মুমূর্ষু অবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক – ইউ এস বাংলা নিউজ




মুমূর্ষু অবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৬:৪৩ 6 ভিউ
সরকারি জনতা ব্যাংককে গিলে খাচ্ছে আর্থিক খাতের শীর্ষ চার লুটেরা গ্রুপ। ব্যাংকটির মূলধনের ৯৮৭.৪০ শতাংশ ঋণ নিয়ে গেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। একইভাবে অ্যাননটেক্স ৩৩৫.৫০ শতাংশ, এস আলম ৩৩৫.১০ এবং ক্রিসেন্ট গ্রুপ নিয়ে গেছে ৮৯.৭০ শতাংশ ঋণ। অথচ একক গ্রাহকের ঋণ নেওয়ার সুযোগ ছিল মূলধনের মাত্র ২৫ শতাংশ। বর্তমানে জনতা ব্যাংকের ৬০ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা খেলাপির মধ্যে এই চার গ্রুপেরই খেলাপি ঋণ ৪০ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা শুধু ইসলামী ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করেননি বরং রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংককেও শেষ করে দিয়েছেন। গত ১৫ বছরে ব্যাংকটিতে ব্যাপক লুটপাট করেছে

হাসিনা সরকারের দোসররা। ফলে ব্যাংকটি এখন মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম রোববার বলেন, এসব টাকার পুরোটাই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এটা আর ফেরত আসবে না। তিনি বলেন, সরকারি খাতে সবচেয়ে ভালো ব্যাংক ছিল বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক। বেসিক ব্যাংক আগেই শেষ করা হয়েছে। এখন জনতা ব্যাংকও শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। এসব ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি হতাশ। আর কিছু বলার নেই।’ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান রোববার বলেন, জনতা ব্যাংকে এসব গ্রাহকের যে চিত্র বেরিয়ে

এসেছে তাতে মনে হচ্ছে আসলে কোনো ব্যাংকিং হয়নি। জাস্ট, ভল্ট খুলে দিয়েছে; আর যার যা খুশি নিয়ে গেছে! তা না হলে কোনো গ্রাহক মূলধনের প্রায় ১০০০ শতাংশ ঋণ নিতে পারেন না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কোথায় ছিল? আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ কী? নিশ্চয় তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পর্যবেক্ষকও ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কী করেছে? ব্যাংকের এমডির কী দরকার ছিল? এত এত নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বা রেখে কী লাভ, সবাই কি চোখ বন্ধ রেখেছিলেন? এসব দেখলে মাথা ঠিক রাখা যায় না। কেউ এ দায় এড়াতে পারেন না। গ্রাহক, ব্যাংকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের

অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ব্যাংক খাত আরও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা যায়, জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকোর খেলাপি ২২ হাজার ৮৪৮ কোটি, অ্যাননটেক্সের খেলাপি ৭ হাজার ৭৬৪ কোটি, এস আলমের খেলাপি ৭ হাজার ৭৫৫ কোটি এবং ক্রিসেন্ট গ্রুপের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে জনতা ব্যাংকে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ৬০ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়। যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং সমুদয় ব্যাংক খাতের খেলাপির ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ১৭ হাজার ৫০১

কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ খেলাপি দেখানো হয়। বিগত সরকারের সময়ে ক্রিসেন্ট লেদার, বিসমিল্লাহ, অ্যাননটেক্সসহ বড় কয়েকটি জালিয়াতি ঘটে এ ব্যাংকে। খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ২৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা বা ৩৮ দশমিক ৭২ শতাংশ খেলাপি। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১৮ হাজার ৯৬ কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল খেলাপি। সোনালী ব্যাংকের খেলাপি বেড়ে ১৬ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে যা ছিল ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ২

লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। যা মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১০ ব্যাংকেই রয়েছে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। যা মোট খেলাপির ৭১ শতাংশ। ব্যাংক খাতে ঋণের প্রকৃত অবস্থা বের করার যে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তাতে আগামীতে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ঋণ কমে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। হাসিনা সরকারের মেয়াদে বিপুল অঙ্কের ঋণের বড় একটি অংশই নানা অনিয়ম এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কাগুজে কোম্পানিতে দেওয়া হয়েছে। একটি অংশ পাচার করেছেন প্রভাবশালীরা। ধীরে ধীরে এখন তা খেলাপির খাতায় যোগ হচ্ছে। যে

কারণে সেপ্টেম্বর শেষে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। তিন মাস আগে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি দেখানো হয় ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। আর গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মানে গত বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির হিসাব অনুযায়ী ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ এখন ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ ৭ লাখ কোটি টাকায় ঠেকতে পারে। এমন এক সময়ে খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসছে যখন আইএমএফ খেলাপি ঋণ কমানোর শর্ত দিয়েছে। সংস্থাটি ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকের ১০ শতাংশের নিচে নামানোর শর্ত দিয়েছে। প্রসঙ্গত, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে সেখানে এখন পর্যন্ত কোনো খেলাপি হয়নি। তবে বিগত সরকারের সময়ে লুটপাটের মাধ্যমে দেওয়া বিপুল অঙ্কের ঋণ এখন ধীরে ধীরে খেলাপি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
গৃহবন্দি চঞ্চল চৌধুরী: রাজনৈতিক হয়রানীর শিকার শিল্পীরা ট্রাম্পের বিদেশ নীতি: বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দ্রুত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বার্তা টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ ও ইউনুস সরকারের ধাক্কা জনগণের আশা পূরণে ব্যর্থ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গাজায় দুর্ভিক্ষের তথ্য লুকানোর অভিযোগ কাঁটাতার নিয়ে সংঘাত; ভারতীয় হাই কমিশনারকে তলব আমাদের ঈমান ঠিক আছে তো? প্রশ্ন অভিনেত্রী জয়ার ৪ স্ত্রীর পাশাপাশি ১০০ বাঁদি রাখা নিয়ে তোপের মুখে মুফতি কাসেমী জরিপ: আওয়ামী লীগের প্রতি ৬১ শতাংশ জনগণের আস্থা নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সোহেল তাজ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পূজা চেরি ! ভেঙে গেলো মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ড. নুরুন্নবীর পদত্যাগ মিরপুরে বাটার শোরুমের আগুন নিয়ন্ত্রণে ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলায় রাখা হয়নি বসার স্থান, ভোগান্তিতে দর্শনার্থীরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ও গুলির হিসাব চায় প্রসিকিউশন বিদ্যমান ভোটারের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ নেই রুশ হেলিকপ্টার মিলছে না, ঝুঁকিতে অর্থ ফেরত ট্রাম্পের প্রথম দিন থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান