ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বিচারে সরকারের উদ্যোগ নেই
শিশু বলাৎকারের জন্য কখনো ক্ষমা চায়নি ইসকন
স্বাধীন ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন
ইসকনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ
লগি-বৈঠা দিয়ে জামায়াত নেতাদের পিটিয়ে হত্যা: ১৮ বছর পর হাসিনার নামে মামলা
চিন্ময় কৃষ্ণসহ ইসকনের ১৭ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আজ গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
টানা বৃষ্টিতে তিন জেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি
ময়মনসিংহে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি - শেরপুরে তিনজনের মৃত্যু - ফের ডুবছে নোয়াখালী
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নোয়াখালীর লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে এসব জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। পাহাড়ি ঢল আর ভারি বৃষ্টিতে শেরপুরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, ভারি বর্ষণে ফের ডুবছে নোয়াখালী। বিস্তারিত ময়মনসিংহ ব্যুরো, শেরপুর ও নোয়াখালী প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদে—
ময়মনসিংহ: জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির
প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন বিভাগের স্থাপিত কন্ট্রোল রুম। গতকাল শনিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী-শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উপচে পড়ে দর্শা, মেনংছড়া, বোরারঘাট ও সেওলা নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়।
পরে রাতেই বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও উপচে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের মহিষলেটি, ধোপাজুড়া, কড়ইতলী, জুগলী ইউনিয়নের গামারীতলা, জিগাতলা, নয়াপাড়া, ছাতুগাঁও, কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, জয়রামকুড়া এলাকাসহ গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সূর্যপুর, সামিয়ানাপাড়া হাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। সূত্রগুলো আরও জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের দর্শা, সেওলা ও মেনংছড়া এবং গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোরারঘাট নদীর তীরবর্তী বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েক হাজার বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে ও
পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে হালুয়াঘাট পৌরশহর, সদর ইউনিয়নসহ হালুয়াঘাট বাজারের বিভিন্ন অংশে পানি ডুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। হালুয়াঘাট উপজেলার গাজীরভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, তার এলাকার মহাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারা এলাকায় পানি বেশি। তবে সকালে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তে সড়কের ওপর তিন ফুট পানি ছিল। এলাকার পুকুরের মাছ সব চলে গেছে। স্থানীয় ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, অতি বৃষ্টির কারণে স্থানীয় নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে শেওয়াল ও মেনেং নদীর দুটি অংশে পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। তবে ঘরের ভেতরে পানি না ঢুকলেও বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এদিকে, জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়,
ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে ১৫ হাজার ৪৩৮ হেক্টর। এর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে গেছে ৯ হাজার ৭৮ হেক্টর জমি, আংশিক ডুবেছে ৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং সবজি আংশিক প্লাবিত হয়েছে ১৫৮ হেক্টর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। বৃষ্টি বাড়লে পানি আরও বাড়তে পারে। উপজেলায় মোট ৭টি ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া দুটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে। সাত ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওটা আনুমানিক বলছি। কারণ, অনেক এলাকায় এখনো কোনো খোঁজখবর নিতে পারিনি। ওইসব এলাকার
জনপ্রতিনিধিরা নৌকার অভাবে সব এলাকায় যেতে পারেনি। তা ছাড়া ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সঠিক তথ্য এখনো আমরা পাইনি। সঠিক তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে। বন্যাদুর্গতদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবিদুর রহমান বলেন, পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। পরে আজ আবারও টানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পানি আবার বেড়ে গেছে। উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। নারী-শিশুসহ সাত শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক গরু-ছাগলও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য ১০ হাজার টন খাদ্য সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলমান আছে বলেও
জানান তিনি। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, মৎস্যচাষিদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার সঠিক কোনো তথ্য এখনো আমাদের জানা নেই। উপজেলা মৎস্য অফিসারদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। শেরপুর: টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের তিন উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক গ্রাম। এর মধ্যে নালিতাবাড়ী উপজেলায় এক নারীর মরদেহের সঙ্গে ভেসে এসেছে তার শিশুসন্তান। তবে মায়ের পরিচয় জানাতে পারেনি শিশুটি। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাঘবেড় এলাকায় মায়ের সঙ্গে ভেসে আসে শিশুটি। পাহাড়ি ঢলে এ উপজেলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। তিনজনের মধ্যে একজন হলেন নয়াবিল ইউনিয়নের খলিশাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী নামের এক বৃদ্ধ। ভেসে আসা নারীসহ দুজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের মহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বাড়তে থাকে, যা পরবর্তী সময়ে বন্যার সৃষ্টি করে। বন্যা থেকে বাঁচতে অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অনেক মানুষ এখনো নিরাপদ স্থানে যেতে পারেননি। নালিতাবাড়ী থানার ওসি ছানোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকি দুজনের কোনো পরিচয় এখনো জানা যায়নি। ওই দুজনের মরদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৩২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার আমন চাষের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। মহারশি নদীর খৈলকুড়ায় তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঝিনাইগাতী উপজেলায় নদীর পানি অনেকাংশেই কমে গেছে। বর্তমানে ঝিনাইগাতী সদর, গৌরিপুর, ধানশাইল, মালিঝিকান্দা ও হাতীবান্দা ইউনিয়নের নিচু এলাকার ২৫টি গ্রামে পানিতে থইথই, আমন আবাদ পানির নিচে তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া নালিতাবাড়ীর শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, মণ্ডলিয়াপাড়া, ভজপাড়া ও সন্নাসীভিটায় ভোগাই ও চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙেছে। এতে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে, নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী-গাজিরখামার সড়ক, নালিতাবাড়ী-ধারা সড়ক। এ ছাড়া জেলার প্রতিটি শহরে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলের পানিতে আকস্মিক প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর অন্তত ২১টি ইউনিয়ন। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির উঠতি আমন ফসল। শ্রীবরদীর প্রায় ছয়টি ইউনিয়ন পানিতে ডুবে আছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছেন না এসব এলাকার লোকজন। ফলে মানুষ ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যবসায়ী জাফর মিয়া বলেন, আমাদের দোকানপাটে পানি উঠেছিল, আজকে পানি নেমে গেছে। এতে অনেক ব্যবসায়ীরই ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছরই নদীর বাঁধ ভাঙে আর আমাদের ক্ষতি হয়। কিন্তু কেউ এদিকে নজর দেয় না। এর জন্য নদীর স্থায়ী বাঁধ চাই আমরা। কৃষক জালাল উদ্দীন বলেন, আমাদের সব ফসল পানির নিচে। ফসল নষ্ট হলে আমরা বাঁচব কেমনে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অক্সিজেন’র সমন্বয়ক আহনাফ নাকিব বলেন, পানির নিচে তলিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েকশ গ্রামের মানুষ। ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, এ বছর ঝিনাইগাতীতে সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে ব্যাপক ক্ষতি হবে কৃষকের। নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নালিতাবাড়ী উপজেলায় এ বছর ২৩ হাজার ২০০ হেক্টর আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর আমন আবাদ তলিয়ে গেছে। কিছু এলাকায় পানি নেমে গেলেও নিচু এলাকায় নতুন করে বন্যার পানি ঢুকে আমন আবাদ তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে কৃষকের পুকুরের মাছ। জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বন্যার্তদের শুকনো খাবার ও গো খাদ্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। নোয়াখালী: নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতায় আটকা পড়েছেন অন্তত ১২ লাখ মানুষ। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিন নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, নিম্নাঞ্চলগুলো ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে আছে বসতঘর ও সড়ক। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। তবে জীবিকার তাগিদে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বের হয়েছেন রিকশাচালক, শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ। রাস্তাঘাটে মানুষ কম থাকায় তারাও পড়েছেন বিপাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও তেমন খোলেনি। অনেকেই ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিস বলছে, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের তথ্য মতে, নোয়াখালীর আট উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৩০০ মানুষ এই মুহূর্তে পানিবন্দি হয়ে আছেন। ৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২ হাজার ১৮৫ জন। বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন বলেন, আজ সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের প্রায় সব গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। নিচু এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় আগের বন্যার পানিও এখনো নামেনি। নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। সদর উপজেলার বাসিন্দা মো. সুজন বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে আবার বেড়েছে। গত মাসেও এমন অবস্থা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন কেউ খবর নেবে না, সহযোগিতাও করবে না। আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি আমরা জেনেছি। পানিবন্দি কোনো মানুষ যাতে খাদ্যাভাবে কষ্ট না পায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পানি নিষ্কাশনে একাধিক কার্যক্রম শুরু করেছি। আশা করি, বৃষ্টিপাত না হলে দ্রুতই পানি কমে যাবে।
