ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কেন সচরাচর ভুল হয় – ইউ এস বাংলা নিউজ




ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কেন সচরাচর ভুল হয়

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩০ মার্চ, ২০২৫ | ৮:৩৪ 12 ভিউ
নিজেকে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দানকারী হিসেবে পরিচয় দেন ব্রেন্ট দিমিত্রাক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার হাজারো অনুসারী। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দিমিত্রাক তার অনুসারীদের বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমের ছোট্ট উপকূলীয় শহর ইউরেকার দক্ষিণাংশে শিগগিরই ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। এর মাস দুয়েক পর ৭ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানে। সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। অনলাইনে দিমিত্রাকের অনুসারী হু হু করে বাড়তে থাকে। সবাই তাকে পরের ভূমিকম্প নিয়ে পূর্বাভাস দিতে বলেন। খ্রিষ্ট্রীয় নববর্ষের সময় দিমিত্রাক বলেন, ভূমিকম্প কোথায় ঘটবে, সেটা আগেভাগে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য প্রগাঢ় দক্ষতার প্রয়োজন হয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস মোটামুটি নিখুঁতভাবে দেওয়া গেলেও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে দেওয়া কঠিন। ভূমিকম্পসংক্রান্ত গবেষকেরা বলেন, তবে একটি সমস্যা

আছে, তা হলো ভূমিকম্প কখন, কোথায় ঘটবে, সেটা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। আর এ অনিশ্চয়তা তাদের বেশ অস্থির করে তোলে। উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষ ভয় পান, যেকোনো মুহূর্তে ‘বড় কিছু’ আঘাত হানতে পারে। এটা ভূপ্রকৃতি ও অগণিত মানুষের জীবনে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থায় (ইউএসজিএস) তিন দশকের বেশি সময় ধরে ভূকম্পনবিদ হিসেবে কাজ করেছেন লুসি জোনস। ‘দ্য বিগ ওয়ানস’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। লুসির গবেষণার বেশির ভাগজুড়ে রয়েছে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস এবং এমন বিপর্যয় সামলে ওঠার কর্মপন্থা উন্নত করার প্রক্রিয়া। লুসি বলেন, তিনি যত দিন ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করছেন, দেখেছেন, মানুষ মূলত ওই

‘বড় কিছু’ কবে ঘটবে, সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইছেন। যদিও আগেভাগে সেটা বলে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। ইউএসজিএসের হিসাবে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে লাখখানেক ভূকম্পন অনুভূত হয়। আর এটাও বোধগম্য যে মানুষ আগে থেকেই সতর্ক থাকতে চায়। আগাম সতর্কতা চায়। ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকা এলাকাটি উপকূলীয় শহর। সানফ্রান্সিসকো থেকে ২৭০ মাইল বা প্রায় ৪৩৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ডিসেম্বরের ওই ভূমিকম্পের পাশাপাশি ওই এলাকায় বছরে সাত শতাধিক ভূকম্পন অনুভূত হয়। গত সপ্তাহে সেখানে ১০টির বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, যেই এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে বলে ব্রেন্ট দিমিত্রাক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ‘ভূমিকম্পপ্রবণ’ এলাকাগুলোর একটি। এই এলাকার অবস্থান তিনটি টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলে, যা ‘মেন্ডোসিনো ট্রিপল জংশন’ নামে

পরিচিত। এই তিনটি প্লেটের নড়াচড়া ভূঅভ্যন্তরে ভীষণ চাপ তৈরি করে। আর যখন চাপমুক্ত হয়, তখন ভূমিকম্প হতে পারে। তাই ওই এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে, এমনটা বলা কঠিন কিছু নয়। তবে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প বেশ বিরল ঘটনা বলে মন্তব্য করেন লুসি জোনস। ইউএসজিএস বলছে, ১৯০০ সালের পর থেকে পুরো অঞ্চলে ১১টি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। দিমিত্রাকের পূর্বাভাস দেওয়া ভূমিকম্পটিসহ পাঁচটি ওই এলাকায় হয়েছে। যদিও দিমিত্রাকের পূর্বাভাস সঠিক হয়েছিল। তবে লুসি জোনস বলছেন, বড় ধরনের বা প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের বিষয়ে আগে থেকে নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। কেননা, ভূমিকম্পের নির্দেশক ভূতাত্ত্বিক কারণগুলো বেশ জটিল ও গতিশীল। লুসি জোনস বলছিলেন, তিন দশকের চাকরিজীবনে তিনি হাজারো মানুষকে বড় ভূমিকম্পের

