শাহীন চাকলাদারের ভয়ানক ১২ গ্রুপের খোঁজে গোয়েন্দা – ইউ এস বাংলা নিউজ




শাহীন চাকলাদারের ভয়ানক ১২ গ্রুপের খোঁজে গোয়েন্দা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২২ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:৫৭ 8 ভিউ
যশোরের অপরাধ সাম্রাজ্য নিজের কবজায় রাখতে ১২টি সন্ত্রাসী গ্রুপ গঠন করেছিলেন শাহীন চাকলাদার। যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) সাবেক এই সংসদ সদস্যের তৈরি এসব গ্রুপ ছিল যশোরের ত্রাস। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ওই গ্রুপের সদস্যরা শহরছাড়া। তাদের খুঁজছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে শাহীন চাকলাদার, তার পরিবার ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। দেওয়া হয়েছে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা। এর পরও আত্মগোপনে থেকে এ জেলার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন এই গডফাদার। এর কৌশল হিসেবে তিনি পুরোনোদের বাদ দিয়ে নতুন ক্যাডার বাহিনী তৈরি করেছেন। জেলার রাজনীতিতেও এক ভয়ংকর নাম শাহীন চাকলাদার। গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কৃষক লীগ নেতা আজিজুল

ইসলামের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। নির্বাচনে হারলেও যশোরের আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার আধিপত্য একবিন্দুও কমেনি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে দুই মেয়াদে উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন এই শাহীন। ছাত্র জীবনে তার নাম ছিল ‘চাকু শাহীন’। পরে নাম হয় ‘পানালা শাহীন’। ২০০৯ সালের পর তিনি জেলার রাজনীতিতে গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হন। তখন থেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মনোনয়ন-বাণিজ্য ও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ ওঠে। শাহীন চাকলাদারের বিষয়ে সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা গোপন প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে দুদকেও। এতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, যশোর শহরের খোলাডাঙ্গা এলাকায় চাকলাদারের চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী গ্রুপ ছিল ভুট্টো, শাওন-হাফিজ গ্রুপ। আরবপুর

এলাকায় সাইদুজ্জামান ওরফে দাতাল বাবু গ্রুপ, ভেকুটিয়া এলাকায় শাহারুল গ্রুপ (আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান), পুরাতন কসবা এলাকায় টাক মিলন ও শফিকুল ইসলাম জুয়েল গ্রুপ। চুড়ামনকাঠি এলাকায় চাকলাদারের হয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করত আব্দুল মান্নান মুন্না গ্রুপ, শংকরপুর ও ষষ্ঠী তলা এলাকায় হাজী সুমন গ্রুপ, বড়বাজার এলাকায় ফন্টু চাকলাদার গ্রুপ, বিরামপুর এলাকায় কেরামত গ্রুপ, উপশহর এলাকায় মনসুর ও কাঠ নান্নু গ্রুপ, কিসমত নওয়াপাড়ায় নবাব গ্রুপ, চাষাড়া ভাতুরিয়া এলাকায় পান্নু গ্রুপ ও পালবাড়ি এলাকায় লিখন গ্রুপ। এসব গ্রুপের সন্ত্রাসীরা খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য, জমি দখল, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা-মামলাসহ যাবতীয় অপকর্মের নেতৃত্ব দিত। আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে তারা বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। গোয়েন্দা

প্রতিবেদনে বলা হয়, যশোরের রাজনীতি, টেন্ডার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজিসহ সব সেক্টরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় চিহ্নিত অপরাধীদের সমন্বয়ে শাহীন চাকলাদার গঠন করেন আলাদা আলাদা টিম। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু ওরফে ফন্টু চাকলাদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল ছিল এসব গ্রুপের নিয়ন্ত্রক। অপকর্মের আখড়া জাবির হোটেল: আনোয়ারা বেগম নামে এক স্কুল শিক্ষিকা যশোর শহরের চিত্রা মোড়ে তার জমি দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে শাহীন চাকলাদারের সহযোগিতা চান। ওই জমি

থেকে আগের দখলদার ও শিক্ষিকাকে উচ্ছেদ করে নিজে দখল করে নেন শাহীন। সেই জমিতে তিনি গড়ে তোলেন ১৭ তলাবিশিষ্ট ফাইভ স্টার হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনাল’। সেখানে বার, স্পা সেন্টার বসিয়ে স্কর্ট সার্ভিস কর্মকাণ্ড চালানো হতো। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে মদ ও মাদকদ্রব্য নিয়ে আসত তার লোকজন। হোটেলটি জুয়া ও অনৈতিক কাজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখা দেয়। ৫ আগস্ট ওই হোটেলে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। আগুনে একজন বিদেশিসহ ২৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। হোটেলের পাশে গাজী ইলেকট্রিকের দোতলা মার্কেটের একটি বড় অংশও তিনি দখল করে নিয়েছিলেন। যত সম্পদের তথ্য: শাহীন চাকলাদার ১০-১২ বছর ধরে অবৈধ উপায়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ২০০৯ সালের আগে তিনি পারিবারিক পরিবহন ব্যবসা

