![](https://usbangla24.news/wp-content/themes/pitwmeganews/pitw-assets/pitw-image/user_default.png)
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/prothomalo-bangla_2025-02-13_bi6zmh6v_sahabag.avif)
শাহবাগে নিয়োগ বাতিল হওয়া শিক্ষকদের অবরোধ, ছত্রভঙ্গ করল পুলিশ
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/prothomalo-bangla_2025-02-13_sauzxafu_WhatsApp-Image-2025-02-13-at-16.07.25.avif)
পর্যটকশূন্য সেন্ট মার্টিনে এখন কী হচ্ছে
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/Untitled-3-67ade173eb405.jpg)
পদত্যাগ করলেন ডা. দ্বীন মোহাম্মদ
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/2025-02-13_090742.png)
বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে, নাগরিকদের সতর্ক করলো যুক্তরাজ্য
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/11-4-2502121315.webp)
ভারত বাদ, নতুন ব্লকে বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান!
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/7-16-2502121330.webp)
প্রত্মতাত্বিক প্রদর্শনী ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষার শপথ
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/12-3-2502121354.webp)
নোয়াখালীর দক্ষিণে নতুন বাংলাদেশ!
স্ত্রীর সঙ্গে বিদেশি পরিচালকের কিছু একটা চলছে, আঁচ করতে পেরেছিলেন তিনি
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2025/02/prothomalo-bangla_2025-02-12_uapdk696_1.avif)
নিষিদ্ধ প্রেমে মজে
আড্ডা, তর্কে পুরো দলকে মাতিয়ে রাখেন রসেলিনি। সোনালী দাশগুপ্তকে মুগ্ধ করে রবের্তো রসেলিনির বাকপটুতা। এত সব বিষয়ে এত অগাধ জ্ঞান একজন মানুষের কী করে থাকে, আর সেটা এত সাবলীল বর্ণনা করা যায়! হোটেলেও বয়-বেয়ারাদের সঙ্গে রসেলিনি খুব সহজভাবে মিশতেন, তার এই দিকটাও সোনালীকে মুগ্ধ করে। বয়দের দুহাত ভরে বকশিশ দিতেন রবের্তো, যে কারণে একসময় তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বকশিশওয়ালা সাহেব’। তত দিনে রসেলিনির পুরো ইউনিট তৈরি হয়ে গেছে। কেউ প্রি-প্রোডাকশনের কাজে ব্যস্ত, কেউ শুটিং স্পট নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। সোনালীসহ একটা টিমের সঙ্গে প্রতিদিন চিত্রনাট্য নিয়ে বসছেন রসেলিনি। নিয়মিত দুপুরের রান্না শেষ করে, স্বামী হরিসাধনের কাজ গোছগাছ করে সন্তানদের
কারও জিম্মায় রেখে তারপর তাজ হোটেলে আসেন সোনালী। সাধারণত ছবির শুটিং করতে করতেই তাৎক্ষণিক তৈরি হয়ে যায় রসেলিনির চিত্রনাট্য ও সংলাপ। রসেলিনি তাই ধরেই নিয়েছিলেন সোনালীও তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে যাবে, স্পটে স্পটে থাকবে। তবে আপত্তি তুললেন হরিসাধন দাশগুপ্ত। তিনি বললেন, ‘সেটা সম্ভব না।’ স্ত্রীর সঙ্গে যে বিদেশি পরিচালকের কিছু একটা চলছে, সেই আঁচ করতে পেরেছিলেন বলেই না করেছিলেন তিনি। তবে রসেলিনিও হাল ছাড়ার পাত্র না। চিত্রনাট্য নিয়ে পরামর্শ করার অজুহাতে শুটিং সেট থেকে ঘন ঘন মুম্বাই আসতে শুরু করেন তিনি। ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দলবল নিয়ে বেঙ্গালুরু গেলেন রসেলিনি। দুদিন পরই মুম্বাই থেকে কলকাতা ফেরে দাশগুপ্ত পরিবার। কারণ,
