
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

শেখ হাসিনার সরকার হটাতে মার্কিন নীলনকশার গোপন নথি ফাঁস

লামিয়া কি তবে ডি-ফ্যাক্টো প্রধান উপদেষ্টা?

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসানের বিদায়: কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের কল্পলোকের রুপকারের প্রস্থান

জুলাই সনদেও রক্ষাকবচ নিশ্চিত হচ্ছে না, তাই সনদের আগেই গণভোটের গ্যারান্টি চায় এনসিপি

জুলাই সনদে সই করবে না গণফোরাম ছাড়াও বামপন্থি ৪ দল

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্য ফেরত নেওয়ার নির্দেশ: অর্থায়ন সংকটের ফলে বড় ধাক্কা

ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় দখল শিক্ষকদের, বন্ধ রাজধানীর প্রধান সড়ক
বারবার সংবিধান লঙ্ঘন এবং সংবিধান পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অপরাধে অপরাধী অন্তবর্তী সরকার

বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে শপথ গ্রহণ করেছে। তারা কোন ভাবেই সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারে না। অথচ দিনের পর দিন তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের যেসকল ধারা লঙ্ঘন করেছে তার একটি চিত্র লক্ষ্য করুন।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(ক), ৭(খ), ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪৩, ৪৪, ৪৮(৫), ৬২(১)(ঘ), ৯৩(১)(ক)(খ), ১০৬, লঙ্ঘন করেছে।
অনুচ্ছেদ ৪(ক):
সংবিধানের প্রথম ভাগের অনুচ্ছেদ ৪ক-তে বলা আছে, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারী ও আধা-সরকারী অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারী
ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।” কিন্তু, এটি তারা লংঘন করেছে। তারা বলতে পারে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তারা জাতির পিতা মানেন না, কারণ তিনি শেখ হাসিনার পিতা, তাহলে প্রশ্ন আসে, তারা এই সংবিধানের আলোকে শপথ নিলেন কেনো? আপনি অমুকের পুত্র অমুকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলাম বলে তিনবার কবুল বলবেন, তারপরে বলবেন তাঁকে স্বামী মানেন না, এটা তো প্রতারণা, ব্যভিচারিণীর কাজ। আপনি কবুল বলার আগেই বিষয়টি ভাববেন। অনুচ্ছেদ ৭(খ): তাতে বলা আছে, সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য, তারই ধারাবাহিকতায় যেকোন মৌলিক আইন সংসদ ছাড়া করতে পারবেন না। যেমন, পেনাল কোডের আইন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন,
১৯৭৩, এগুলোর সংশোধনী বা সংযোজন সংসদের মাধ্যমে করতে হবে, অধ্যাদেশ দিয়ে সংবিধানের এবং সংবিধানের বাইরের কোন মৌলিক আইনের সংশোধনী আনতে পারবেন না। কিন্তু অন্তবর্তী সরকার অধ্যাদেশ দিয়ে বহু আইন জারী করেছে, যেগুলো সংবিধানের গতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। অনুচ্ছেদ ২৩। জাতীয় সংস্কৃতি রক্ষণের কথা বলা আছে। কিন্তু অন্তবর্তী সরকার বাঙালির সকল জাতীয় সংস্কৃতি নষ্ট করেছে। অনুচ্ছেদ ২৪। জাতীয় স্মৃতি নিদর্শন প্রভৃতি, জাতীয় স্মৃতি সংরক্ষণের কথা বলা আছে। কিন্তু, অন্তবর্তী সরকার জাতীয় স্মৃতি অস্বীকার করছে। ২৬শে মার্চ কুচকাওয়াজ পালন বন্ধ করেছে। সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব বলে, এসব মুডে তারা নাই! অনুচ্ছেদ ২৬। মৌলিক অধিকারের সহিত অসমঞ্জস আইন বাতিল হবে মর্মে বলা আছে, অর্থাৎ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোন আইন করা যাবে
না। অন্তবর্তী সরকার কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনীগুলি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। অনুচ্ছেদ ২৭। তাতে বলা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে সমতা; সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী। কিন্তু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (তৃতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে সর্বশেষ সংশোধনীর ২০ সি ধারায় যা বলা হয়েছে, তার সম্পূর্ণটাই সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। অনুচ্ছেদ ৩১। আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার। দেশের সকল নাগরিক আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী হবেন, অথচ দেশের বহু মানুষ আজ সেই অধিকার পাচ্ছে না। অনুচ্ছেদ ৩২। আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না। অথচ রাষ্ট্রীয় মদদে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষের জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ভুলন্ঠিত, সরকারের পক্ষ থেকে
মব সন্ত্রাসীদের প্রেসার গ্রুপ বলা হচ্ছে। প্রেসার গ্রুপের কার্যক্রমও অত্র অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। অনুচ্ছেদ ৩৩। অত্র অনুচ্ছেদের দফা-১-এ বলা আছে, গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এর লংঘন হচ্ছে। অনুচ্ছেদ ৩৬। চলাফেরার স্বাধীনতা, ৩৭। সমাবেশের স্বাধীনতা, ৩৮। সংগঠনের স্বাধীনতা, ৩৯। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্- স্বাধীনতা, ৪০। পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা, ৪১। ধর্মীয় স্বাধীনতা, ৪৩। গৃহ ও যোগাযোগ রক্ষণ, ৪৪। মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ, উল্লিখিত অনুচ্ছেদ সমূহে বিধৃত জনগোষ্ঠীর এমন প্রত্যেকটি সাংবিধানিক অধিকারে অন্তরায় সৃষ্টি
করেছে অন্তবর্তী সরকার। অনুচ্ছেদ ৪৮(৫)। বলা আছে, “প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রীয় নীতি সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখিবেন। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদে স্থলাভিষিক্ত আছেন, আপনারা কেউ শুনেছেন যে কোন একটি বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছেন। চৌদ্দ মাসে চৌদ্দটি বিদেশ সফর করেছেন, কোন সফর থেকে ফিরে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে গিয়েছেন বঙ্গভবনে? প্রধান উপদেষ্টা নিজে সজ্ঞানে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের দফা-৫ লংঘন করে চলেছেন, অথচ তিনি সংবিধান মেনে চলার শপথ নিয়েছেন। অনুচ্ছেদ ৬২(১)। তাতে বলা হয়েছে, সংসদ আইনের দ্বারা নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রণ করিবেনঃ (ক) বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহ ও উক্ত কর্মবিভাগসমূহের সংরক্ষিত অংশসমূহ গঠন রক্ষণাবেক্ষণ; (খ) উক্ত কর্মবিভাগসমূহে কমিশন মন্জুরী; (গ) প্রতিরক্ষা- বাহিনী সমূহের প্রধানদের নিয়োগদান ও তাহাদের বেতন
ও ভাতা-নির্ধারণ; (ঘ) উক্ত কর্মবিভাগসমূহ ও সংরক্ষিত অংশসমূহ-সংক্রান্ত শৃঙ্খলামূলক ও অন্যান্য বিষয়। দফা-২। সংসদ আইনের দ্বারা এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় বর্ণিত বিষয় সমূহের জন্য বিধান না করা পর্যন্ত অনুরূপ যে সকল বিষয় প্রচলিত আইনের অধীন নহে, রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা সেই সকল বিষয়ের জন্য বিধান করিতে পারিবেন। দেখুন, প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য দফা (১) এর অধীন কোন আইন করা হয়নি, এমনটি নয়, অতএব দফা (২) প্রয়োগের কোন অবস্থান দৃশ্যমান নাই। দফা-১(ঘ)-তে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার কথাটি বলা আছে, অর্থাৎ সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার জন্য কোন আইন সংসদ দ্বারা হতে হবে, যা বিদ্যমান আছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ সংশোধনকল্পে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করা সংবিধানের অত্র অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অনুচ্ছেদ ৯৩। অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনকল্পে অধ্যাদেশ জারী করণে সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের দোহাই দেয়া হয়েছে! সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে কি বলা হয়েছে? তাতে বলা হয়েছে, “[সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত] কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারী করিতে পারিবেন এবং জারী হইবার সময় হইতে অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন হইবে; অতএব জারীকৃত অধ্যাদেশের আইনী ভিত্তি সঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা যেটি হয়েছে, ওরা ৯৩(১) অনুচ্ছেদের পুরোটা দেখেনি। একই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন কোন অধ্যাদেশে এমন কোন বিধান করা হইবে না, (ক) যাহা এই সংবিধানের অধীন সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না; (খ) যাহাতে এই সংবিধানের কোন বিধান পরিবর্তিত বা রহিত হইয়া যায়; অথবা (গ) যাহার দ্বারা পূর্বে প্রণীত কোন অধ্যাদেশের যে কোন বিধানকে অব্যাহতভাবে বলবৎ করা যায়। অন্তবর্তী সরকারের জারিকৃত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ সংশোধন অধ্যাদেশসমূহ দ্বারা সংবিধানের ৯৩(১) এর (ক) ও (খ) লংঘিত হয়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় সংশোধনীর অধ্যাদেশ দিয়ে আইনে সংযুক্ত ২০(সি) ধারা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। যাহা করণে ৯৩(১)(খ) অনুচ্ছেদে শর্ত দিয়ে নিষেধ করা হয়েছে। ২০ (সি) ধারা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হলে সেটি সংবিধান সম্মত হবে না, সংবিধান পরিপন্থী হবে। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৬২(১)(ঘ) ধারা লঙ্ঘন হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১০৬। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “যদি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রীম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপীল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানীর পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।” অন্তর্বর্তী সরকার শপথ প্রসঙ্গে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের দোহাই দেয়া হয়েছে। অথচ, ১০৬ অনুচ্ছেদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রপতির পাঠানো রেফারেন্সটি উপযুক্ত শুনানীর পর আপীল বিভাগ স্বীয় মতামত দিবে। কিন্তু, রাষ্ট্রপতির পাঠানো প্রশ্নটি আদালতে উপস্থাপিতই হয়নি, উপযুক্ত শুনানীর প্রসঙ্গ তো কল্পনাতীত। কিন্তু, আমরা তর্কের খাতিরে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় দেশের স্বার্থে সরকারের চলমান থাকাটা যদি সমর্থনও করি, তবে শপথ লঙ্ঘন মেনে নিতে পারি না, সংবিধান সুরক্ষা করে চলবে মর্মে সরকার শপথ নিয়েছে। শপথের পর বিগত চৌদ্দ মাস যাবৎ অব্যাহতভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে, সেটিকে মেনে নেয়া যায় না। দেশে মব সন্ত্রাসের অতীষ্ট জনগণ, অভাব-অনটনে দিশেহারা জনগোষ্ঠী, চৌদ্দ মাসে চৌদ্দ লক্ষ বেকার হওয়া মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বাঙালি চেতনায় বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে মনেপ্রাণেই চাচ্ছিলো, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী কিছু একটা করুক। কিন্তু, সেনাপ্রধান নিজে ক্ষমতালোভী মানুষ নহেন, তিনি সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদকে ভয় পান। ৭(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংবিধান বাতিল করণ, স্থগিত করণ, ইত্যাদি অপরাধ; ঐ একটি ধারা ভঙ্গ করতে চাচ্ছেন না বলেই সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানের অপর ২০টি ধারা লঙ্ঘনের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে দুর্দশাগ্রস্ত বাঙালির পাশে বিশ্ব নেতৃত্ব দাঁড়াতে পারেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সংবিধান পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য কঠোর বার্তা প্রদান অতীব জরুরী। বিবেক ন্যায়ের কথা বলে, বিবেকবান মানুষকে জেগে উঠতে হবে। গোলাম হোসেন আইনজীবী অক্টোবর ১৩, ২০২৫।
ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।” কিন্তু, এটি তারা লংঘন করেছে। তারা বলতে পারে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তারা জাতির পিতা মানেন না, কারণ তিনি শেখ হাসিনার পিতা, তাহলে প্রশ্ন আসে, তারা এই সংবিধানের আলোকে শপথ নিলেন কেনো? আপনি অমুকের পুত্র অমুকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলাম বলে তিনবার কবুল বলবেন, তারপরে বলবেন তাঁকে স্বামী মানেন না, এটা তো প্রতারণা, ব্যভিচারিণীর কাজ। আপনি কবুল বলার আগেই বিষয়টি ভাববেন। অনুচ্ছেদ ৭(খ): তাতে বলা আছে, সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য, তারই ধারাবাহিকতায় যেকোন মৌলিক আইন সংসদ ছাড়া করতে পারবেন না। যেমন, পেনাল কোডের আইন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন,
১৯৭৩, এগুলোর সংশোধনী বা সংযোজন সংসদের মাধ্যমে করতে হবে, অধ্যাদেশ দিয়ে সংবিধানের এবং সংবিধানের বাইরের কোন মৌলিক আইনের সংশোধনী আনতে পারবেন না। কিন্তু অন্তবর্তী সরকার অধ্যাদেশ দিয়ে বহু আইন জারী করেছে, যেগুলো সংবিধানের গতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। অনুচ্ছেদ ২৩। জাতীয় সংস্কৃতি রক্ষণের কথা বলা আছে। কিন্তু অন্তবর্তী সরকার বাঙালির সকল জাতীয় সংস্কৃতি নষ্ট করেছে। অনুচ্ছেদ ২৪। জাতীয় স্মৃতি নিদর্শন প্রভৃতি, জাতীয় স্মৃতি সংরক্ষণের কথা বলা আছে। কিন্তু, অন্তবর্তী সরকার জাতীয় স্মৃতি অস্বীকার করছে। ২৬শে মার্চ কুচকাওয়াজ পালন বন্ধ করেছে। সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব বলে, এসব মুডে তারা নাই! অনুচ্ছেদ ২৬। মৌলিক অধিকারের সহিত অসমঞ্জস আইন বাতিল হবে মর্মে বলা আছে, অর্থাৎ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোন আইন করা যাবে