ও ফার্মেসি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালের পর চাকলাদার কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। চাকলাদার স্টোন হাউস, নওয়াপাড়া ও যশোরের পাথরের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন। জাবির এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে নিলামে ক্রেতা-বিক্রেতা, জাবির মৎস্য খামারের মাধ্যমে মাছ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাকলাদার পাবলিকেশন্সের মাধ্যমে প্যাকেজিং ও প্রিন্টিং ব্যবসা, গরিব শাহ স্টোন ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে ঢাকার গাবতলীতে পাথরের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। শহরের চিত্রা মোড়ে ১৭ তলাবিশিষ্ট ওই পাঁচতারকা হোটেল ১২০ কোটি টাকায় নির্মিত। পুরাতন কসবা ভৈরব নদীর পাড়ে ১২ কাঠা জমিতে পারনীনা হোটেল, গোহাটা রোডে দৈনিক সমাজের কথা ভবন, পুরাতন কসবায় চাকলাদার ম্যানশন নামে দোতলা বাড়ি, কাঁঠালতলায় আলিশান তিনতলা ও বড় বাজারে দোতলা বাড়ি রয়েছে তার। রাজধানীর

ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট ও জেএস টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। মহাখালীতে আছে সাততলা বাড়ি, শাহীনবাগ ও কলাবাগানে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে বিনিয়োগ রয়েছে শাহীন চাকলাদারের। এ ছাড়া ভলকানাইজিং ওয়ার্কশপসহ রেন্টু চাকলাদার ও ঝিকরগাছার শাহীন সরদারের সঙ্গে যৌথ বাড়ি রয়েছে। যশোর শহরে আমঘাট তলায় ৭৫ বিঘা জমি, যশোরের ছাঁছড়া ইউনিয়নের ভাদুরিয়ায় ২০ বিঘার মৎস্য খামার তার। যশোর বিমান অফিসের পাশে আছে বাড়িসহ জমি, মাইকপট্টিতে তারই সহযোগী সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজি সুমনের সঙ্গে যৌথ নামে জমি, পেট্রোল পাম্প, ধর্মতলায় জমি, ঢাকার মহাখালীর ডিওএইচএসে ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এ ছাড়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০০ বিঘার এড়োলের বিল, মাহিদিয়ায় ১০০ বিঘার বিলের জমি, জগহাটির একটি বিল, শহরের মাইকপট্টির সেলিম নামে এক ব্যক্তির মার্কেটের একাংশ, কাঁঠালতলা এলাকার ঈদগাহের একটি অংশ, শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সাধন নামে এক ব্যক্তির ১৫ বিঘা জমি, বকচরে সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যশোর-নড়াইল রোডের বীজ গোডাউনের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন তিনি। শাহীনের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে স্ত্রীর নামে প্রায় ৬০০ ভরি স্বর্ণ, ব্যাংকে রয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। তার স্ত্রী ফারহানা জাহান পেশায় গৃহিণী হলেও জাবির হোটেল ইন্টারন্যাশনালের ৫ লাখ টাকা মূল্যের ৫ হাজার শেয়ার তার। চাকলাদার কনস্ট্রাকশনে ২ লাখ টাকা মূল্যের ২ হাজার শেয়ার রয়েছে। মেয়ে অহনা চাকলাদার ও অন্তরা চাকলাদার এবং ছেলে জাবির চাকলাদারের নামেও রয়েছে বিপুল সম্পদ। দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম বলেন, গত ১৬ অক্টোবর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাহীন চাকলাদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্যরা হলেন তার স্ত্রী ফারহানা জাহান মালা, দুই মেয়ে সামিয়া জাহান অন্তরা ও মাঈসা জাহান অহনা এবং ছেলে জাবির চাকলাদার। দুদকের উপপরিচালক মো. শফি উল্লাহর ওই আবেদনে বলা হয়, শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে শত শত কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ছেড়ে যেতে পারেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ভারতীয় গণমাধ্যমে যেভাবে এলো রাষ্ট্রপতির বক্তব্য বাংলাদেশের সংকটের সুযোগে ফুলেফেঁপে উঠছে ভারতের পোশাক রপ্তানি এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ১০ দেশ অন্তর্বর্তী সরকারের পরিধি বাড়ানোর দাবি রাশেদ খাঁনের ইসি ও বিচার বিভাগ সংস্কার হলেই নির্বাচন দিন : মেজর হাফিজ দিনের ভোট রাতে করে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় না : নিরব ব্যারিস্টার সুমন গ্রেপ্তার ট্রাফিক পুলিশ ফিরলেও গতি ফেরেনি সড়কে রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাস মিল্লাদের বেঁচে ফেরার গল্প বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শাহীন চাকলাদারের ভয়ানক ১২ গ্রুপের খোঁজে গোয়েন্দা মধ্যরাতে ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও বার্তা অটোমেটেড মেশিনের দিকে ঝুঁকছে পোশাক কারখানার মালিকরা চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে বিপজ্জনক ৩৩৪ কনটেইনার দুর্নীতির টাকায় ব্যাংক বানিয়েছেন আনিসুল বাংলাদেশে নতুন ভ্যাট ব্যবস্থা: প্রত্যাশা ও করণীয় শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের পথ দেখুন রাবির চারুকলা অনুষদে শ্রেণিকক্ষ থেকে ১৪৭ কেজি তামা উদ্ধার ক্ষুধা নিবারণের সক্ষমতায় বাংলাদেশ ৩ ধাপ পিছিয়েছে ডিমের বাজারে অস্থিরতা, যশোরে আফিল এগ্রোসহ ৪ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা