চীনের সহায়তায় মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের ওপর ক্রমাগত বিমান হামলা: দখলকৃত এলাকা ফিরে পাচ্ছে জান্তা – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ২৪ অক্টোবর, ২০২৫
     ৬:১৫ অপরাহ্ণ

চীনের সহায়তায় মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের ওপর ক্রমাগত বিমান হামলা: দখলকৃত এলাকা ফিরে পাচ্ছে জান্তা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ৬:১৫ 43 ভিউ
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী আবারও শক্ত অবস্থানে ফিরছে, চীনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তারা হারানো অঞ্চলগুলো দখল করে নিচ্ছে নিরলস বিমান হামলার মাধ্যমে। উত্তর মিয়ানমারের পাহাড়ি শহর ক্যাউকমে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিখ্যাত বার্মা রোডের ওপর অবস্থিত, গত বছর তাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বা টিএনএলএ-র হাতে গিয়েছিল। এটি ছিল জান্তা-বিরোধী বাহিনীর জন্য এক বড় সাফল্য, যা সামরিক সরকারের পতনের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু এ বছরের শুরুতে মাত্র তিন সপ্তাহের অভিযানে সেনাবাহিনী শহরটি পুনর্দখল করে নেয়। এই দখল মিয়ানমারের যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তির ভারসাম্য যে আবারও জান্তার দিকে ঝুঁকেছে, তার স্পষ্ট প্রমাণ। ক্যাউকমে শহরের বড় অংশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় প্রতিদিনই বিস্ফোরণ ঘটে, ঘরবাড়ি উড়ে যাচ্ছে, মানুষ

পালিয়ে যাচ্ছে আশ্রয়ের খোঁজে। টিএনএলএ-র মুখপাত্র তার পার্ন লা বিবিসিকে বলেন, “প্রতিদিন প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। এই বছর সেনাবাহিনীর সৈন্য, ভারী অস্ত্র আর বিমান শক্তি আগের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।” কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, এবং হসিপাও শহরটিও সেনাদের দখলে চলে যায়। ফলে চীনা সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তা এখন আবার জান্তার নিয়ন্ত্রণে। চীন বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। ডিসেম্বর মাসে নির্ধারিত নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বেইজিং জান্তা সরকারের পরিকল্পনাকে সমর্থন দিচ্ছে। এই নির্বাচনে অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি অংশ নিতে পারবে না। বিনিময়ে চীন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে প্রযুক্তি, অস্ত্র এবং বিপুল

পরিমাণ ড্রোন সরবরাহ করছে। আগে যেখানে বিদ্রোহীরা স্বল্প খরচের ড্রোন ব্যবহার করে অগ্রগতি অর্জন করেছিল, এখন সেই একই প্রযুক্তি আরও উন্নত আকারে জান্তার হাতে পৌঁছে গেছে। চীনের তৈরি মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডারও ব্যবহার করছে সেনারা, যা থেকে নিচু উচ্চতায় নির্ভুলভাবে বোমা ফেলা হচ্ছে। বিমান হামলার পাশাপাশি এসব হামলায় এখন আরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর অন্তত এক হাজার মানুষ এসব হামলায় প্রাণ হারিয়েছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বিদ্রোহী বাহিনীর দুর্বলতাও এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শতাধিক স্থানীয় প্রতিরোধ বাহিনী, যাদের ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ বলা হয়, তারা অনেক সময় কম অস্ত্রসজ্জিত এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ভুগছে। তাদের

মধ্যে গভীর অবিশ্বাস রয়েছে, বিশেষ করে জাতিগত বার্মিজ সংখ্যাগোষ্ঠীর প্রতি। ফলে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর নির্বাসিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’-এর নেতৃত্বেও ঐক্য গড়ে ওঠেনি। ২০২৩ সালে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামে বড় এক অভিযান চালিয়েছিল বিদ্রোহী জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’, যেখানে টিএনএলএ, এমএনডিএএ ও আরাকান আর্মি একসঙ্গে সেনাদের ওপর হামলা চালায়। তারা মাত্র কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১৮০টি সামরিক ঘাঁটি দখল করে নেয় এবং বহু সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। তখন মনে হয়েছিল জান্তা সরকার ভেঙে পড়বে। কিন্তু পরে সেনাবাহিনী বাধ্যতামূলক নিয়োগ চালু করে প্রায় ৬০ হাজার নতুন সৈন্য অন্তর্ভুক্ত করে। তারা অভিজ্ঞ না হলেও সংখ্যায় অনেক, আর চীনা ড্রোন প্রযুক্তি ও বিমান শক্তি মিলে তাদের হাতে

যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন দাপট এনে দিয়েছে। চীনের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিদ্রোহীদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং। এমএনডিএএ ইতোমধ্যে লাশিও শহর থেকে পিছু হটেছে এবং চীনের অনুরোধে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী শান গোষ্ঠী ইউডব্লিউএসএ-ও চীনের চাপে বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেওয়া বন্ধ করেছে। সীমান্ত বন্ধ করে এবং কিছু নেতাকে আটক করে চীন এই প্রভাব বিস্তার করেছে। এদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় কারেন রাজ্যেও সেনাবাহিনী আবার নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করছে। কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন যে সড়কপথ ও ঘাঁটি দখল করেছিল, সেগুলোও হারিয়ে ফেলছে তারা। কায়াহ রাজ্য ও কাচিন অঞ্চলেও একই পরিস্থিতি, সেনারা ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। তবে রাখাইন ও চিন রাজ্যে বিদ্রোহীরা এখনো বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং অনেক

জায়গায় সেনাদের প্রতিরোধ করছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি বলেন, “চীন মিয়ানমারে বিশৃঙ্খলা ও যুদ্ধ চায় না।” বিশ্লেষকদের মতে, চীন জান্তা সরকারকে ভালোবাসে না, কিন্তু তারা রাষ্ট্রের পতনকে ভয় পায়। মিয়ানমার তাদের কাছে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ—এটি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের জ্বালানি সরবরাহ এবং ভারত মহাসাগরে প্রবেশের পথ। ফলে স্থিতিশীলতা রক্ষাই এখন বেইজিংয়ের প্রধান লক্ষ্য। তবু যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। সেনাবাহিনী শুধু কৌশলগত শহর ও মহাসড়কগুলোতে মনোযোগ দিচ্ছে, যেখানে তারা নির্বাচনের আয়োজন করতে চায়। কিন্তু এই যুদ্ধ যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তা প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারের মানুষের মনে ক্ষোভ ও ঘৃণা সৃষ্টি করবে। বিশ্লেষক মর্গান মাইকেলস বলেন, “সেনাবাহিনী অন্তত এক লাখেরও বেশি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে

দিয়েছে। এই সহিংসতার মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা এখন খুবই ক্ষীণ।” চীনের সহায়তায় জান্তা সরকার হয়তো আপাতত শক্ত অবস্থানে ফিরেছে, কিন্তু তার বিনিময়ে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক গভীর মানবিক সংকট। ধ্বংস, বাস্তুচ্যুতি আর মৃত্যুর মধ্যেও মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ আজও বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
কারাগারে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না দুই হত্যা, দুই বিশ্ববিদ্যালয়, এক নিস্ক্রিয় সরকার : বিচার পাবে কবে? গম থেকে চাল, সবই সিঙ্গাপুর দিয়ে : ইউনুস সরকারের ক্রয়ে কার স্বার্থ? প্রতারণাপূর্ণ অপকৌশলের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সততা ও নিষ্ঠা প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না মর্মে আওয়ামী লীগের বিবৃতি Mobocracy in robes: How Yunus regime’s farcical tribunal ordered Sheikh Hasina’s judicial assassination সাম্প্রতিক ভিত্তিহীন ও মিথ্যা দুর্নীতির মামলা সাজিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের সম্মানহানির অপচেষ্টা করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ভয় পায় বলেই ক্যাঙ্গারু কোর্টে রায়: জয় নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতেই ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে’ তড়িঘড়ি করে রায় দেওয়া হয়েছে: সজীব ওয়াজেদ জয় সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বাপ্পির জানাজায় জনস্রোত, ভালোবাসায় সিক্ত শেষ বিদায়। বিয়ে বাড়িতে মাইক বাজানোয় কনের মা-বাবাকে বেত্রাঘাত ইইউ নেতৃবৃন্দকে জরুরি চিঠি ড. হাছান মাহমুদের মিথ্যার বেসাতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ: ‘সবচেয়ে বড় বাড়ি’র গল্পের আড়ালে হান্নান মাসউদের আসল রূপ ফাঁস “মিথ্যা মামলা আমাদের বিরুদ্ধে সাজানো হয়েছে, যাতে আমরা নির্বাচন না করতে পারি — সজীব ওয়াজেদ জয় শেখ হাসিনার নৈতিক অবস্থানকে সম্মান: ‘আস্থাহীন’ ট্রাইব্যুনালে লড়বেন না জেড আই খান পান্না শেখ হাসিনার নৈতিক অবস্থানকে সম্মান: ‘আস্থাহীন’ ট্রাইব্যুনালে লড়বেন না জেড আই খান পান্না টাঙ্গাইলে জেলহাজতে আ.লীগ নেতার মৃত্যু: বিনা চিকিৎসায় ‘পরিকল্পিত হত্যা’র অভিযোগ শেখ হাসিনার ১০ কাঠায় ২১ বছরের সাজা: ইউনুসের ৪৪৬৭ কাঠার অপরাধে বিচার হবে কবে? বেলজিয়ামে ইইউ পার্লামেন্টের সামনে সর্ব ইউরোপ ছাত্রলীগের বিক্ষোভ, ভিডিও কলে বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ট্রাস্ট–নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ শেখ হাসিনার লকারে ৮৩২ ভরি সোনা সাজানো নাটক, নেপথ্যে কড়াইল বস্তির আগুন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা!