
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

এমপি ঘোষণার দাবিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন হিরো আলম

ভেতর-বাইরে চাপের মুখে এনসিপি

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট : মির্জা ফখরুল

নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, সরকার তত বিপদে পড়বে: গয়েশ্বর

দুদকের মামলায় স্ত্রীসহ অব্যাহতি পেলেন শামীম ইস্কান্দার

নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়: রিতা

ছাত্রলীগের কর্মী এখন রামেক ছাত্রদল সভাপতি
‘হাইব্রিড’দের দাপট বিএনপিতে

বিএনপিতে এখন ‘হাইব্রিড’দের দাপট তুঙ্গে। বিগত দিনে যারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন, তাল মিলিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তারাই এখন বিএনপির ‘হর্তাকর্তা’। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন নব্য বিএনপি নামধারী অনেকে। যারা কখনোই বিএনপিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। অথচ তারাই এখন দখল, টেন্ডার ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। এসব ঘটনার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘হাইব্রিড’দের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর ওপর দায় চাপানো হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দলটির ত্যাগী এবং দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা বিব্রত এবং এক রকমের কোণঠাসা।
যদিও হাইব্রিডদের বিষয়ে পটপরিবর্তনের শুরু থেকেই কঠোর বিএনপি হাইকমান্ড। এখন থেকে আরও কঠোর হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে
নির্দেশনা দিয়ে হাইব্রিডদের দলে জায়গা না দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এমনকি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। যাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে তদন্ত করে প্রমাণ পেলে বহিষ্কার করেছে। কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গত ৭ মাসে বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৩ হাজার ২শ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপিই ১ হাজার ৮শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৭০০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ, ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিত, অন্তত ১০০ জনকে সতর্ক এবং ১৫০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও এ পর্যন্ত ৪০০
জনকে বহিষ্কার ও ৬০০-এর অধিক নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে। অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ১০০ জনকে বহিষ্কার ও ১৫০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যুবদলেরও শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং দলীয় শৃঙ্খলার ব্যাপারে খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। যা সারা দেশে প্রশংসা পেয়েছে। পটপরিবর্তনের পর ১১ আগস্ট দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ স্থগিত করার মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়। হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে সর্বশেষ ৫ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারের দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়। সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে কোথাও
দখল বাণিজ্যের কোনোরূপ ঘটনা পরিলক্ষিত হওয়া মাত্রই অপরাধীকে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আটক করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জানানোর জন্য সচেতন জনসাধারণ ও ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, হাইব্রিড নেতাদের বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন। এরই মধ্যে দল থেকে নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। দলে যোগদান অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপরও বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অনেকে অনেক অপকর্ম করছেন। যাদের সঙ্গে বিএনপির ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এসব বিষয়ে তারা যথেষ্ট সজাগ রয়েছেন। বিএনপির দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, পরিশ্রম করেছেন-দল তাদের মূল্যায়ন
করবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীকে বিভিন্ন সময়ে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ পায়, তদন্তে প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমন ধরনের পদক্ষেপ অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নিয়েছে, এমন নজির নেই। পদক্ষেপের বিষয়টি নিঃসন্দেহে কাজে লেগেছে, না হলে বিব্রতকর পরিস্থিতি আরও বাড়ত। কারণ গত ১৫ বছরে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হয়রানি, নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলা ও ভুয়া মামলার শিকার হয়েছেন দলের সব স্তরের নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে সৃষ্ট দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের বহির্প্রকাশ আরও তীব্র হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দলের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে সেই ক্ষেভের প্রকাশ আর বেশি তীব্রতা পায়নি। এমন পদক্ষেপে ভয় পেয়ে গেছেন সারা
