বিজয়ের মাস মা-শিশু ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ – ইউ এস বাংলা নিউজ




বিজয়ের মাস মা-শিশু ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৬:৩৯ 10 ভিউ
যে কোনো জনপদ যুদ্ধের মুখে পড়লে সবচেয়ে দুঃসময় পার করে ওই ভূখণ্ডের নারী ও শিশু। চোখের সামনেই তার জ্বলজ্বলে প্রমাণ ফিলিস্তিন। প্রতিনিয়ত সেখানে শিশুদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে ইসরায়েল। হুমকির মুখে ফিলিস্তিনি মায়েদের জীবন। একাত্তরে আমাদের দেশেও একই রকম ঘটেছিল। ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও নিরাপত্তাহীনতায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল আমাদের মায়েদের, বোনদের জীবন। ৯ মাসের যুদ্ধে নিপীড়িত হওয়ার বাইরেও মায়েরা মুখোমুখি হয়েছিলেন নানা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার। তবুও আমাদের মায়েরা, বোনেরা নিজে লড়াই করেছেন, লড়াই করতে শিখিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, আহত যোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন, নিজের সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন এবং এমনসব ঝুঁকি নিয়েছেন যা স্বাভাবিক সময়ে কল্পনার অতীত। যদিও মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই বাঙালি মা-বোনদের

দাপুটে এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে, দাবি আদায়ের আন্দোলনে, তৃণমূল থেকে রাজপথে মিছিলের স্লোগানে। নির্যাতন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণ-যৌনপীড়নের শিকার হয়েছেন আমাদের প্রায় চার লাখ মা-বোন। এরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্ম-বর্ণের পাঁচ বছরের শিশু থেকে ৯০ বছরের নারী। মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণির নারীরাও পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের এই পাশবিক নির্যাতনের থাবা থেকে মুক্তি পাননি। দীর্ঘ সময় বন্দি রেখে দিনরাত ধর্ষণের ফলে তাদের মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, চার দেয়ালের বাইরে সুন্দর পৃথিবীর মাঝে তাদের সাজানো সোনার সংসারসহ মা-বাবা, ভাইবোন, স্বামী-সন্তান ছিল– একটা সময় এটি তারা ভুলেই গিয়েছিলেন। শরণার্থী শিবিরে খাদ্যস্বল্পতায় মায়েদের বুকের

দুধ শুকিয়ে গিয়েছিল। খাবার না পেয়ে শিশুদের কান্না ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ের প্রায় ৯০০ শরণার্থী শিবিরের চিত্র কমবেশি একই রকম ছিল। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে কিছু শরণার্থী শিবির বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। শিবিরের সর্বত্রই মৃত্যুর মিছিল লেগে গিয়েছিল। শিশুদের অবস্থা হয়েছিল সবচেয়ে নাজুক। যশোর রোড ঘুরে গিয়ে অ্যালেন গিন্সবার্গ লিখেছিলেন– ‘লক্ষ জননী পাগলের প্রায়/রিফিউজি ঘরে খিদে পাওয়া শিশু/পেটগুলো সব ফুলে ফেঁপে ওঠে/এইটুকু শিশু এত বড় চোখ/দিশেহারা মা কার কাছে ছোটে।’ প্রতিরোধ সম্ভ্রম, সন্তান, পরিবার সব হারিয়েও আমাদের মায়েরা, বোনেরা প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলেন। যুদ্ধে তারা যোদ্ধা, তথ্যকর্মী, মুক্তিযোদ্ধাদের সহকারী, সমাজকর্মী, সংগঠক, প্রেরণাদাতা, সেবিকা ইত্যাদি কাজ

করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য, তহবিল এবং আশ্রয় দিয়ে তাদের সহযোগিতা করেছিলেন। বীরপ্রতীক তারামন বিবি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ফ্যামিলি ট্যুর প্যাকেজ লড়াই করেছেন। বীরউত্তম সেক্টর কমান্ডার আবু তাহেরের নেতৃত্বে ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। তারামন যখন যুদ্ধশিবিরে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স ১৩ বা ১৪ বছর। ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগমও মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য তারামন বিবির মতো বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছিলেন। হায়দার বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে সিতারাকে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের মেঘালয় পাঠিয়েছিলেন তাঁর মা-বাবা। সেখানে ছিল প্রায় ৪০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি অস্থায়ী হাসপাতাল। ‘বাংলাদেশ হাসপাতাল’ নামে পরিচিত সেই হাসপাতালে কেবল বাঙালি রোগীরই চিকিৎসা করেননি, একই সঙ্গে আহত মুক্তিযোদ্ধা

ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছিলেন ডা. সিতারা। যুদ্ধশিশু মুক্তিযুদ্ধের এক অনালোকিত অধ্যায় যুদ্ধশিশু। যুদ্ধের সময় যেসব নারীকে ধর্ষণ করা হয় তাদের মধ্যে অনেকেই গর্ভধারণ করেন। নির্যাতন ও তৎকালীন সমাজের বিরূপ দৃষ্টির সামনে তারা ছিলেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ফলে সন্তান লালন-পালনের মতো অবস্থায় তারা ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ শিশুদের নীরবে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার জন্মপরিচয় গোপন রেখে তাদের অনেকেই বেড়ে ওঠেন এ দেশেই। স্বাধীনতার পর পর দেশে এসব শিশুর অন্যতম আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল পুরান ঢাকার ইসলামপুর রোডে গড়ে ওঠা মাদার তেরেসার ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ বা শিশু ভবন। যুদ্ধপরবর্তী জন্ম নেওয়া অসংখ্য শিশুর পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকা পালন করেন এই সংগঠনের সদস্যরা। এখান থেকেই ১৯৭২ সালে কানাডার সমাজকর্মী বনি কাপুচিনোর সংগঠন ‘ফ্যামিলিজ ফর চিলড্রেন’ ১৫ যুদ্ধশিশুকে কানাডায় নিয়ে যায়। পরে এই পথ ধরেই যুদ্ধশিশুদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করার কার্যক্রম শুরু হয়। যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ধর্ষণের বিভীষিকা সয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা চার লাখ হলেও ওয়ার চাইল্ড বা যুদ্ধশিশুদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। মার্কিন গবেষক সুসান ব্রাউনমিলারের মতে, যুদ্ধে ধর্ষণের শিকার বিপুলসংখ্যক গর্ভপাতের পাশাপাশি তাদের গর্ভে জন্ম নিয়েছিল ২৫ হাজার যুদ্ধশিশু। ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলীয় চিকিৎসক জিওফ্রে ডেভিস এই নির্যাতিত নারীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেন। তাঁর মতে, “পাকিস্তানি বাহিনী একাত্তরে ধর্ষণকে বাঙালির বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে।” দেশ

স্বাধীন হওয়ার পর শরণার্থী শিবির থেকে মায়েদের যখন মুক্ত করে দেওয়া হলো, তারা অতি আনন্দ নিয়ে যার যার পরিবারের কাছে ফিরে আসেন। কিন্তু সেই পরিবার তাদের গ্রহণ না করায় তারা উন্মাদ হয়ে পথে-প্রান্তরে চলে যান! কেউ ছেড়ে যান দেশের মাটি! যারা কোনো রকমে সংসারে ঠাঁই পেয়েছিলেন, তাদের জীবনও হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। আর যুদ্ধশিশুরা তো আজও খুঁজে বেড়াচ্ছে তাদের মায়েদের! এতসব ত্যাগের বিনিময়ে এসেছে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বাধীনতা।ফ্যামিলি ট্যুর প্যাকেজ

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি এস আলম আন্তর্জাতিক সালিশে গেলে কী হতে পারে সচিবালয়ের একটি ফটক খুলে দেওয়া হয়েছে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: ৭ নম্বর ভবনের চারটি তলা পুড়ে ছাই সচিবালয়ের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার বোমা হামলায় ৫ সাংবাদিক নিহত ঘাটাইলে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ, নিরাপত্তা জোরদার অচিরেই বন্ধ হচ্ছে ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের চেঁচামেচি, বাড়িতে আগুন বাংলাদেশ থেকে ফেরা সেই রুশ জাহাজ ডুবে গেল সাগরে পিকে হালদার ভারত ছাড়তে পারবেন না বগুড়া কারাগারে অসুস্থ রাগেবুল রিপু, দেড় মাসে চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে নানা প্রশ্ন এস আলমের গাড়ি সরিয়ে বহিষ্কার তিন নেতাকে দলে ফেরালো বিএনপি আমরা জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই বড়দিনে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার ২০ দিনেও খোঁজ মেলেনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুমি খাতুনের বিএসএফের হাতে আটক ১৩ বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় নারী-শিশুসহ আটক ১৬ অপরাধী ধরতে গিয়ে মিলল বিদেশি রিভলভার, গুলি পরিবারের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বললেন জয়