
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

এনবিআর কর্মীরা উৎকণ্ঠায়

চট্টগ্রামে কাস্টম হাউস ও ইউরেকা ভবনে আগুন

সংস্কারকে সংসদের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, অভিযোগ আখতারের

বাংলা একাডেমির পরিবর্তন ও সংস্কারে কমিটি গঠন

ধামাকার চেয়ারম্যান মোজতবা কারাগারে

খোঁজ মিলল সেই ডিজিএমের, কোথায় ছিলেন তিনি

সাইফ পাওয়ার টেকের অধ্যায় শেষ, চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বে নৌবাহিনী
নজিরবিহীন অনিয়মের নজির জনস্বাস্থ্যের প্রকল্পে

গ্রামীণ জনপদের নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র মানুষের জন্য টুইন পিট ল্যাট্রিন, পাবলিক টয়লেট ও হাত ধোয়ার স্টেশনে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষের আগেই বেশিরভাগ অবকাঠামো হয়ে পড়েছে ব্যবহার অনুপযোগী, বেশ কিছু আবার এরই মধ্যে নাম উঠিয়েছে পরিত্যক্তের তালিকায়। পানি সরবরাহের জন্য পাইপলাইন বসানো হয়েছে নকশাবহির্ভূতভাবে, ব্যবহার হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ। এ ছাড়া জলাশয় ভরাট করে পাইপলাইন স্থাপন করা হলেও নেওয়া হয়নি পরিবেশের ছাড়পত্র। অন্যদিকে ঠিকাদারদের জমা দেওয়া বিল যাচাই-বাছাই ছাড়াই পরিশোধ করা হয়েছে অর্থ। আর কাজের গুণগত মান তদারকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরিতে দেওয়া হয়েছে বাধা। তবে এসবেই শেষ নয়, হেন কোনো অনিয়ম নেই, যা এ
প্রকল্পে করা হয়নি। সব মিলিয়ে যেন নজিরবিহীন অনিয়মের নজির স্থাপন হয়েছে ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক এ প্রকল্পে। যার আওতায় দেশের ৩০ জেলার ‘মানবসম্পদ উন্নয়নর নামে নিম্নমানের কাজ করে বৈদেশিক ঋণের বিপুল অর্থ অপচয়ে প্রকৃতপক্ষে নিজেদের উন্নয়ন করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদাররা। খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে বিস্তর অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয়ের চিত্র উঠে এসেছে। সুবিধাভোগীরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন কি না, তা দেখার জন্য সরেজমিন পরিদর্শন শেষে আইএমইডি সম্প্রতি এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। তাতেই উঠে এসেছে প্রকল্প বাস্তবায়নে নজিরবিহীন অনিয়মের এমন চিত্র। গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ ও
স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়েছিল ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি। কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। প্রকল্পের মোট বরাদ্দের মধ্যে ১ হাজার ৮৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এসেছে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে। যার অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি); কিন্তু বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার আগেই প্রকল্পটি অনিয়ম, ব্যর্থতা ও দুর্নীতির এক বড় উদাহরণে পরিণত হয়েছে। প্রকল্পটি দেশের ৩০টি জেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। যার আওতায় গ্রামীণ এলাকার বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিকে নতুন স্যানিটেশন ও
হাইজিন সুবিধা, হাত ধোয়ার স্টেশন এবং হতদরিদ্র পরিবারের জন্য টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণ করার কথা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে একনেক সভায় অনুমোদিত এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় পরের বছরের জানুয়ারিতে। বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারিত হয় ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অথচ গত এপ্রিল পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ বাস্তবায়নে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকলেও প্রকল্পটির প্রায় অর্ধেক কাজ এখনো বাকি রয়েছে। আর যেগুলো হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই ক্রটিপূর্ণ এবং নিম্নমানের। কাজ যেভাবে এগিয়েছে, তাতে উন্নয়নের চেয়ে অপচয় ও দুর্নীতিই বেশি নজরে পড়েছে। বাস্তবায়নের তিন বছরে যেসব স্থাপনা হয়েছে, তা ব্যবহার অযোগ্য, নিম্নমানের এবং এরই মধ্যে অনেক স্থাপনাই অকেজো ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে
আছে। আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অনেক জেলায় নির্মিত টয়লেটের টাইলস ভেঙে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে ফিটিংস, দরজার কাঠামো দুর্বল। দরিদ্রদের জন্য তৈরি টুইন পিট ল্যাট্রিনগুলোয় খুবই নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে হাত ধোয়ার স্টেশনগুলো। কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য নির্মিত টয়লেটগুলো অনেক ক্ষেত্রে ক্লিনিক থেকে অনেক দূরে, কোথাও কোথাও আবার ডোবার পাশে নির্মাণ করায় বেশিরভাগ টয়লেট ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দরপত্রে উল্লিখিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কোথাও বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। সাধারণত প্রকল্প শেষ হওয়ার পর এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু ডিপিএইচইর এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। চলমান থাকা অবস্থায়ই প্রকল্পের প্রধান অঙ্গগুলো পরিত্যক্ত এবং
ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রধান কার্যালয়ের সাতজন অভিজ্ঞ পরামর্শকের পেছনে খরচ প্রায় ২৭ কোটি টাকা; কিন্তু কাজের অগ্রগতি, গুণগতমান এবং রক্ষণাবেক্ষণ—সবই প্রশ্নবিদ্ধ। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা দেখভালে বছরে চারটি করে পিআইসি ও পিএসসি সভা হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো বছরই এ সভাগুলো ঠিকমতো হয়নি। সভাগুলো হলে এত অনিয়ম হতো না। আলোচ্য প্রকল্পে এ পর্যন্ত দুবার অডিট হয়েছে। তাতে বেশ কিছু অডিট আপত্তি উঠে এসেছে, যা এখনো নিষ্পন্ন হয়নি। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো—প্রকল্পটির কাজের গুণগতমান নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজের গুণগতমান নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা জেলা সমন্বয়কারীরা ঠিকাদারদের কাজের
অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরির পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতিবেদন না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এজন্য নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি থেকে বিরত থেকেছেন সমন্বয়কারীরা। এমনকি জেলা পর্যায়ে সমন্বয়কারীদের টার্মস অব রেফারেন্স অনুসারে ঠিকাদারদের বিল ভেরিফাই করার (যাচাই-বাছাই) বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তাদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অনিয়ম-ত্রুটির জন্য ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। জেলা সমন্বয়কারীদের যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এ কারণে জেলা সমন্বয়কারীদের গুরুত্ব না দিয়ে ইচ্ছামতো অনিয়ম করেছেন ঠিকাদাররা। স্বয়ং প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এ অনিয়মে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে এমন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. তবিবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘আইএমইডির প্রতিবেদনে আংশিক তথ্য এসেছে, পুরো প্রকল্পের চিত্র উঠে আসেনি। যেসব জেলায় খারাপ কাজ হয়েছে তারা সেসব জেলা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনে যেভাবে অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে অতে বেশি অনিয়ম হয়নি। সব জেলা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিলে অনিয়মের হার এত বেশি হতো না।’ অনিয়মের সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে কোনো অনিয়ম করিনি। আর এত বড় প্রকল্পের কাজ পিডির একার পক্ষে সব দেখভাল করা সম্ভব নয়। যথাযথভাবে কাজ করার জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সত্য নয়। আমি কাউকে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিতে নিষেধ করিনি।’ তবে মূল্যায়ন প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের পেছনে প্রকল্প পরিচালকেরই দায় বেশি। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালক জেনেশুনেই অনিয়ম করেছেন, নিয়মকানুন মানেননি। পরিচালকই ঠিকাদারদের কাজের অনিয়ম নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি না করতে জেলা সমন্বয়কারীদের নির্দেশনা দেন। চাকরি বাঁচানোর ভয়ে প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনা মেনে নেতিবাচক প্রতিবেদন দেওয়া বন্ধ করেন তারা। মূল্যায়ন প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, প্রকল্প পরিচালকের সহায়তা ছাড়া ঠিকাদারদের পক্ষে এত বড় অনিয়ম করা সম্ভব নয়। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম বন্ধ করার পরিবর্তে নেতিবাচক প্রতিবেদন আটকানোতেই প্রকল্প পরিচালকের বেশি মনোযোগ। অধীনদের নেতিবাচক প্রতিবেদন না করার নির্দেশনা দিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। আইএমইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদন যাতে নেতিবাচক না হয়, সে চেষ্টাও করেছেন। মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নেতিবাচক প্রতিবেদন না করার জন্যও বিভিন্নভাবে ম্যানেজ (রাজি করানো) করার চেষ্টা করেন প্রকল্প পরিচালক। এমনকি তার অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার জন্যও বিভিন্ন মাধ্যমে এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন প্রকল্প পরিচালক। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিকাংশ জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম হয়েছে। প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি জেলায় আইএমইডির সরেজমিন পরিদর্শন পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কমিউনিটিভিত্তিক ছোট পানির স্কিম ও পাবলিক টয়লেটের নির্মাণকাজের গুণগতমান নিম্নমানের দেখা গেছে। ফলে বিভিন্ন জেলায় ছোট পানির স্কিমের ল্যান্ডিং স্টেশন ভেঙে গেছে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় টয়লেটের মেঝে দেবে গেছে, ভেঙে গেছে টাইলস। অনেক পাবলিক টয়লেটে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বেশিরভাগ ব্যবহার অনুপযোগী। প্রকল্পে নির্মিত টয়লেটগুলোকে ‘প্রতিবন্ধীবান্ধব’ বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। র্যাম্প বেশি উঁচু করায় সাধারণ মানুষই সেখানে যেতে পারেন না। ভেতরে হাইকমোডের সঙ্গে একটি সাপোর্টিং দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তাতেও রয়েছে ভিন্নতা। কোনো কোনো টয়লেটে আবার এটিও দেওয়া হয়নি। র্যাম্পের গোড়া ঠিকমতো তৈরি করা হয়নি, অন্যদিকে টয়লেটের সামনে একটি বিট দেওয়া হয়েছে এবং দরজাও ঠিকমতো তৈরি করা হয়নি। র্যাম্প অতিরিক্ত উঁচু হওয়ায় হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা সেখানে উঠতেই পারেন না। দরজা ও প্রবেশপথ যথাযথ নয়। অথচ প্রতিটি টয়লেটের সামনে প্রতিবন্ধীদের প্রতীক দিয়ে বোঝানো হয়েছে এটি হুইলচেয়ার উপযোগী। মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্সে নারীদের জন্য আলাদা টয়লেট তৈরি করা হলেও তা কখনো ব্যবহার হয়নি। কমিউনিটি ক্লিনিকের টয়লেটের নির্মাণকাজ কোনো কোনো জেলায় এখনো চলমান। এরই মধ্যে যে টয়লেটগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো ক্লিনিক থেকে অনেক দূরে এবং অনেক ক্ষেত্রে ডোবায় স্থাপন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্লিনিকের টয়লেট নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি। দূরত্বের কারণে এগুলো ব্যবহার না হওয়ায় বন্ধ রাখা হয়। দরিদ্রদের জন্য নির্মিত টুইন পিট ল্যাট্রিনে খুবই নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বাড়ি থেকে অনেক দূরে স্থাপন করা হয়েছে ল্যাট্রিন। জনসমাগমস্থল, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় হাত ধোয়ার স্টেশনগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। শুধু এগুলো নয়, প্রকল্পের আওতায় বেশিরভাগ হাত ধোয়ার স্টেশন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে (টাইলস ভেঙে গেছে, ফিটিংস নষ্ট হয়ে গেছে) এবং যেগুলো ভালো আছে, তাও ব্যবহার হয় না। শারীরিক প্রতিবন্ধী স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য হাত ধোয়ার স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু স্টেশন শারীরিক প্রতিবন্ধীবান্ধব না হওয়ায় ব্যবহার হচ্ছে না। এ ছাড়া কোনো কোনো স্টেশন খোলা জায়গায় স্থাপন করায় ফিটিংসগুলো চুরি বা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল—বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ। কিন্তু সেখানেও দেখা গেছে মারাত্মক ত্রুটি। স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মাটির তিন ফুট নিচে পাইপ বসানোর কথা থাকলেও, বাস্তবে কোথাও মাটি থেকে মাত্র তিন ইঞ্চি, আবার কোথাও ছয় বা নয় ইঞ্চি নিচে বসানো হয়েছে। অনেক জেলায় পাইপ বসাতে প্রয়োজনীয় বালু দেওয়া হয়নি। যেখানে দেওয়া হয়েছে, সেখানেও ছয় ইঞ্চির পরিবর্তে এক থেকে দুই ইঞ্চি পুরুত্বে দেওয়া হয়েছে। ব্যবহৃত হয়েছে নিম্নমানের কয়েল পাইপ। অনেক