প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন বিভাগের স্থাপিত কন্ট্রোল রুম। গতকাল শনিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী-শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উপচে পড়ে দর্শা, মেনংছড়া, বোরারঘাট ও সেওলা নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়।
পরে রাতেই বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও উপচে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের মহিষলেটি, ধোপাজুড়া, কড়ইতলী, জুগলী ইউনিয়নের গামারীতলা, জিগাতলা, নয়াপাড়া, ছাতুগাঁও, কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, জয়রামকুড়া এলাকাসহ গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সূর্যপুর, সামিয়ানাপাড়া হাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। সূত্রগুলো আরও জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের দর্শা, সেওলা ও মেনংছড়া এবং গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোরারঘাট নদীর তীরবর্তী বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েক হাজার বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে ও
পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে হালুয়াঘাট পৌরশহর, সদর ইউনিয়নসহ হালুয়াঘাট বাজারের বিভিন্ন অংশে পানি ডুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। হালুয়াঘাট উপজেলার গাজীরভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, তার এলাকার মহাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারা এলাকায় পানি বেশি। তবে সকালে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তে সড়কের ওপর তিন ফুট পানি ছিল। এলাকার পুকুরের মাছ সব চলে গেছে। স্থানীয় ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, অতি বৃষ্টির কারণে স্থানীয় নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে শেওয়াল ও মেনেং নদীর দুটি অংশে পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। তবে ঘরের ভেতরে পানি না ঢুকলেও বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এদিকে, জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়,
ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে ১৫ হাজার ৪৩৮ হেক্টর। এর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে গেছে ৯ হাজার ৭৮ হেক্টর জমি, আংশিক ডুবেছে ৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং সবজি আংশিক প্লাবিত হয়েছে ১৫৮ হেক্টর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। বৃষ্টি বাড়লে পানি আরও বাড়তে পারে। উপজেলায় মোট ৭টি ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া দুটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে। সাত ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওটা আনুমানিক বলছি। কারণ, অনেক এলাকায় এখনো কোনো খোঁজখবর নিতে পারিনি। ওইসব এলাকার
জনপ্রতিনিধিরা নৌকার অভাবে সব এলাকায় যেতে পারেনি। তা ছাড়া ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সঠিক তথ্য এখনো আমরা পাইনি। সঠিক তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে। বন্যাদুর্গতদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবিদুর রহমান বলেন, পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। পরে আজ আবারও টানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পানি আবার বেড়ে গেছে। উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। নারী-শিশুসহ সাত শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক গরু-ছাগলও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য ১০ হাজার টন খাদ্য সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলমান আছে বলেও
জানান তিনি। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, মৎস্যচাষিদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার সঠিক কোনো তথ্য এখনো আমাদের জানা নেই। উপজেলা মৎস্য অফিসারদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। শেরপুর: টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের তিন উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক গ্রাম। এর মধ্যে নালিতাবাড়ী উপজেলায় এক নারীর মরদেহের সঙ্গে ভেসে এসেছে তার শিশুসন্তান। তবে মায়ের পরিচয় জানাতে পারেনি শিশুটি। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাঘবেড় এলাকায় মায়ের সঙ্গে ভেসে আসে শিশুটি। পাহাড়ি ঢলে এ উপজেলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। তিনজনের মধ্যে একজন হলেন নয়াবিল ইউনিয়নের খলিশাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী নামের এক বৃদ্ধ। ভেসে আসা নারীসহ দুজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের মহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বাড়তে থাকে, যা পরবর্তী সময়ে বন্যার সৃষ্টি করে। বন্যা থেকে বাঁচতে অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অনেক মানুষ এখনো নিরাপদ স্থানে যেতে পারেননি। নালিতাবাড়ী থানার ওসি ছানোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকি দুজনের কোনো পরিচয় এখনো জানা যায়নি। ওই দুজনের মরদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৩২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার আমন চাষের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। মহারশি নদীর খৈলকুড়ায় তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঝিনাইগাতী উপজেলায় নদীর পানি অনেকাংশেই কমে গেছে। বর্তমানে ঝিনাইগাতী সদর, গৌরিপুর, ধানশাইল, মালিঝিকান্দা ও হাতীবান্দা ইউনিয়নের নিচু এলাকার ২৫টি গ্রামে পানিতে থইথই, আমন আবাদ পানির নিচে তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া নালিতাবাড়ীর শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, মণ্ডলিয়াপাড়া, ভজপাড়া ও সন্নাসীভিটায় ভোগাই ও চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙেছে। এতে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে, নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী-গাজিরখামার সড়ক, নালিতাবাড়ী-ধারা সড়ক। এ ছাড়া জেলার প্রতিটি শহরে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলের পানিতে আকস্মিক প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর অন্তত ২১টি ইউনিয়ন। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির উঠতি আমন ফসল। শ্রীবরদীর প্রায় ছয়টি ইউনিয়ন পানিতে ডুবে আছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছেন না এসব এলাকার লোকজন। ফলে মানুষ ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যবসায়ী জাফর মিয়া বলেন, আমাদের দোকানপাটে পানি উঠেছিল, আজকে পানি নেমে গেছে। এতে অনেক ব্যবসায়ীরই ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছরই নদীর বাঁধ ভাঙে আর আমাদের ক্ষতি হয়। কিন্তু কেউ এদিকে নজর দেয় না। এর জন্য নদীর স্থায়ী বাঁধ চাই আমরা। কৃষক জালাল উদ্দীন বলেন, আমাদের সব ফসল পানির নিচে। ফসল নষ্ট হলে আমরা বাঁচব কেমনে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অক্সিজেন’র সমন্বয়ক আহনাফ নাকিব বলেন, পানির নিচে তলিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী উপজেলার কয়েকশ গ্রামের মানুষ। ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, এ বছর ঝিনাইগাতীতে সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে ব্যাপক ক্ষতি হবে কৃষকের। নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নালিতাবাড়ী উপজেলায় এ বছর ২৩ হাজার ২০০ হেক্টর আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর আমন আবাদ তলিয়ে গেছে। কিছু এলাকায় পানি নেমে গেলেও নিচু এলাকায় নতুন করে বন্যার পানি ঢুকে আমন আবাদ তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে কৃষকের পুকুরের মাছ। জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বন্যার্তদের শুকনো খাবার ও গো খাদ্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। নোয়াখালী: নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতায় আটকা পড়েছেন অন্তত ১২ লাখ মানুষ। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিন নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, নিম্নাঞ্চলগুলো ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে আছে বসতঘর ও সড়ক। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। তবে জীবিকার তাগিদে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বের হয়েছেন রিকশাচালক, শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ। রাস্তাঘাটে মানুষ কম থাকায় তারাও পড়েছেন বিপাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও তেমন খোলেনি। অনেকেই ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিস বলছে, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের তথ্য মতে, নোয়াখালীর আট উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৩০০ মানুষ এই মুহূর্তে পানিবন্দি হয়ে আছেন। ৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২ হাজার ১৮৫ জন। বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন বলেন, আজ সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের প্রায় সব গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। নিচু এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় আগের বন্যার পানিও এখনো নামেনি। নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। সদর উপজেলার বাসিন্দা মো. সুজন বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে আবার বেড়েছে। গত মাসেও এমন অবস্থা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন কেউ খবর নেবে না, সহযোগিতাও করবে না। আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি আমরা জেনেছি। পানিবন্দি কোনো মানুষ যাতে খাদ্যাভাবে কষ্ট না পায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পানি নিষ্কাশনে একাধিক কার্যক্রম শুরু করেছি। আশা করি, বৃষ্টিপাত না হলে দ্রুতই পানি কমে যাবে।