ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
সাংবাদিককে মারধর, বিএনপি নেতা বহিষ্কার
ভবনজুড়ে ক্ষত আর ধ্বংসের চিহ্ন
কর্মকর্তা-কর্মচারিরা একই চেয়ারে ১০ থেকে ১৮ বছর
যুদ্ধবিদ্ধস্ত লেবানন থেকে ফিরলেন আরও ৮৫ বাংলাদেশি
ভারতে আটক বাংলাদেশি জেলেদের ফেরাতে আলোচনা চলছে: পররাষ্ট্রসচিব
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বন্ধ
গুম-খুনের জন্য ক্ষমা চাইলেন র্যাবের ডিজি
জাগৃকের ১৪ একর জমি ৩ হাউজিংয়ের দখলে
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশজুড়ে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিতে কাজ করে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণ করে সেসব ভবনের ফ্ল্যাট স্বল্পমূল্যে এবং কিস্তিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। সেই গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অ্যাকোয়ার করা প্রায় ১৪ একর বা ১৪০০ শতক জমি তিনটি হাউজিং কোম্পানি দখলে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার ওই জমির দাম প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ওপরে। গৃহায়নের অ্যাকোয়ার করা এসব জমি দখল করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দখল করা সরকারি এসব জমি কোম্পানি শেয়ার হিসেবে প্রায় ২
হাজার মানুষের কাছে বিক্রি করে দিলেও বুঝিয়ে দিতে পারেনি। ফলে জমি কিনেও বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া কিছু জমিতে ছোট ছোট প্লট করে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ। বেদখল হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে স্বপ্ননগর-২ প্রকল্পের কাজ। ফলে বিপাকে পড়েছে ফ্ল্যাট ক্রয়ে বিনিয়োগ করা ১৫৬০টি পরিবার। আর অনিশ্চয়তায় স্বপ্ননগর-৩ প্রকল্প। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নথিপত্র বলছে, মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনের বাউনিয়া মৌজায় ১৬৮ একর জমি সাবেক গৃহসংস্থান অধিদপ্তর বর্তমানে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করে নেয়। অধিগ্রহণকৃত জমির সীমানা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কর্তৃক ১৯৭৭, ১৯৯০ ও ২০১৫ সালে তিন দফায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে অধিগ্রহণ করা জমিতে মাটি ভরাট
করে সরকার। ওই জমির ১৯টি দাগে ১৪.২১ একর জমিতে বস্তিবাসীর জন্য ৫৩৩টি ফ্ল্যাট প্রকল্প স্বপ্ননগর-১-এর প্রকল্প সমাপ্ত করে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেইসঙ্গে স্বপ্ননগর-২ প্রকল্পের কাজ আংশিক বাকি আছে। পাশের জমিতে স্বপ্ননগর-৩ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে গৃহায়নের। এরই মধ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সাগুফতা, হ্যাভিলি ও আলীনগর ডেভেলপার কোম্পানি দখলের চেষ্টা করে। সে সময় গৃহায়নের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। এরপর সেখানে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। পরে সিএস ৩১২৪ দাগের জমিতে ২০১৯ সালের হাউজিং কোম্পানিগুলো ঘর ও বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করে। তৎকালীন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জায়গাটি পরিদর্শনে গেলে তিনিসহ অন্যদের ওপর হামলা করা হয়। পরে জায়গাটি দখলদারদের কবলে চলে
যায়। এ ঘটনায় পল্লবী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। ঢাকা জেলা প্রশাসকের নথিপত্র অনুযায়ী সিএস ৩১২৪ দাগে মোট জমির পরিমাণ ১২.৫০ একর। গৃহায়নের তথ্যমতে, এই জমির পুরোটাই তিনটি হাউজিং কোম্পানি দখলে নিয়েছে। এ ছাড়া স্বপ্ননগর প্রকল্পের বাসিন্দাদের জন্য গৃহায়নের অধিগ্রহণ করা সিএস ৩১২৮ দাগে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ২ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সেই মডেল মসজিদ নির্মাণের জমিও দখলদারদের দখলে চলে গেছে। সেখানে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে প্লট বানিয়ে রাখা হয়েছে। সরেজমিন ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় গৃহায়নের বেদখল হওয়া ওই জমিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো সাড়ে ১৪ একর জমি বেদখল। ছোট ছোট প্লট বানিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানার সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। দখলি
জমির নিরাপত্তায় সরকারি সশস্ত্র আনসার সদস্যদের রাখা হয়েছে। টাঙানো সাইনবোর্ডের বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামে। সেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন ও ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. এছাক মিয়া ইসহাকের নামের সাইনবোর্ড দেখা গেছে। সাইনবোর্ডের থাকা নম্বরে ফোন দিলে সব নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। আনসার ক্যাম্পে কথা বলতে গেলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি। সেখানে দায়িত্বরত সোহাগ নামের এক আনসার সদস্য জানান, ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। দায়িত্বরত আনসার সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সেটিও সম্ভব হয়নি। স্বপ্ননগর-২ প্রকল্পের ভেতর দিয়ে গিয়ে একটি রাস্তা ডিওএইচএস দিয়ে প্রধান সড়কের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তবে সেই সড়ক অর্ধেকটা
দখল হয়ে গেছে। সড়কের সামনের অংশ দখল করে বানানো হয়েছে প্লট। সরেজমিন দখলি জমির পাহারায় থাকা এক নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এসব জমি সাগুফতা, হ্যাভিলি ও আলীনগর ডেভেলপার কোম্পানি দখল করে বিক্রি করে দিয়েছে। আবার কিছু জমি বায়না করেই বিভিন্ন মানুষ সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। এখানকার সব জমিই এই তিন হাউজিংয়ের। স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, এখানকার সব জমি সাগুফতা, হ্যাভিলি ও আলীনগর হাউজিংয়ের। তারাই বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে। গৃহায়নের একটি তদন্ত প্রতিবেদন এবং কয়েকটি নোটিশেও এ কথার সত্যতা পাওয়া যায়। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি চিঠি দেয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সেখানে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে ওই জমিতে ব্যক্তিমালিকানাধীন
দলিল বাতিল এবং নতুন করে দলিল না করার জন্য অনুরোধ করা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা জেলার পল্লবী থানার বাউনিয়া মৌজায় অধিগ্রহণকৃত দাগগুলোর কিছু অংশ সাগুফতা হাউজিং ও হ্যাভিলি গ্রুপ কর্তৃক অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। সরকারি সম্পত্তির ওপর এর আগে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল বাতিল ও নতুনভাবে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রাখা প্রয়োজন। ওই জায়গার ওপর আদালত কর্তৃক স্থিতাবস্থা প্রদান করা হলেও বর্ণিত কোম্পানি অসদুপায় অবলম্বন করে রিজিস্ট্রি কার্যক্রম করেছে বা চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে সরকারি এ জমি বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১-এর অধীন ঢাকা জেলার পল্লবী থানা, বাউনিয়া মৌজায় এর আগে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল বাতিল ও নতুনভাবে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। একই চিঠি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাখালী জোনের অথরাইজড অফিসার-৩/১, মিরপুর সার্কেলের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের ২ দিন আগে আদালতে গণহারে রিট: গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পরে ওই সরকারি জমিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার ঠিক দুদিন আগে ২৩ এপ্রিল এক দিনেই ওই জমির ওপর গণহারে ২০টি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১০টি রিট পিটিশনে আদালত ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। ফলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি। আদালতের আদেশ গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ মানলেও মানেনি হাউজিং কোম্পানিগুলো। তারা আদালতের আদেশের সুযোগে সরকারি জমিতে প্লট বানিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। এসব জমিতে ভবন নির্মাণ কাজও চলছে। জানা গেছে, গৃহায়নের অসাধু কর্মকর্তারা হাউজিং কোম্পানিগুলোতে অভিযানের বিষয়টি আগেই জানিয়ে দেয়। আর হাউজিং কোম্পানিগুলো আদালতের রিট পিটিশন দায়ের করে স্থগিতাদেশ নিয়ে সরকারি জমির পাকাপোক্ত দখল করছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে হ্যাভিলি হাউজিংয়ের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ আউয়ালের ৩টি নম্বরে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। এরপর প্রশ্ন লিখে খুদেবার্তা পাঠালেও তারা কোনো উত্তর দেননি। এ ছাড়া বাকি দুটি কোম্পানির সঙ্গে তাদের অনলাইনে থাকা নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। বিস্তারিত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি না ধরে কেটে দেন। এরপর প্রশ্ন লিখে পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১-এর সদ্য সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী বলেন, ‘আমাদের ওখানে ১৪ একর জমি ৩টি হাউজিং কোম্পানি দখলে নিয়েছে। জমি উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। আমরা মনে করি আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাব। গৃহায়নের অ্যাকোয়ার করা জমি গৃহায়ন ফিরে পাবে।’ ১৫০ জনের একটি গ্রুপ সাগুফতা হাউজিং থেকে জমি ক্রয় করেছেন। তাদের মধ্যে একজন সাইফুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সাগুফতার জুয়েল মোল্লার কাছ থেকে ১৫০ জন মিলে জমি ক্রয় করেছি। আমাদের কাগজপত্র সব আছে। জমির রেজিস্ট্রি করা বন্ধ করে রেখেছিল ন্যাশনাল হাউজিং। পরে ডিসি অফিস থেকে ছাড়পত্র দিয়েছে। ন্যাশনাল হাউজিংয়ের কোনো কাগজপত্র নেই। তারা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করতে চাচ্ছে।
