ওয়ালেস লাইন কী, কেন সেটি পার হতে পারে না কোনো প্রাণী? – ইউ এস বাংলা নিউজ




ওয়ালেস লাইন কী, কেন সেটি পার হতে পারে না কোনো প্রাণী?

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৫:৩৫ 15 ভিউ
দুই মহাদেশের মাঝবরাবর রয়েছে একটি অদৃশ্য কাল্পনিক রেখা। ভুলেও সেটা টপকিয়ে ওপারে যাওয়ার চেষ্টা করে না কোনো প্রাণী। ফলে এক পারের জীবজগৎ অন্য পারে সম্পূর্ণ অদৃশ্য! অথচ তাদের মধ্যে দূরত্ব বেশ কম। কেন ঘটেছে এমন বিস্ময়কর ঘটনা? নেপথ্যে রয়েছে কোন কারণ? দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রের উপর দিয়ে টানা ওই কাল্পনিক রেখাটির নাম ‘ওয়ালেস লাইন’। এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে ক্রান্তীয় এলাকার উপরে এর অবস্থান। রেখাটির এক দিকে রয়েছে মালয় দ্বীপপুঞ্জ। অপর পারে ইন্দো-অস্ট্রেলীয় দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান। এই রেখাটিকে প্রথম আঁকেন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস। বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইনের মতো জীবজগৎ নিয়ে গবেষণার সময়ে কাল্পনিক এই রেখাটির জন্ম দেন তিনি। যদিও পরবর্তী কালে এর নামকরণ

করেন ইংরেজ জীববিজ্ঞানী ও নৃতত্ত্ববিদ টিএইচ হাক্সলি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার গা ঘেঁষে সমুদ্রের উপর দিয়ে চলে গেছে এই কাল্পনিক ওয়ালেস লাইন। রেখাটির দু’পারে রয়েছে অসংখ্য দ্বীপ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দু’পারের প্রাণীজগতের মধ্যে একটা অদ্ভুত বৈপরীত্য রয়েছে। জীববিজ্ঞানীদের ভাষায়, ওয়ালেস লাইন পশ্চিম এশিয়ার প্রাণীজগৎকে পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার জীবকুলের সঙ্গে মিশে যেতে দেয়নি। গবেষকদের দাবি, ওয়ালেস লাইনের দু’পারে থাকা অধিকাংশ প্রাণী, এমনকি মাছ পর্যন্ত রেখাটি কখনোই অতিক্রম করে না। দু’দিকের জীব বৈচিত্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্যের নেপথ্যে একে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী অ্যালেক্স স্কিলস। অ্যালেক্স বলেছেন, পৃথিবী জুড়ে জীবজগতের বিভিন্ন প্রজাতির বণ্টনকে বুঝতে

হলে ওয়ালেস লাইন নিয়ে দীর্ঘ অধ্যয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইটালির ভেনিসবাসী জীববিজ্ঞানী অ্যান্টনিয়ো পিগাফেটা। ফিলিপিন্স এবং মালুকু দ্বীপপুঞ্জে পৃথক প্রাণীদের অস্তিত্ব রেকর্ড করেন তিনি। সালটা ছিল ১৫২১। ১৯ শতকে এ বিষয়ে গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান প্রকৃতিবিদ জি ডব্লিউ আর্ল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জীববিজ্ঞানী ওয়ালেসের পা পড়েছিল ১৮০০ সালের গোড়ার দিকে। পূর্ব ইন্দোনেশিয়া, বোর্নিয়ো, জাভা ও বালি এবং পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি ও লম্বকের জীবজগতের মধ্যে একটি পরিবর্তন লক্ষ করেন তিনি। ১৮৬৩ সালে লন্ডনের রয়্যাল জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটি ওয়ালেসের তত্ত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিল। সেখানে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছিল পিগাফেটা ও আর্লের পর্যবেক্ষণ। স্কিলসের কথায়, এই ধরনের কোনো কাল্পনিক রেখা তৈরি

ওয়ালেসের উদ্দেশ্য ছিল না। জীবজগৎ পৃথক হওয়ার জেরে ভূতাত্ত্বিক এবং উপনিবেশের উপর কী প্রভাব পড়ছে, তা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ায় তার গবেষণা ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। মজার বিষয় হল ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে ওয়ালেস রেখা টানা হয়নি। সমুদ্রের উপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে এটি চলে গেছে। রেখাটির নীচে সাগরের জলরাশির গভীরে রয়েছে ‘ওয়ালেস খাদ’। সেখানে একে অপরের গায়ে ধাক্কা মেরেছে তিনটি টেকটনিক প্লেট। সেগুলো হল- সুন্দা, বান্দা এবং তিমর। ভূবিজ্ঞানীদের দাবি, ওয়ালেস রেখা সমুদ্রের মধ্যেই একটি অদৃশ্য সীমারেখা তৈরি করেছে। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে প্লাইস্টোসিন যুগে এটি তৈরি হয়েছিল। প্রাকৃতিক লীলায় এই অদৃশ্য প্রাচীর কখনোই ভেঙে যায়নি। ওয়ালেস রেখার উত্তর

