
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের দাবি ছাত্র-তরুণদের

বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে অপসারণ

বাজেটে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাটা জরুরি

সেনানিবাসে আশ্রয় নেয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করল আইএসপিআর

চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস: নাহিদ ইসলাম

শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

‘মব ভায়োলেন্স, করিডর ও বন্দর’ নিয়ে কড়া বার্তা সেনাপ্রধানের
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের কথা ভাবছেন দাবি নাহিদ ইসলামের

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় দেখা করার পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত না নিতে আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান নাহিদ ইসলাম।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন—এমন খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নাহিদ ইসলাম। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা, যেটি বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, সেখানে তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও দেখা করেন বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে।
যমুনা থেকে বের হয়ে নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারের তো পদত্যাগের একটা খবর আমরা আজকে সকাল থেকে শুনছি। তো
ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।’ জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন গঠিত দলটির নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘স্যার বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি... যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে এনেছিলে একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার...। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমি তো এভাবে কাজ করতে পারব না, যদি রাজনৈতিক দলগুলো তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো।’ প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যদি কাজ করতে না পারেন, থেকে কী লাভ। উনি
বলছেন, এ বিষয়ে (পদত্যাগ) ভাবতেছেন। ওনার কাছে মনে হয়েছে পরিস্থিতি এ রকম যে তিনি কাজ করতে পারবেন না।’ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নাহিদ ইসলামের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা পুনর্বিবেচনা করতে চান বলে জানিয়েছেন। আলোচনায় নাহিদ ইসলাম এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে ভেবে দেখার আহ্বান
জানান।’ এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বণিক বার্তার পক্ষ থেকে। তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ভীষণ বিরক্ত। তবে আজ (গতকাল) পদত্যাগ না করলেও আগামী দুই-একদিনের মধ্যে কী করবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না।’ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এমনকি পদত্যাগের আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়ার জন্য ভাষণের একটি খসড়াও করা হয়েছিল। এদিকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তুলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব
ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ চেয়ে আসছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ দুজনই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের জুলাই আন্দোলনে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছিলেন। অন্যদিকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন উপদেষ্টাকে বিএনপির ‘মুখপাত্র’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে। এ তিনজন হলেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। উপদেষ্টাদের পাল্টাপাল্টি পদত্যাগ দাবিতে পরিস্থিতি অনেকটাই ঘোলাটে হচ্ছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জটিল ও দুর্ভেদ্য বিষয়গুলো সরকার হ্যান্ডল করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই রাজনীতি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষক কাজী মাহবুবুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এ অধ্যাপক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয়গুলো সব সময় জটিল ও দুর্ভেদ্য। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বললেই চলে; তবে দ্রুত অ্যাড্রেস করতে পারলে কিছুটা মিনিমাইজ করা যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কাজ করা, যেমনটি শুরু থেকে করছিল। তাহলে এ ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতো না।’ এ রাজনীতি বিশ্লেষক আরো বলেন, ‘১৭ বছর ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা কাঠামোয় তারা নেই। শুরু থেকেই পদায়নের ক্ষেত্রে সরকার স্বজনপ্রীতি, অঞ্চলপ্রীতি, এনজিও-প্রীতির মতো নজির স্থাপন করেছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলনিরপেক্ষ মানুষগুলো ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে ঢুকে পড়েছেন, যারা অতীতে সুবিধাভোগী চরিত্রে
ছিলেন। ফলে জনগণের যে প্রধান তিনটি চাওয়া—নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার তা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান উদ্যোগ বা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটাই মূলত অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী।’ দ্রুততার সঙ্গে সব পক্ষের সঙ্গে বসে পরিস্থিতি হ্যান্ডল করতে না পারলে অস্থিরতা বাড়তেই পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের মোট সদস্য ২৩ জন। তাদের মধ্যে দুই পক্ষ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা পাঁচ উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া হচ্ছে। তাছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি উঠেছে বেশ কয়েকবার। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকেও অব্যাহতি দেয়ার দাবি উঠেছে বিএনপির পক্ষ থেকে। দলটি গতকাল বিকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা, যাদের বক্তব্যে ও কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাদের সরিয়ে দেয়ার দাবি আমরা তুলেছিলাম। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বুধবারের বক্তব্য আবারো নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেয়ার দাবি আমরা এর আগে অনেকবার উত্থাপন করেছি। যেহেতু, একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এ সরকারের প্রধান কাজ, তাই মাথাভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধু রুটিন ওয়ার্ক (দৈনন্দিন কার্যক্রম) পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।’ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন থেকেই মূলত ছাত্র প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি ওঠে। এ আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হলেও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিতে আবার কর্মসূচি দেয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ইশরাক হোসেন। এদিকে আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ যে বিএনপির তরুণ নেতারাই কেবল চাচ্ছেন, তা না। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও একই দাবি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুধু এ দুজন উপদেষ্টাই নয়, সরকারের বিতর্কিত সব উপদেষ্টাকে বাদ দেয়া প্রয়োজন। ক্যাবিনেটের সদস্য কমিয়ে সরকারের এখন উচিত কেয়ারটেকার মোডে চলে যাওয়া। এছাড়া অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।’ বিএনপির দাবির পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সামনে বুধবার এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন তাদের পদত্যাগে বাধ্য করাব। বাংলাদেশের অর্থনীতি গুঁড়িয়ে দিতে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কাজ করছেন। আর আইন মন্ত্রণালয় গুঁড়িয়ে দিতে কাজ করছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।’ বিএনপি ও এনসিপি—দুই দলের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের কথা বলা হচ্ছে। তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত না থাকলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি দলের সঙ্গে আছেন। কিন্তু এনসিপির এক নেতা যে তিন উপদেষ্টাকে বিএনপির বলে উল্লেখ করেছেন তারা তো দলটির সঙ্গে যুক্ত না। এ ধরনের ধারণা সরকারের জন্য ক্ষতিকর। এখন বরং আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা আমরা বলছি—যথাসম্ভব দ্রুত বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ। যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে সেগুলো নিয়ে সনদ প্রকাশের কথা বলছি।’ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দুপক্ষকেই সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘যে পরিস্থিতিতে পাল্টাপাল্টি পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে তাতে স্বার্থগত বিরোধটা স্পষ্ট। এ বিষয়ে সহনশীল হওয়ার জন্য দুপক্ষের প্রতিই আমাদের অনুরোধ থাকবে। অন্যথায় এটি রাজনীতিতে একটা স্থায়ী বিরোধ তৈরি করবে। যে মুহূর্তে সংস্কার, বিচার, জাতীয় সনদ তৈরি ও নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রশ্নে আমাদের সমঝোতা এবং ঐক্য দরকার; সেখানে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি দাবি দূরত্ব তৈরি করবে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য এটা মোটেও ইতিবাচক হবে না।’ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এ নিয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দিয়ে আসছেন। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এনসিপি নেতারা কমিশন পুনর্গঠন করে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিএনপি ও এনসিপির এমন দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। এ পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। গতকাল দলটির এক বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টার প্রতি এ আহ্বান জানানো হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে ‘আগেকার যেকোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত’—পদত্যাগের দাবির মুখে এ কথা বলেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল বিকালে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সরকারে আর একদিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সব শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই। পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী স্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। দেশপ্রেমিক জনগণ যারা জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, তাদের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।’ ‘ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড়’—পোস্টের শুরুতেই এ কথা লিখে তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য।’ রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিবদমান পক্ষগুলোকে সহনশীল আচরণ করা জরুরি বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এ জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এই অস্থিরতা দুঃখজনক! রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেড় যুগের কর্তৃত্ববাদী হটাতে নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণরা; যা আমাদের সাহস জুগিয়েছে। আবার দীর্ঘ ১৭ বছর লড়াই-সংগ্রাম জারি রেখে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। সুতরাং কারো অবদানকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তরুণরা বয়সে অনভিজ্ঞ, তাদের ভুলত্রুটি রাজনৈতিক দলগুলোকে মার্জনা করতে হবে। আবার বিজ্ঞদের মেনেই তরুণদের রাজনীতি করা উচিত।’ জনভোগান্তি কমাতে সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘আমাদের সহিষ্ণু, সহনশীল, সহমর্মিতা বজায় রাখতে হবে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের যে প্রত্যাশা নিয়ে সরকার গঠন করা হয়েছিল সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। এখন তো আমাদের সরকার। সুতরাং দাবি আদায়ে রাজপথে নামার আগে টেবিল টক করতে হবে। তা-না করে বারবার রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করলে তৈরি হবে জনভোগান্তি। ফলে রাজনৈতিক দল ও সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে।’ এ রকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত অপেক্ষা করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন।
ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।’ জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন গঠিত দলটির নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘স্যার বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি... যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে এনেছিলে একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার...। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমি তো এভাবে কাজ করতে পারব না, যদি রাজনৈতিক দলগুলো তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো।’ প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যদি কাজ করতে না পারেন, থেকে কী লাভ। উনি
বলছেন, এ বিষয়ে (পদত্যাগ) ভাবতেছেন। ওনার কাছে মনে হয়েছে পরিস্থিতি এ রকম যে তিনি কাজ করতে পারবেন না।’ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নাহিদ ইসলামের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা পুনর্বিবেচনা করতে চান বলে জানিয়েছেন। আলোচনায় নাহিদ ইসলাম এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে ভেবে দেখার আহ্বান
জানান।’ এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বণিক বার্তার পক্ষ থেকে। তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ভীষণ বিরক্ত। তবে আজ (গতকাল) পদত্যাগ না করলেও আগামী দুই-একদিনের মধ্যে কী করবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না।’ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এমনকি পদত্যাগের আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়ার জন্য ভাষণের একটি খসড়াও করা হয়েছিল। এদিকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তুলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব
ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ চেয়ে আসছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ দুজনই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের জুলাই আন্দোলনে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছিলেন। অন্যদিকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন উপদেষ্টাকে বিএনপির ‘মুখপাত্র’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে। এ তিনজন হলেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। উপদেষ্টাদের পাল্টাপাল্টি পদত্যাগ দাবিতে পরিস্থিতি অনেকটাই ঘোলাটে হচ্ছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জটিল ও দুর্ভেদ্য বিষয়গুলো সরকার হ্যান্ডল করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই রাজনীতি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষক কাজী মাহবুবুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এ অধ্যাপক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয়গুলো সব সময় জটিল ও দুর্ভেদ্য। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বললেই চলে; তবে দ্রুত অ্যাড্রেস করতে পারলে কিছুটা মিনিমাইজ করা যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কাজ করা, যেমনটি শুরু থেকে করছিল। তাহলে এ ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতো না।’ এ রাজনীতি বিশ্লেষক আরো বলেন, ‘১৭ বছর ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা কাঠামোয় তারা নেই। শুরু থেকেই পদায়নের ক্ষেত্রে সরকার স্বজনপ্রীতি, অঞ্চলপ্রীতি, এনজিও-প্রীতির মতো নজির স্থাপন করেছে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলনিরপেক্ষ মানুষগুলো ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে ঢুকে পড়েছেন, যারা অতীতে সুবিধাভোগী চরিত্রে
ছিলেন। ফলে জনগণের যে প্রধান তিনটি চাওয়া—নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার তা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান উদ্যোগ বা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটাই মূলত অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী।’ দ্রুততার সঙ্গে সব পক্ষের সঙ্গে বসে পরিস্থিতি হ্যান্ডল করতে না পারলে অস্থিরতা বাড়তেই পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের মোট সদস্য ২৩ জন। তাদের মধ্যে দুই পক্ষ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা পাঁচ উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া হচ্ছে। তাছাড়া স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি উঠেছে বেশ কয়েকবার। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকেও অব্যাহতি দেয়ার দাবি উঠেছে বিএনপির পক্ষ থেকে। দলটি গতকাল বিকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা, যাদের বক্তব্যে ও কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাদের সরিয়ে দেয়ার দাবি আমরা তুলেছিলাম। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বুধবারের বক্তব্য আবারো নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেয়ার দাবি আমরা এর আগে অনেকবার উত্থাপন করেছি। যেহেতু, একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এ সরকারের প্রধান কাজ, তাই মাথাভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধু রুটিন ওয়ার্ক (দৈনন্দিন কার্যক্রম) পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।’ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন থেকেই মূলত ছাত্র প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি ওঠে। এ আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হলেও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিতে আবার কর্মসূচি দেয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ইশরাক হোসেন। এদিকে আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ যে বিএনপির তরুণ নেতারাই কেবল চাচ্ছেন, তা না। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও একই দাবি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুধু এ দুজন উপদেষ্টাই নয়, সরকারের বিতর্কিত সব উপদেষ্টাকে বাদ দেয়া প্রয়োজন। ক্যাবিনেটের সদস্য কমিয়ে সরকারের এখন উচিত কেয়ারটেকার মোডে চলে যাওয়া। এছাড়া অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।’ বিএনপির দাবির পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সামনে বুধবার এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন তাদের পদত্যাগে বাধ্য করাব। বাংলাদেশের অর্থনীতি গুঁড়িয়ে দিতে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কাজ করছেন। আর আইন মন্ত্রণালয় গুঁড়িয়ে দিতে কাজ করছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।’ বিএনপি ও এনসিপি—দুই দলের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের কথা বলা হচ্ছে। তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত না থাকলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি দলের সঙ্গে আছেন। কিন্তু এনসিপির এক নেতা যে তিন উপদেষ্টাকে বিএনপির বলে উল্লেখ করেছেন তারা তো দলটির সঙ্গে যুক্ত না। এ ধরনের ধারণা সরকারের জন্য ক্ষতিকর। এখন বরং আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা আমরা বলছি—যথাসম্ভব দ্রুত বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ। যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে সেগুলো নিয়ে সনদ প্রকাশের কথা বলছি।’ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দুপক্ষকেই সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘যে পরিস্থিতিতে পাল্টাপাল্টি পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে তাতে স্বার্থগত বিরোধটা স্পষ্ট। এ বিষয়ে সহনশীল হওয়ার জন্য দুপক্ষের প্রতিই আমাদের অনুরোধ থাকবে। অন্যথায় এটি রাজনীতিতে একটা স্থায়ী বিরোধ তৈরি করবে। যে মুহূর্তে সংস্কার, বিচার, জাতীয় সনদ তৈরি ও নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রশ্নে আমাদের সমঝোতা এবং ঐক্য দরকার; সেখানে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি দাবি দূরত্ব তৈরি করবে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য এটা মোটেও ইতিবাচক হবে না।’ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এ নিয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দিয়ে আসছেন। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এনসিপি নেতারা কমিশন পুনর্গঠন করে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিএনপি ও এনসিপির এমন দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। এ পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। গতকাল দলটির এক বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টার প্রতি এ আহ্বান জানানো হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে ‘আগেকার যেকোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত’—পদত্যাগের দাবির মুখে এ কথা বলেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল বিকালে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সরকারে আর একদিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সব শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই। পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী স্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। দেশপ্রেমিক জনগণ যারা জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, তাদের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।’ ‘ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড়’—পোস্টের শুরুতেই এ কথা লিখে তিনি বলেন, ‘দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য।’ রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিবদমান পক্ষগুলোকে সহনশীল আচরণ করা জরুরি বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এ জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এই অস্থিরতা দুঃখজনক! রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেড় যুগের কর্তৃত্ববাদী হটাতে নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণরা; যা আমাদের সাহস জুগিয়েছে। আবার দীর্ঘ ১৭ বছর লড়াই-সংগ্রাম জারি রেখে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে। সুতরাং কারো অবদানকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তরুণরা বয়সে অনভিজ্ঞ, তাদের ভুলত্রুটি রাজনৈতিক দলগুলোকে মার্জনা করতে হবে। আবার বিজ্ঞদের মেনেই তরুণদের রাজনীতি করা উচিত।’ জনভোগান্তি কমাতে সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘আমাদের সহিষ্ণু, সহনশীল, সহমর্মিতা বজায় রাখতে হবে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের যে প্রত্যাশা নিয়ে সরকার গঠন করা হয়েছিল সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। এখন তো আমাদের সরকার। সুতরাং দাবি আদায়ে রাজপথে নামার আগে টেবিল টক করতে হবে। তা-না করে বারবার রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করলে তৈরি হবে জনভোগান্তি। ফলে রাজনৈতিক দল ও সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে।’ এ রকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত অপেক্ষা করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন।