বিশেষ ছাড়ে সব সুবিধা ঋণ জালিয়াতদেরই – ইউ এস বাংলা নিউজ




বিশেষ ছাড়ে সব সুবিধা ঋণ জালিয়াতদেরই

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৫ অক্টোবর, ২০২৪ | ৭:৩৫ 49 ভিউ
রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশেষ ছাড়ের আওতায় পুনঃতফশিল করা ঋণের মধ্যে প্রতিবছরে গড়ে ৩৭ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার ঋণ নতুন করে খেলাপি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি হয়েছে বড় গ্রাহক বা ঋণ জালিয়াতরা। এসব ঋণ আবার নবায়ন করা হয়েছে। এ সুবিধাও নিয়েছেন বড় গ্রাহকরা। পরিশোধ না করেই ঋণের ওপর সব ধরনের সুদ মওকুফের সুবিধাও নিয়েছে তারা। আবার বিধি ভঙ্গ করে আয়ের খাতে ঘাটতি দেখিয়েও মাত্রাতিরিক্ত সুদ মওকুফের নজিরও আছে। ব্যাংক খাতে এসব সুবিধার সবই পেয়েছে বড় গ্রাহক ও ঋণ জালিয়াতরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বিশেষ ছাড়ে ২ লাখ ৮৮ হাজার

৫৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকার ঋণ ফের খেলাপি হয়েছে। এসব ঋণের একটি অংশ পরবর্তী সময়ে আবারও নবায়ন করা হয়েছে। আলোচ্য পাঁচ বছরের তথ্যবিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছর নবায়ন করা ঋণের ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ পুনরায় খেলাপি হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিবছরে গড়ে খেলাপি হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার ঋণ। ওই সময়ে প্রতিবছর গড়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা করে। অর্থাৎ খেলাপি বাড়ার চেয়ে নবায়ন করা ঋণ খেলাপি হয়েছে বেশি। কিন্তু ঋণগুলোর বেশির ভাগই খেলাপি হিসাবে দেখানো হয়নি। যেগুলো খেলাপি দেখানো হয়েছে, সেগুলো আবার বিশেষ ছাড়ে নবায়ন করা হয়েছে। এদিকে ৫

বছরে ব্যাংক খাতে ১০ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে মওকুফ করা হয়েছে ২ হাজার ৭৬ কোটি ২০ লাখ টাকার সুদ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঋণের সুদ মওকুফের নিয়ম মানা হয়নি। ব্যাংকের খরচ আদায় না করেই সুদ মওকুফ করার ঘটনাও ঘটেছে। সূত্র জানায়, ২ থেকে ৪ শতাংশ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই বড় গ্রাহকরা খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন। এরপর শর্ত অনুযায়ী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি। আবার খেলাপি হয়েছে। আবার নবায়ন করেছে। এভাবে ঋণ জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানকে অগ্রণী ব্যাংক ১৭ দফার বেশি নবায়ন করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এই ঋণ নবায়নের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। একই

অভিযোগে অভিযুক্ত এস আলম গ্রুপ, অ্যানন টেক্স গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, অলটেক্স গ্রুপ, রতনপুর গ্রুপ ও ইলিয়াস ব্রাদার্স গ্রুপ। এগুলোর খেলাপি ঋণ একাধিকবার নবায়নের পাশাপাশি সুদ মওকুফ সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। এসব গ্রুপ জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে সব ধরনের সুবিধা নিয়েছে। তাদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ভালো ও বড় এবং মাঝারি ও ছোট উদ্যোক্তারা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাননি। বর্তমানে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের একটি বড় কারণ জালিয়াতদের ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ৩৩০

কোটি টাকা। ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকায়। ওই বছরে খেলাপি ঋণ কমেছিল ৫ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে বিশেষ ছাড়ের আওতায় ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছিল। নবায়ন করা ঋণের মধ্যে একই বছরে আবার ২৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ঋণ নতুন করে খেলাপি হয়ে যায়। তারপরও মোটা অঙ্কের ঋণ নবায়ন করার কারণে ২০২০ সালে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছিল। এসব ঋণ আবার খেলাপি হয়ে পড়ায় ২০২১ সালে এর পরিমাণ আবার বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকায়। ওই বছরে নবায়ন করা হয়েছিল ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। নবায়ন করা

ঋণ থেকে খেলাপি হয়েছিল ২৯ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে খেলাপি ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের তুলনায় ওই বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। একই বছরে নবায়ন করা হয়েছিল ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। নবায়ন করা ঋণের মধ্যে আবার খেলাপি হয়েছিল ৪০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে খেলাপি ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ২৪ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। ওই বছরে নবায়ন করা

হয় ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। নবায়ন করা ঋণের মধ্যে আবার খেলাপি হয় ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে খেলাপি ঋণ নবায়ন ও সুদ মওকুফের পরিমাণও ছিল বেশি। ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়। ২০২০ সালে তা আবার কমে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০২১ সালে আবার কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকায়। ২০২২ সালে রেকর্ড পরিমাণ সুদ অর্থাৎ ৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়। ২০২৩ সালে এসে তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকায়। ওই সময়ে এস আলম গ্রুপের ৩ হাজার ১২৭ কোটি, বেক্সিমকো গ্রুপের ২ হাজার ৭৮০ কোটি, নাসা গ্রুপের ৫২৩ কোটি, অ্যানন টেক্স গ্রুপের ৩ হাজার ৪৪৫ কোটি, ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৬৪ কোটি এবং বিসমিল্লাহ গ্রুপের ৬০৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়। নাসা, বেক্সিমকো, এস আলম গ্রুপ সুদের সমুদয় টাকাই মওকুফ পেয়েছে। সুদ মওকুফের কারণে ঋণের স্থিতি কমেছে। ফলে তারা ঋণ পরিশোধের পরিবর্তে উলটো ঋণসীমা বাড়িয়ে একই শাখা থেকে আবার নতুন ঋণ নিয়েছে। এভাবে তারা ঋণের সুদ মওকুফ, ঋণসীমা বাড়িয়ে যাচ্ছেন। আর নতুন ঋণ নিচ্ছেন। আগের ঋণ পরিশোধ করেনি। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি খেলাপি শিল্প খাতের বড় অঙ্কের ঋণ। এ খাতে মোট খেলাপি ঋণ ৭২ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির প্রায় ৫৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি নবায়ন করা হয়েছে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ ৬৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। মাঝারি ঋণ ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ, ছোট ঋণ ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, ক্ষুদ্র ঋণ ২ শতাংশ এবং অন্যান্য ঋণ ১৫ শতাংশ নবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে শিল্প খাতের ঋণ নবায়ন করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪০, গার্মেন্ট ও বস্ত্র খাতের ২০ দশমিক ৯০, চলতি মূলধন ১১ দশমিক ৩০ এবং বাণিজ্যিক ঋণ ১১ শতাংশ। বাকি ঋণ অন্যান্য খাতের।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বীর প্রতীকের গলায় জুতার মালা দিয়েছে জামায়াতের কর্মীরা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য রিগ্রেট করি-আরাফাত গুলি করে হত্যা: স্বজনদের দাবি ছাত্রদল কর্মী, পুলিশ বলছে মাদক ব্যবসায়ী তীব্র শীতে জয়ায় খোলা পোশাকে উত্তাপ রাজশাহীতে তেলের আগুনে পুড়ল ৮ দোকান তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু ৯ গোলের ম্যাচে টটেনহ্যামকে হারাল লিভারপুল সোমবার বিপিএলের উদ্বোধনী কনসার্ট, এড়িয়ে চলবেন যেসব এলাকা ৪ বিভাগে শীত-বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়ার নতুন বার্তা বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা আল্লুর কোলে উঠে নাচ, নীরবতা ভাঙালেন রাশমিকা গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ তেলের ডিপোতে আগুন, পুড়ল ৪শ ব্যারেল মানুষ সংস্কার বোঝে না, তারা বোঝে ভোট: মির্জা ফখরুল বোর্নামাউথে বিধ্বস্ত আমোরিমের ম্যানইউ জবিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে নিজস্ব পদ্ধতিতে ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে এতো ব্যস্ত কেন’, প্রশ্ন সালাউদ্দিনের ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়নে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগে নীতিমালা ২১ দিনে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স