দেশের নেতাকর্মীরা। আবার কিছু মিডিয়া ট্রায়ালও আছে। বিভিন্ন ঘটনা অতিরঞ্জিতভাবে দেখানো হয়েছে। দল শক্ত হাতে ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে, সংগঠনবিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা অনৈতিক কাজে কেউ জড়িত হওয়ার আর সাহস পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। প্রতিনিয়ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দলের নাম করে যে চাঁদাবাজি বা কোনো অপকর্ম করছে তাদের নামে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলীয় কার্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের অলিগলিতে হাইব্রিড নেতাদের ব্যানার, পোস্টার শোভা পাচ্ছে। বিভিন্ন নেতার বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে এসব নেতার পদচারণাও বাড়ছে। ভিড় করছেন বিভিন্ন লবিং-তদবির নিয়ে। অন্যদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে
যেসব নেতাকর্মী রাজপথে ছিলেন, মামলা-হামলায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন, তারা এখন অনেকটা ‘অসহায়’। হাইব্রিড নেতাদের চাপে তাদের অনেকেই এখন দলীয় কার্যালয়, নেতাদের বাসাবাড়ি এড়িয়ে চলছেন। অহেতুক মিথ্যা অভিযোগে বহিষ্কার আতঙ্ক নিয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন অনেকে। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ৫ আগস্টের আগে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে গুটিকয়েক নেতাকর্মীকে দেখা যেত। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর এখন নেতাকর্মীদের ভিড়ে কার্যালয়ে ঢোকাই যায় না। গাজীপুর ও ময়মনসিংহের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, নানা অপকর্মে হাইব্রিডরাই বেশি জড়িত। মোশাররফ হোসেন নামে একজন যুবলীগ নেতা ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এখন যুবদলের নেতা বনে গেছেন। কাশিমপুরসহ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় তার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় ২৮নং ওয়ার্ডে একজনকে হত্যা করা হয়, সেই মামলায় আসামিরা পলাতক ছিলেন। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ আবার হত্যায় জড়িতরা ফিরে আসেন, দখল, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হন। তারা পরিচয় দিচ্ছেন যুবদলের। এ নিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম তুলে ধরে একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি কৃষক দলের নেতার পরিচয়ের বাইরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন আন্তরিক সম্পর্ক। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের সঙ্গে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ ছবি। যেগুলোকে কাজে লাগিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরের মাওনায় জমি দখল বাণিজ্য করেছেন। ৫ আগস্টের পর সেই নেতাই কৃষক দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম করছেন। এ নেতার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, যাদের সঙ্গে ছবির কথা বলা হয়েছে তা এডিট করা। রাজনীতি ৫ আগস্টের পরে শুরু করিনি, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম। এটা আমার নেতারাও জানেন। ভালুকা উপজেলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, তাই এখন বিরোধী গ্রুপ নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, দলের নাম ব্যবহার করে যদি কেউ অন্যায় করে থাকে, সেগুলো দল গ্রহণ করবে না। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। কথা পরিষ্কার, কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায় দল নেবে না। সবাই যে ধোয়া তুলসি পাতা তা বলছি না। কেউ কেউ অন্যায়-অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হতেও পারে। আমরা যদি এসবের প্রমাণ পাই, সত্যতা পাই, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। বরিশালের নেতাকর্মীরা জানান, সেখানের হাইব্রিডরা বেশ সক্রিয়। বরিশালে আতাহারুল ইসলাম চৌধুরীকে গত ১৫-১৬ বছরে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে কেউ দেখেননি। এখন তিনি সিটি করপোরেশনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার সার্বক্ষণিক সহচর ছিলেন আমিরুল ইসলাম রিপন। তিনি এখন ছাত্রদল পরিচয়ে গণপূর্তের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। গণপূর্তের একজনকে লাঞ্ছিত করায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। ১৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউল হক মাসুম। আওয়ামী লীগের আমলে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। নির্বাচন করার কারণে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এখন আবার তিনি ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করছেন। বরিশালের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহর সভায় দোয়া ও মোনাজাত করা একজন এখন ওলামা দলের সভাপতি প্রার্থীও হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বেশকিছু এলাকায় এখন হাইব্রিডরা সক্রিয়। জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপকর্মে। বিএনপি নেতাদের জানান, আত্মগোপনে থেকেও দখলদারত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা। বহিষ্কার আতঙ্কে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকলেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দখলবাজ নেতারা ফিরে আসতে শুরু করেছেন। অনেক জায়গায় তারা নতুন করে পুনর্বাসিত হচ্ছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এমন প্রমাণ পাওয়ার পর পুলিশকে তা অবহিত করা হয়েছে। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, দলের মধ্যে নানা সময় দুষ্কৃতকারী ঢুকে যায়, দলের নাম ব্যবহার করে ভাবমূর্তি নষ্ট করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশ আছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। যারা দলের নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যার কারণে নেতাকর্মীরাও এখন যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। এদিকে ‘হাইব্রিড’ ও অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে বিএনপি আরও বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়নের নির্দেশনায়ও দলটি কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-২০১৭ সালের পহেলা জুলাই শুরু হওয়া সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে যারা সদস্যপদ লাভ করেছেন, তারাই শুধু সদস্য নবায়নের আওতাভুক্ত হবেন। যেসব সদস্য ফ্যাসিবাদী সরকারের চিহ্নিত সহযোগী ছিলেন, তারা সদস্য নবায়নের সুযোগ পাবেন না। দলীয় সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় যারা প্রাথমিক সদস্য পদ হারিয়েছেন, তারা নবায়নের সুযোগ পাবেন না।
