
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

রাজধানীতে মুলার কেজি ৮০ টাকা

পাইপলাইনে তেল সরবরাহে নতুন যুগে ঢুকছে বাংলাদেশ

সাবেক ৩ গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

সপ্তাহখানেকের মধ্যে একীভূত হচ্ছে ৫ ইসলামী ব্যাংক: গভর্নর

এবার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬৩.৫০ বিলিয়ন ডলার

স্থলপথে বাংলাদেশের আরও ৪ পাটপণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

সিন্ডিকেটের থাবায় আবার অস্থির পেঁয়াজের বাজার
মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতির দেশ শ্রীলঙ্কায় এখন মূল্যস্ফীতি শূন্যের নিচে, অথচ বাংলাদেশে ১১%

অর্থনীতি
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৯.৮ শতাংশ। তখন বাংলাদেশে তা ছিল মাত্র ১০ শতাংশের নিচে। তবে সময়ের পরিক্রমায় শ্রীলঙ্কা আজ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ঋণাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে। মাত্র দুই বছরে এই আমূল পরিবর্তন। অথচ একসময়কার ইমার্জিং টাইগার অব এশিয়া খ্যাত বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১-১২ শতাংশের আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার উত্থান
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি মাইনাস ১.৭ শতাংশে নেমে আসে। এটি ইঙ্গিত দেয়, দেশটি অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রার মান বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির খরচ হ্রাসের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সালের শুরুতেও শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি ঋণাত্মক থাকতে পারে। তবে গাড়ি
আমদানির মতো কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলে বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি শূন্য বা তার ওপরে উঠতে পারে, যা ৪ শতাংশের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি: একই অবস্থান অন্যদিকে, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৮৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যে তা আরও উদ্বেগজনক—১২.৯২ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩.৮০ শতাংশ। বারবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং গভর্নর আহসান এইচ মনসুর মূল্যস্ফীতি কমানোর কার্যকর কোনো ফলাফল দেখাতে পারেননি। পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপে থাকা পাকিস্তানের পরিস্থিতিও উল্লেখযোগ্য। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৫০ শতাংশে উঠেছিল।
কিন্তু আগস্টে তা নেমে আসে এক অঙ্কে। ডিসেম্বরে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি আরও কমে ৪.১ শতাংশে পৌঁছেছে। বাস্তবতা বাংলাদেশে ভিন্ন শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই মূল্যস্ফীতির হার কমছে। এর বিপরীতে, বাংলাদেশে তা বাড়তেই থাকছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর যখন ২০২২ সালের ১৪ই আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সহনীয় হবে,” তখন আশাবাদী ছিলেন অনেকেই। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং, শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, শুল্ক এবং কর বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে দেশের অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ ধারণা করছেন। সিপিডির উদ্বেগ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক
প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ভ্যাটের হার বৃদ্ধিকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। শনিবার ‘শ্বেতপত্র ও অতঃপর : অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, “রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পরোক্ষভাবে কর বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিয়েছে, যা উদ্বেগজনক।” দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্রবিষয়ক কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ব ব্যাংকের উদ্বেগ বিশ্ব ব্যাংকও বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে ধীরগতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি কমতে থাকবে, তবে মূল্যস্ফীতি থাকবে উচ্চতর। শুক্রবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার
বেশিরভাগ দেশই ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার দিকে এগিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখনও তা চড়াই। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “বিশ্বে পণ্যমূল্য কমলেও বাংলাদেশে তা কমছে না। কারণ, ফায়ার ব্রিগেড দেরিতে এসে পানির পরিবর্তে উল্টো তেল ঢালছে এবং পাইপেও সমস্যা ছিল।” দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আনতে সক্ষম হয়েছে। পাকিস্তানে আগস্টে মূল্যস্ফীতি ২০২১ সালের পর প্রথমবারের মতো এক অঙ্কে নেমে এসেছে। তবে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনও চড়া এবং তা নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম কমায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে
দেশটির মূল্যস্ফীতি ৫.২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা: বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান মন্তব্য করেছেন, “এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি। মনে হচ্ছে, আমরা সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছি না। প্রতিবেশী দেশগুলো কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ যথাসময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নতুন সরকারও তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি।” তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। “বর্তমান সরকার যদি গোষ্ঠীস্বার্থ উপেক্ষা করে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করত, তবে পরিস্থিতি বদলাতে পারত। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে,
সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্দেশ্যে, আর অন্যদিকে সরকার কর বাড়িয়ে ফেলছে, যা আরও মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর পক্ষে কাজ করছে। এক মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির অনুমতি দিচ্ছে, আরেক মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা তা আটকে দিচ্ছে,”—এই মন্তব্যে সরকারের সমন্বয়ের অভাব এবং নীতির অদূরদর্শিতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তিনি। অধ্যাপক সেলিম রায়হান ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো আশা রাখছেন না। তিনি বলেন, “চাল ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ছে, আর যদিও সবজির দাম কিছুটা কমেছে, তা দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। বাংলাদেশ এখন দুটি ক্ষতিকর পরিস্থিতির মধ্যে আটকা পড়েছে—নিম্ন প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি। একদিকে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ কমছে, অন্যদিকে ব্যয় বাড়ছে।” বর্তমানে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, শুল্ক ও কর বাড়ানো নিয়ে সমালোচনা করেছেন তিনি, যা মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর আরও একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার: নেতৃত্ব যোগ্য ব্যক্তির হাতে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি যখন মহামারির প্রভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, তখন দেশটি মূল্যস্ফীতির চরম উচ্চতায় পৌঁছেছিল। রিজার্ভ সংকট, জ্বালানি আমদানি না হতে পারায় পেট্রোল পাম্পগুলোতে দীর্ঘ সারি, এবং জনগণের বিক্ষোভ—এই ছিল দেশের পরিস্থিতি। জনগণের অসন্তোষ এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, প্রেসিডেন্টকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। তবে আশ্চর্যজনকভাবে শ্রীলঙ্কা সেই দুর্দশা থেকে বেরিয়ে এসেছে। বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর, দেশের মূল্যস্ফীতির হার শূন্যের নিচে নামিয়ে এবং অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই সফল হয়েছে শ্রীলঙ্কা। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে দেউলিয়া ঘোষণা করেছিল। তবে ২০২৩ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার পর, দেশটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এই রূপকথার মতো পুনরুদ্ধারের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে অর্থনীতির প্রচলিত কঠোর নীতিমালা, যা বিশ্লেষকরা মনে করছেন সংকট মোকাবেলায় অপরিহার্য ছিল। শ্রীলঙ্কার এই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৬৩ বছর বয়সী গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহের। তিনি কয়েক বছর আগে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু সেই সময় তার সতর্কবাণী অবহেলিত হয়। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, নন্দলাল বীরাসিংহে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। তবে গত বছর তাকে ফেরত এনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পদে বসানো হয়। আজকে, নন্দলালের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা তার অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে উঠে এসে মূল্যস্ফীতির হার ৭০ শতাংশ থেকে শূন্যের নিচে নামাতে সক্ষম হয়েছে। তার কঠোর অথচ কার্যকরী পদক্ষেপগুলোই শ্রীলঙ্কাকে পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে নিয়ে এসেছে।
আমদানির মতো কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলে বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি শূন্য বা তার ওপরে উঠতে পারে, যা ৪ শতাংশের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি: একই অবস্থান অন্যদিকে, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৮৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যে তা আরও উদ্বেগজনক—১২.৯২ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩.৮০ শতাংশ। বারবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং গভর্নর আহসান এইচ মনসুর মূল্যস্ফীতি কমানোর কার্যকর কোনো ফলাফল দেখাতে পারেননি। পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপে থাকা পাকিস্তানের পরিস্থিতিও উল্লেখযোগ্য। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৫০ শতাংশে উঠেছিল।
কিন্তু আগস্টে তা নেমে আসে এক অঙ্কে। ডিসেম্বরে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি আরও কমে ৪.১ শতাংশে পৌঁছেছে। বাস্তবতা বাংলাদেশে ভিন্ন শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই মূল্যস্ফীতির হার কমছে। এর বিপরীতে, বাংলাদেশে তা বাড়তেই থাকছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর যখন ২০২২ সালের ১৪ই আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সহনীয় হবে,” তখন আশাবাদী ছিলেন অনেকেই। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং, শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, শুল্ক এবং কর বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে দেশের অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ ধারণা করছেন। সিপিডির উদ্বেগ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক
প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ভ্যাটের হার বৃদ্ধিকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। শনিবার ‘শ্বেতপত্র ও অতঃপর : অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, “রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পরোক্ষভাবে কর বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিয়েছে, যা উদ্বেগজনক।” দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্রবিষয়ক কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ব ব্যাংকের উদ্বেগ বিশ্ব ব্যাংকও বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে ধীরগতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি কমতে থাকবে, তবে মূল্যস্ফীতি থাকবে উচ্চতর। শুক্রবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার
বেশিরভাগ দেশই ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার দিকে এগিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখনও তা চড়াই। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “বিশ্বে পণ্যমূল্য কমলেও বাংলাদেশে তা কমছে না। কারণ, ফায়ার ব্রিগেড দেরিতে এসে পানির পরিবর্তে উল্টো তেল ঢালছে এবং পাইপেও সমস্যা ছিল।” দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আনতে সক্ষম হয়েছে। পাকিস্তানে আগস্টে মূল্যস্ফীতি ২০২১ সালের পর প্রথমবারের মতো এক অঙ্কে নেমে এসেছে। তবে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনও চড়া এবং তা নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম কমায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে
দেশটির মূল্যস্ফীতি ৫.২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা: বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান মন্তব্য করেছেন, “এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি। মনে হচ্ছে, আমরা সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছি না। প্রতিবেশী দেশগুলো কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ যথাসময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নতুন সরকারও তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি।” তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। “বর্তমান সরকার যদি গোষ্ঠীস্বার্থ উপেক্ষা করে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করত, তবে পরিস্থিতি বদলাতে পারত। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে,
সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্দেশ্যে, আর অন্যদিকে সরকার কর বাড়িয়ে ফেলছে, যা আরও মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর পক্ষে কাজ করছে। এক মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির অনুমতি দিচ্ছে, আরেক মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা তা আটকে দিচ্ছে,”—এই মন্তব্যে সরকারের সমন্বয়ের অভাব এবং নীতির অদূরদর্শিতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তিনি। অধ্যাপক সেলিম রায়হান ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো আশা রাখছেন না। তিনি বলেন, “চাল ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ছে, আর যদিও সবজির দাম কিছুটা কমেছে, তা দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। বাংলাদেশ এখন দুটি ক্ষতিকর পরিস্থিতির মধ্যে আটকা পড়েছে—নিম্ন প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি। একদিকে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ কমছে, অন্যদিকে ব্যয় বাড়ছে।” বর্তমানে শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, শুল্ক ও কর বাড়ানো নিয়ে সমালোচনা করেছেন তিনি, যা মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর আরও একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার: নেতৃত্ব যোগ্য ব্যক্তির হাতে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি যখন মহামারির প্রভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, তখন দেশটি মূল্যস্ফীতির চরম উচ্চতায় পৌঁছেছিল। রিজার্ভ সংকট, জ্বালানি আমদানি না হতে পারায় পেট্রোল পাম্পগুলোতে দীর্ঘ সারি, এবং জনগণের বিক্ষোভ—এই ছিল দেশের পরিস্থিতি। জনগণের অসন্তোষ এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, প্রেসিডেন্টকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। তবে আশ্চর্যজনকভাবে শ্রীলঙ্কা সেই দুর্দশা থেকে বেরিয়ে এসেছে। বামপন্থী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর, দেশের মূল্যস্ফীতির হার শূন্যের নিচে নামিয়ে এবং অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই সফল হয়েছে শ্রীলঙ্কা। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে দেউলিয়া ঘোষণা করেছিল। তবে ২০২৩ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার পর, দেশটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এই রূপকথার মতো পুনরুদ্ধারের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে অর্থনীতির প্রচলিত কঠোর নীতিমালা, যা বিশ্লেষকরা মনে করছেন সংকট মোকাবেলায় অপরিহার্য ছিল। শ্রীলঙ্কার এই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৬৩ বছর বয়সী গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহের। তিনি কয়েক বছর আগে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু সেই সময় তার সতর্কবাণী অবহেলিত হয়। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, নন্দলাল বীরাসিংহে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। তবে গত বছর তাকে ফেরত এনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পদে বসানো হয়। আজকে, নন্দলালের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা তার অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে উঠে এসে মূল্যস্ফীতির হার ৭০ শতাংশ থেকে শূন্যের নিচে নামাতে সক্ষম হয়েছে। তার কঠোর অথচ কার্যকরী পদক্ষেপগুলোই শ্রীলঙ্কাকে পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে নিয়ে এসেছে।