হরিসাধনের টাটা গ্রুপের তথ্যচিত্রটার শুটিং জামশেদপুরে টাটা গ্রুপের ইস্পাত কারখানায় হবে। আর জামশেদপুরে কলকাতা থেকে যাতায়াত করাই সুবিধাজনক। কলকাতা ফিরেও রসেলিনির চিত্রনাট্যের কাজ করতে থাকেন সোনালী। আর সেটা নিয়ে খোঁচা দিতে থাকেন হরিসাধন। একপর্যায়ে সোনালী শুনিয়ে দেন, হরির উৎসাহেই এই কাজ করতে রাজি হয়েছিলেন তিনি। এতই যখন ঝামেলা, কাজটা তিনি আর করবেন না। টেলিফোনে রসেলিনিকে সেটা জানিয়েও দেওয়া হলো। বেঙ্গালুরুতে কাউকে কিছু না বলে রবের্তো চলে আসেন কলকাতা। সরাসরি হরিসাধনের বাড়ি গিয়ে সোনালীর সঙ্গে দেখা করেন। বাড়িতে যে সময় সোনালী ছাড়াও ছিলেন তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি আর দেবর। দীর্ঘ আলাপের পর কিছুটা স্বাভাবিক হন সোনালী। রবের্তোর হাতে ধরিয়ে দেন নতুন স্ক্রিপ্ট। দারুণ উদ্দীপনা
নিয়ে ফিরে গিয়ে আবার কাজ শুরু করেন রবের্তো। ফাঁকে ফাঁকে চলত সোনালী-রবের্তোর চিঠি আর ফোন চালাচালি। এই সম্পর্কের মধ্যেই ইনগ্রিড বার্গম্যানকেও টেলিগ্রাম পাঠাতেন রবের্তো। সন্তানদের খোঁজ নেওয়া ছাড়াও যেখানে থাকত ইনগ্রিডের জন্য প্রেমভরা বার্তা। ইনগ্রিডের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চলাকালেও একই কাজ করেছিলেন রবের্তো। সেই সময়ে আগের প্রেমিকা আনা মানয়ানিকেও একের পর এক আকুল টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন। মুম্বাইতে একদিন বলিউড সিনেমা পৃথ্বীরাজের শুটিং সেটে হাজির হয়েছিলেন রবের্তোছবি: ‘সোনালী মায়ায় ভারতে রবের্তো রসেলিনি’ বই থেকে নেওয়া টানা শুটিং করে ২৪ মার্চ থেকে কয়েক দিন শুটিং বন্ধ রাখা হয়। গাড়ি সারানোর কথা বলে মুম্বাই আসেন রবের্তো। সেখান থেকে কলকাতা যান সোনালীর সঙ্গে দেখা করতে।
তত দিনে সোনালীর বাড়িতে ঝামেলা শুরু হয়ে গেছে। এই যাত্রা তাই বিশেষ সুখকর হলো না। ছবির আলোকচিত্রী আলডো টন্টির কাছে রবের্তো স্বীকার করলেন, সোনালীর সঙ্গে তার প্রেম চলছে। সম্পর্কটা নিয়ে যে এরই মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়েছে, সেসব বলত বলতেই মাতাল হয়ে পড়েন রবের্তো। কিন্তু দুঃখভরা সেই রাতেই খবর এল ‘আনাস্তাসিয়া’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অস্কার পেয়েছেন ইনগ্রিড বার্গম্যান। মুহূর্তেই রসেলিনি ঘোষণা করলেন, ‘গর্বে আমার বুক ভরে উঠেছে। আমার জীবনে আসা সব নারীই অসাধারণ।’ সেই সঙ্গে সোনালীকে ভুলে কাজে মনোযোগ দেবেন বলেও প্রতিজ্ঞা করলেন। কিন্তু প্রতিজ্ঞায় অনড় থাকতে পারলেন না রবের্তো রসেলিনি, বারবার সোনালীর সঙ্গে দেখা করতে লাগলেন। এমনকি সোনালীর কাছাকাছি থাকতে
সিনেমার একটি অংশের শুটিং করতে চেয়েছিলেন কলকাতার কাছে কোথাও। তবে সোনালীর চিত্রনাট্য না লেখার কারণে সেই শুটিং শেষমেশ হয়নি। এর মধ্যে একদিন মুম্বাই ফিরে হরিসাধনদের বাসায় গেলেন রবের্তো। ঢুকেই বুঝতে পারলেন বাড়ির পরিবেশ থমথমে, সন্তানেরাও কাঁদছে। হরি-সোনালীকে নিয়ে নিজের হোটেলে ফিরলেন রসেলিনি। এ সময় হরিসাধন সরাসরি বললেন, ‘সোনালী তোমাকে ভালোবাসে। আমরা আলাদা হয়ে যাচ্ছি।’ সেই রাতে রবের্তোর হোটেলে আরও প্রায় দুই ঘণ্টা ছিলেন হরিসাধন-সোনালী। তবে তিনজনই এই সময়টা পুরোপুরি নীরবে কাটান। একটা সত্য পুরো পরিবেশটাকে যেন বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় পর রসেলিনিই পরিবেশটা স্বাভাবিক করতে চেয়েছিলেন। হরিসাধন-সোনালীর বাড়িতে এ সময়ে দুজনের ঝগড়ায় পরিবেশ এতটাই বিষিয়ে উঠেছিল যে সোনালী-হরিসাধন তাদের
