
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে রমরমা মামলা বাণিজ্য

প্রথমে ধোলাই, তারপর সেই নেতাকে পুলিশে দিল ছাত্র-জনতা

রাজধানীর যে এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন মমতাজ

আইভীর জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে ডিভিশন মঞ্জুর

আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী

ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক, কোমড়ে দড়ি বেঁধে নেওয়া হলো থানায়

স্বচ্ছ-জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়তে কাজ করবে ফোরাম জোট
নয়া মেরুকরণের পথে রাজনীতি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়া মেরুকরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে দেশের রাজনীতি। দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়ার পর এখন দৃশ্যপটে নেই আওয়ামী লীগ। তাই এখন রাজনৈতিক শক্তিগুলো ভোটের মাঠে সুবিধা নিশ্চিত করতে কে কোন পথে হাঁটবে, কে কাকে পাশে টানবে-এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এ নিয়ে রাজনীতির পালে নানামুখী হাওয়া বইছে। জানান দিচ্ছে নতুন মেরুকরণের আভাস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মাঠের ও ভোটের রাজনীতিতে বিএনপি এখন দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী জায়গায় রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির মধ্যে আপাতত দ্বন্দ্ব দেখা গেলেও কতদূর যাবে তা পরিস্থিতি বলে দেবে। এবি পার্টির সঙ্গে এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি দলের
হতে পারে এলায়েন্স। আবার বিএনপিও কাছে টানতে পারে তাদের। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি ইসলামপন্থি দলের মধ্যেও ‘নির্বাচনি সমঝোতা’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাম ঘরানার অথবা সেক্যুলার ঘরানার রাজনৈতিক দলের মধ্যেও একটা ঐক্য তৈরি হতে পারে। সবার উদ্দেশ্য-ক্ষমতা ভাগাভাগির দরকষাকষিতে ভোটের আগে শক্তিশালী অবস্থান। আর এ লক্ষ্যে শিগগিরই পর্দার আড়ালে অনেক কিছু ঘটবে। যার প্রাথমিক তৎপরতা এখনই শুরু হয়েছে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ আরও বাড়বে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। এদিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিতের পর থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বিএনপি ও এনসিপির অবস্থান এখন অভিন্ন। সেক্ষেত্রে বিএনপির
সঙ্গে এনসিপির জোট গঠন নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করার দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘আপত্তিকর’ স্লোগান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমালোচনা দেখা যায়। সোমবার লক্ষ্মীপুরে এক সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, ‘শাহবাগ ও যমুনার সামনে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হতে পারত। কিন্তু সেই শাহবাগে যদি জাতীয় সংগীত গাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা আসে, বিএনপিকে কেউ কেউ ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে চায়, কেউ যদি বলে ‘গোলাম আযমের বাংলায়’-এই কথাগুলো আমাদের মনের মধ্যে দাগ কাটে। এটা হয়
না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করেছি। তাহলে কেন, কী কারণে শাহবাগে কারও কারও উপস্থিতিতে এই ধরনের স্লোগান হয়? তখন বুঝতে হবে, কে কী চায়, কাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। এটা বিচার বিশ্লেষণের সময় কিন্তু এখন।’ যদিও এ নিয়ে আগেই নিজেদের অবস্থান জানায় এনসিপি। দলটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এনসিপির কোনো সদস্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে দলীয় স্লোগান কিংবা এই জনপদের মানুষের সংগ্রাম ও ইতিহাসবিরোধী কোনো স্লোগান দেয়নি। ফলে যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই বহন করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায় তথা ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের যথাযথ স্বীকৃতি এবং মর্যাদা বাংলাদেশে রাজনীতি করার পূর্বশর্ত বলে এনসিপি মনে
করে। মঙ্গলবারও এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘একাত্তরকে অস্বীকার করে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ নেই। একাত্তর আমাদের ভিত্তিমূল। আমরা চব্বিশে সেটা রিক্লেইম করেছি। এই ভিত্তিমূল আমাদের থাকতে হবে। যদি কোনো গোষ্ঠী বা কোনো পক্ষ একাত্তরকে বাইপাস করে রাজনীতি করতে চায়, তাদের রাজনীতিটা বুমেরাং হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সংগীত আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। যারা জাতীয় সংগীতের প্রতি অবমাননা করছেন, বুঝে না বুঝে, আমরা তাদের বলব, বাংলাদেশের গণমানুষের যে রাজনীতি ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ করে আপনাদের মূলধারার রাজনীতিতে আসা উচিত।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-এই দুই ইস্যুতে বিএনপির যে অবস্থান তা নতুন
নয়। তবে এনসিপির অবস্থান তাদের কাছে নতুন মনে হয়েছে। এর কারণ হতে পারে জনআকাঙ্ক্ষাকে দলটি বুঝতে পেরেছে। আরেকটি হতে পারে যেহেতু আওয়ামী লীগ ভোটে অংশ নিতে পারবে না, এজন্য দলটির (আওয়ামী লীগের) ভোট টানার বিষয় থাকতে পারে। বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ-রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। এনসিপির সঙ্গে জামায়াতের একটা বিরোধ আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে তা নাও থাকতে পারে। তবে নতুন বাস্তবতায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এক জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ইসলামি দলগুলো একটি নির্বাচনি সমঝোতায় যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এনসিপির অবস্থান কী হবে তা এখনো অস্পষ্ট। সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচনে তফশিল ঘোষণার ওপর। কারণ নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ আদায়ে
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ সামনে আরও বাড়বে। আবার এখনো জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পায়নি, আর এনসিপির নিবন্ধন নেই-তাও কিন্তু বাস্তবতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, ‘যে ধরনের স্লোগান জামায়াত ও শিবিরের ছেলেরা দিয়েছে, এসব স্লোগান তো বাংলাদেশের মানুষ এখনো গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এ ধরনের স্লোগান দেশের মানুষ কেন গ্রহণ করবে? তাদের তো অস্বীকার করা উচিত নয় যে, একাত্তর সালে তারা বাংলাদেশের সৃষ্টিকে বিরোধিতা করেছিল। সেটার জন্য তাদের অনুতাপ প্রকাশ করা উচিত। তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। সেটা না করে তারা এ রাস্তায় যাচ্ছে কেন? আরেকটা মেরুকরণ আর কী হবে। আওয়ামী লীগকে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে, নিবন্ধনও হয়তো বাতিল করা হবে। ভোটে হয়তো অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এখন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি-এ তিন দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। আবার এর মধ্যে দুই দল একসঙ্গে ফ্রন্ট করতে পারে। আর তারেক রহমান তো আগেই বলেছেন জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, শেষ পর্যন্ত ইসলামপন্থিরা এক লাইনে চলে আসবে। অথবা বিরোধী দল হওয়ার জন্য ইসলামপন্থিরা এক ধারায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারে নির্বাচনের আগে। আবার যারা বৈষম্যবিরোধী আছে তাদের থেকে যেসব দল বেরোচ্ছে তাদের মধ্যে একটা ঐক্য হতে পারে। এটা একটা ধারা হতে পারে। আর যারা ইতোমধ্যে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে ছিল না কিন্তু বাম ঘরানার অথবা সেক্যুলার ঘরানার-তাদের মধ্যেও একটা ঐক্য তৈরি হতে পারে। তবে এ অবস্থায় বিএনপির বিপরীতে বিকল্প কোনো শক্তি বা ধারা তৈরি হতে সময় লাগবে। এজন্য মনে হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে যদি বিশ্লেষণ করি, বিএনপি একচ্ছত্র ব্যাপক সমর্থন নিয়ে আগামী নির্বাচনে আবির্ভূত হবে। তার আরও অভিমত-জামায়াত, এনসিপি একে অপরের বিরোধিতা করে বেশি সুবিধা করতে পারবে না। তারা যত ঐক্যবদ্ধ থাকবে ততই তাদের সুবিধা হবে। কারণ দল দুটি মোটামুটি এক ধারাতেই আছে এবং ছিল। হঠাৎ করে অবস্থান পরিবর্তন করলেই জনসমর্থন পেয়ে যাবে-তা কিন্তু কঠিন। আবার একাত্তরের পক্ষ নিলেই যে আওয়ামী লীগের লোকজন চলে আসবে, সেটি এত সোজা নয়। এটা চিন্তা করাটা কিছুটা হলেও বোকামি। আওয়ামী লীগের কিছু ভোটার বিএনপিতে যেতে পারে। কিন্তু যারা বেশি ডানপন্থি, তাদের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই আওয়ামী লীগের ভোট । আরেক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম মনে করেন, রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করা খুব মুশকিল। তারপরও এটুকু বলা যায়, নিজস্ব যে দর্শন, ভাবনা ও জনপ্রিয়তা সেটাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। এটা নিশ্চিত দেশের মানুষ এখন মনে করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটা জায়গায় আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানান বাঁক বদল হয়। নানান সমীকরণ তৈরি হয়। নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এখন যেহেতু এনসিপি ও ইসলামি দলগুলো দাবির মধ্যে একটা সংযোগও আছে, আবার সরকারের সঙ্গেও তাদের একটা সম্পর্ক আছে। সেই সঙ্গে আছে আন্তর্জাতিক নানা বিষয়। এসব কারণে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ হওয়া এবং বিএনপিবিরোধী মোর্চা গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই মোর্চা বিএনপির জনপ্রিয়তার জন্য কোনো হুমকি নয়। বিএনপি এখন যে জায়গায় আছে, দেশের মানুষ তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে-এটিই বাস্তবতা। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনায় রাজনীতি করছেন। দেশকে ও দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য এবং ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করার জন্য, যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রশ্ন হলো-দেশটাকে সুন্দর একটা রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসার পদ্ধতি। সেই পদ্ধতিতে বিএনপির বাইরে যদি কেউ জোট করতে চায়, সেটি হতে পারে।
হতে পারে এলায়েন্স। আবার বিএনপিও কাছে টানতে পারে তাদের। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি ইসলামপন্থি দলের মধ্যেও ‘নির্বাচনি সমঝোতা’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাম ঘরানার অথবা সেক্যুলার ঘরানার রাজনৈতিক দলের মধ্যেও একটা ঐক্য তৈরি হতে পারে। সবার উদ্দেশ্য-ক্ষমতা ভাগাভাগির দরকষাকষিতে ভোটের আগে শক্তিশালী অবস্থান। আর এ লক্ষ্যে শিগগিরই পর্দার আড়ালে অনেক কিছু ঘটবে। যার প্রাথমিক তৎপরতা এখনই শুরু হয়েছে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ আরও বাড়বে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। এদিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিতের পর থেকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বিএনপি ও এনসিপির অবস্থান এখন অভিন্ন। সেক্ষেত্রে বিএনপির
সঙ্গে এনসিপির জোট গঠন নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করার দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘আপত্তিকর’ স্লোগান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমালোচনা দেখা যায়। সোমবার লক্ষ্মীপুরে এক সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, ‘শাহবাগ ও যমুনার সামনে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হতে পারত। কিন্তু সেই শাহবাগে যদি জাতীয় সংগীত গাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা আসে, বিএনপিকে কেউ কেউ ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে চায়, কেউ যদি বলে ‘গোলাম আযমের বাংলায়’-এই কথাগুলো আমাদের মনের মধ্যে দাগ কাটে। এটা হয়
না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করেছি। তাহলে কেন, কী কারণে শাহবাগে কারও কারও উপস্থিতিতে এই ধরনের স্লোগান হয়? তখন বুঝতে হবে, কে কী চায়, কাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। এটা বিচার বিশ্লেষণের সময় কিন্তু এখন।’ যদিও এ নিয়ে আগেই নিজেদের অবস্থান জানায় এনসিপি। দলটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এনসিপির কোনো সদস্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে দলীয় স্লোগান কিংবা এই জনপদের মানুষের সংগ্রাম ও ইতিহাসবিরোধী কোনো স্লোগান দেয়নি। ফলে যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই বহন করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায় তথা ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের যথাযথ স্বীকৃতি এবং মর্যাদা বাংলাদেশে রাজনীতি করার পূর্বশর্ত বলে এনসিপি মনে
করে। মঙ্গলবারও এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘একাত্তরকে অস্বীকার করে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ নেই। একাত্তর আমাদের ভিত্তিমূল। আমরা চব্বিশে সেটা রিক্লেইম করেছি। এই ভিত্তিমূল আমাদের থাকতে হবে। যদি কোনো গোষ্ঠী বা কোনো পক্ষ একাত্তরকে বাইপাস করে রাজনীতি করতে চায়, তাদের রাজনীতিটা বুমেরাং হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সংগীত আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। যারা জাতীয় সংগীতের প্রতি অবমাননা করছেন, বুঝে না বুঝে, আমরা তাদের বলব, বাংলাদেশের গণমানুষের যে রাজনীতি ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ করে আপনাদের মূলধারার রাজনীতিতে আসা উচিত।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-এই দুই ইস্যুতে বিএনপির যে অবস্থান তা নতুন
নয়। তবে এনসিপির অবস্থান তাদের কাছে নতুন মনে হয়েছে। এর কারণ হতে পারে জনআকাঙ্ক্ষাকে দলটি বুঝতে পেরেছে। আরেকটি হতে পারে যেহেতু আওয়ামী লীগ ভোটে অংশ নিতে পারবে না, এজন্য দলটির (আওয়ামী লীগের) ভোট টানার বিষয় থাকতে পারে। বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ-রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। এনসিপির সঙ্গে জামায়াতের একটা বিরোধ আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে তা নাও থাকতে পারে। তবে নতুন বাস্তবতায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এক জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ইসলামি দলগুলো একটি নির্বাচনি সমঝোতায় যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এনসিপির অবস্থান কী হবে তা এখনো অস্পষ্ট। সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচনে তফশিল ঘোষণার ওপর। কারণ নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ আদায়ে
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ সামনে আরও বাড়বে। আবার এখনো জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পায়নি, আর এনসিপির নিবন্ধন নেই-তাও কিন্তু বাস্তবতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, ‘যে ধরনের স্লোগান জামায়াত ও শিবিরের ছেলেরা দিয়েছে, এসব স্লোগান তো বাংলাদেশের মানুষ এখনো গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এ ধরনের স্লোগান দেশের মানুষ কেন গ্রহণ করবে? তাদের তো অস্বীকার করা উচিত নয় যে, একাত্তর সালে তারা বাংলাদেশের সৃষ্টিকে বিরোধিতা করেছিল। সেটার জন্য তাদের অনুতাপ প্রকাশ করা উচিত। তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। সেটা না করে তারা এ রাস্তায় যাচ্ছে কেন? আরেকটা মেরুকরণ আর কী হবে। আওয়ামী লীগকে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে, নিবন্ধনও হয়তো বাতিল করা হবে। ভোটে হয়তো অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এখন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি-এ তিন দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। আবার এর মধ্যে দুই দল একসঙ্গে ফ্রন্ট করতে পারে। আর তারেক রহমান তো আগেই বলেছেন জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, শেষ পর্যন্ত ইসলামপন্থিরা এক লাইনে চলে আসবে। অথবা বিরোধী দল হওয়ার জন্য ইসলামপন্থিরা এক ধারায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারে নির্বাচনের আগে। আবার যারা বৈষম্যবিরোধী আছে তাদের থেকে যেসব দল বেরোচ্ছে তাদের মধ্যে একটা ঐক্য হতে পারে। এটা একটা ধারা হতে পারে। আর যারা ইতোমধ্যে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে ছিল না কিন্তু বাম ঘরানার অথবা সেক্যুলার ঘরানার-তাদের মধ্যেও একটা ঐক্য তৈরি হতে পারে। তবে এ অবস্থায় বিএনপির বিপরীতে বিকল্প কোনো শক্তি বা ধারা তৈরি হতে সময় লাগবে। এজন্য মনে হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে যদি বিশ্লেষণ করি, বিএনপি একচ্ছত্র ব্যাপক সমর্থন নিয়ে আগামী নির্বাচনে আবির্ভূত হবে। তার আরও অভিমত-জামায়াত, এনসিপি একে অপরের বিরোধিতা করে বেশি সুবিধা করতে পারবে না। তারা যত ঐক্যবদ্ধ থাকবে ততই তাদের সুবিধা হবে। কারণ দল দুটি মোটামুটি এক ধারাতেই আছে এবং ছিল। হঠাৎ করে অবস্থান পরিবর্তন করলেই জনসমর্থন পেয়ে যাবে-তা কিন্তু কঠিন। আবার একাত্তরের পক্ষ নিলেই যে আওয়ামী লীগের লোকজন চলে আসবে, সেটি এত সোজা নয়। এটা চিন্তা করাটা কিছুটা হলেও বোকামি। আওয়ামী লীগের কিছু ভোটার বিএনপিতে যেতে পারে। কিন্তু যারা বেশি ডানপন্থি, তাদের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই আওয়ামী লীগের ভোট । আরেক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম মনে করেন, রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করা খুব মুশকিল। তারপরও এটুকু বলা যায়, নিজস্ব যে দর্শন, ভাবনা ও জনপ্রিয়তা সেটাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। এটা নিশ্চিত দেশের মানুষ এখন মনে করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটা জায়গায় আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানান বাঁক বদল হয়। নানান সমীকরণ তৈরি হয়। নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এখন যেহেতু এনসিপি ও ইসলামি দলগুলো দাবির মধ্যে একটা সংযোগও আছে, আবার সরকারের সঙ্গেও তাদের একটা সম্পর্ক আছে। সেই সঙ্গে আছে আন্তর্জাতিক নানা বিষয়। এসব কারণে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ হওয়া এবং বিএনপিবিরোধী মোর্চা গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই মোর্চা বিএনপির জনপ্রিয়তার জন্য কোনো হুমকি নয়। বিএনপি এখন যে জায়গায় আছে, দেশের মানুষ তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে-এটিই বাস্তবতা। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনায় রাজনীতি করছেন। দেশকে ও দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য এবং ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করার জন্য, যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রশ্ন হলো-দেশটাকে সুন্দর একটা রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসার পদ্ধতি। সেই পদ্ধতিতে বিএনপির বাইরে যদি কেউ জোট করতে চায়, সেটি হতে পারে।