হাজার মানুষের কাছে বিক্রি করে দিলেও বুঝিয়ে দিতে পারেনি। ফলে জমি কিনেও বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া কিছু জমিতে ছোট ছোট প্লট করে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ। বেদখল হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে স্বপ্ননগর-২ প্রকল্পের কাজ। ফলে বিপাকে পড়েছে ফ্ল্যাট ক্রয়ে বিনিয়োগ করা ১৫৬০টি পরিবার। আর অনিশ্চয়তায় স্বপ্ননগর-৩ প্রকল্প। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নথিপত্র বলছে, মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনের বাউনিয়া মৌজায় ১৬৮ একর জমি সাবেক গৃহসংস্থান অধিদপ্তর বর্তমানে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করে নেয়। অধিগ্রহণকৃত জমির সীমানা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কর্তৃক ১৯৭৭, ১৯৯০ ও ২০১৫ সালে তিন দফায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে অধিগ্রহণ করা জমিতে মাটি ভরাট
করে সরকার। ওই জমির ১৯টি দাগে ১৪.২১ একর জমিতে বস্তিবাসীর জন্য ৫৩৩টি ফ্ল্যাট প্রকল্প স্বপ্ননগর-১-এর প্রকল্প সমাপ্ত করে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেইসঙ্গে স্বপ্ননগর-২ প্রকল্পের কাজ আংশিক বাকি আছে। পাশের জমিতে স্বপ্ননগর-৩ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে গৃহায়নের। এরই মধ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সাগুফতা, হ্যাভিলি ও আলীনগর ডেভেলপার কোম্পানি দখলের চেষ্টা করে। সে সময় গৃহায়নের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। এরপর সেখানে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। পরে সিএস ৩১২৪ দাগের জমিতে ২০১৯ সালের হাউজিং কোম্পানিগুলো ঘর ও বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করে। তৎকালীন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জায়গাটি পরিদর্শনে গেলে তিনিসহ অন্যদের ওপর হামলা করা হয়। পরে জায়গাটি দখলদারদের কবলে চলে
যায়। এ ঘটনায় পল্লবী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। ঢাকা জেলা প্রশাসকের নথিপত্র অনুযায়ী সিএস ৩১২৪ দাগে মোট জমির পরিমাণ ১২.৫০ একর। গৃহায়নের তথ্যমতে, এই জমির পুরোটাই তিনটি হাউজিং কোম্পানি দখলে নিয়েছে। এ ছাড়া স্বপ্ননগর প্রকল্পের বাসিন্দাদের জন্য গৃহায়নের অধিগ্রহণ করা সিএস ৩১২৮ দাগে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ২ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সেই মডেল মসজিদ নির্মাণের জমিও দখলদারদের দখলে চলে গেছে। সেখানে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে প্লট বানিয়ে রাখা হয়েছে। সরেজমিন ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় গৃহায়নের বেদখল হওয়া ওই জমিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো সাড়ে ১৪ একর জমি বেদখল। ছোট ছোট প্লট বানিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানার সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। দখলি
জমির নিরাপত্তায় সরকারি সশস্ত্র আনসার সদস্যদের রাখা হয়েছে। টাঙানো সাইনবোর্ডের বেশিরভাগই বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামে। সেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন ও ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. এছাক মিয়া ইসহাকের নামের সাইনবোর্ড দেখা গেছে। সাইনবোর্ডের থাকা নম্বরে ফোন দিলে সব নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। আনসার ক্যাম্পে কথা বলতে গেলে ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি। সেখানে দায়িত্বরত সোহাগ নামের এক আনসার সদস্য জানান, ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। দায়িত্বরত আনসার সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সেটিও সম্ভব হয়নি। স্বপ্ননগর-২ প্রকল্পের ভেতর দিয়ে গিয়ে একটি রাস্তা ডিওএইচএস দিয়ে প্রধান সড়কের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তবে সেই সড়ক অর্ধেকটা
দখল হয়ে গেছে। সড়কের সামনের অংশ দখল করে বানানো হয়েছে প্লট। সরেজমিন দখলি জমির পাহারায় থাকা এক নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এসব জমি সাগুফতা, হ্যাভিলি ও আলীনগর ডেভেলপার কোম্পানি দখল করে বিক্রি করে দিয়েছে। আবার কিছু জমি বায়না করেই বিভিন্ন মানুষ সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। এখানকার সব জমিই এই তিন হাউজিংয়ের। স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, এখানকার সব জমি সাগুফতা, হ্যাভিলি ও আলীনগর হাউজিংয়ের। তারাই বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে। গৃহায়নের একটি তদন্ত প্রতিবেদন এবং কয়েকটি নোটিশেও এ কথার সত্যতা পাওয়া যায়। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি চিঠি দেয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সেখানে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে ওই জমিতে ব্যক্তিমালিকানাধীন
দলিল বাতিল এবং নতুন করে দলিল না করার জন্য অনুরোধ করা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা জেলার পল্লবী থানার বাউনিয়া মৌজায় অধিগ্রহণকৃত দাগগুলোর কিছু অংশ সাগুফতা হাউজিং ও হ্যাভিলি গ্রুপ কর্তৃক অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। সরকারি সম্পত্তির ওপর এর আগে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল বাতিল ও নতুনভাবে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রাখা প্রয়োজন। ওই জায়গার ওপর আদালত কর্তৃক স্থিতাবস্থা প্রদান করা হলেও বর্ণিত কোম্পানি অসদুপায় অবলম্বন করে রিজিস্ট্রি কার্যক্রম করেছে বা চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে সরকারি এ জমি বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১-এর অধীন ঢাকা জেলার পল্লবী থানা, বাউনিয়া মৌজায় এর আগে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল বাতিল ও নতুনভাবে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। একই চিঠি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাখালী জোনের অথরাইজড অফিসার-৩/১, মিরপুর সার্কেলের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দেওয়া হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের ২ দিন আগে আদালতে গণহারে রিট: গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পরে ওই সরকারি জমিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার ঠিক দুদিন আগে ২৩ এপ্রিল এক দিনেই ওই জমির ওপর গণহারে ২০টি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১০টি রিট পিটিশনে আদালত ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। ফলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি। আদালতের আদেশ গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ মানলেও মানেনি হাউজিং কোম্পানিগুলো। তারা আদালতের আদেশের সুযোগে সরকারি জমিতে প্লট বানিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। এসব জমিতে ভবন নির্মাণ কাজও চলছে। জানা গেছে, গৃহায়নের অসাধু কর্মকর্তারা হাউজিং কোম্পানিগুলোতে অভিযানের বিষয়টি আগেই জানিয়ে দেয়। আর হাউজিং কোম্পানিগুলো আদালতের রিট পিটিশন দায়ের করে স্থগিতাদেশ নিয়ে সরকারি জমির পাকাপোক্ত দখল করছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে হ্যাভিলি হাউজিংয়ের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ আউয়ালের ৩টি নম্বরে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। এরপর প্রশ্ন লিখে খুদেবার্তা পাঠালেও তারা কোনো উত্তর দেননি। এ ছাড়া বাকি দুটি কোম্পানির সঙ্গে তাদের অনলাইনে থাকা নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। বিস্তারিত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি না ধরে কেটে দেন। এরপর প্রশ্ন লিখে পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১-এর সদ্য সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী বলেন, ‘আমাদের ওখানে ১৪ একর জমি ৩টি হাউজিং কোম্পানি দখলে নিয়েছে। জমি উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। আমরা মনে করি আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাব। গৃহায়নের অ্যাকোয়ার করা জমি গৃহায়ন ফিরে পাবে।’ ১৫০ জনের একটি গ্রুপ সাগুফতা হাউজিং থেকে জমি ক্রয় করেছেন। তাদের মধ্যে একজন সাইফুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সাগুফতার জুয়েল মোল্লার কাছ থেকে ১৫০ জন মিলে জমি ক্রয় করেছি। আমাদের কাগজপত্র সব আছে। জমির রেজিস্ট্রি করা বন্ধ করে রেখেছিল ন্যাশনাল হাউজিং। পরে ডিসি অফিস থেকে ছাড়পত্র দিয়েছে। ন্যাশনাল হাউজিংয়ের কোনো কাগজপত্র নেই। তারা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করতে চাচ্ছে।