উত্তরবঙ্গে এক মহাসড়ক নির্মাণে মহাধীরগতি, অন্যটি আছে ঝুলে – ইউ এস বাংলা নিউজ




উত্তরবঙ্গে এক মহাসড়ক নির্মাণে মহাধীরগতি, অন্যটি আছে ঝুলে

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:৩০ 15 ভিউ
উত্তরবঙ্গের প্রধান দুই মহাসড়ক প্রকল্প পড়েছে ধীরগতির চক্করে এবং অনিশ্চয়তায়। আট বছরেও সম্পন্ন হয়নি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেন এবং চার লেনে উন্নীতকরণের নির্মাণকাজ। নাটোরের বনপাড়া থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সোনামসজিদ বন্দর পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেন এবং চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ কবে শুরু হবে তা অনিশ্চিত। ৯ বছরে সম্ভাব্যতা ও সমীক্ষা যাচাই হলেও আসলে কোনো অগ্রগতি নেই। সিরাজগঞ্জ থেকে নাটোরের বনপাড়া হয়ে ঝিনাইদহ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ককে প্রশস্ত করে যথাযথ মানে উন্নয়নের প্রকল্প চলতি অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদিত বরাদ্দহীন প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে। এগুলো কবে অনুমোদন এবং অর্থায়ন পাবে নিশ্চিত

নয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে প্রকল্প দুটির অগ্রগতির সম্ভাবনা ক্ষীণ। ব্যয় বাড়ে রংপুর মহাসড়কের কাজ শেষ হয় না দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যক্রম (সাসেক-২) পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারের অনুমোদন পায় এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ। উত্তরবঙ্গের ‘লাইফ লাইন’খ্যাত এ রাস্তার নির্মাণ ২০২১ সালের আগস্টে সম্পন্নের লক্ষ্য ছিল। তবে গত ৭ অক্টোবর দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধন করা হয়েছে প্রকল্পটি উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি)। দ্বিতীয়বারের মতো মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্প পরিচালক ড. ওয়ালিউর রহমান বলেছেন, আগামী বছরের ডিসেম্বরেই কাজ সম্পন্ন হবে।

পরের এক বছর ডিফেক্ট লাইবেলিটি পিরিয়ড। ২০১৬ সালে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ডিপিপির প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। কাজ শুরুতে দেরি এবং ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতাসহ করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের সময় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। ২০২৩ সালে সংশোধনীতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৮ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। এক বছর না যেতেই সার্ভিস কাজের কথা বলে ব্যয় বাড়িয়ে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি অনুমোদন করা হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায়। প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দেবে ১১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে

বলা হয়েছে, ফ্লাইওভার এবং ইন্টারচেঞ্জ কাজের উন্নয়ন। অর্থাৎ শুরুর পর খরচ বাড়ছে ৭ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা প্রায় ৭৭ শতাংশ বেশি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সড়কের পাশে ফুটপাত, ফুট ওভারব্রিজ এবং ওভারপাস নির্মাণ আগে ছিল না। সড়কের কিছু অংশে বাঁক থাকায় নতুনভাবে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সয়ে সড়কের স্থায়িত্ব বাড়াতে অতিরিক্ত উপকরণ ব্যবহার এবং বিশেষ নির্মাণ কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড়, বগুড়ার ছোনকা, মেডিকেল মোড়, চান্দাইকোনা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকায় কাজ এখনও বাকি। সার্ভিস লেনে গাড়ি চলায়, হচ্ছে যানজট। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে শুরু করে এলেঙ্গা মোড়

পর্যন্ত সড়কের অনেক কাজ এখনও অসমাপ্ত। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌর শহরে জমি মালিকরা কাজ আটকে রেখেছেন অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ জটিলতায়। জমির মালিক আমিনুল হক জানান, ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত কাজ করতে দেবেন না। সাসেক প্রকল্প কর্মকর্তা ফিরোজ আকতার বলেন, ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করা হয়েছে। মালিকানা জটিলতায় ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা হয়েছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী আবুল ফজল বলেন, কাজ শেষ না হওয়ায় ট্রাক মাল নিতে চায় না। এতে পরিবহন খরচ অনেক বেড়েছে। চালক জুলফিকার মোল্লা বলেন, যেসব এলাকায় এগুলো কাজ হয়নি, সেখানে গাড়ি চালানো কষ্টকর। একবার যানজট লাগলে, কয়েক ঘণ্টাতেও মুক্তি মেলে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড এলেঙ্গা

থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার রাস্তা চার লেনে উন্নীতকরণ, আটটি সেতু, একটি ফ্লাইওভার ও ১০টি কালভার্ট নির্মাণ করছে। এখানে নির্মাণকাজ সবচেয়ে পিছিয়ে। হাটিকুমরুল মোড়ে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করছে। ঠিকাদারের প্রতিনিধি কাওছার জামান বলেন, কাজের গতি বাড়াতে অতিরিক্ত শ্রমিক এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা কী বলছেন প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, ব্যয় ও সময় বাড়ার প্রধান কারণ নতুন অবকাঠামো নির্মাণ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলে দিয়েছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ না হলে, শাস্তি পেতে হবে। জমি পেতে দেরি হওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও হাটুখালী সেতু নির্মাণ পিছিয়ে গেছে। এক কর্মকর্তা বলেন, সবচেয়ে ভুগিয়েছে জমি অধিগ্রহণ। প্রশাসন তৎপর হলে এত

সময় লাগত না। তাদের ধীরগতিতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ী এলাকা এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশে এখনও কাজ আটকে আছে। দুটি ফ্লাইওভারের কাজ শুরুই করা যায়নি। বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য প্রচার অভিযান (সুপ্র) সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর দুর্বল ব্যবস্থাপনা, সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রাসঙ্গিক দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব দেখা যায়। এতে সময় ও খরচ বাড়ে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আটকে বনপাড়া-রাজশাহী-সোনামসজিদ স্থলবন্দর ১৫০ কিলোমিটার চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে ২০১৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। কিন্তু প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। সওজের রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ২০১৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছিল। তখন এতে সার্ভিস লেন ধরা হয়নি। সার্ভিস লেনযুক্ত করে আবারও সম্ভাব্যতা যাচাইসহ নতুন নকশার কাজ চলছে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। এরপর ডিপিপি হবে। যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে কাজ শুরু করতে কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। বনপাড়া থেকে রাজশাহী সড়কটি দুই লেনের। মাঝে নেই বিভাজক তথা ডিভাইডার। এতে প্রায়ই মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ কাটাখালী থানার সামনে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৭ জন নিহত হন। ২০২২ সালের ৭ মে বনপাড়ায় দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয় সাতজন। সাসেক পরিকল্পনার ঢাকা-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর মহাসড়কের হাটিকুমরুল থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় ১২১ কিলোমিটার। ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট (উইকেয়ার) পরিকল্পনায় যশোর থেকে বনপাড়া হয়ে হাটিকুমরুল করিডোর রয়েছে। মহাসড়কটি হাটিকুমরুল থেকে বনপাড়া, পাবনার দাশুড়িয়া-লালনশাহ সেতু-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করবে। বনপাড়া থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর সোনামসজিদের ১৪৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। বনপাড়া-রাজশাহী-সোনামসজিদ মহাসড়ক উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগও উন্নত করবে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, চার লেনে উন্নীত করতে ভূমি অধিগ্রহণও করতে হবে। মহাসড়কের জন্য জায়গা লাগবে ১৬০ ফুটের মতো। ৮০ থেকে ১২০ ফুট মতো জমি আছে। এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার কাজ করে। ঢাকা-রংপুর এবং বনপাড়া-যশোর মহাসড়কে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের রাজশাহী জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট তৌফিক আহসান টিটু বলেন, দ্রুত ও ধীরগতির যানবাহন একই সঙ্গে চলছে। সার্ভিস লেন ও ডিভাইডার নেই। এতে দুর্ঘটনা হচ্ছে। তা রোধে চার লেন মহাসড়ক সার্ভিস লেনসহ অবশ্যই নির্মাণ করতে হবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা সভাপতি আহমেদ সফি উদ্দীন বলেন, অতীতে পশ্চিম পাকিস্তান যেমন পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে বৈষম্য করত, এখন উত্তরবঙ্গ এ বৈষম্যের শিকার। রংপুরসহ দেশের অন্য বিভাগে বড় বড় মহাসড়ক হলেও রাজশাহীতে হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
দীর্ঘ ১২ বছর পর দামেস্কে কাজ শুরু করল তুরস্কের দূতাবাস মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ইরানের ‘স্বপ্নভঙ্গ’, বিকল্প কী সিরিয়ার ক্ষমতা দখলকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করল যুক্তরাষ্ট্র সেই তাহেরীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা হামাসের সাথে শান্তি চুক্তি চায় ৭২ শতাংশ ইসরাইলি ‘অখণ্ড বাংলাদেশ’ গঠনের ডাক, তীব্র প্রতিক্রিয়া দিল্লির রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি: সংকটে নিম্ন আয়ের মানুষ রাজধানীতে ছিনতাইয়ের বাড়বাড়ন্ত সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনায় মিঠুন চক্রবর্তীর সতর্কবার্তা জার্মানি নির্বাচনে ইলন মাস্কের হস্তক্ষেপ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক গত ৪৮ ঘণ্টায় ৩ মন্দিরে হামলা, প্রশ্নবিদ্ধ ‘নতুন বাংলাদেশ’ ‘খুনি হিসেবে র‌্যাবকে সমাজে রাখা ঠিক হবে না’ দিল্লিতে নির্বাসিত হাসিনা, বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্কে টানাপোড়ন: এবিসি আমাদের পাকঘরে উঁকি মারবেন না: ভারতকে ডা. শফিকুর রহমান রাখাইনে সামরিক সদর দপ্তর দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি শেখ হাসিনাকে দেখে রাখার ঘোষণা দিয়ে নিজেই হলেন পলাতক ২৬ বছর আগের ইলন মাস্কের ‘প্রলাপ’এখন বাস্তব দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তান থেকে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে ভিড়লো জাহাজ ভারত একটি মারমুখী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে: আশরাফ কায়সার