বিষয়ে আগেভাগে সতর্ক করে দিয়েছেন। এর মধ্যে নব্বইয়ের দশকের মানুষেরাও আছেন। ওই সময় তারা আগাম সতর্কতা জানার জন্য জোনসের দপ্তরে ফ্যাক্স করে জানতে চাইতেন। প্রতি সপ্তাহে যখন আপনি পূর্বাভাস পেতে থাকবেন, কেউ না কেউ সেটা থেকে লাভবান হবেন—মন্তব্য করেন লুসি। তার মতে, ব্রেন্ট দিমিত্রাকের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। কেননা, তার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট নেই। দীর্ঘদিন ধরে দিমিত্রাক বলে আসছেন, একটি অবিশ্বাস্য রকমের বড় ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম আলাস্কা, জাপান কিংবা নিউজিল্যান্ডের উপকূলের দ্বীপগুলোয় আঘাত হানতে পারে। এর মাত্রা এতটাই শক্তিশালী যে তার মতে এতে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যাহত হতে পারে। ইউএসজিএস বলছে, যেকোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সঠিক হওয়ার জন্য তিনটি নির্দিষ্ট উপাদান থাকা অত্যাবশ্যক। তা হলো—ভূমিকম্পের সম্ভাব্য

তারিখ ও সময়, এর উৎপত্তিস্থল এবং মাত্রা। কিন্তু দিমিত্রাকের পূর্বাভাসের সময়সীমা বারবার পরিবর্তন হয়। একপর্যায়ে তিনি বলেনছেন, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথের ঠিক আগে বা পরে ঘটতে পারে। পরবর্তী সময়ে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই ২০৩০ সালের আগে ঘটবে। যদিও সেই বড় ভূমিকম্প এখনো আঘাত হানেনি। তবে দিমিত্রাক এখনো বিশ্বাস করেন, এটা আঘাত হানবেই। অনিশ্চয়তার মধ্যেও যেভাবে প্রস্তুতি ভূমিকম্পের নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় না মানে এটা নয় যে আপনাকে পুরোপুরি অপ্রস্তুত থাকতে হবে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষ ভূমিকম্প মোকাবিলায় বড় পরিসরের মহড়ায় অংশ নেন। নাম ‘দ্য গ্রেট শেক আউট’। ভূমিকম্প নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহড়া বলা হয়

একে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ভূমিকম্প কেন্দ্রের একটি দল মহড়া আয়োজনে সম্পৃক্ত। এ দলে লুসি নিজেও আছেন। মহড়ায় অংশগ্রহণকারীরা হাঁটু গেড়ে বসে, ডেস্কের মতো শক্ত কোনো কিছুর নিচে লুকিয়ে থাকে এবং এক মিনিট ধরে সেখানে থেকে ভূমিকম্প মোকাবিলার সহজ কৌশলগুলো অনুশীলন করেন। ঘরের বাইরে থাকা মানুষের গাছ, ভবন বা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে খোলা জায়গায় অবস্থান নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সমুদ্রের কাছের এলাকার মানুষেরা সুনামির আশঙ্কা থেকে কম্পন থামার পরপরই উঁচু ভূমিতে পালিয়ে যাওয়ার অনুশীলন করেন। ওয়াশিংটনের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরিকবিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ব্রায়ান টারবুশ বলেন, যদিও এখন ভূমি কাঁপছে না, চরম চাপের পরিস্থিতিও নয়; তবু অনুশীলনের জন্য এটা সেরা সময়। মহড়ার বাইরেও পশ্চিম উপকূলের অঙ্গরাজ্যগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ফোনে সতর্ক করে দেওয়ার একটি ব্যবস্থা চালু রেখেছে ইউএসজিএস। এর নাম শেকঅ্যালার্ট। তথ্যসূত্র: বিবিসি

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ঈদের দ্বিতীয় দিনও গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৩৪ ঝড়বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে গাজায় রেড ক্রিসেন্টের ৮ সদস্যসহ ১৫ সহায়তাকর্মীকে হত্যা ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ ঈদগাহে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান: আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাকিস্তানের বালোচিস্তান বিশ্ববাজারে সোনার দামে রেকর্ড ‘দেবী মা সর্বদা সঙ্গে আছেন’ নতুন বাংলাদেশে সুযোগ দেখছে ইসলামি উগ্রপন্থীরা মহাকাশ থেকে ফিরে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন সুনীতা ও বুচ বেপরোয়া দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারাল চার যুবক মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২৭১৯, নেই খাবার- আশ্রয় সুনামগঞ্জে ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৪০ মেসির দেহরক্ষীর মাঠে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি নীলফামারীতে বিএনপির দু’গ্রপের কর্মসূচি ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি এপ্রিলে তাপপ্রবাহ, নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ঘরে ঢুকে ধর্ষণের অভিযোগ, ইউএনও অফিসের গাড়িচালকসহ গ্রেপ্তার ৪ গাজা পরিস্থিতিতে জড়িত ‘সব পক্ষ’কে যুদ্ধবিষয়ক আইন মানতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র গণপিটুনিতে দুই ভাই নিহত, আহত মা-বাবা দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠাল বাংলাদেশ