বিশ্বসাহিত্যে ফিলিস্তিনি লেখকদের বিখ্যাত ৫ বই – ইউ এস বাংলা নিউজ




বিশ্বসাহিত্যে ফিলিস্তিনি লেখকদের বিখ্যাত ৫ বই

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৮ মার্চ, ২০২৫ | ৮:৫২ 13 ভিউ
ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত ২০২৫ সালের বহুপ্রতীক্ষিত আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ফিলিস্তিনি লেখক ইবতিসাম আজেমের লেখা ‘দ্য বুক অব ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’। ফিলিস্তিনি মানুষের ওপর বয়ে চলা এই অস্থির ও সহিংস সময়েও এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনি সাহিত্যের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ওপর এক নতুন আলো ফেলেছে। এখানে তুলে ধরা হলো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ফিলিস্তিনি সাহিত্যকর্ম; যা তাদের বাস্তবতা, স্মৃতি ও অস্তিত্বের গল্প বলে। ১. দ্য বুক অব ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স বর্তমান সময়ের ফিলিস্তিনি সাহিত্যের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ইবতিসাম আজেমের লেখা ‘দ্য বুক অব ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ (২০১৪) এক অদ্ভুত কল্পনার জগতে পাঠককে নিয়ে যায়, যেখানে একরাতে হঠাৎ করেই দখলদার ইসরাইলে বসবাসরত সব ফিলিস্তিনি মানুষ রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ইসরাইলি

সমাজকে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দেয় এবং পরিচয়, স্মৃতি ও অস্তিত্ব নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে। উপন্যাসটি লেখকের নিজ শহর জাফাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, যেখানে পালাক্রমে দুটি চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে—আলা নামের এক ফিলিস্তিনি যুবক এবং তার ইসরাইলি বন্ধু এরিয়েল, যিনি আলার হারিয়ে যাওয়া ডায়েরিতে আলাকে আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। আজেমের লেখনীতে বাস্তবতা ও কল্পনার মিশ্রণে তৈরি হয়েছে গভীর এক আলোচনার ক্ষেত্র, যা ফিলিস্তিনি অস্তিত্বের অনিশ্চয়তা ও নিশ্চিহ্নকরণের বাস্তবতাকে সামনে আনে। উপন্যাসটির অভিনব কাঠামো এবং তাত্ত্বিক গভীরতার জন্য এটি ২০২৫ সালের ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। বিচারকরা একে ‘স্মৃতিগঠনের অসাধারণ প্রয়াস এবং মনস্তাত্ত্বিক ভূগোলের অনন্য উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ২. মাইনর ডিটেইল ফিলিস্তিনি

লেখক আদানিয়া শিবলির লেখা মাইনর ডিটেইল (২০১৭) সহিংসতা ও ইতিহাসের দীর্ঘস্থায়ী ছায়াকে গভীরভাবে অনুধাবন করে। উপন্যাসটি দুটি সময়কালকে একসঙ্গে বুনেছে— প্রথম অংশে, ১৯৪৯ সালের নেগেভ মরুভূমিতে ঘটে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, যেখানে ইসরাইলি সৈন্যরা এক তরুণ বেদুইন মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করে। দ্বিতীয় অংশটি বর্তমান সময়ের রামাল্লা শহরের এক তরুণীকে অনুসরণ করে, যে এই ‘মাইনর ডিটেইল’ বা ইতিহাসের অগোচরে চলে যাওয়া ঘটনাটির সত্যতা খুঁজতে উন্মুখ হয়ে ওঠে। লেখক শিবলির সংক্ষিপ্ত ও গভীর লেখনী ব্যক্তিগত ও ঐতিহাসিক স্মৃতির জটিলতা তুলে ধরে। ২০২১ সালের ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজের তালিকায় স্থান পাওয়া এই উপন্যাসকে বিচারকরা ‘অত্যন্ত সংযত অথচ শৈল্পিকভাবে সুন্দর’ বলে প্রশংসা করেছেন, যা বিশ্বব্যাপী

জাতিগত সংঘাত এবং নিপীড়নের বাস্তবতা তুলে ধরে। ৩. ভেলভেট হুজামা হাবায়েবের লেখা ‘ভেলভেট’ (২০১৬) জর্ডানের বাকায়া শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত একজন নারীর গল্প তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হাওয়া, যিনি অত্যন্ত দক্ষ এক দর্জি। কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও তিনি তার সৃষ্টিশীলতায় আশ্রয় খুঁজে নেন। তার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে পাঠকেরা ফিলিস্তিনি নারীদের জীবনসংগ্রাম, তাদের সহনশীলতা এবং ভালোবাসা ও ঐতিহ্যের জটিলতা উপলব্ধি করতে পারেন। উপন্যাসের শিরোনাম ‘ভেলভেট’ প্রতীকী অর্থ বহন করে—একদিকে বিলাসবহুল কাপড়ের মসৃণতা, অন্যদিকে হাওয়ার কঠিন বাস্তবতার বিপরীত চিত্র তুলে ধরে। ২০১৭ সালে ‘নাগিব মাহফুজ পদক’ জয় করা এই উপন্যাসের লেখনীর সিনেমাটিক গুণাবলী এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সমাদৃত হয়েছে। এটি শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণেই নয়, বরং মানুষের অন্তর্নিহিত

