প্রকৃতি বিনষ্ট হলে সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অসম্ভব – ইউ এস বাংলা নিউজ




প্রকৃতি বিনষ্ট হলে সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অসম্ভব

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৯:৩৬ 24 ভিউ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব নিদর্শন সিলেটের সাদাপাথর। পাহাড়ি ঝরনার স্বচ্ছ জলে ভেসে থাকা পাথরগুলোর দিকে দূর থেকে তাকালে মনে হবে কেউ নদীর তলদেশে মুক্তার মালা বিছিয়ে রেখেছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান এই সাদাপাথর। মনোমুগ্ধকর পাথরগুলো কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে এসেছে, তার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস। ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এসেছে মূলত ভারতের মেঘালয়ের খাসি ও জৈন্তা পাহাড় থেকে। সেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শিলার ক্ষয়, আবহাওয়ার প্রভাব ও নদীর স্রোতের ধাক্কায় গড়ে উঠেছে পাথরের স্তূপ। এসব শিলা মূলত গ্রানাইট, কোয়ার্টজ ও অন্যান্য কঠিন পাথরের মিশ্রণ। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল ও ঝরনা থেকে গড়িয়ে আসা এসব পাথরের প্রধান বাহক হলো ভারতের

পিয়াইন ও বাংলাদেশের ধলাই নদী। ভারতের খাসি-জৈন্তা পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর পানির সঙ্গে প্রতিবছর বর্ষায় প্রচুর পাথর ভেসে আসে। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে বিপুল পাথরের মজুত। বর্ষার প্রবল ঢল পাথরগুলো ভাসিয়ে আনে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত, আর স্রোত কমে গেলে ভারী পাথর নদীর তলদেশ ও তীর ঘেঁষে স্তূপাকারে জমা হয়। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই ভোলাগঞ্জে গড়ে উঠেছিল সাদাপাথরের বিশাল ভান্ডার। গত বছরের ৫ আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এই এক বছরে সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় ভোলাগঞ্জের এই পর্যটনকেন্দ্রটি পাথরশূন্য হয়ে বিরান বালুভূমিতে পরিণত হয়। পরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে প্রশাসনের। পাথর লুটে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তের পাশাপাশি লুট হওয়া পাথর

আগের স্থানে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম নেয় প্রশাসন। এরই মধ্যে কয়েক হাজার ঘনফুট পাথর আগের জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিমভাবে পাথর স্থাপন করা হলেও সেটি খুব ফলপ্রসূ হবে না। কারণ, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য একবার বিনষ্ট হলে সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম কিম বলেন, যে হারে পাথর লুট হয়েছিল, তার তুলনায় এই প্রতিস্থাপন খুবই নগণ্য। তবুও প্রত্যাশা থাকবে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র আগের অবস্থা ফিরে পাক। গত দুই দশক ধরে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বিচারে সিলেট জেলার বিভিন্ন নদনদী, পাহাড়-টিলা ও কৃষি জমি থেকে পাথর লুণ্ঠন করে যা ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। আমরা চাই, প্রশাসন পরিবেশ ও

প্রকৃতি রক্ষায় বর্তমানে যে ভূমিকা পালন করছে, তা ধরে রাখুক। পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, প্রকৃতির ওপর আমরা চরম অন্যায় করেছি। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে এই প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। এই বোধটুকু মানুষের মধ্যে তৈরি করতে পারলে লুটপাট বন্ধ হবে। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লা শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, জাফলং-সাদাপাথর এখন ইকোনমিক্যাল ক্রিটিক্যাল জোনের আওতায়। এসব এলাকায় প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টর থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা উচিত ছিল। সম্প্রতি সাদাপাথরে যে লুটপাট হয়ে গেল সেটি কিন্তু প্রকাশ্যে সংঘটিত হয়েছে। দিনদুপুরে এমন ঘটনা ঘটার পরও যদি কেউ বলে প্রশাসন জড়িত না, তাহলে ভুল বলবে। টানা এক

সপ্তাহ লুটপাট হওয়ার পর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি হয়েছে, সেটিও ছিল লোক দেখানো। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রনি বসাক বলেন, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সাদাপাথর আগের অবস্থায় ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগবে। এটা প্রকৃতির নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ঘটতে দিতে হবে। তবে শঙ্কা হচ্ছে, পাথর মূলত পানির স্রোতের সঙ্গেই আসত, সেক্ষেত্রে পানির তীব্র স্রোতে বর্তমানে যে পাথরহীন স্থানগুলো রয়েছে সেখানে ক্ষয় বা বিপর্যয় ঘটতে পারে। এ কারণে সাদাপাথরের চিত্র আগের অবস্থায় ফেরত আনতে দীর্ঘ সময় দিতে হবে। শাবিপ্রবির ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য একবার বিনষ্ট হয়ে গেলে কৃত্রিম পন্থায় সেটি

আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা খুব অসম্ভব হয়ে পড়ে। সাদাপাথর পর্যটন স্পটটি আগের অবস্থায় ফেরানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাইরে থেকে পাথর এনে এখানে ফেলে শূন্যস্থান পূরণ করা যাবে; কিন্তু শতভাগ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে এখান থেকে পাথর ওঠানো বন্ধ করা গেলে ছয় মাস পরই প্রাকৃতিক একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে। শাবিপ্রবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সাদাপাথর এক দিনের বিষয় নয়, এর ইতিহাস দীর্ঘ। এটা যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিকভাবে পাথরের লেয়ার তৈরি করে এটা হয়েছে। বলা হচ্ছে সাদাপাথর এক রাতে নির্মূল করা হয়েছে, আবার বলা হচ্ছে সাদাপাথর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে, এটা কখনো সম্ভব

নয়। প্রশাসনের যে গাফিলতি ছিল সেটা নিয়ে পাবলিক জনসচেতনতা দরকার। প্রশাসনকে দেশপ্রেম ধারণ করে, দেশমাতৃকা মনে করে সাদাপাথর রক্ষা করতে হবে। সার্বিক বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম বলেন, সাদাপাথরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যা যা করার দরকার আমরা তা করব। প্রশাসন বজ্রের মতো কঠিন হতে পারে আবার ফুলের মতো নরমও হতে পারে। পাথর তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছে। তার পরও কেউ দুঃসাহস করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সাদাপাথরে স্যানিটেশন ও ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সমুচা না আনায় স্বামীকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালেন স্ত্রী ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো রিট শুনব না : হাইকোর্ট দি‌নে বাংলা‌দে‌শি‌দের ২০টি স্টাডি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট দে‌বে ইতা‌লি দূতাবাস হারানো এনআইডি তুলতে আর লাগবে না জিডি ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’ চবি শিক্ষার্থীর মাথায় সতর্কবার্তা প্রক্টোরিয়াল বডির পদত্যাগসহ ৭ দফা দাবিতে উত্তাল চবি ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি ভাঙার হুঁশিয়ারি দিল এক মুসলিম দেশ চট্টগ্রাম নগরজুড়ে চলছে দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা রেকর্ড ছুঁয়ে কমলো স্বর্ণের দাম তেল খাতে আবার শক্তিশালী হতে পারবে সিরিয়া? কিমের প্রিয় কন্যাকে নিয়ে চীন সফর, কেন এত আলোচনা? বিশেষ কর সুবিধা চায় প্রশাসন ক্যাডার মালিবাগে সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ও মালিকের বাসায় হামলা-ভাঙচুর চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে কমেছে চালের দাম দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়বৃষ্টি বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ ৪ সেপ্টেম্বর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে ০৪ সেপ্টেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি এখনো নিয়োগ হয়নি সেই ৫৩৬ পুলিশের