না। অন্তবর্তী সরকার কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনীগুলি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। অনুচ্ছেদ ২৭। তাতে বলা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে সমতা; সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী। কিন্তু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (তৃতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে সর্বশেষ সংশোধনীর ২০ সি ধারায় যা বলা হয়েছে, তার সম্পূর্ণটাই সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। অনুচ্ছেদ ৩১। আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার। দেশের সকল নাগরিক আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী হবেন, অথচ দেশের বহু মানুষ আজ সেই অধিকার পাচ্ছে না। অনুচ্ছেদ ৩২। আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না। অথচ রাষ্ট্রীয় মদদে মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষের জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ভুলন্ঠিত, সরকারের পক্ষ থেকে
মব সন্ত্রাসীদের প্রেসার গ্রুপ বলা হচ্ছে। প্রেসার গ্রুপের কার্যক্রমও অত্র অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। অনুচ্ছেদ ৩৩। অত্র অনুচ্ছেদের দফা-১-এ বলা আছে, গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এর লংঘন হচ্ছে। অনুচ্ছেদ ৩৬। চলাফেরার স্বাধীনতা, ৩৭। সমাবেশের স্বাধীনতা, ৩৮। সংগঠনের স্বাধীনতা, ৩৯। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্- স্বাধীনতা, ৪০। পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা, ৪১। ধর্মীয় স্বাধীনতা, ৪৩। গৃহ ও যোগাযোগ রক্ষণ, ৪৪। মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ, উল্লিখিত অনুচ্ছেদ সমূহে বিধৃত জনগোষ্ঠীর এমন প্রত্যেকটি সাংবিধানিক অধিকারে অন্তরায় সৃষ্টি
করেছে অন্তবর্তী সরকার। অনুচ্ছেদ ৪৮(৫)। বলা আছে, “প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রীয় নীতি সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখিবেন। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদে স্থলাভিষিক্ত আছেন, আপনারা কেউ শুনেছেন যে কোন একটি বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছেন। চৌদ্দ মাসে চৌদ্দটি বিদেশ সফর করেছেন, কোন সফর থেকে ফিরে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে গিয়েছেন বঙ্গভবনে? প্রধান উপদেষ্টা নিজে সজ্ঞানে সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের দফা-৫ লংঘন করে চলেছেন, অথচ তিনি সংবিধান মেনে চলার শপথ নিয়েছেন। অনুচ্ছেদ ৬২(১)। তাতে বলা হয়েছে, সংসদ আইনের দ্বারা নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রণ করিবেনঃ (ক) বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহ ও উক্ত কর্মবিভাগসমূহের সংরক্ষিত অংশসমূহ গঠন রক্ষণাবেক্ষণ; (খ) উক্ত কর্মবিভাগসমূহে কমিশন মন্জুরী; (গ) প্রতিরক্ষা- বাহিনী সমূহের প্রধানদের নিয়োগদান ও তাহাদের বেতন
ও ভাতা-নির্ধারণ; (ঘ) উক্ত কর্মবিভাগসমূহ ও সংরক্ষিত অংশসমূহ-সংক্রান্ত শৃঙ্খলামূলক ও অন্যান্য বিষয়। দফা-২। সংসদ আইনের দ্বারা এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় বর্ণিত বিষয় সমূহের জন্য বিধান না করা পর্যন্ত অনুরূপ যে সকল বিষয় প্রচলিত আইনের অধীন নহে, রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা সেই সকল বিষয়ের জন্য বিধান করিতে পারিবেন। দেখুন, প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য দফা (১) এর অধীন কোন আইন করা হয়নি, এমনটি নয়, অতএব দফা (২) প্রয়োগের কোন অবস্থান দৃশ্যমান নাই। দফা-১(ঘ)-তে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার কথাটি বলা আছে, অর্থাৎ সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার জন্য কোন আইন সংসদ দ্বারা হতে হবে, যা বিদ্যমান আছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ সংশোধনকল্পে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করা সংবিধানের অত্র অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অনুচ্ছেদ ৯৩। অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনকল্পে অধ্যাদেশ জারী করণে সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের দোহাই দেয়া হয়েছে! সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে কি বলা হয়েছে? তাতে বলা হয়েছে, “[সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত] কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারী করিতে পারিবেন এবং জারী হইবার সময় হইতে অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন হইবে; অতএব জারীকৃত অধ্যাদেশের আইনী ভিত্তি সঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা যেটি হয়েছে, ওরা ৯৩(১) অনুচ্ছেদের পুরোটা দেখেনি। একই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন কোন অধ্যাদেশে এমন কোন বিধান করা হইবে না, (ক) যাহা এই সংবিধানের অধীন সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না; (খ) যাহাতে এই সংবিধানের কোন বিধান পরিবর্তিত বা রহিত হইয়া যায়; অথবা (গ) যাহার দ্বারা পূর্বে প্রণীত কোন অধ্যাদেশের যে কোন বিধানকে অব্যাহতভাবে বলবৎ করা যায়। অন্তবর্তী সরকারের জারিকৃত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ সংশোধন অধ্যাদেশসমূহ দ্বারা সংবিধানের ৯৩(১) এর (ক) ও (খ) লংঘিত হয়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় সংশোধনীর অধ্যাদেশ দিয়ে আইনে সংযুক্ত ২০(সি) ধারা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। যাহা করণে ৯৩(১)(খ) অনুচ্ছেদে শর্ত দিয়ে নিষেধ করা হয়েছে। ২০ (সি) ধারা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হলে সেটি সংবিধান সম্মত হবে না, সংবিধান পরিপন্থী হবে। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৬২(১)(ঘ) ধারা লঙ্ঘন হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১০৬। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “যদি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রীম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপীল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানীর পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।” অন্তর্বর্তী সরকার শপথ প্রসঙ্গে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের দোহাই দেয়া হয়েছে। অথচ, ১০৬ অনুচ্ছেদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রপতির পাঠানো রেফারেন্সটি উপযুক্ত শুনানীর পর আপীল বিভাগ স্বীয় মতামত দিবে। কিন্তু, রাষ্ট্রপতির পাঠানো প্রশ্নটি আদালতে উপস্থাপিতই হয়নি, উপযুক্ত শুনানীর প্রসঙ্গ তো কল্পনাতীত। কিন্তু, আমরা তর্কের খাতিরে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় দেশের স্বার্থে সরকারের চলমান থাকাটা যদি সমর্থনও করি, তবে শপথ লঙ্ঘন মেনে নিতে পারি না, সংবিধান সুরক্ষা করে চলবে মর্মে সরকার শপথ নিয়েছে। শপথের পর বিগত চৌদ্দ মাস যাবৎ অব্যাহতভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে, সেটিকে মেনে নেয়া যায় না। দেশে মব সন্ত্রাসের অতীষ্ট জনগণ, অভাব-অনটনে দিশেহারা জনগোষ্ঠী, চৌদ্দ মাসে চৌদ্দ লক্ষ বেকার হওয়া মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বাঙালি চেতনায় বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে মনেপ্রাণেই চাচ্ছিলো, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী কিছু একটা করুক। কিন্তু, সেনাপ্রধান নিজে ক্ষমতালোভী মানুষ নহেন, তিনি সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদকে ভয় পান। ৭(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংবিধান বাতিল করণ, স্থগিত করণ, ইত্যাদি অপরাধ; ঐ একটি ধারা ভঙ্গ করতে চাচ্ছেন না বলেই সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানের অপর ২০টি ধারা লঙ্ঘনের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে দুর্দশাগ্রস্ত বাঙালির পাশে বিশ্ব নেতৃত্ব দাঁড়াতে পারেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সংবিধান পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য কঠোর বার্তা প্রদান অতীব জরুরী। বিবেক ন্যায়ের কথা বলে, বিবেকবান মানুষকে জেগে উঠতে হবে। গোলাম হোসেন আইনজীবী অক্টোবর ১৩, ২০২৫।