যে কারণে গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত করা যাবে না ফিলিস্তিনিদের – ইউ এস বাংলা নিউজ




যে কারণে গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত করা যাবে না ফিলিস্তিনিদের

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২১ মার্চ, ২০২৫ | ৩:২৬ 9 ভিউ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের মিশর, জর্ডান বা অন্য কোনো দেশে পুনর্বাসিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই ঘোষণা কেবল অযৌক্তিকই নয়; এটি জোরপূর্বক জনসংখ্যা ‘স্থানান্তর’, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট সমর্থন। তবে এটিও নতুন নয়। এটি আমেরিকার ঔপনিবেশিক অতীতের বাগাড়ম্বর এবং অনুশীলনের প্রতিধ্বনি, যখন আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাদের পূর্বপুরুষদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তবে মৌলিক সত্যটি হলো ফিলিস্তিনিরা ফিলিস্তিনের এবং ফিলিস্তিন তাদেরই। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মন্তব্যটি ভিত্তিহীন বা শূন্যে করেননি। তিনি এমন সময়ে মন্তব্যটি করেছেন যখন ইসরাইল গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে, হাজার হাজার বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে এবং অবরুদ্ধ উপত্যকাটিকে বসবাসের

অযোগ্য করে তুলেছে যাতে উপত্যকাটির বাসিন্দারা অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় এবং একে ‘স্বেচ্ছাসেবী অভিবাসন’ হিসাবে উপস্থাপন করা যায়। ফিলিস্তিনিদের ‘অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করা যেতে পারে’ এই পরামর্শ দিয়ে ট্রাম্প কেবল ইসরাইলকে তার গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দেননি বরং এই বিপজ্জনক ধারণাটিকেও শক্ত করে তুলেছেন যে, ফিলিস্তিনিরা এমন একটি সম্প্রদায় যাদের নিজস্ব কোনও জন্মভূমি নেই, কোনও সংস্কৃতি বা সভ্যতা নেই; কেবল তাদের ইচ্ছামত স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। গাজার জনসংখ্যার জোরপূর্বক উচ্ছেদ কেবল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করবে না, বরং ফিলিস্তিনি পরিচয় এবং সভ্যতার ভিত্তির ওপরও আক্রমণ করবে। আইনি এবং নৈতিক অপরাধ ফিলিস্তিনিদের গণ-স্থানচ্যুতি কেবল একটি কাল্পনিক নীতি আলোচনা নয়; এটি

আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লংঘন। ১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন দখলদারত্বাধীন জনগোষ্ঠীর জোরপূর্বক স্থানান্তরকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করে, এটিকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম সংবিধি নির্বাসন বা জনসংখ্যা স্থানান্তরকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। এছাড়া ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে, জনগণের জীবনযাত্রার ইচ্ছাকৃত ধ্বংস- জোরপূর্বক অপসারণসহ গণহত্যা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে যদি এটি কোনও জাতীয়, জাতিগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে করা হয়। ফিলিস্তিন: স্বদেশের চেয়েও বেশিকিছু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যরা যা বুঝতে ব্যর্থ হন তা হল ফিলিস্তিন কেবল তার জনগণের জন্য একটি ভৌগোলিক অবস্থান নয়। এটি একটি প্রাচীন ভূমি যেখানে হাজার

হাজার বছর ধরে একটি অবিচ্ছিন্ন সভ্যতা রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা কেবল একটি ভূখণ্ডের বাসিন্দা নয়; তারা সেই প্রজন্মের বংশধর যারা এই জমি চাষ করেছেন, শহর তৈরি করেছেন, সংস্কৃতি গঠন করেছেন এবং এর সঙ্গে একটি অটুট বন্ধন তৈরি করেছেন। আজকের ফিলিস্তিনিদের পূর্বপুরুষ কনানীয়রা পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে ফিলিস্তিনে বিশ্বের প্রাচীনতম নগর বসতি স্থাপন করেছিলেন, আসকালান এবং জেরিকোর মতো শহরগুলো নির্মাণ করেছিলেন, যা পৃথিবীর দীর্ঘতম স্থায়ী বসতিপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, ফিলিস্তিন বিভিন্ন সভ্যতার আবাসস্থল ছিল, যার মধ্যে রয়েছে ফিনিশিয়ান, রোমান, বাইজেন্টাইন এবং প্রাক ইসলামী সমাজ, যাদের প্রত্যেকেই এই ভূমির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক কাঠামোতে অবদান রেখেছিল। গাজা দীর্ঘকাল ধরে বাণিজ্য ও

সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল। মামলুক এবং অটোমানদের অধীনে এটি একটি উপকূলীয় কেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ হয়েছিল, যা ভূমধ্যসাগরকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য রুটের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল। শহরের প্রাচীন মসজিদ, খ্রিস্টান মঠ এবং ব্যস্ততম সউক- এই সবই এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের গভীরে নিহিত একটি স্থানের গল্প বলেছিল। এর জনগণকে কেবল অন্য কোনও দেশে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে এমন প্রস্তাব করা মানে ইতিহাস নিজেই মুছে ফেলা যেতে পারে। যে ভূমি তার জনগণকে গড়ে তুলেছে ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমির প্রতি যে আকর্ষণ তা কেবল ঐতিহাসিক নয়; এটি ব্যক্তিগত, কৃষি এবং গভীর আধ্যাত্মিক। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যত্ন সহকারে চাষ করা ফিলিস্তিনের সবুজ পাহাড়ি ঢাল মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে

ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে। জলপাই গাছ, যার মধ্যে কিছু হাজার বছরেরও বেশি পুরানো, ভূমির সঙ্গে সহনশীলতা এবং সংযোগের জীবন্ত প্রতীক। ফিলিস্তিনি কবিতা, সঙ্গীত এবং মৌখিক ঐতিহ্য ভূমির চিত্রকল্পে নিমজ্জিত। মহান কবি মাহমুদ দারবিশ, যার কবিতায় ফিলিস্তিনিদের বাড়ির জন্য আকাঙ্ক্ষা ধরা পড়ে, তিনি প্রায়শই নির্বাসনকে মৃত্যুর একটি রূপ হিসেবে লিখেছিলেন, যেখানে ভূমি থেকে বিচ্ছিন্নতা নিজেই পরিচয়ের বিচ্ছেদ। ফিলিস্তিনিদের জন্য, তাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক বের করা কেবল সম্পত্তির জন্য ক্ষতি নয় বরং স্মৃতি, ভূমির সঙ্গে সংযোগ এবং আত্মমর্যাদার ছিন্নতাও। জোরপূর্বক বহিষ্কারের ঔপনিবেশিক মডেলের পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয় ট্রাম্পের মন্তব্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি বিপজ্জনক ঔপনিবেশিক মডেলকে প্রতিফলিত করে, যা ইতোমধ্যেই ইতিহাসে বিধ্বংসী পরিণতির দিকে

পরিচালিত করেছে। আদিবাসীদের তাদের ভূমি থেকে সরিয়ে আলাদা, নিয়ন্ত্রিত স্থানে স্থাপনের ধারণাটি নতুন নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এই নীতির উপর নির্মিত হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে চুক্তি, যুদ্ধ এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে আদিবাসী আমেরিকানদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা। আদিবাসীদের তাদের ভূমি থেকে দূরে সরিয়ে বিচ্ছিন্ন এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে এই ধারণাটি ছিল মার্কিন ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের একটি কেন্দ্রীয় স্তম্ভ, যা সাংস্কৃতিক ধ্বংস, অর্থনৈতিক বঞ্চনা এবং পদ্ধতিগত প্রান্তিকীকরণের দিকে পরিচালিত করে। তবে, সেই মডেল— বাস্তুচ্যুতি, বর্ণবাদ এবং বসতি স্থাপনকারী-উপনিবেশবাদ- একবিংশ শতাব্দীতে পুনরাবৃত্তি করা যাবে না এবং করা উচিত নয়, বিশেষ করে কয়েক দশক ধরে জাতিসংঘের মানবাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আদিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণার পরেও নয়। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র (১৯৪৮), নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি (১৯৬৬) এবং আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র (২০০৭) এই তিনটিই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, সাংস্কৃতিক বিলুপ্তি এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব অস্বীকারকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিরোধ করা একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা কেউ কেউ ট্রাম্পের মন্তব্যকে কেবল বাগাড়ম্বরপূর্ণ বলে উড়িয়ে দিতে পারেন, কিন্তু কথার শক্তি আছে। এগুলো বর্ণনাকে রূপ দেয়, নীতিকে প্রভাবিত করে এবং চ্যালেঞ্জ না করলে বিপজ্জনক নজির তৈরি করে। ১৯৩টি দেশের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি স্বাভাবিক করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে জোরালোভাবে প্রতিরোধ করার নৈতিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। আইসিসির মতো আইনি সংস্থাগুলোকে যুদ্ধাপরাধের কাঠামোর মধ্যে ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে তদন্ত করতে হবে। জাতিসংঘকে অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমিতে থাকার অধিকার পুনর্ব্যক্ত করতে হবে। সাংবাদিক এবং বিশ্লেষকদের অবশ্যই গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার গণহত্যার প্রভাব প্রকাশ করতে হবে এবং একই সঙ্গে এর জনগণকে অন্যত্র স্থানান্তরের প্রস্তাব দিতে হবে। অনুবাদ: জেসমিন আরা ফেরদৌস

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ব্যাংককে ড. ইউনূস-মোদির মধ্যে বৈঠক অনিশ্চিত আ.লীগের নিবন্ধন বাতিল ও রাজনীতি নিষিদ্ধ চায় এনসিপি ১/১১-এর কুশীলবরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে: দুলু আ.লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য আপনাদের বসানো হয়েছে: রাফি আ.লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে ফের রাস্তায় নামব: আবু হানিফ আমেরিকান ফ্যাসিবাদ: ট্রাম্পও এর ব্যতিক্রম নন আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জবিতে বিক্ষোভ স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া যাবে না: তারেক রহমান ‘ফটো অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেল যে হৃদয়বিদারক ছবিটি অলিম্পিক সভাপতি নির্বাচিত হয়ে জিম্বাবুইয়ান কভেন্ট্রির ইতিহাস আইপিএলের দল থেকে প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানালেন তাসকিন এক ‘অ্যান্টিক কয়েনের’ দাম ২০ বিলিয়ন ডলার বলে প্রতারণা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে সুষ্ঠুভাবে উত্তরণে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা ঢাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত এক, আহত ২ ইসরায়েলে প্রবল বিক্ষোভের মুখে নেতানিয়াহু, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধ ১ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বন্ধ হিথ্রো বিমানবন্দর, বাতিল হচ্ছে ১৩০০ ফ্লাইট ট্রেনের ১৩০ টিকিটসহ আটক নৌবাহিনী কর্মচারী নাঈমের ম্যাচ জেতানো ঝড়ো সেঞ্চুরি, বিফলে সোহানের শতক ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা ছাড়াল