ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
আগে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার, পরে নির্বাচন
ক্যানসার আক্রান্তদের দুর্ভোগ চরমে, কেমোর সিরিয়াল পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা
‘পৌরসভাগুলোকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে’
মেট্রোরেলের সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি
চট্টগ্রাম আদালতের ১,৯১১ মামলার নথি গায়েব, থানায় জিডি
লাইভে এসে শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যা বললেন মেজর ডালিম
বিএসএমএমইউর দুই চিকিৎসকসহ ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত
দুই সংস্থার প্রধান কাস্টমস ও ট্যাক্স ক্যাডারের হবেন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পলিসি উইং (রাজস্ব নীতি) পৃথক করার সুপারিশ করেছে রাজস্ব বোর্ড সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি।
‘রাজস্ব কমিশন’ নামে স্বাধীন একটি সংস্থা রাজস্ব নীতি প্রণয়নের কাজ করবে, যেটি সরকারের বিভাগ পদমর্যাদার হবে। এর প্রধান হবেন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। কমিশন অর্থমন্ত্রীর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক কার্যক্রম জোরদারে এনবিআরকে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসাবে পুনর্গঠন এবং এর শীর্ষ নির্বাহী পদে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগে সুপারিশ করেছে কমিশন।
অংশীজনদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সচিবালয় এবং আগারগাঁও রাজস্ব ভবনের বাইরে কমিশনের অফিস হবে। ২২ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রধান ড. আব্দুল
মজিদ অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেন। এ সময় সংস্কার কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ আছে। প্রতিবেদনে রাজস্ব প্রশাসন ও নীতি বিভাগ পৃথকীকরণের যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, কর নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন কাজ একই সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত থাকায় নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে আপসকামিতা, দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাত ও নানা অনিয়মের অভিযোগ আসছে। গুরুত্বপূর্ণ দুটো কাজ একটি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে করতে হয় বিধায় নীতি-নির্ধারক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নীতি প্রণয়নে বেশি সময় দিতে হয়। এতে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত কার্যক্রম নিতে পারে না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এনবিআর চেয়ারম্যন হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় কর
নীতি, কর আহরণ, করদাতাদের সেবা সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই স্বচ্ছ ও উন্নয়নবান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ পুনঃপরিবর্তন করে এনবিআর ও আইআরডি পুনর্গঠনের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্ব কমিশন নামে একটি স্বাধীন সংস্থা রাজস্ব নীতি প্রণয়নের কাজ করবে। এই কমিশন সরকারের বিভাগ পদমর্যাদার হবে। আর নীতি বাস্তবায়ন ও রাজস্ব আদায়ের কাজ বর্তমানের ন্যায় এনবিআরই করবে। এ জন্য এনবিআরকে পুনর্গঠন করতে হবে। এনবিআরের বর্তমান কাঠামোকে পুনর্গঠন করে আয়কর বিভাগ (প্রত্যক্ষ কর) এবং শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের (পরোক্ষ কর) সমন্বয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল
আদেশ (৭৬নং) অনুযায়ী সচিব পদমর্যাদায় কর্মরত আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের সদস্যদের মধ্য থেকে যোগ্যতম সদস্যকে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে সচিব/সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান সরাসরি অর্থমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবেন। রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা সচিবালয়ের সমপদমর্যাদাধারীদের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা পাবেন। রাজস্ব কমিশন কাজ করবে যেভাবে : রাজস্ব কমিশন সরকারের উন্নয়নের নীতি কৌশল, অংশীজনদের প্রস্তাব-পরামর্শ ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার ভিত্তিতে নীতি প্রণয়নের কাজ করবে। আয়কর, ভ্রমণ কর, দানকর, আমদানি-রপ্তানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট, আবগারি শুল্কসহ অন্য শুল্ক-কর হার নির্ধারণ করবে এই কমিশন। প্রয়োজনে শুল্ক-করসংক্রান্ত বিধিবিধান প্রণয়ন, সংশোধন ও পরিবর্তন করবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি দেবে। পাশাপাশি
আইন ও বিধি, প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা প্রদান করবে। রাজস্ব নীতি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের দক্ষ, নিষ্ঠাবান ও সৎ কর্মকর্তাদের সচিব/সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই কমিশনে হিসাববিদ, প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, থিংক ট্যাংক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। এ পরিষদ অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা মেনে নীতিমালার আলোকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রাজস্ব কমিশনকে নিয়মিত পরামর্শ দেবে। কাস্টমস ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল রাজস্ব কমিশনে ন্যস্ত থাকবে। করনীতিসংক্রান্ত সেবা গ্রহণে অংশীজনদের যাতায়াত সহজসাধ্য রাখতে সচিবালয় ও রাজস্ব ভবনের
বাইরে রাজস্ব কমিশনের অফিস স্থাপন করা যুক্তিযুক্ত হবে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায় সরকার রাজস্ব নীতি ও প্রশাসন বিভাগ পৃথক করে একটি আদেশ জারি করে। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৯ সালে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সেই সিদ্ধান্ত বাতিল বা স্থগিত না করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে। পরামর্শক কমিটির অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সংস্কারের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বল্পমেয়াদে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ পুনর্গঠিত এনবিআরকে স্বতন্ত্র বিভাগে উন্নীতকরণ ও কাঠামো শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি এখানে কর্মরত সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন পদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং নতুন পদ সৃষ্টি করবে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়,
অর্থবিভাগ ও লেজিসলেটিভ বিভাগ প্রস্তাবিত রাজস্ব কমিশন গঠনের কাজ করবে। মধ্যমেয়াদে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কসংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান সংশোধন করবে। এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক সদস্য (কাস্টমস) ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব খাত সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বাস্তবভিত্তিক। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব আদায় বাড়ার পাশাপাশি দেশের রাজস্ববান্ধব ও করদাতাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে। কারণ আয়কর ও কাস্টমস দুটো বিশেষায়িত ক্যাডার। এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা বহু বছর কাজ করতে করতে নীতি প্রণয়নে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। নতুন নীতি প্রণয়নের ফলে অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই রাজস্ব কমিশন বা এনবিআরের দায়িত্ব এই দুই ক্যাডারের হাতে থাকা উচিত। তিনি আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অ্যাডমিন ক্যাডারের সচিব এনবিআর চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদানের পর দু-একজন কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করে নীতি প্রণয়ন করছেন বা প্রশাসন চালাচ্ছেন। এতে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। ক্যাডারের ভেতরে দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। আয়কর বা কাস্টমস ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান বা কমিশনের প্রধান নিয়োগ দেওয়া হলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বন্দ্ব এড়ানো সম্ভব। আরেক সাবেক সদস্য (আয়কর) সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, এ ধরনের সুপারিশ বা প্রস্তাব দেওয়া হলো তা দেশের জন্য খুবই ভালো। এটি যুগোপযোগী প্রস্তাব। দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা বলে আসছি এনবিআরে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে চেয়ারম্যান দেওয়ার কথা। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভও ছিল। কারণ অ্যাডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস আইনের মতো টেকনিক্যাল আইন-কানুন বুঝতেই ৬ মাসের বেশি সময় লেগে যায়। ফলে তিনি খুব বেশি কিছু করতে পারেন না। এনবিআর নিয়ে শ্বেতপত্রে যা আছে : বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের সমস্যা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। শ্বেতপত্রে এনবিআরের নানা সীমাবদ্ধতার কথা উঠে এসেছে। বিশেষত নীতি প্রণয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিশ্লেষণে স্বায়ত্তশাসন ও দক্ষতার ক্ষেত্রে এনবিআরের সীমাবদ্ধতা আছে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগ বিশ্লেষণাত্মক কাজে দক্ষ নয়। এছাড়া ঘন ঘন নেতৃত্বের পরিবর্তন অর্থবহ সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করছে। পাশাপাশি এনবিআর স্বেচ্ছাসেবী কমপ্লায়েন্সকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে এনফোর্সমেন্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, এনবিআরে চেয়ারম্যান নিয়োগের বর্তমান প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানটির কার্যকর প্রশাসন ও শাসনের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। শুরুতে এনবিআর চেয়ারম্যান হতেন এনবিআরের একজন সদস্য। পরবর্তী ১৯৭৯ সালে অ্যাডমিন ক্যাডার কর্মকর্তাদের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। এ ধরনের নিয়োগ এনবিআর প্রশাসনে সদস্যার সৃষ্টি করেছে। রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবিহীন সচিবরা পদাধিকারবলে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ পাওয়ায় এনবিআর একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসাবে দাঁড়াতে পারছে না। এনবিআরে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং চেয়ারম্যানের কাজের মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর করার কথা শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে।
মজিদ অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেন। এ সময় সংস্কার কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ আছে। প্রতিবেদনে রাজস্ব প্রশাসন ও নীতি বিভাগ পৃথকীকরণের যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, কর নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন কাজ একই সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত থাকায় নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে আপসকামিতা, দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাত ও নানা অনিয়মের অভিযোগ আসছে। গুরুত্বপূর্ণ দুটো কাজ একটি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে করতে হয় বিধায় নীতি-নির্ধারক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নীতি প্রণয়নে বেশি সময় দিতে হয়। এতে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত কার্যক্রম নিতে পারে না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এনবিআর চেয়ারম্যন হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় কর
নীতি, কর আহরণ, করদাতাদের সেবা সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই স্বচ্ছ ও উন্নয়নবান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ পুনঃপরিবর্তন করে এনবিআর ও আইআরডি পুনর্গঠনের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্ব কমিশন নামে একটি স্বাধীন সংস্থা রাজস্ব নীতি প্রণয়নের কাজ করবে। এই কমিশন সরকারের বিভাগ পদমর্যাদার হবে। আর নীতি বাস্তবায়ন ও রাজস্ব আদায়ের কাজ বর্তমানের ন্যায় এনবিআরই করবে। এ জন্য এনবিআরকে পুনর্গঠন করতে হবে। এনবিআরের বর্তমান কাঠামোকে পুনর্গঠন করে আয়কর বিভাগ (প্রত্যক্ষ কর) এবং শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের (পরোক্ষ কর) সমন্বয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল
আদেশ (৭৬নং) অনুযায়ী সচিব পদমর্যাদায় কর্মরত আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের সদস্যদের মধ্য থেকে যোগ্যতম সদস্যকে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে সচিব/সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান সরাসরি অর্থমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবেন। রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা সচিবালয়ের সমপদমর্যাদাধারীদের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা পাবেন। রাজস্ব কমিশন কাজ করবে যেভাবে : রাজস্ব কমিশন সরকারের উন্নয়নের নীতি কৌশল, অংশীজনদের প্রস্তাব-পরামর্শ ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার ভিত্তিতে নীতি প্রণয়নের কাজ করবে। আয়কর, ভ্রমণ কর, দানকর, আমদানি-রপ্তানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট, আবগারি শুল্কসহ অন্য শুল্ক-কর হার নির্ধারণ করবে এই কমিশন। প্রয়োজনে শুল্ক-করসংক্রান্ত বিধিবিধান প্রণয়ন, সংশোধন ও পরিবর্তন করবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি দেবে। পাশাপাশি
আইন ও বিধি, প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা প্রদান করবে। রাজস্ব নীতি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের দক্ষ, নিষ্ঠাবান ও সৎ কর্মকর্তাদের সচিব/সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই কমিশনে হিসাববিদ, প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, থিংক ট্যাংক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। এ পরিষদ অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা মেনে নীতিমালার আলোকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রাজস্ব কমিশনকে নিয়মিত পরামর্শ দেবে। কাস্টমস ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল রাজস্ব কমিশনে ন্যস্ত থাকবে। করনীতিসংক্রান্ত সেবা গ্রহণে অংশীজনদের যাতায়াত সহজসাধ্য রাখতে সচিবালয় ও রাজস্ব ভবনের
বাইরে রাজস্ব কমিশনের অফিস স্থাপন করা যুক্তিযুক্ত হবে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায় সরকার রাজস্ব নীতি ও প্রশাসন বিভাগ পৃথক করে একটি আদেশ জারি করে। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৯ সালে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সেই সিদ্ধান্ত বাতিল বা স্থগিত না করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে। পরামর্শক কমিটির অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সংস্কারের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বল্পমেয়াদে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ পুনর্গঠিত এনবিআরকে স্বতন্ত্র বিভাগে উন্নীতকরণ ও কাঠামো শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি এখানে কর্মরত সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন পদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং নতুন পদ সৃষ্টি করবে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়,
অর্থবিভাগ ও লেজিসলেটিভ বিভাগ প্রস্তাবিত রাজস্ব কমিশন গঠনের কাজ করবে। মধ্যমেয়াদে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কসংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান সংশোধন করবে। এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক সদস্য (কাস্টমস) ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব খাত সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বাস্তবভিত্তিক। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব আদায় বাড়ার পাশাপাশি দেশের রাজস্ববান্ধব ও করদাতাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে। কারণ আয়কর ও কাস্টমস দুটো বিশেষায়িত ক্যাডার। এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা বহু বছর কাজ করতে করতে নীতি প্রণয়নে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। নতুন নীতি প্রণয়নের ফলে অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই রাজস্ব কমিশন বা এনবিআরের দায়িত্ব এই দুই ক্যাডারের হাতে থাকা উচিত। তিনি আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অ্যাডমিন ক্যাডারের সচিব এনবিআর চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদানের পর দু-একজন কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করে নীতি প্রণয়ন করছেন বা প্রশাসন চালাচ্ছেন। এতে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। ক্যাডারের ভেতরে দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। আয়কর বা কাস্টমস ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান বা কমিশনের প্রধান নিয়োগ দেওয়া হলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বন্দ্ব এড়ানো সম্ভব। আরেক সাবেক সদস্য (আয়কর) সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, এ ধরনের সুপারিশ বা প্রস্তাব দেওয়া হলো তা দেশের জন্য খুবই ভালো। এটি যুগোপযোগী প্রস্তাব। দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা বলে আসছি এনবিআরে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে চেয়ারম্যান দেওয়ার কথা। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভও ছিল। কারণ অ্যাডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস আইনের মতো টেকনিক্যাল আইন-কানুন বুঝতেই ৬ মাসের বেশি সময় লেগে যায়। ফলে তিনি খুব বেশি কিছু করতে পারেন না। এনবিআর নিয়ে শ্বেতপত্রে যা আছে : বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের সমস্যা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। শ্বেতপত্রে এনবিআরের নানা সীমাবদ্ধতার কথা উঠে এসেছে। বিশেষত নীতি প্রণয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিশ্লেষণে স্বায়ত্তশাসন ও দক্ষতার ক্ষেত্রে এনবিআরের সীমাবদ্ধতা আছে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগ বিশ্লেষণাত্মক কাজে দক্ষ নয়। এছাড়া ঘন ঘন নেতৃত্বের পরিবর্তন অর্থবহ সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করছে। পাশাপাশি এনবিআর স্বেচ্ছাসেবী কমপ্লায়েন্সকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে এনফোর্সমেন্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, এনবিআরে চেয়ারম্যান নিয়োগের বর্তমান প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানটির কার্যকর প্রশাসন ও শাসনের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। শুরুতে এনবিআর চেয়ারম্যান হতেন এনবিআরের একজন সদস্য। পরবর্তী ১৯৭৯ সালে অ্যাডমিন ক্যাডার কর্মকর্তাদের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। এ ধরনের নিয়োগ এনবিআর প্রশাসনে সদস্যার সৃষ্টি করেছে। রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞতাবিহীন সচিবরা পদাধিকারবলে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ পাওয়ায় এনবিআর একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসাবে দাঁড়াতে পারছে না। এনবিআরে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং চেয়ারম্যানের কাজের মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর করার কথা শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে।