আমেরিকান ফ্যাসিবাদ: ট্রাম্পও এর ব্যতিক্রম নন – ইউ এস বাংলা নিউজ




আমেরিকান ফ্যাসিবাদ: ট্রাম্পও এর ব্যতিক্রম নন

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২১ মার্চ, ২০২৫ | ১০:৪২ 22 ভিউ
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা চারপাশে বসে আছেন। দেয়ালে ঝুলছে পাবলো পিকাসোর বিখ্যাত যুদ্ধবিরোধী চিত্রকর্ম Guernica— যেটি ১৯৩৭ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধ চলাকালে নাৎসি বাহিনী ও ফ্রান্সের বিমান হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরেছে। চিত্রটি যেন সেই সময়ের বিভীষিকাকে চিৎকার করে জানিয়ে দিচ্ছে। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা— ‘৮ ডিসেম্বর ২০২৩: গাজার জন্য মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাধাগ্রস্ত হয়েছে’। সাদা-কালো পেন্সিলের রেখাচিত্র সম্বলিত অন্য একটি ছবিতে দেখা যায়, ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছেয়ে আছে একটি শিশুর ওপরে। শিশুটি তার ভীতসন্ত্রস্ত সঙ্গী—একটি ভয় পাওয়া গাধা ও অপুষ্টিতে ভোগা একটি কুকুরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আর তার পায়ের কাছে পড়ে আছে মৃত একটি বিড়াল। তাদের চারপাশে বিধ্বস্ত

অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ধ্বংসাবশেষ, আর উপরে ঘন ধোঁয়ার আস্তরণ। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা: ‘ক্ষুধায় মরছি, যুদ্ধবিরতি চাই!’ এমনই হিম শীতল, হৃদয়বিদারক চিত্রকর্মের একটি সংগ্রহ উপস্থাপন করেছেন ব্রিটিশ শিল্পী সু কো তার নতুন বই The Young Person’s Illustrated Guide to American Fascism-এ। যা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয় তুলে ধরেছে। যদিও বইটি কেবল ট্রাম্প ও তার শাসনামলের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, যা আসলে আমেরিকার দীর্ঘদিনের ইতিহাসেরই একটি অংশ মাত্র। আমেরিকায় ফ্যাসিবাদের ইতিহাস যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় এবং তার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আসাকে অনেকেই মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেই হুমকিই যেন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। যদিও তার

প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমেরিকায় ফ্যাসিবাদের উত্থানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছিল। ট্রাম্পের শাসনামলে গৃহীত নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ✅ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বাজেট কমানো; ✅ বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (DEI) নীতিগুলোর ওপর আক্রমণ; ✅ ট্রান্সজেন্ডার অধিকার হ্রাস; ✅ পরিবেশগত ন্যায়বিচারের উদ্যোগ বন্ধ করা; ✅ কর্পোরেট ও প্রযুক্তি-ধনকুবেরদের প্রতি নির্ভরতা বৃদ্ধি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ট্রাম্পের অবস্থান ছিল ভিন্নধর্মী। যেমন- ✅ পশ্চিমা ঐক্যমতের তোয়াক্কা না করেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউসে ডেকে নিয়ে হেয় করেছেন; ✅ ন্যাটো মিত্রদের সমালোচনা করেছেন; ✅ গাজায় ইসরাইলের জাতিগত নিধনের প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন। এসব নীতির প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প শুধু একজন ফ্যাসিবাদী শাসকই নন, বরং তিনি আমেরিকার দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্যেরই ধারাবাহিকতা। তবে কেবল ট্রাম্পকে ফ্যাসিবাদী হিসেবে আখ্যা দেওয়ার সহজ

ব্যাখ্যার বিপরীতে, বইটির ভূমিকায় ইতিহাসবিদ স্টিফেন এফ আইজেনম্যান ফ্যাসিবাদের একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ জনগণকে একনায়কের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করাতে বাধ্য করে, ‘জাতিগত বিশুদ্ধতা’র ধারণাকে গুরুত্ব দেয় এবং ঐতিহাসিক গৌরবের ধারণাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। আইজেনম্যান উল্লেখ করেন, আমেরিকার ফ্যাসিবাদ কেবল ট্রাম্পের আবির্ভাবের মাধ্যমেই শুরু হয়নি। বরং এটি বহু আগে থেকেই প্রচলিত। তার মতে, আমেরিকায় ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। তিনি বলেন, যদিও ১৭৮৭ সালে আমেরিকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে তখনো আমেরিকান শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করতো এবং তাদেরকে কেনাবেচা করা হতো। এমনকি ১৮৬৫ সালে দাসপ্রথা বিলুপ্তির পরেও দেশটিতে বর্ণবাদী বিচ্ছিন্নতা, ভোটাধিকার থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের বঞ্চিত করা এবং কু