৫ বছর বয়সী বড় ছেলে রাজা দাশগুপ্তকে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন। রবের্তোর হোটেল থেকে সেদিন একসঙ্গে চুপচাপ বাড়ি ফিরলেও পরদিন বিষয়টা আরও ঘোলাটে হলো। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে, সোনালীকে গভীর রাতে তাজ হোটেলের সামনে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে যান হরিসাধন। বন্ধু মকবুল ফিদা হুসেনের সঙ্গে রবের্তো রসেলিনি। ফিদাই পরে মুম্বাই থেকে সোনালীকে দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেন বন্ধু মকবুল ফিদা হুসেনের সঙ্গে রবের্তো রসেলিনি। ফিদাই পরে মুম্বাই থেকে সোনালীকে দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেনছবি: ‘সোনালী মায়ায় ভারতে রবের্তো রসেলিনি’ বই থেকে নেওয়া এত রাতে সোনালীকে দেখে চমকে ওঠেন রবের্তো। সোনালীর মুখে বাকিটা শুনে রাগে ফেটে পড়েন এই ভিনদেশি। সোনালী অবশ্য বলেছিলেন, কিছুক্ষণ বসে আবার বাড়ি ফিরে যাবেন। তবে তাতে সায় দেননি ওপেন সিটি পরিচালক। সোনালীকে রেখে দিলেন নিজের কাছে। পরদিন অবশ্য হরিসাধন ফোন করে ৮ মাস বয়সী ছোট ছেলে অর্জুন কাঁদছে বলে সোনালীকে ফিরে আসতে বলেন। ততক্ষণে অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। লজ্জায়, অপমানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন সোনালী। ২৮ এপ্রিল সোনালীর পিসি (চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের স্ত্রী) মনোবীণা রায়কে সঙ্গে নিয়ে হোটেলে দেখা করতে আসেন তাঁর বাবা ডা. কে সেন রায়। এসেই রবের্তোকে তাঁর মেয়ের জীবন থেকে সরে যেতে বলেন, মনে করিয়ে দেন রবের্তোর একাধিক স্ত্রী ও সন্তানদের কথা। তবে রবের্তো সাফ জানিয়ে দেন, সোনালীকে তিনি ভালোবাসেন। সারা পৃথিবীতে তিনি আর কাউকেই সোনালীর মতো ভালোবাসেন না। এবার ডা. সেন সোনালীকে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। সোনালীরও সাফ জবাব, ‘আর কখনো নয়।’ ছোট ছেলে অর্জুনকে নিয়ে আসা হলো, সঙ্গে একজন আয়া। দেখতে না দেখতে এসব খবর ছড়িয়ে পড়ল সিনেপাড়ায়। মুহূর্তেই এক ভারতীয় মধ্যবিত্ত পরিবার ও এক বিদেশির ব্যক্তিগত সমস্যা জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হলো। তাজ হোটেলে সাংবাদিকদের ভিড় লেগে গেল। ইনগ্রিড বার্গম্যানের স্থান দখল করতে যাওয়া ভারতীয় নারীর একটা ছবি তুলতে ওত পাতলেন অনেক আলোকচিত্রী। তবে রসেলিনির নির্দেশে হোটেলে তখন কড়া পাহারা বসে গেছে। এশিয়া ছাপিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার পত্রিকাতেও ছাপা হতে লাগল ইনগ্রিড বার্গম্যানের স্বামীর খবর। এসবের মধ্যেই তড়িঘড়ি মুম্বাইতে চার দিনের একটা শুটিং শেষ করলেন রবের্তো রসেলিনি। প্রেমকাণ্ড প্রকাশ্যে আসায় বাকি শুটিং আর নিজে উপস্থিত থেকে করতে পারেননি। প্রায় ছয় সপ্তাহ তাজ হোটেলে অনেকটা লুকিয়ে রইলেন সোনালী। হরিসাধন মদ্যপানের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন। তাঁর ওপর হামলা হতে পারে বলে রবের্তোকে সাবধান করে দিল ইতালীয় দূতাবাস। হোটেল ছেড়ে গোপনে টাটা সাম্রাজ্যের কর্ণধার নভেল টাটার মারাবার হিলের এক ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠলেন রবের্তো। ভারতীয় কর্তৃপক্ষও রসেলিনিকে চাপ দিতে লাগলেন। বিরোধী দলের নেতারা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুয়োধ্বনি দিতে লাগল। ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো সোনালী ও রবের্তোকে নিয়ে যাচ্ছেতাই ভাষায় মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। কখনো বলা হয় সোনালীর কাস্টডি চেয়েছেন তাঁর বাবা, কখনো বলা হয় রসেলিনির ভিসার মেয়াদ না বাড়াতে সরকারকে চাপ দেওয়া হয়েছে। দাশগুপ্ত পরিবার ও সংবাদপত্রের চাপে রবের্তোকে দিল্লি ডেকে সতর্ক করে দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সফরে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে দেখা করে ভিন্ন রকম সম্ভাষণ পেলেন রবের্তো। তিরস্কারের বদলে তাঁর সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহার করেন নেহরু। গোপনে পাশে থাকার আশ্বাসও হয়তো দেন। সোনালীর পাসপোর্ট কে দিলেন শুরু থেকেই সোনালী-রসেলিনি ইস্যুটা দারুণভাবে সামলেছেন নেহরু-ইন্দিরা। খবরের কাগজে নানা রকম কুৎসা ছাপা হলেও রসেলিনিকে তাঁর কাজ শেষ করে নির্বিঘ্নে ইতালি ফেরার সব রকম ব্যবস্থা করেছিলেন নেহরুরা। এ ঘটনার অনেক বছর পর সোনালী কাণ্ডে সরকারি দপ্তরের একাধিক নথি প্রকাশ পায়। যার মধ্যে শুরু থেকেই নেহরুর নানা রকম নির্দেশনা-সংবলিত চিরকুট ও চিঠির খোঁজ পাওয়া যায়। এমনকি সোনালীর পরিবারের পক্ষ থেকে পিসি মনোবীণা রায়ের একাধিক চিঠির জবাবও দিয়েছেন নেহরু। ১৯৫৬ সালের মে, জুন, জুলাই মাসজুড়ে এ ঘটনার একাধিক নির্দেশনা পরে প্রকাশ্যে এসেছে। জুলাই মাসের শেষ দিকে এসে সোনালী জানতে পারেন তিনি সন্তানসম্ভবা। সোনালীকে কীভাবে দেশের বাইরে নিয়ে যাবেন, সেই চিন্তায় এ সময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন রসেলিনি। তখনো দেশ ছাড়তে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না সোনালী। একদিকে ৫ বছর ও ৯ মাসের দুই শিশুসন্তান, এর মধ্যে গর্ভে আবার নতুন সন্তান। গর্ভের এই সন্তানকে নিয়েও পরে নানা রকম খবর ছাপা হয়। হরি এই সন্তানকে অস্বীকার করলে রবের্তো তাঁর স্বীকৃতি দেন। এমনকি হরির ছোট ছেলে অর্জুনকেও দত্তক পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। যা-ই হোক, দেশ ছাড়তে হলে তো পাসপোর্ট চাই। সোনালীর পাসপোর্ট করা নিয়েও নানা রকম বিপত্তি শুরু হলো। পাসপোর্ট যাতে ইস্যু করা না হয়, তার জন্য একদিকে পরিবারের চাপ, অন্যদিকে পুরো ঘটনায় সাংবাদিক, বলিউডপাড়ার সতর্ক চোখ। সোনালীরও তাই ভয় ছিল, হয়তো পাসপোর্ট পাবেন না। আর তাই নিজেই এবার শক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। পাসপোর্ট চাইতে সরাসরি চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে। শান্তিনিকেতনের সুবাদে সোনালীকে আগেই চিনতেন নেহরু। আদর করে ডাকতেন ‘মাঙ্কি’। সোনালি তাঁর আরজি জানালে শুরুতেই একটু মশকরা করে নেহরু বলেন, ‘মাঙ্কি, এর চেয়ে চকলেট দেওয়াও তো অনেক সহজ।’ এরপর নিজেই নির্দেশ দিয়ে সোনালীর পাসপোর্ট তৈরি করে দিলেন। আর ফেরার আগে সোনালীকে পরামর্শ দিলেন, ‘যোগাযোগ রেখো, তবে সরাসরি আমার সঙ্গে। দূতাবাস থেকে দূরে থাকবে।’ দেশ ছাড়ার জন্য এবার তৈরি সোনালী। অথচ কখনোই তিনি দেশ ছাড়তে চাননি। আর তাই শান্তিনিকেতন অধ্যায় শেষ করার পর সুযোগ পেয়েও বিদেশে পড়তে যাননি। তবে এত এত ঘটনার পর সোনালী এখন ভিন্ন মানুষ। যে মূলত পালাতে চাইছিলেন সমাজ, সংসার আর চেনা মানুষগুলোর কাছ থেকে। দূরে বহু দূরে। দেশ ছেড়ে কী পালাতে পেরেছিলেন সোনালী? পেরেছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজের মতো করে বাঁচতে? সূত্র: দিলীপ পদগাঁওকরের বই ‘আন্ডার হার স্পেল: রবের্তো রসেলিনি ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘সোনালী মায়ায় ভারতে রবের্তো রসেলিনি’ (গৌরী চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদ), রবের্তো রসেলিনির আত্মজীবনী, ইনগ্রিড বার্গম্যানের ‘মাই স্টোরি’, আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ‘ম্যাজিক লন্ঠন’ ইত্যাদি।
কারও জিম্মায় রেখে তারপর তাজ হোটেলে আসেন সোনালী। সাধারণত ছবির শুটিং করতে করতেই তাৎক্ষণিক তৈরি হয়ে যায় রসেলিনির চিত্রনাট্য ও সংলাপ। রসেলিনি তাই ধরেই নিয়েছিলেন সোনালীও তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে যাবে, স্পটে স্পটে থাকবে। তবে আপত্তি তুললেন হরিসাধন দাশগুপ্ত। তিনি বললেন, ‘সেটা সম্ভব না।’ স্ত্রীর সঙ্গে যে বিদেশি পরিচালকের কিছু একটা চলছে, সেই আঁচ করতে পেরেছিলেন বলেই না করেছিলেন তিনি। তবে রসেলিনিও হাল ছাড়ার পাত্র না। চিত্রনাট্য নিয়ে পরামর্শ করার অজুহাতে শুটিং সেট থেকে ঘন ঘন মুম্বাই আসতে শুরু করেন তিনি। ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দলবল নিয়ে বেঙ্গালুরু গেলেন রসেলিনি। দুদিন পরই মুম্বাই থেকে কলকাতা ফেরে দাশগুপ্ত পরিবার। কারণ,
হরিসাধনের টাটা গ্রুপের তথ্যচিত্রটার শুটিং জামশেদপুরে টাটা গ্রুপের ইস্পাত কারখানায় হবে। আর জামশেদপুরে কলকাতা থেকে যাতায়াত করাই সুবিধাজনক। কলকাতা ফিরেও রসেলিনির চিত্রনাট্যের কাজ করতে থাকেন সোনালী। আর সেটা নিয়ে খোঁচা দিতে থাকেন হরিসাধন। একপর্যায়ে সোনালী শুনিয়ে দেন, হরির উৎসাহেই এই কাজ করতে রাজি হয়েছিলেন তিনি। এতই যখন ঝামেলা, কাজটা তিনি আর করবেন না। টেলিফোনে রসেলিনিকে সেটা জানিয়েও দেওয়া হলো। বেঙ্গালুরুতে কাউকে কিছু না বলে রবের্তো চলে আসেন কলকাতা। সরাসরি হরিসাধনের বাড়ি গিয়ে সোনালীর সঙ্গে দেখা করেন। বাড়িতে যে সময় সোনালী ছাড়াও ছিলেন তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি আর দেবর। দীর্ঘ আলাপের পর কিছুটা স্বাভাবিক হন সোনালী। রবের্তোর হাতে ধরিয়ে দেন নতুন স্ক্রিপ্ট। দারুণ উদ্দীপনা
নিয়ে ফিরে গিয়ে আবার কাজ শুরু করেন রবের্তো। ফাঁকে ফাঁকে চলত সোনালী-রবের্তোর চিঠি আর ফোন চালাচালি। এই সম্পর্কের মধ্যেই ইনগ্রিড বার্গম্যানকেও টেলিগ্রাম পাঠাতেন রবের্তো। সন্তানদের খোঁজ নেওয়া ছাড়াও যেখানে থাকত ইনগ্রিডের জন্য প্রেমভরা বার্তা। ইনগ্রিডের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চলাকালেও একই কাজ করেছিলেন রবের্তো। সেই সময়ে আগের প্রেমিকা আনা মানয়ানিকেও একের পর এক আকুল টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন। মুম্বাইতে একদিন বলিউড সিনেমা পৃথ্বীরাজের শুটিং সেটে হাজির হয়েছিলেন রবের্তোছবি: ‘সোনালী মায়ায় ভারতে রবের্তো রসেলিনি’ বই থেকে নেওয়া টানা শুটিং করে ২৪ মার্চ থেকে কয়েক দিন শুটিং বন্ধ রাখা হয়। গাড়ি সারানোর কথা বলে মুম্বাই আসেন রবের্তো। সেখান থেকে কলকাতা যান সোনালীর সঙ্গে দেখা করতে।
তত দিনে সোনালীর বাড়িতে ঝামেলা শুরু হয়ে গেছে। এই যাত্রা তাই বিশেষ সুখকর হলো না। ছবির আলোকচিত্রী আলডো টন্টির কাছে রবের্তো স্বীকার করলেন, সোনালীর সঙ্গে তার প্রেম চলছে। সম্পর্কটা নিয়ে যে এরই মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়েছে, সেসব বলত বলতেই মাতাল হয়ে পড়েন রবের্তো। কিন্তু দুঃখভরা সেই রাতেই খবর এল ‘আনাস্তাসিয়া’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অস্কার পেয়েছেন ইনগ্রিড বার্গম্যান। মুহূর্তেই রসেলিনি ঘোষণা করলেন, ‘গর্বে আমার বুক ভরে উঠেছে। আমার জীবনে আসা সব নারীই অসাধারণ।’ সেই সঙ্গে সোনালীকে ভুলে কাজে মনোযোগ দেবেন বলেও প্রতিজ্ঞা করলেন। কিন্তু প্রতিজ্ঞায় অনড় থাকতে পারলেন না রবের্তো রসেলিনি, বারবার সোনালীর সঙ্গে দেখা করতে লাগলেন। এমনকি সোনালীর কাছাকাছি থাকতে
সিনেমার একটি অংশের শুটিং করতে চেয়েছিলেন কলকাতার কাছে কোথাও। তবে সোনালীর চিত্রনাট্য না লেখার কারণে সেই শুটিং শেষমেশ হয়নি। এর মধ্যে একদিন মুম্বাই ফিরে হরিসাধনদের বাসায় গেলেন রবের্তো। ঢুকেই বুঝতে পারলেন বাড়ির পরিবেশ থমথমে, সন্তানেরাও কাঁদছে। হরি-সোনালীকে নিয়ে নিজের হোটেলে ফিরলেন রসেলিনি। এ সময় হরিসাধন সরাসরি বললেন, ‘সোনালী তোমাকে ভালোবাসে। আমরা আলাদা হয়ে যাচ্ছি।’ সেই রাতে রবের্তোর হোটেলে আরও প্রায় দুই ঘণ্টা ছিলেন হরিসাধন-সোনালী। তবে তিনজনই এই সময়টা পুরোপুরি নীরবে কাটান। একটা সত্য পুরো পরিবেশটাকে যেন বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় পর রসেলিনিই পরিবেশটা স্বাভাবিক করতে চেয়েছিলেন। হরিসাধন-সোনালীর বাড়িতে এ সময়ে দুজনের ঝগড়ায় পরিবেশ এতটাই বিষিয়ে উঠেছিল যে সোনালী-হরিসাধন তাদের
৫ বছর বয়সী বড় ছেলে রাজা দাশগুপ্তকে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন। রবের্তোর হোটেল থেকে সেদিন একসঙ্গে চুপচাপ বাড়ি ফিরলেও পরদিন বিষয়টা আরও ঘোলাটে হলো। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে, সোনালীকে গভীর রাতে তাজ হোটেলের সামনে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে যান হরিসাধন। বন্ধু মকবুল ফিদা হুসেনের সঙ্গে রবের্তো রসেলিনি। ফিদাই পরে মুম্বাই থেকে সোনালীকে দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেন বন্ধু মকবুল ফিদা হুসেনের সঙ্গে রবের্তো রসেলিনি। ফিদাই পরে মুম্বাই থেকে সোনালীকে দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেনছবি: ‘সোনালী মায়ায় ভারতে রবের্তো রসেলিনি’ বই থেকে নেওয়া এত রাতে সোনালীকে দেখে চমকে ওঠেন রবের্তো। সোনালীর মুখে বাকিটা শুনে রাগে ফেটে পড়েন এই ভিনদেশি। সোনালী অবশ্য বলেছিলেন, কিছুক্ষণ বসে আবার বাড়ি ফিরে যাবেন। তবে তাতে সায় দেননি ওপেন সিটি পরিচালক। সোনালীকে রেখে দিলেন নিজের কাছে। পরদিন অবশ্য হরিসাধন ফোন করে ৮ মাস বয়সী ছোট ছেলে অর্জুন কাঁদছে বলে সোনালীকে ফিরে আসতে বলেন। ততক্ষণে অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। লজ্জায়, অপমানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন সোনালী। ২৮ এপ্রিল সোনালীর পিসি (চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের স্ত্রী) মনোবীণা রায়কে সঙ্গে নিয়ে হোটেলে দেখা করতে আসেন তাঁর বাবা ডা. কে সেন রায়। এসেই রবের্তোকে তাঁর মেয়ের জীবন থেকে সরে যেতে বলেন, মনে করিয়ে দেন রবের্তোর একাধিক স্ত্রী ও সন্তানদের কথা। তবে রবের্তো সাফ জানিয়ে দেন, সোনালীকে তিনি ভালোবাসেন। সারা পৃথিবীতে তিনি আর কাউকেই সোনালীর মতো ভালোবাসেন না। এবার ডা. সেন সোনালীকে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। সোনালীরও সাফ জবাব, ‘আর কখনো নয়।’ ছোট ছেলে অর্জুনকে নিয়ে আসা হলো, সঙ্গে একজন আয়া। দেখতে না দেখতে এসব খবর ছড়িয়ে পড়ল সিনেপাড়ায়। মুহূর্তেই এক ভারতীয় মধ্যবিত্ত পরিবার ও এক বিদেশির ব্যক্তিগত সমস্যা জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হলো। তাজ হোটেলে সাংবাদিকদের ভিড় লেগে গেল। ইনগ্রিড বার্গম্যানের স্থান দখল করতে যাওয়া ভারতীয় নারীর একটা ছবি তুলতে ওত পাতলেন অনেক আলোকচিত্রী। তবে রসেলিনির নির্দেশে হোটেলে তখন কড়া পাহারা বসে গেছে। এশিয়া ছাপিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার পত্রিকাতেও ছাপা হতে লাগল ইনগ্রিড বার্গম্যানের স্বামীর খবর। এসবের মধ্যেই তড়িঘড়ি মুম্বাইতে চার দিনের একটা শুটিং শেষ করলেন রবের্তো রসেলিনি। প্রেমকাণ্ড প্রকাশ্যে আসায় বাকি শুটিং আর নিজে উপস্থিত থেকে করতে পারেননি। প্রায় ছয় সপ্তাহ তাজ হোটেলে অনেকটা লুকিয়ে রইলেন সোনালী। হরিসাধন মদ্যপানের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন। তাঁর ওপর হামলা হতে পারে বলে রবের্তোকে সাবধান করে দিল ইতালীয় দূতাবাস। হোটেল ছেড়ে গোপনে টাটা সাম্রাজ্যের কর্ণধার নভেল টাটার মারাবার হিলের এক ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠলেন রবের্তো। ভারতীয় কর্তৃপক্ষও রসেলিনিকে চাপ দিতে লাগলেন। বিরোধী দলের নেতারা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুয়োধ্বনি দিতে লাগল। ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো সোনালী ও রবের্তোকে নিয়ে যাচ্ছেতাই ভাষায় মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। কখনো বলা হয় সোনালীর কাস্টডি চেয়েছেন তাঁর বাবা, কখনো বলা হয় রসেলিনির ভিসার মেয়াদ না বাড়াতে সরকারকে চাপ দেওয়া হয়েছে। দাশগুপ্ত পরিবার ও সংবাদপত্রের চাপে রবের্তোকে দিল্লি ডেকে সতর্ক করে দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সফরে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে দেখা করে ভিন্ন রকম সম্ভাষণ পেলেন রবের্তো। তিরস্কারের বদলে তাঁর সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহার করেন নেহরু। গোপনে পাশে থাকার আশ্বাসও হয়তো দেন। সোনালীর পাসপোর্ট কে দিলেন শুরু থেকেই সোনালী-রসেলিনি ইস্যুটা দারুণভাবে সামলেছেন নেহরু-ইন্দিরা। খবরের কাগজে নানা রকম কুৎসা ছাপা হলেও রসেলিনিকে তাঁর কাজ শেষ করে নির্বিঘ্নে ইতালি ফেরার সব রকম ব্যবস্থা করেছিলেন নেহরুরা। এ ঘটনার অনেক বছর পর সোনালী কাণ্ডে সরকারি দপ্তরের একাধিক নথি প্রকাশ পায়। যার মধ্যে শুরু থেকেই নেহরুর নানা রকম নির্দেশনা-সংবলিত চিরকুট ও চিঠির খোঁজ পাওয়া যায়। এমনকি সোনালীর পরিবারের পক্ষ থেকে পিসি মনোবীণা রায়ের একাধিক চিঠির জবাবও দিয়েছেন নেহরু। ১৯৫৬ সালের মে, জুন, জুলাই মাসজুড়ে এ ঘটনার একাধিক নির্দেশনা পরে প্রকাশ্যে এসেছে। জুলাই মাসের শেষ দিকে এসে সোনালী জানতে পারেন তিনি সন্তানসম্ভবা। সোনালীকে কীভাবে দেশের বাইরে নিয়ে যাবেন, সেই চিন্তায় এ সময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন রসেলিনি। তখনো দেশ ছাড়তে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না সোনালী। একদিকে ৫ বছর ও ৯ মাসের দুই শিশুসন্তান, এর মধ্যে গর্ভে আবার নতুন সন্তান। গর্ভের এই সন্তানকে নিয়েও পরে নানা রকম খবর ছাপা হয়। হরি এই সন্তানকে অস্বীকার করলে রবের্তো তাঁর স্বীকৃতি দেন। এমনকি হরির ছোট ছেলে অর্জুনকেও দত্তক পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। যা-ই হোক, দেশ ছাড়তে হলে তো পাসপোর্ট চাই। সোনালীর পাসপোর্ট করা নিয়েও নানা রকম বিপত্তি শুরু হলো। পাসপোর্ট যাতে ইস্যু করা না হয়, তার জন্য একদিকে পরিবারের চাপ, অন্যদিকে পুরো ঘটনায় সাংবাদিক, বলিউডপাড়ার সতর্ক চোখ। সোনালীরও তাই ভয় ছিল, হয়তো পাসপোর্ট পাবেন না। আর তাই নিজেই এবার শক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। পাসপোর্ট চাইতে সরাসরি চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে। শান্তিনিকেতনের সুবাদে সোনালীকে আগেই চিনতেন নেহরু। আদর করে ডাকতেন ‘মাঙ্কি’। সোনালি তাঁর আরজি জানালে শুরুতেই একটু মশকরা করে নেহরু বলেন, ‘মাঙ্কি, এর চেয়ে চকলেট দেওয়াও তো অনেক সহজ।’ এরপর নিজেই নির্দেশ দিয়ে সোনালীর পাসপোর্ট তৈরি করে দিলেন। আর ফেরার আগে সোনালীকে পরামর্শ দিলেন, ‘যোগাযোগ রেখো, তবে সরাসরি আমার সঙ্গে। দূতাবাস থেকে দূরে থাকবে।’ দেশ ছাড়ার জন্য এবার তৈরি সোনালী। অথচ কখনোই তিনি দেশ ছাড়তে চাননি। আর তাই শান্তিনিকেতন অধ্যায় শেষ করার পর সুযোগ পেয়েও বিদেশে পড়তে যাননি। তবে এত এত ঘটনার পর সোনালী এখন ভিন্ন মানুষ। যে মূলত পালাতে চাইছিলেন সমাজ, সংসার আর চেনা মানুষগুলোর কাছ থেকে। দূরে বহু দূরে। দেশ ছেড়ে কী পালাতে পেরেছিলেন সোনালী? পেরেছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজের মতো করে বাঁচতে? সূত্র: দিলীপ পদগাঁওকরের বই ‘আন্ডার হার স্পেল: রবের্তো রসেলিনি ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘সোনালী মায়ায় ভারতে রবের্তো রসেলিনি’ (গৌরী চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদ), রবের্তো রসেলিনির আত্মজীবনী, ইনগ্রিড বার্গম্যানের ‘মাই স্টোরি’, আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ‘ম্যাজিক লন্ঠন’ ইত্যাদি।