আছে: ট্রাম্প ‘ভাই, টেনশন কইরেন না’ সচিবালয়ে ভাঙচুর-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা শুল্কে সুবিধা পেতে বাড়তি দামে যুক্তরাষ্ট্রের গম কিনবে সরকার ডেঙ্গুতে একদিনে ৪ মৃত্যু অসুস্থ্য পুত্রবধূকে দেখতে যাওয়া হলো না ৮ জনের গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে হাজারের বেশি নিহত, দুর্ভিক্ষের শঙ্কা শেরপুরে টিসিবির ১৯ বস্তা চাল জব্দ সৈয়দপুরে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে ১৯ জনের অধিক আহত প্রেম আসলে বন্ধুত্ব ও সংযোগ ছাড়া কিছুই নয় : অনন্যা পান্ডে ফের সংসার ভাঙার গুঞ্জনে যা বললেন দিব্যা আগরওয়াল ঢাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা অসহায়! বিধ্বস্তের আগে কন্ট্রোল রুমে কী বলেছিলেন পাইলট তৌকির মধ্যপ্রাচ্য : বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র টঙ্গীতে ৪ ছিনতাইকারীকে গণপিটুনি বিভিন্ন বিলে অবাধে পোনাসহ মাছ নিধন জাপানের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য চুক্তির দাবি ট্রাম্পের ভারতে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজে আগুন