মাটি না ফেলেই ২৪ কোটি টাকা বিল তোলার আয়োজন – ইউ এস বাংলা নিউজ




মাটি না ফেলেই ২৪ কোটি টাকা বিল তোলার আয়োজন

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ | ৯:২৩ 8 ভিউ
সুনামগঞ্জে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের পাশে বা ক্লোজারের ভাটিতে গর্ত ভরাটের মেয়াদ আর এক মাস বাকি থাকলেও কাজ হয়নি সিকি ভাগও। ঠিকাদার ও পাউবো কর্তৃপক্ষের দাবি করা অগ্রগতি প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবায়নের কোনো মিল নেই। স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক দিন পর পানি এলে কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন বাড়িয়ে প্রকল্পের প্রায় ২৪ কোটি টাকার বেশির ভাগই লুটপাটের আয়োজন করছেন সংশ্লিষ্টরা। হাওরপারের একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে মোটেও হাওরের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমাও শেষ প্রায়। গত জানুয়ারিতে নেওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল আগামী মাস পর্যন্ত। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত বৃহস্পতিবার একাধিক হাওরে সরেজমিন সে বাস্তবতাই চোখে পড়েছে। জামালগঞ্জের হালি, শনি ও

মহালিয়া হাওরের প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাওরের বাঁধের পাশের গর্ত (ডিচ ফিলিং) সারতে এই উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে পাউবো ও ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ ২০ ভাগও হয়নি। কিছু কিছু গর্তে সামান্য বালু ফেলা হয়েছে। আবার বেশির ভাগ গর্ত আগে যে রকম ছিল, এখনও সে রকমই আছে। প্রায় দেড় বছর মেয়াদের এ প্রকল্পে সময়ক্ষেপণ ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রাক্কলন তৈরির আগে ও পরে পাউবো এ নিয়ে কৃষকের পরামর্শ নেয়নি। টেকসই বাঁধ, জীববৈচিত্র্য ও গোচারণ ভূমি রক্ষাসহ হাওরের নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বাস্তব

চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। গর্তে বিট বালু না ফেলে অনেকটা চুপিসারে এ কাজের ইতি টানতে চাইছে কর্তৃপক্ষ। হাওরের কৃষি ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, এসব প্রকল্প দেওয়া হয় মূলত লুটপাটের জন্য। হাওরে গর্ত ভরাটের যে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় লোকজন তার কিছুই জানে না। বর্ষায় পানি এলে এমনিতেই পলি পড়ে কিছু গর্ত ভরাট হবে, পরে দেখানো হবে অগ্রগতি প্রতিবেদনে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জরুরি বন্যা পুনর্নির্মাণ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় জেলার ১০টি উপজেলায় চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে প্রায় ২৪ কোটি টাকার মাটি ভরাটের কাজ করানো হচ্ছে। এ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ঢাকার এসএস বিল্ডার্স– যাদের

কাজ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার, টাঙ্গাইলের গুডম্যান এন্টারপ্রাইজের কাজ ছয় কোটি ৯২ লাখ টাকার, ঢাকার শাহ ড্রেজারের কাজ প্রায় তিন কোটি টাকার এবং নেত্রকোনার অসীম সিংহ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাত কোটি ৪৮ লাখ টাকার। নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বিট বালু দিয়ে হাওরের পুরোনো গর্ত ভরাটের কথা উল্লেখ আছে অগ্রগতি প্রতিবেদনে। পাউবোর দায়িত্বশীলরা জানান, এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত মোট বিলের ১৫ থেকে ২০ ভাগ অর্থছাড় হয়েছে। সবকিছু মিলে কাগজপত্রে কাজের অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে জামালগঞ্জে। কিন্তু এ উপজেলার হালি, শনি ও মহালিয়া হাওরের সরেজমিন চিত্র বলছে, সেখানে ২০ ভাগের বেশি কাজ হয়নি। স্থানীয় কৃষক ও হাওর-সচেতন মানুষও পাউবোর এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ জানিয়েছেন। বেহেলী

ইউনিয়নের আছানপুর গ্রামের কৃষক ও ইউপি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউছুফ মিয়া বলেন, হালি হাওরের হেরাকান্দি অংশে সামান্য মাটি ফেলা হয়েছে। কোনো গর্তই পুরোপুরি ভরাট করা হয়নি। এতে যারা কাজ করেছে তারাই লাভবান হবে। মহালিয়া হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সিরাজুল হক তালুকদার বলেন, যে কাজ হয়েছে তাতে হাওরের কোনো কাজে আসবে না। যে সময় ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে, তখন জিজ্ঞেস করলে তারা জানিয়েছে, হাওরের গর্ত সম্পূর্ণ ভরাট করা হবে। কিন্তু কাজ না করেই তারা সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। বেহেলী ইউপি সদস্য ও মদনাকান্দি গ্রামের কৃষক দেবাশীষ তালুকদার বলেন, ড্রেজিংয়ের পাইপ দিয়ে শুধু পানিই এসেছে, বালু আসেনি। বালু না এলে তো গর্ত ভরাট হবে

না। শুধু লোক দেখানো কাজ হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আক্‌কাছ মুরাদ বলেন, গর্ত ভরাটে কোটি টাকার প্রকল্প হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়েছে লাখ টাকার। দিনের পর দিন এভাবে আমাদের বোকা বানিয়ে ফায়দা লুটছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কোটি কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের বিপরীতে হাওরের কোনো উপকারই হচ্ছে না। গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ ও অসীম সিংহের কাজের দেখভালকারী (সাব-ঠিকাদার) ভজন তালুকদার বলেন, কাজ করতে গিয়ে নানাভাবে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। আবার কোথাও গিয়ে গর্ত ভরাট করতে নদীর তলদেশ থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি তোলার সময় নদীর ইজারাদার বাধা দিয়েছেন। মাটি তুললে মাছের ক্ষতি হবে জানিয়ে মাটি তুলতে দেয়নি। তিনি দাবি করেন, তাঁর দুটি

প্রতিষ্ঠানের ৩২ থেকে ৬২ শতাংশ কাজ হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে। শাহ্‌ ড্রেজিংয়ের জিএম আবুল কালাম বলেন, আমরা অনিয়মের চিন্তা করছি না, কাজ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বাধার কারণে ড্রেজার ও পাইপ এক জায়গায় বসিয়ে, কাজ না করেই আরেক জায়গায় নিতে হচ্ছে। এসএস বিল্ডার্সের সাইট ইঞ্জিনিয়ার নয়ন মিয়া বলেন, ১৮টি পয়েন্টের মধ্যে ছয়টি পয়েন্টে কাজ করেছি। মোট কাজের ৫০ ভাগের মতো শেষ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, অনেক গর্তই ভরাট হয়েছে। বাকিগুলো করা হবে। পানি এলেও হাওরের এসব গর্তে মাটি ভরাট করা যাবে। হাওরে বিল-বাদাড় আছে, বলা হচ্ছে মাছ মারা যাবে। কৃষকরা বলছেন জমির ফসল নষ্ট হবে। সে কারণে কাজ করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ধানমন্ডি থেকে সাবেক এমপি জাফর আলম গ্রেফতার লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনে হামলা, যা বললেন শাহবাজ ২ উপদেষ্টার সহকারীদের দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু এসআই নিয়োগের ফল প্রকাশ, সুপারিশকৃতদের রোল নম্বর দেওয়া হলো প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশকৃত রাজনৈতিক মামলার তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত ‘বহুমুখী বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ’ উদ্বোধন করে কিমের হুঁশিয়ারি এস আলমের হাজার কোটি টাকার জমি জব্দের আদেশ রাতেই ইংল্যান্ডে উড়াল দেবেন তাসকিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ পদে চাকরি ধানমন্ডি থেকে সাবেক এমপি জাফর আলম গ্রেফতার নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় জামায়াত আইন উপদেষ্টার বাসভবনে পড়ে থাকা ‘ড্রোন’ নিয়ে যা জানা গেল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে কী নিয়ে বৈঠক হলো ইসলামী আন্দোলনের বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্ষতিপূরণ দাবি আমির খসরুর শফিক রেহমানের খালাসে ‘আপত্তি নেই’ রাষ্ট্রপক্ষের ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ২৫, আহত ৮০০ আইপিএলের মাঝেই ভারত ছাড়লেন হায়দরাবাদের ক্রিকেটাররা ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্সকে স্নাতক সমমানের দাবিতে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ বেসরকারি ব্যাংকে সহকারী রিলেশনশিপ অফিসার পদে চাকরির সুযোগ দেশের ক্রিকেটের নতুন ‘ব্যাডবয়’ হৃদয়ের কাণ্ডে অতিষ্ঠ ক্রিকেটপ্রেমীরা