নির্দেশনা দিয়ে হাইব্রিডদের দলে জায়গা না দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এমনকি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। যাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে তদন্ত করে প্রমাণ পেলে বহিষ্কার করেছে। কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গত ৭ মাসে বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৩ হাজার ২শ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপিই ১ হাজার ৮শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৭০০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ, ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিত, অন্তত ১০০ জনকে সতর্ক এবং ১৫০ জনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও এ পর্যন্ত ৪০০
জনকে বহিষ্কার ও ৬০০-এর অধিক নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে। অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ১০০ জনকে বহিষ্কার ও ১৫০ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যুবদলেরও শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং দলীয় শৃঙ্খলার ব্যাপারে খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। যা সারা দেশে প্রশংসা পেয়েছে। পটপরিবর্তনের পর ১১ আগস্ট দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ স্থগিত করার মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়। হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে সর্বশেষ ৫ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারের দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়। সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে কোথাও
দখল বাণিজ্যের কোনোরূপ ঘটনা পরিলক্ষিত হওয়া মাত্রই অপরাধীকে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আটক করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জানানোর জন্য সচেতন জনসাধারণ ও ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, হাইব্রিড নেতাদের বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন। এরই মধ্যে দল থেকে নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। দলে যোগদান অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপরও বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অনেকে অনেক অপকর্ম করছেন। যাদের সঙ্গে বিএনপির ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এসব বিষয়ে তারা যথেষ্ট সজাগ রয়েছেন। বিএনপির দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, পরিশ্রম করেছেন-দল তাদের মূল্যায়ন
করবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীকে বিভিন্ন সময়ে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ পায়, তদন্তে প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমন ধরনের পদক্ষেপ অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নিয়েছে, এমন নজির নেই। পদক্ষেপের বিষয়টি নিঃসন্দেহে কাজে লেগেছে, না হলে বিব্রতকর পরিস্থিতি আরও বাড়ত। কারণ গত ১৫ বছরে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হয়রানি, নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলা ও ভুয়া মামলার শিকার হয়েছেন দলের সব স্তরের নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে সৃষ্ট দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের বহির্প্রকাশ আরও তীব্র হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দলের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে সেই ক্ষেভের প্রকাশ আর বেশি তীব্রতা পায়নি। এমন পদক্ষেপে ভয় পেয়ে গেছেন সারা
দেশের নেতাকর্মীরা। আবার কিছু মিডিয়া ট্রায়ালও আছে। বিভিন্ন ঘটনা অতিরঞ্জিতভাবে দেখানো হয়েছে। দল শক্ত হাতে ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে, সংগঠনবিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা অনৈতিক কাজে কেউ জড়িত হওয়ার আর সাহস পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। প্রতিনিয়ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দলের নাম করে যে চাঁদাবাজি বা কোনো অপকর্ম করছে তাদের নামে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলীয় কার্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের অলিগলিতে হাইব্রিড নেতাদের ব্যানার, পোস্টার শোভা পাচ্ছে। বিভিন্ন নেতার বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে এসব নেতার পদচারণাও বাড়ছে। ভিড় করছেন বিভিন্ন লবিং-তদবির নিয়ে। অন্যদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে
যেসব নেতাকর্মী রাজপথে ছিলেন, মামলা-হামলায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন, তারা এখন অনেকটা ‘অসহায়’। হাইব্রিড নেতাদের চাপে তাদের অনেকেই এখন দলীয় কার্যালয়, নেতাদের বাসাবাড়ি এড়িয়ে চলছেন। অহেতুক মিথ্যা অভিযোগে বহিষ্কার আতঙ্ক নিয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন অনেকে। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ৫ আগস্টের আগে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে গুটিকয়েক নেতাকর্মীকে দেখা যেত। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর এখন নেতাকর্মীদের ভিড়ে কার্যালয়ে ঢোকাই যায় না। গাজীপুর ও ময়মনসিংহের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, নানা অপকর্মে হাইব্রিডরাই বেশি জড়িত। মোশাররফ হোসেন নামে একজন যুবলীগ নেতা ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এখন যুবদলের নেতা বনে গেছেন। কাশিমপুরসহ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় তার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় ২৮নং ওয়ার্ডে একজনকে হত্যা করা হয়, সেই মামলায় আসামিরা পলাতক ছিলেন। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ আবার হত্যায় জড়িতরা ফিরে আসেন, দখল, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হন। তারা পরিচয় দিচ্ছেন যুবদলের। এ নিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম তুলে ধরে একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি কৃষক দলের নেতার পরিচয়ের বাইরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন আন্তরিক সম্পর্ক। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের সঙ্গে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ ছবি। যেগুলোকে কাজে লাগিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরের মাওনায় জমি দখল বাণিজ্য করেছেন। ৫ আগস্টের পর সেই নেতাই কৃষক দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম করছেন। এ নেতার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, যাদের সঙ্গে ছবির কথা বলা হয়েছে তা এডিট করা। রাজনীতি ৫ আগস্টের পরে শুরু করিনি, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম। এটা আমার নেতারাও জানেন। ভালুকা উপজেলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, তাই এখন বিরোধী গ্রুপ নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, দলের নাম ব্যবহার করে যদি কেউ অন্যায় করে থাকে, সেগুলো দল গ্রহণ করবে না। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। কথা পরিষ্কার, কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায় দল নেবে না। সবাই যে ধোয়া তুলসি পাতা তা বলছি না। কেউ কেউ অন্যায়-অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হতেও পারে। আমরা যদি এসবের প্রমাণ পাই, সত্যতা পাই, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। বরিশালের নেতাকর্মীরা জানান, সেখানের হাইব্রিডরা বেশ সক্রিয়। বরিশালে আতাহারুল ইসলাম চৌধুরীকে গত ১৫-১৬ বছরে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে কেউ দেখেননি। এখন তিনি সিটি করপোরেশনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার সার্বক্ষণিক সহচর ছিলেন আমিরুল ইসলাম রিপন। তিনি এখন ছাত্রদল পরিচয়ে গণপূর্তের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। গণপূর্তের একজনকে লাঞ্ছিত করায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। ১৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউল হক মাসুম। আওয়ামী লীগের আমলে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। নির্বাচন করার কারণে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এখন আবার তিনি ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করছেন। বরিশালের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহর সভায় দোয়া ও মোনাজাত করা একজন এখন ওলামা দলের সভাপতি প্রার্থীও হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বেশকিছু এলাকায় এখন হাইব্রিডরা সক্রিয়। জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপকর্মে। বিএনপি নেতাদের জানান, আত্মগোপনে থেকেও দখলদারত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা। বহিষ্কার আতঙ্কে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকলেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দখলবাজ নেতারা ফিরে আসতে শুরু করেছেন। অনেক জায়গায় তারা নতুন করে পুনর্বাসিত হচ্ছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এমন প্রমাণ পাওয়ার পর পুলিশকে তা অবহিত করা হয়েছে। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, দলের মধ্যে নানা সময় দুষ্কৃতকারী ঢুকে যায়, দলের নাম ব্যবহার করে ভাবমূর্তি নষ্ট করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশ আছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। যারা দলের নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যার কারণে নেতাকর্মীরাও এখন যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। এদিকে ‘হাইব্রিড’ ও অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে বিএনপি আরও বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়নের নির্দেশনায়ও দলটি কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-২০১৭ সালের পহেলা জুলাই শুরু হওয়া সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে যারা সদস্যপদ লাভ করেছেন, তারাই শুধু সদস্য নবায়নের আওতাভুক্ত হবেন। যেসব সদস্য ফ্যাসিবাদী সরকারের চিহ্নিত সহযোগী ছিলেন, তারা সদস্য নবায়নের সুযোগ পাবেন না। দলীয় সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় যারা প্রাথমিক সদস্য পদ হারিয়েছেন, তারা নবায়নের সুযোগ পাবেন না।