দিকের দ্বীপগুলোতে হাতি, গন্ডার এবং বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। আর দক্ষিণে অস্ট্রেলীয় উপদ্বীপের প্রাণীজগতের মধ্যে ক্যাঙারু, মার্সুপিয়াল উল্লেখযোগ্য। এই রেখার প্রভাব সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছ এবং সরীসৃপের ক্ষেত্রে। কাল্পনিক রেখাটির দু’পারের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ হল বালি ও লম্বক। এদের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৩৫ কি. মি। কিন্তু তা সত্ত্বেও হাতেগোনা বাদুড়ের কয়েকটি প্রজাতিরই ওয়ালেস লাইনের এপার থেকে ওপারে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। প্রাণীর পাশাপাশি উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও এই পার্থক্য সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসাবে ইউক্যালিপটাসের কথা বলা যেতে পারে। এই গাছটির বেশির ভাগ প্রজাতি অস্ট্রেলিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। ওয়ালেস রেখার উত্তর দিকে ইউক্যালিপটাসের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। একমাত্র ব্যতিক্রম ফিলিপিন্সের মিন্দানাও

দ্বীপ। সেখানে অল্প সংখ্যায় এই গাছটিকে জন্মাতে দেখা গেছে। এই এলাকার প্রাণীদের ওয়ালেস রেখা অতিক্রম না করার নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন জীববিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, প্রাকৃতিক কারণেই কাল্পনিক রেখাটি অতিক্রম করার সুযোগ খুব বেশি পায় না তারা। প্রথমত, ওয়ালেস রেখার পাশে সমুদ্রের গভীরে খাদ থাকায় অতীতের বরফ যুগে সেখানে কোনো স্থল সেতু গড়ে ওঠেনি। ফলে এক পারের প্রাণীকুলের অপর দিকে যাওয়ার সুযোগ খুবই কম। দ্বিতীয়ত, ইন্দোনেশিয়া সংলগ্ন লম্বক প্রণালীটি অস্বাভাবিক সঙ্কীর্ণ হওয়ায় সেখানে পানির স্রোত খুব বেশি। সেটা অতিক্রম করে এক পারের জলজ প্রাণীগুলো অপর দিকে যেতে পারে না। তৃতীয়ত, ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলোর মধ্যে প্রাণী চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার

দেশটির কিছু এলাকা জলাতঙ্ক প্রবণ। ফলে সেখানে এক শ্রেণির বন্যপ্রাণী প্রায় যায় না বললেই চলে। জীববিজ্ঞানী অ্যালেক্স স্কিলস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ওয়ালেস রেখার দু’পারের প্রাণীকুলের মধ্যে আচরণগত পার্থক্যও স্পষ্ট। যেমন রেখাটির এক পারের পাখিরা জঙ্গলের আড়ালে লুকিয়ে থেকে শিকার করতে পছন্দ করেন। অস্ট্রেলিয়ার উন্মুক্ত তৃণভূমির দিকে তাদের উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে ছাত্ররাই কেন সংগঠন করছে? ২১ ফেব্রুয়ারির ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম কুয়াকাটায় মালয়েশিয়া থেকে ৪৫ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো ট্রাম্প বললেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগবে না, কারণ ? ভারত, চীনসহ ৫ দেশকে কঠোর হুমকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে হামলার নির্দেশ নেতানিয়াহুর দল না জেতায় মন ভেঙেছে তাওহীদের আড়ালেও মন দেওয়া নেওয়া করছেন শামীম-তানিয়া… দুয়ারে কড়া নাড়ছে রমজান : ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে লড়ছে সরকার ভিয়েতনামে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ পালন ভারতসহ ৪ দেশকে কঠোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প জাকির নায়েকের প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল মালয়েশিয়া এবার টঙ্গীতে মুখোমুখি ছাত্রদল ও শিবির, পালটাপালটি কর্মসূচি দুই ঘণ্টার চেষ্টায় খিলগাঁওয়ে স’মিলের আগুন নিয়ন্ত্রণে চলন্ত বাসে ডাকাতি, বড়াইগ্রাম থানার ওসিকে প্রত্যাহার বরখাস্ত হচ্ছেন শেকৃবির ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবার পুতিনকে ‘স্বৈরশাসক’ বললেন ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক পশ্চিম তীরে আবারও ‘অভিযান’ চালানোর নির্দেশ নেতানিয়াহুর হামাসকে চরম মূল্য দিতে হবে: নেতানিয়াহুর হুঙ্কার দিল্লির ‘লেডি ডন’ কে এই জয়া খান