জেলায় জলাশয় ও পুকুর ভরাট করে পাইপ বসানো হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নিম্নমানের উপকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ফিটিংসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অল্পদিনের মধ্যেই এসব স্থাপনা নষ্ট হয়ে যাবে এবং সরকারি অর্থের অপচয় হবে। একই সঙ্গে নিম্নমানের উপকরণ এবং কাজে অনিয়ম করায় সরকারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিকাদারদের থেকে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করার পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থে জেলা সমন্বয়কারীদের দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পে করা হয়নি। সব মিলিয়ে যেন নজিরবিহীন অনিয়মের নজির স্থাপন হয়েছে ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক এ প্রকল্পে। যার আওতায় দেশের ৩০ জেলার ‘মানবসম্পদ উন্নয়নর নামে নিম্নমানের কাজ করে বৈদেশিক ঋণের বিপুল অর্থ অপচয়ে প্রকৃতপক্ষে নিজেদের উন্নয়ন করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদাররা। খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে বিস্তর অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয়ের চিত্র উঠে এসেছে। সুবিধাভোগীরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন কি না, তা দেখার জন্য সরেজমিন পরিদর্শন শেষে আইএমইডি সম্প্রতি এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। তাতেই উঠে এসেছে প্রকল্প বাস্তবায়নে নজিরবিহীন অনিয়মের এমন চিত্র। গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ ও
স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়েছিল ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি। কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। প্রকল্পের মোট বরাদ্দের মধ্যে ১ হাজার ৮৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এসেছে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে। যার অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি); কিন্তু বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার আগেই প্রকল্পটি অনিয়ম, ব্যর্থতা ও দুর্নীতির এক বড় উদাহরণে পরিণত হয়েছে। প্রকল্পটি দেশের ৩০টি জেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। যার আওতায় গ্রামীণ এলাকার বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিকে নতুন স্যানিটেশন ও
হাইজিন সুবিধা, হাত ধোয়ার স্টেশন এবং হতদরিদ্র পরিবারের জন্য টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণ করার কথা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে একনেক সভায় অনুমোদিত এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় পরের বছরের জানুয়ারিতে। বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারিত হয় ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অথচ গত এপ্রিল পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ বাস্তবায়নে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে থাকলেও প্রকল্পটির প্রায় অর্ধেক কাজ এখনো বাকি রয়েছে। আর যেগুলো হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই ক্রটিপূর্ণ এবং নিম্নমানের। কাজ যেভাবে এগিয়েছে, তাতে উন্নয়নের চেয়ে অপচয় ও দুর্নীতিই বেশি নজরে পড়েছে। বাস্তবায়নের তিন বছরে যেসব স্থাপনা হয়েছে, তা ব্যবহার অযোগ্য, নিম্নমানের এবং এরই মধ্যে অনেক স্থাপনাই অকেজো ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে
আছে। আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অনেক জেলায় নির্মিত টয়লেটের টাইলস ভেঙে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে ফিটিংস, দরজার কাঠামো দুর্বল। দরিদ্রদের জন্য তৈরি টুইন পিট ল্যাট্রিনগুলোয় খুবই নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে হাত ধোয়ার স্টেশনগুলো। কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য নির্মিত টয়লেটগুলো অনেক ক্ষেত্রে ক্লিনিক থেকে অনেক দূরে, কোথাও কোথাও আবার ডোবার পাশে নির্মাণ করায় বেশিরভাগ টয়লেট ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দরপত্রে উল্লিখিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কোথাও বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। সাধারণত প্রকল্প শেষ হওয়ার পর এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু ডিপিএইচইর এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। চলমান থাকা অবস্থায়ই প্রকল্পের প্রধান অঙ্গগুলো পরিত্যক্ত এবং
ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রধান কার্যালয়ের সাতজন অভিজ্ঞ পরামর্শকের পেছনে খরচ প্রায় ২৭ কোটি টাকা; কিন্তু কাজের অগ্রগতি, গুণগতমান এবং রক্ষণাবেক্ষণ—সবই প্রশ্নবিদ্ধ। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা দেখভালে বছরে চারটি করে পিআইসি ও পিএসসি সভা হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো বছরই এ সভাগুলো ঠিকমতো হয়নি। সভাগুলো হলে এত অনিয়ম হতো না। আলোচ্য প্রকল্পে এ পর্যন্ত দুবার অডিট হয়েছে। তাতে বেশ কিছু অডিট আপত্তি উঠে এসেছে, যা এখনো নিষ্পন্ন হয়নি। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো—প্রকল্পটির কাজের গুণগতমান নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজের গুণগতমান নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা জেলা সমন্বয়কারীরা ঠিকাদারদের কাজের
অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরির পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতিবেদন না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এজন্য নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি থেকে বিরত থেকেছেন সমন্বয়কারীরা। এমনকি জেলা পর্যায়ে সমন্বয়কারীদের টার্মস অব রেফারেন্স অনুসারে ঠিকাদারদের বিল ভেরিফাই করার (যাচাই-বাছাই) বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তাদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অনিয়ম-ত্রুটির জন্য ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। জেলা সমন্বয়কারীদের যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এ কারণে জেলা সমন্বয়কারীদের গুরুত্ব না দিয়ে ইচ্ছামতো অনিয়ম করেছেন ঠিকাদাররা। স্বয়ং প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এ অনিয়মে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে এমন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. তবিবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘আইএমইডির প্রতিবেদনে আংশিক তথ্য এসেছে, পুরো প্রকল্পের চিত্র উঠে আসেনি। যেসব জেলায় খারাপ কাজ হয়েছে তারা সেসব জেলা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনে যেভাবে অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে অতে বেশি অনিয়ম হয়নি। সব জেলা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিলে অনিয়মের হার এত বেশি হতো না।’ অনিয়মের সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে কোনো অনিয়ম করিনি। আর এত বড় প্রকল্পের কাজ পিডির একার পক্ষে সব দেখভাল করা সম্ভব নয়। যথাযথভাবে কাজ করার জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সত্য নয়। আমি কাউকে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিতে নিষেধ করিনি।’ তবে মূল্যায়ন প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের পেছনে প্রকল্প পরিচালকেরই দায় বেশি। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালক জেনেশুনেই অনিয়ম করেছেন, নিয়মকানুন মানেননি। পরিচালকই ঠিকাদারদের কাজের অনিয়ম নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি না করতে জেলা সমন্বয়কারীদের নির্দেশনা দেন। চাকরি বাঁচানোর ভয়ে প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনা মেনে নেতিবাচক প্রতিবেদন দেওয়া বন্ধ করেন তারা। মূল্যায়ন প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, প্রকল্প পরিচালকের সহায়তা ছাড়া ঠিকাদারদের পক্ষে এত বড় অনিয়ম করা সম্ভব নয়। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম বন্ধ করার পরিবর্তে নেতিবাচক প্রতিবেদন আটকানোতেই প্রকল্প পরিচালকের বেশি মনোযোগ। অধীনদের নেতিবাচক প্রতিবেদন না করার নির্দেশনা দিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। আইএমইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদন যাতে নেতিবাচক না হয়, সে চেষ্টাও করেছেন। মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নেতিবাচক প্রতিবেদন না করার জন্যও বিভিন্নভাবে ম্যানেজ (রাজি করানো) করার চেষ্টা করেন প্রকল্প পরিচালক। এমনকি তার অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার জন্যও বিভিন্ন মাধ্যমে এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন প্রকল্প পরিচালক। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিকাংশ জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম হয়েছে। প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি জেলায় আইএমইডির সরেজমিন পরিদর্শন পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কমিউনিটিভিত্তিক ছোট পানির স্কিম ও পাবলিক টয়লেটের নির্মাণকাজের গুণগতমান নিম্নমানের দেখা গেছে। ফলে বিভিন্ন জেলায় ছোট পানির স্কিমের ল্যান্ডিং স্টেশন ভেঙে গেছে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় টয়লেটের মেঝে দেবে গেছে, ভেঙে গেছে টাইলস। অনেক পাবলিক টয়লেটে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বেশিরভাগ ব্যবহার অনুপযোগী। প্রকল্পে নির্মিত টয়লেটগুলোকে ‘প্রতিবন্ধীবান্ধব’ বলা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। র্যাম্প বেশি উঁচু করায় সাধারণ মানুষই সেখানে যেতে পারেন না। ভেতরে হাইকমোডের সঙ্গে একটি সাপোর্টিং দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তাতেও রয়েছে ভিন্নতা। কোনো কোনো টয়লেটে আবার এটিও দেওয়া হয়নি। র্যাম্পের গোড়া ঠিকমতো তৈরি করা হয়নি, অন্যদিকে টয়লেটের সামনে একটি বিট দেওয়া হয়েছে এবং দরজাও ঠিকমতো তৈরি করা হয়নি। র্যাম্প অতিরিক্ত উঁচু হওয়ায় হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা সেখানে উঠতেই পারেন না। দরজা ও প্রবেশপথ যথাযথ নয়। অথচ প্রতিটি টয়লেটের সামনে প্রতিবন্ধীদের প্রতীক দিয়ে বোঝানো হয়েছে এটি হুইলচেয়ার উপযোগী। মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্সে নারীদের জন্য আলাদা টয়লেট তৈরি করা হলেও তা কখনো ব্যবহার হয়নি। কমিউনিটি ক্লিনিকের টয়লেটের নির্মাণকাজ কোনো কোনো জেলায় এখনো চলমান। এরই মধ্যে যে টয়লেটগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো ক্লিনিক থেকে অনেক দূরে এবং অনেক ক্ষেত্রে ডোবায় স্থাপন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্লিনিকের টয়লেট নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি। দূরত্বের কারণে এগুলো ব্যবহার না হওয়ায় বন্ধ রাখা হয়। দরিদ্রদের জন্য নির্মিত টুইন পিট ল্যাট্রিনে খুবই নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বাড়ি থেকে অনেক দূরে স্থাপন করা হয়েছে ল্যাট্রিন। জনসমাগমস্থল, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় হাত ধোয়ার স্টেশনগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। শুধু এগুলো নয়, প্রকল্পের আওতায় বেশিরভাগ হাত ধোয়ার স্টেশন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে (টাইলস ভেঙে গেছে, ফিটিংস নষ্ট হয়ে গেছে) এবং যেগুলো ভালো আছে, তাও ব্যবহার হয় না। শারীরিক প্রতিবন্ধী স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য হাত ধোয়ার স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু স্টেশন শারীরিক প্রতিবন্ধীবান্ধব না হওয়ায় ব্যবহার হচ্ছে না। এ ছাড়া কোনো কোনো স্টেশন খোলা জায়গায় স্থাপন করায় ফিটিংসগুলো চুরি বা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল—বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ। কিন্তু সেখানেও দেখা গেছে মারাত্মক ত্রুটি। স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মাটির তিন ফুট নিচে পাইপ বসানোর কথা থাকলেও, বাস্তবে কোথাও মাটি থেকে মাত্র তিন ইঞ্চি, আবার কোথাও ছয় বা নয় ইঞ্চি নিচে বসানো হয়েছে। অনেক জেলায় পাইপ বসাতে প্রয়োজনীয় বালু দেওয়া হয়নি। যেখানে দেওয়া হয়েছে, সেখানেও ছয় ইঞ্চির পরিবর্তে এক থেকে দুই ইঞ্চি পুরুত্বে দেওয়া হয়েছে। ব্যবহৃত হয়েছে নিম্নমানের কয়েল পাইপ। অনেক জেলায় জলাশয় ও পুকুর ভরাট করে পাইপ বসানো হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নিম্নমানের উপকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ফিটিংসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অল্পদিনের মধ্যেই এসব স্থাপনা নষ্ট হয়ে যাবে এবং সরকারি অর্থের অপচয় হবে। একই সঙ্গে নিম্নমানের উপকরণ এবং কাজে অনিয়ম করায় সরকারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিকাদারদের থেকে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করার পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থে জেলা সমন্বয়কারীদের দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।