হ্রাস পেলেও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে এখনো শুল্ক দিতে হবে ৩৬.৫% – ইউ এস বাংলা নিউজ




হ্রাস পেলেও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে এখনো শুল্ক দিতে হবে ৩৬.৫%

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৩২ 24 ভিউ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণায় বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্কের আরোপিত হার ২০ শতাংশ। দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক। নতুন ঘোষণায় এ পণ্যে প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর আরোপিত শুল্কহার কাছাকাছি হওয়ায় দেশের পোশাক শিল্প মালিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এ স্বস্তি ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলেও মনে করছেন তারা। কারণ বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে আগে গড়ে সাড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতেন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা। এখন এর সঙ্গে ২০ শতাংশ যোগ হয়ে মোট শুল্ক পরিশোধ করতে হবে সাড়ে ৩৬ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রেতারা নতুন এ শুল্ক সমন্বয়ে রফতানিকারককে চাপ দিলে দেশের উৎপাদকরা আরো বেশি অটোমেশনে ঝুঁকতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে

কাজ হারাতে পারেন তৈরি পোশাক খাতের অপেক্ষাকৃত কম দক্ষ শ্রমিকরা। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানিতে আগে যে শুল্ক ধার্য ছিল বা এখন যেটা ধার্য হয়েছে সেটা মূলত পরিশোধ করেন আমদানিকারক। বাংলাদেশ থেকে বেশি রফতানি হয় কটন বা তুলাজাত সুতা-কাপড়ের তৈরি পোশাক। কোনো পোশাকে কটনের পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি থাকলে শুল্ক পরিশোধ করতে হতো সাড়ে ১৫ থেকে সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর ৫০ শতাংশের বেশি সিনথেটিক বা কৃত্রিম আঁশজাত সুতা-কাপড়ের তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে পরিশোধ করতে হতো ২১ থেকে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশে ইপিজেডের আওতায় থাকা কারখানা থেকে সিনথেটিক সুতা-কাপড়ের পোশাক বেশি রফতানি হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া পোশাক মূলত

কটনভিত্তিক। দেশের পোশাক রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, আমদানিকারক আগে গড়ে সাড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতেন বলে পণ্যের মূল্য কমাতে তাদের পক্ষ থেকে চাপ দেয়ার প্রবণতা ছিল। এরপর নতুন নীতি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ট্রাম্প ঘোষণা করেন ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্কহার। ঘোষণাটিতে ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় পরিশোধযোগ্য অতিরিক্ত শুল্কহার ছিল ১০ শতাংশ। সেই অতিরিক্ত শুল্কভার ক্রেতাদের সঙ্গে রফতানিকারককে বহন করতে হচ্ছিল। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী এখন যে ২০ শতাংশ পরিশোধ করবেন ক্রেতারা, সেখানেও ভার বহনের বোঝা অবধারিতভাবেই থাকবে পোশাক রফতানিকারকদের ওপর। রফতানিকারকদের এ ধারণার প্রতিফলন পাওয়া যায় গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ‹২০২৫ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি› শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে। ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ারের ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যাপারেল

স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শেং লুর তত্ত্বাবধানে জরিপটি পরিচালিত হয়। সহযোগিতায় ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ইউনাইটেড স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএফআইএ)। জরিপে শীর্ষস্থানীয় ৩০টি মার্কিন ফ্যাশন ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা, আমদানিকারক ও পাইকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতামত নেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের নতুন নীতির প্রভাবে ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন কোম্পানিগুলো ব্যাপক চাপে রয়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ৭০ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে বাড়তি শুল্ক তাদের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। সোর্সিং খরচ বেড়েছে, মুনাফার পরিমাণ কমেছে, ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রায় ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বিক্রি হ্রাসের কথা জানিয়েছে। ২২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে কর্মী ছাঁটাই করেছে। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি প্রতিষ্ঠান অর্ডার স্থগিত

বা বাতিল করেছে। অনেকে শুল্কের খরচ সরবরাহকারীদের ভাগ করে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, যা অনেক ছোট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার ঝুঁকিতে ফেলেছে। শিল্প মালিকরা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা ক্রয়াদেশ ধরতে রফতানিকারকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ক্রেতারা বরাবরই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা রফতানিকারকের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আর কারখানা সচল রাখা, শ্রমিক ধরে রাখাসহ উৎপাদন সচল রাখতে ক্রেতাদের চাপ মেনে নিতেন কারখানা মালিকরা। বেশির ভাগ সময় ক্রয়াদেশ ধরতে অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলস্বরূপ ক্রেতাদের অনৈতিক চাপকে স্বাগত জানাতেন তারা। নতুন শুল্কহার মোকাবেলায় সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নিজেরা সতর্ক না হলে ক্রেতারা সেই পুরনো ধারাতেই থাকবেন। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে গোটা

শিল্প। বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‹সমস্যা হলো আমাদের রফতানিকারকরা যখন অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। ওইটাই আমাদের বড় সমস্যা। নিজেদের আগে ঠিক হতে হবে। পোশাক রফতানিকারকদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, আগামী ছয় মাস পর থেকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ আসবে। সেই ক্রয়াদেশ ধরার বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। কোনোভাবেই ক্রেতার অনৈতিক চাপ হজম করা যাবে না।› মোহাম্মদ হাতেম আরো বলেন, ‹৯০ দিন বা তিন মাস স্থগিতাদেশের সময় ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো আমদানিকারককে। এর ৫ শতাংশ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখন সেই চাপটা নেয়া যাবে না। কারণ যেকোনো দেশের ট্যারিফ যখন বাড়ে, তা আদতে বর্তায় গিয়ে চূড়ান্ত গ্রাহক বা ভোক্তার ওপর।

ক্রেতারা যে দামে খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রে পণ্য বিক্রি করেন, সেই দাম বিবেচনায় আমদানিকারক নিজেই নতুন শুল্কের বোঝা বহন করতে পারার কথা। কিন্তু নিজেরা সেই ভার বহন না করে তারা সেটা রফতানিকারকের ওপর চাপিয়ে দেন। কোনোভাবেই নতুন শুল্কের ভার নেয়া যাবে না, এ অবস্থানে কঠোর থাকতে হবে। কারণ ক্রেতার কাছে বাংলাদেশের বিকল্প উৎস নেই। আবার চীন থেকে সরে আসা ক্রয়াদেশের গন্তব্যও বাংলাদেশের পাশাপাশি খুব বেশি নেই। কাজেই আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। দরকষাকষিতে আমাদের এখন অবশ্যই কঠোর অবস্থান ধরে রাখতে হবে।› মাহমুদ হাসান খান উল্লেখ করেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী আদেশ বিশ্লেষণ করে দেখেছি, যদি অন্তত ২০ শতাংশ আমেরিকান কাঁচামাল, বিশেষ করে তুলা ব্যবহার করা হয়, তাহলে অতিরিক্ত পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি প্রযোজ্য হবে না।’ তিনি জানান, বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইউএস প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। যাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস বিভাগও এ ছাড় বাস্তবায়ন করে। এ ধরনের শুল্কছাড় কার্যকর হলে বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদন খরচ কিছুটা হ্রাস পাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলার দামও কমে আসবে বলে মনে করছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর অন্য নেতারা এবং রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির সুযোগ কাজে লাগাতে হলে পোশাক কারখানাগুলোকে দ্রুত কাঁচামালের উৎস বিন্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রফতানির অর্থমূল্য ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে পোশাক রফতানির অর্থমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও এই সময়ের মধ্যে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়েনি। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে শ্রম উৎপাদনশীলতা এখনো ভিয়েতনাম, চীন ও তুরস্কের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু তার পরও রফতানি বাড়ার হওয়ার কারণ মূলত কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত সংযোজন ও উন্নয়ন। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রযুক্তিগত রূপান্তর এবং শ্রমিকদের ওপর এর প্রভাব শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৈরি পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বা অটোমেশন আশীর্বাদ হয়ে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। বিশ্ববাজারে রফতানি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়িয়েছে অটোমেশন। এ কারণে কারখানা পর্যায়ে গড়ে ৩০ দশমিক ৫৮ শতাংশ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। যাদের বড় একটা অংশই হেলপার পদে কাজ করতেন। নারী, কিছুটা বয়স্ক, অদক্ষ শ্রমিকদের কর্মসংস্থানকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে অটোমেশন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাল্টা শুল্কের প্রভাবে ক্রেতারা যখন মূল্য কমানোর অব্যাহত চাপ আরো বাড়িয়ে দেবেন তখন বাধ্য হয়ে মালিকরা উৎপাদন কৌশল ধীরে হলেও বদলাবেন। সেক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদনে শ্রমিকের ব্যবহার আরো কমিয়ে আনতে চাইবেন তারা, যা বাংলাদেশের শ্রমঘন উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের জন্য নেতিবাচক হতে পারে। এরই মধ্যে পোশাক খাতের শ্রমিকের ব্যবহার কমে এসেছে। একসময় পোশাক খাতে ৫০ লাখের বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হলেও বর্তমানে সরকারি হিসেবে এ সংখ্যাটা অনেক কমে এসেছে। খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠন ও সরকারি হিসাবে পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা এখন ২৮ থেকে ৩২ লাখের মধ্যে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক চাপ মোকাবেলায় শ্রমিকের সংখ্যা আরো কমে আসবে ভবিষ্যতে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৬ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার রাশিয়ায় ৬শ’ বছর পর জেগে উঠল আগ্নেয়গিরি, সুনামি সতর্কতা চোখ রাঙাচ্ছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ‘ঈশান’, প্লাবনের শঙ্কা মায়ের সঙ্গে প্রেম করে মেয়েকে বিয়ে, পরে দু’জনকেই পুড়িয়ে হত্যা! তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম, তীব্র হচ্ছে বন্যার শঙ্কা অস্ত্র নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ, বিএনপি নেতাসহ আটক ২ গুলশানের চাঁদাবাজিতে রিয়াদের দায় স্বীকার শোকাতুর পরিবেশে খুললো মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উড়িয়ে রাশিয়ার তেলে নির্ভরতা চালিয়ে যাবে ভারত এবার নিউইয়র্কে ছেলে ও বুবলীকে নিয়ে ঘুরছেন শাকিব খান হ্রাস পেলেও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে এখনো শুল্ক দিতে হবে ৩৬.৫% দৌলতপুরে মহিলা আ.লীগের নেত্রীসহ গ্রেফতার ২ ফেসবুক লাইভে এসে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী নেত্রী লিজার রাফাল ধ্বংসে চীনা প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার পাকিস্তানের যেভাবে ‘তীব্র আকাশযুদ্ধে’ ভারতের রাফাল ভূপাতিত করে পাকিস্তান সৌদিতে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ, তবুও পিছিয়ে পড়তে পারেন বাংলাদেশি কর্মীরা পাকিস্তানে খনিজ তেলের বিশাল ভাণ্ডার : ডোনাল্ড ট্রাম্প এনসিপি, ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মসূচি ঘিরে ডিএমপির নির্দেশনা ট্রাম্পের তোপে চরম অস্বস্তিতে নয়াদিল্লি ডিবি পরিচয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে অপহরণ, ৯ ঘণ্টা পর উদ্ধার