যন্ত্রণা ও অস্তিত্বের সংকটের দিক থেকেও অনন্য। ৪. আমং দ্য আলমন্ড ট্রিজ হুসেইন বারঘোতির ‘আমং দ্য আলমন্ড ট্রিজ’ (২০০৪) এক আত্মজৈবনিক উপাখ্যান। বইটি তিনি নিজের জীবনের অন্তিম পর্বে লিখেছিলেন, যখন তিনি মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন। ফিলিস্তিনে ফিরে এসে বারঘোতি নিজের বদলে যাওয়া জন্মভূমিকে নতুন করে আবিষ্কার করেন এবং অতীতের স্মৃতি ও বর্তমানের বাস্তবতার মধ্যে এক গভীর সংযোগ খুঁজে পান। এই গ্রন্থে তার ব্যক্তিগত উপলব্ধির পাশাপাশি দখলদারিত্বের কারণে ফিলিস্তিনের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। ২০০৪ সালে এটি মূলত আরবিতে প্রকাশিত হলেও ২০২২ সালে ইংরেজিতে অনূদিত হয় এবং ২০২৩ সালে ‘প্যালেস্টাইন বুক অ্যাওয়ার্ডস’ জিতে নেয়। বইটি তার গভীর আত্মবিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি ও কাব্যিক গদ্যের জন্য

প্রশংসিত হয়েছে। ৫. ওয়াইল্ড থর্নস ফিলিস্তিনের বিখ্যাত লেখক সাহার খলিফার ‘ওয়াইল্ড থর্নস’ (১৯৭৬) ফিলিস্তিনি সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। এই উপন্যাসে ১৯৭০-এর দশকের পশ্চিম তীরের দখলদারিত্বের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র উসামা, যিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন। তিনি আশা করেছিলেন, তার জাতি দখলদারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—কেউ দখলদারদের কারখানায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে, আবার কেউ প্রতিরোধ আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে। এটি প্রথম ফিলিস্তিনি নারীবাদী উপন্যাসগুলোর একটি, যেখানে দখলদারবিরোধী লড়াইয়ে নারীদের ভূমিকা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক মুক্তিযুদ্ধের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে উপন্যাসটি। এই উপন্যাসটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং এখনো ফিলিস্তিনি সাহিত্য ও প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়। এই

পাঁচটি সাহিত্যকর্ম কেবল গল্প নয়, বরং ফিলিস্তিনি জনগণের অস্তিত্বের প্রামাণ্য দলিল। এগুলো দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, ইতিহাসের পুনঃসংগঠন এবং মানুষের দৃঢ়তার অনন্য নিদর্শন। প্রতিটি পৃষ্ঠায় লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণা, ভালোবাসা ও সংগ্রামের গল্প আমাদের ভুলতে দেয় না—ফিলিস্তিনিরা আছেন, তারা প্রতিদিন টিকে থাকছেন, এবং তারা গল্প বলে চলেছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
একা বাসায় পেয়ে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ চলছে ট্রলার মালিক হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জে বাসাভাড়া নেয় আরসা সদস্যরা ঘোর অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ সোনারগাঁ থানার ওসি প্রত্যাহার ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার ঘোড়ার মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ, আহত ১৫ এনজিও’র পুরুষ কর্মীকে বেঁধে নারী কর্মীর নগ্ন ভিডিও ধারণ, টাকা আদায় বৃহস্পতিবার থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু ব্রাজিল-উরুগুয়ে ম্যাচ মিস করায় মন খারাপ মেসির সিগারেটে মূল্যস্তর কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব আত্মা’র গাজায় ইসরায়েলি তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ৩৪২ গ্রামবাসীকে অর্থ সহায়তা দিলেন হামজা গাজায় এক রাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ছাড়াল ৪০০ ফাহমিদুলকে বাদ দেওয়ায় বাফুফেতে ভক্তদের বিক্ষোভ নির্বাচন এলে সবাই বেপরোয়া হয়, শক্ত থাকার নির্দেশ ঈদে থাকছে লম্বা ছুটি, কতদিন? নতুন ‘মহামারি’ ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে, মৃত্যুর হার ৩৯ % ভারতে হিন্দু-মুসলিম সহিংসতা, ২৫ মার্চ নিয়ে কী ভাবছে বাংলাদেশ?