
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

প্রথাগত জনশক্তি রপ্তানি নাকি মানবসম্পদ রপ্তানিতে বিপ্লব: কোন পথে বাংলাদেশ?

নির্বাচনহীন দীর্ঘ সময় নয়, সংস্কার ও গণরায় হোক সমান্তরাল

শাস্তি বা পুরস্কারের প্রলোভন ছাড়াই সন্তানকে শাসনে রাখার ৭টি কৌশল

ট্রাম্প যুদ্ধ থামাতে চান কতটা ছাড় দিয়ে?

সর্বজনীন প্রাণের মেলা

তেল নিয়ে তুঘলকি আর কত!

ধানমন্ডি ৩২: বাংলাদেশের জন্মভূমি: আসমা রুপা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, রোহিঙ্গা সংকট: বাংলাদেশ কি একটি মানবিক করিডোর সুবিধা দেবে?

বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশি মিয়ানমার ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বারবার সংঘাতের মুখে পরে বিভিন্ন ধরণের শাসনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। মিয়ানমারের আজকের অস্থিতিশীল এবং ক্রমাগত অবনতিশীল অবস্থা মূলত বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ফসল, যা দেশটির ভিন্ন-ভিন্ন সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন আরও গভীর করে তোলে। সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থান, ছদ্ম-গণতান্ত্রিক নির্বাচন—যেমন শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির বিজয়—এবং তার দলের সহিংস উৎখাত—এসবই একটি অসংহত মিয়ানমারের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে শাসনের পদ্ধতি নিয়ে কোনো ঐকমত্য নেই। এর ফলাফল: বাহিরের শক্তিগুলো মিয়ানমারের জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রকৃত সমস্যা সমাধানে আগ্রহ না দেখিয়ে পরিস্থিতি কাজে
লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। দেশটির যে জাতিগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার, তারা হল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, যারা মূলত রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে। বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যকার উত্তেজনা থেকে সৃষ্ট অমানবিক নির্যাতন এতটাই চরমে পৌঁছায় যে প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়— সাথে নিয়ে আসে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের জন্য এই চ্যালেঞ্জ শুধু আশ্রয় ও সহায়তা প্রদান নয়, বরং এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত নিরাপত্তা হুমকিগুলোর ব্যবস্থাপনাও। যদিও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে নিরলস কাজ করছে, তাদের নিজভূমিতে টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে যখন উত্তেজনা তীব্রতর
হচ্ছে—যার মধ্যে আরাকান আর্মি একটি প্রধান বিদ্রোহী শক্তি—তখন রোহিঙ্গাদের আশাও ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম নীতিগত ভাষণে রোহিঙ্গাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন এবং বলেন সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করবে। কয়েক মাস আগে তিনিই ঘোষণা দেন জাতিসংঘের সঙ্গে যৌথভাবে আগামী ঈদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করার। তবে, এই সংকটের সমাধানে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হয়ে বরং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। প্রত্যাবাসনের পরিবর্তে নতুন করে প্রায় ১,১৩,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে।
এদিকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ২৭১ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত এখন অনিরাপদ ও অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এখন সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে নেই এবং এর ফলে বাংলাদেশকে কার্যত মিয়ানমারের এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত দুটি শব্দ হলো—“মেটিকুলাস” এবং “মানবিক করিডোর”। জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে তথাকথিত “মানবিক করিডোর” নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, যা রাখাইন রাজ্যে আটকে পড়া নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে একটি লজিস্টিক হাব হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার বক্তব্য ও প্রকাশিত প্রতিবেদন
থেকে ধারণা করা যায় যে, দেশের রাজনৈতিক বা নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই, কোনো এক পর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের এই প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, যিনি অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দাবিকে অস্বীকার করেন। অবাক করার মতোভাবে তিনি বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি নিয়মিত সরকারের মতো কাজ করার পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, জরুরি বিষয়গুলোতে, যেমন মানবিক করিডোর, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার আওতায় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এটি বিস্ময়কর মন্তব্য, কারণ এই অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল—স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি
দিয়ে। যদি তারা মনে করে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সিদ্ধান্ত নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নেওয়া যায়, তাহলে সমাজের কোন শ্রেণি তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে নিবৃত্ত করবে? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে চলমান মতবিরোধের মধ্যে আজ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক দরবার সভায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি সংস্কার, গণ-সহিংসতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে মানবিক করিডোর ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এমন কোনো পদক্ষেপে অংশ নেবে না যা জাতীয় নিরাপত্তা বা দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। যেখানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মনে করেন করিডোর সম্পর্কিত পদক্ষেপ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধিকার,
সেখানে সেনাপ্রধান পরিষ্কার করে বলেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্বের বিষয়। টেকনাফে জাতিসংঘকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে কিনা—যে কোনো কারণেই হোক—তা এখন একটি সার্বজনীন বিতর্কের বিষয়। এটি একটি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন, যেখানে ঝুঁকি ও সুফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে হবে। এটি জনগণের সার্বজনীন ঐকমত্যের বিষয়। কোনো সরকার—তা অন্তর্বর্তী হোক বা নির্বাচিত—দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করতে পারে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বহুবার নতুন একটি স্বাধীন রাখাইন রাষ্ট্র, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এবং একটি কাল্পনিক বিমানঘাঁটি নিয়ে জনগণকে সতর্ক করেছেন। তিনি সঠিক ছিলেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার অস্থির কার্যক্রম ও বক্তব্য তার দাবিকে খণ্ডনের পরিবর্তে বরং আরও প্রতিষ্ঠিত করছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী—যারা এই জটিল পরিস্থিতির চূড়ান্ত ভুক্তভোগী—তারা প্রকৃত মানবিক সহায়তা এবং স্থায়ী সমাধান পাওয়ার দাবি রাখে। সেই স্থায়ী সমাধান হলো: নিজভূমিতে প্রত্যাবাসন। বাংলাদেশের ভূমিতে মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরু করার আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কার্যকরভাবে কাজ করা। কেবল তখনই, যখন বাংলাদেশ একটি নিয়মিত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসবে এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হবে, তখন মানবিক করিডোরের সুফল ও ঝুঁকি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। লেখক পরিচিতঃ আনোয়ার সাদাত জিহান, এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার উইচিটা, কানসাস, ইউ.এস.এ।
লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। দেশটির যে জাতিগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার, তারা হল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, যারা মূলত রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে। বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যকার উত্তেজনা থেকে সৃষ্ট অমানবিক নির্যাতন এতটাই চরমে পৌঁছায় যে প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়— সাথে নিয়ে আসে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের জন্য এই চ্যালেঞ্জ শুধু আশ্রয় ও সহায়তা প্রদান নয়, বরং এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত নিরাপত্তা হুমকিগুলোর ব্যবস্থাপনাও। যদিও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে নিরলস কাজ করছে, তাদের নিজভূমিতে টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে যখন উত্তেজনা তীব্রতর
হচ্ছে—যার মধ্যে আরাকান আর্মি একটি প্রধান বিদ্রোহী শক্তি—তখন রোহিঙ্গাদের আশাও ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম নীতিগত ভাষণে রোহিঙ্গাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন এবং বলেন সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করবে। কয়েক মাস আগে তিনিই ঘোষণা দেন জাতিসংঘের সঙ্গে যৌথভাবে আগামী ঈদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করার। তবে, এই সংকটের সমাধানে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হয়ে বরং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। প্রত্যাবাসনের পরিবর্তে নতুন করে প্রায় ১,১৩,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে।
এদিকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ২৭১ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত এখন অনিরাপদ ও অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এখন সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে নেই এবং এর ফলে বাংলাদেশকে কার্যত মিয়ানমারের এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত দুটি শব্দ হলো—“মেটিকুলাস” এবং “মানবিক করিডোর”। জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে তথাকথিত “মানবিক করিডোর” নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, যা রাখাইন রাজ্যে আটকে পড়া নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে একটি লজিস্টিক হাব হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার বক্তব্য ও প্রকাশিত প্রতিবেদন
থেকে ধারণা করা যায় যে, দেশের রাজনৈতিক বা নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই, কোনো এক পর্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের এই প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, যিনি অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দাবিকে অস্বীকার করেন। অবাক করার মতোভাবে তিনি বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি নিয়মিত সরকারের মতো কাজ করার পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, জরুরি বিষয়গুলোতে, যেমন মানবিক করিডোর, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার আওতায় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এটি বিস্ময়কর মন্তব্য, কারণ এই অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল—স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি
দিয়ে। যদি তারা মনে করে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সিদ্ধান্ত নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নেওয়া যায়, তাহলে সমাজের কোন শ্রেণি তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে নিবৃত্ত করবে? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে চলমান মতবিরোধের মধ্যে আজ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক দরবার সভায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি সংস্কার, গণ-সহিংসতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে মানবিক করিডোর ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এমন কোনো পদক্ষেপে অংশ নেবে না যা জাতীয় নিরাপত্তা বা দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। যেখানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মনে করেন করিডোর সম্পর্কিত পদক্ষেপ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধিকার,
সেখানে সেনাপ্রধান পরিষ্কার করে বলেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্বের বিষয়। টেকনাফে জাতিসংঘকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে কিনা—যে কোনো কারণেই হোক—তা এখন একটি সার্বজনীন বিতর্কের বিষয়। এটি একটি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন, যেখানে ঝুঁকি ও সুফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে হবে। এটি জনগণের সার্বজনীন ঐকমত্যের বিষয়। কোনো সরকার—তা অন্তর্বর্তী হোক বা নির্বাচিত—দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করতে পারে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বহুবার নতুন একটি স্বাধীন রাখাইন রাষ্ট্র, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এবং একটি কাল্পনিক বিমানঘাঁটি নিয়ে জনগণকে সতর্ক করেছেন। তিনি সঠিক ছিলেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার অস্থির কার্যক্রম ও বক্তব্য তার দাবিকে খণ্ডনের পরিবর্তে বরং আরও প্রতিষ্ঠিত করছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী—যারা এই জটিল পরিস্থিতির চূড়ান্ত ভুক্তভোগী—তারা প্রকৃত মানবিক সহায়তা এবং স্থায়ী সমাধান পাওয়ার দাবি রাখে। সেই স্থায়ী সমাধান হলো: নিজভূমিতে প্রত্যাবাসন। বাংলাদেশের ভূমিতে মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরু করার আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কার্যকরভাবে কাজ করা। কেবল তখনই, যখন বাংলাদেশ একটি নিয়মিত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসবে এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হবে, তখন মানবিক করিডোরের সুফল ও ঝুঁকি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। লেখক পরিচিতঃ আনোয়ার সাদাত জিহান, এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার উইচিটা, কানসাস, ইউ.এস.এ।