ক্লাক্স ক্ল্যান (KKK)-এর সহিংসতার মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নিপীড়ন চলতে থাকে। ফ্যাসিবাদের ধারাবাহিকতা আইজেনম্যান ব্যাখ্যা করেছেন, জার্মানি ও ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের সময় আমেরিকা কিভাবে এই মতাদর্শের সঙ্গে জড়িত ছিল। তার মতে, ‘যদিও সাধারণভাবে দক্ষিণের সংবাদপত্রগুলো বর্ণবাদের পক্ষে ছিল। তবে তারা নাৎসি ও আমেরিকান বর্ণবাদের মধ্যকার সাদৃশ্য সম্পর্কে সচেতন ছিল না’। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন ইউরোপে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল, তখনো তারা কিছু ইউরোপীয় ফ্যাসিস্ট ও নাৎসি কর্মকর্তাকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়েছিল। এর একটি অন্যতম উদাহরণ হলো— ক্লাউস বারবি। যিনি ‘লিওঁর কসাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে তিনি ১০,০০০ ফরাসি ইহুদিকে অসউইৎজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠান। তবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গ্রেফতার করার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র তাকে তাদের

সেনাবাহিনীর কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স বাহিনীতে নিয়োগ দেয়। পরে তিনি বলিভিয়ায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেন। ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন: নতুন কিছু নয় একজন চিত্রশিল্পী ও অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে সু কো সবসময় সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে তার শিল্পকর্মে তুলে ধরে এসেছেন। তার চিত্রগুলো কখনো একক দৃশ্য, কখনো গল্পের অংশ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। তবে সবসময়ই সেগুলো কোনো না কোনো গভীর বার্তা বহন করেছে। তার কাজগুলো মূলত পুঁজিবাদ ও ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ। আর তার চিত্রগুলো আত্মবিশ্বাসী, ক্ষুব্ধ এবং শোকাতুর। ২০১৩ সালে আবুধাবিস্থ নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির এক আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের বিজয় দেখতে পাই না, কারণ আমাদের চারপাশের দুর্দশা এতটাই ব্যাপক যে, সেগুলো তাতে ঢেকে যায়’। এদিকে বইটির ভূমিকায় আইজেনম্যান আমেরিকার

ইতিহাসের অনেক অধ্যায় এড়িয়ে গেছেন এবং কেবল ট্রাম্পকেই কেন্দ্রীভূত করেছেন। এ অর্থে বলা যায় যে, বইটিতে কিছু ত্রুটি রয়েছে। কারণ, যদি আমেরিকা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক হতো, তাহলে কেন তারা ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাক আক্রমণ করেছিল? কেন তারা মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে? আইজেনম্যান পুয়ের্তো রিকো ও হাওয়াইয়ের কথাও এড়িয়ে গেছেন—যা যুক্তরাষ্ট্র অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। জাতিসংঘের একটি বিশেষ কমিটি ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছিল, যেন তারা পুয়ের্তো রিকোকে স্বাধীনতার অধিকার দেয়। তবে তা সেই পর্যন্তই রয়ে গেছে। ট্রাম্প একাই ফ্যাসিবাদী নন বইটিতে গাজার দুটি ছবি তুলে ধরা হয়েছে এবং সেখানে কেবল নিরীহ ফিলিস্তিনিদের দুভাগ্যজনকভাবে শিকার হওয়াটাই দেখানো হয়েছে। কিন্তু আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রাম, যা আমেরিকার নিজস্ব স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিক্ষাও দিতে পারে, তা বইটিতে অনুপস্থিত। অন্যদিকে, বইটিতে ট্রাম্পের চিত্রায়ন অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত এবং সর্বত্রই বিরাজমান। যেন তিনি আসন্ন একনায়ক, যার ছায়া পুরো বইজুড়ে বিস্তৃত। ট্রাম্পের উপস্থিতি বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ে এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যেন মনে হয়, তিনিই একমাত্র সমস্যা। তবে বাস্তবতা হলো- আমেরিকান ফ্যাসিবাদ ট্রাম্পের উত্থানের বহু আগেই শুরু হয়েছিল এবং এটি ট্রাম্পের পতনের পরও চলবে, যদি না বৃহত্তর কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়। (মিডলইস্ট আই-এ প্রকাশিত আজাদ এসার লেখা থেকে অনূদিত)

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সালমান খানের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কতটা বদলেছে সীমা সাজদেহের জীবন মিনি বাসচাপায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শ্রমিক নিহত, সড়ক অবরোধ রেলে নিজের ঘরেই ভয়াবহ চোরচক্র টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের হামাসের সঙ্গে তুর্কি গোয়েন্দা প্রধানের বৈঠক, যা নিয়ে আলোচনা সারা দেশে বৃষ্টির আভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সতর্কবার্তা ভিডিও প্রকাশ করল হামাস, বাঁচার আকুতি ইসরাইলি জিম্মির গাজায় নিহত ৫২, হামলা আরও জোরদারের নির্দেশ নেতানিয়াহুর সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ নীলফামারীতে হবে চীন সরকারের হাসপাতাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল সাধারণ সভায় প্রশ্নের মুখে এনসিপির কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতা শিঙাড়া খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হারতে হারতে জিতে লা লিগার কর্তৃত্ব বার্সার হাতে বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা উত্তরায় প্রকাশ্যে যুবককে তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল পাকিস্তানে কেএফসিতে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ১, গ্রেপ্তার ১৭৮ ইস্টার সানডে উপলক্ষে ইউক্রেনে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পুতিনের বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত বাংলাদেশের, বাদ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক অপু