‘ধরা পড়লে বলবা ইন্ডিয়া যাচ্ছিলাম, বিএসএফের তাড়া খেয়ে চলে আসছি’ – ইউ এস বাংলা নিউজ




‘ধরা পড়লে বলবা ইন্ডিয়া যাচ্ছিলাম, বিএসএফের তাড়া খেয়ে চলে আসছি’

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৪ মে, ২০২৫ | ৫:২৬ 77 ভিউ
‘বিএসএফ আমাদের বলেছে যে আমরা দুটো গুলি মারবো। গুলি মারার পরে তোমরা সব দৌড় মারবা। তো ওরা দুটো গুলি মারে। তখন আমরা সবাই ভেগে দৌড় মারি। সামনে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ি’। কথাগুলো বলছিলেন জাহানারা খাতুন। গত ১৭ মে ভোরে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও সীমান্তের ভেতরে তাকে আটক করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। তার সঙ্গে সেদিন আরও ১৬ জনকে আটক করে বিজিবি, যাদের প্রত্যেককেই ভারত থেকে পুশইন করা হয়েছিলো বলে বিজিবি পরে জানায়। খবর বিবিসি বাংলা। জাহানারা খাতুন বলছিলেন, ভারত থেকে ঠেলে বাংলাদেশে ঢোকানোর সময় বিজিবির সামনে পড়লে কী বলতে হবে সেটাও শিখিয়ে দিয়েছিলো বিএসএফ সদস্যরা। তিনি বলছেন, ওরা বললো যে, যদি ধরা পড়ো তাহলে বলবা যে আমরা

ইন্ডিয়া যাচ্ছিলাম, সীমান্তে বিএসএফ তাড়া দেওয়ায় আবার চলে আসছি। জাহানারা খাতুনকে যেভাবে পুশ ইন করা হয়েছে, বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে এরকম চার শতাধিক মানুষকে পুশ ইন করে বাংলাদেশের ভেতরে পাঠিয়েছে ভারত। যাদের পুশ ইন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যেমন রোহিঙ্গা রয়েছে, তেমনি রয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকও, যারা অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের ঘটনা কেন ঘটছে? আর বাংলাদেশি নাগরিকদেরই কেউ কেউ কেন কাজের খোঁজে ভারতে যাচ্ছেন? ‘মুম্বাই থেকে বিমানে কলকাতা, তারপর পুশ ইন’ জাহানার খাতুনের সঙ্গে গত শনিবার একইদিনে পুশ ইনের পর বিজিবির হাতে আটক হন যশোরের নুরুন্নাহার। যিনি তিন বছর আগে ভারতের মুম্বাইয়ে গিয়েছিলেন কাজের খোঁজে। নুরুন্নাহার বলছেন, আমার

এলাকার একজনের সঙ্গে মুম্বাই গিয়েছিলাম। সেখানে রুম ভাড়া করে থাকতাম। কাজ করতাম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে। তার বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে, গেল এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি মুম্বাইয়ে পুলিশের হাতে আটক হন। সেখানে ১৫ দিন আটক রেখে যাচাই-বাছাইয়ের পর বিমানে করে তাদের পাঠানো হয় কলকাতা। এরপর কলকাতা থেকে বাসে করে আনা হয় বাংলাদেশ সীমান্তে। গত ১৭ মে ভোররাতে তাদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকায়। নুরুন্নাহার বলছিলেন, আমাকে রুম থেকেই সিআইডি ধরেছিলো। এরপর যাচাই-বাছাই করে। আমার বাড়ি কোথায়, কবে আসছি- এসব জিজ্ঞাসা করে। পরে মোবাইলে আমার বাংলাদেশের ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখাই। তারপর আমাকে কলকাতা হয়ে সীমান্তে নিয়ে আসে। নুরুন্নাহার ও জাহানারাসহ ১৭ জনকে একসঙ্গে সীমান্তে

ঠেলে দেয় বিএসিএফ। নুরুন্নাহার বলছেন, মোট তিনটা গাড়ি ছিল। দুইটা গাড়ির লোকদের অন্যদিক দিয়ে পার করেছে। আর আমাদের পার করেছে আরেক দিক দিয়ে। ভূট্টা খেত, জঙ্গল, পানি এই সবকিছুর মধ্যে দিয়ে হেঁটে অন্ধকারের মধ্যে আমরা এগুতে থাকি। আমরা তো এখানকার কিছুই চিনি না। পরে একসময় বিজিবি আমাদের দেখতে পেয়ে আটক করে। কাজের সন্ধানে ভারতে কেন? দিনাজপুরের তরিকুল ইসলাম। সাত মাস আগে পাথর ভাঙার কাজে যোগ দিতে অবৈধভাবে গিয়েছিলেন ভারতের রাজস্থানে। কিন্তু দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশি ধরতে অভিযান শুরু হলে গতমাসে দেশে ফিরে আসেন তিনি। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, কাজের সন্ধানেই ভারত গিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশেও কাজ আছে। কিন্তু এখানে বছরের বারো মাসের মধ্যে কাজ

পাওয়া যায় তিন মাস। কিন্তু তিন মাসের ইনকাম দিয়ে কি গোটা বছর চলবে? ইন্ডিয়াতে যাই, সেখানে পাথর ভাঙার কাজ সবসময়ই পাওয়া যায়। মাসে আঠারো/বিশ হাজার টাকা ইন্ডিয়ান রুপি বেতন দেয়। কিন্তু থাকা-খাওয়ার খরচ কম। ফলে হাতে টাকা থাকে। তিনি জানান, তার গ্রামের অনেকেই ভারতে গিয়ে কাজ করেছেন। তাদের টাকা পাাঠানোর খবরে তিনিও কাজে যেতে উৎসাহিত হন। তার ভাষ্য, ওখানে পাথর ভাঙার কাজটা নিঃশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর। প্রচুর ধূলা-বালি হয়। এই কাজগুলো বাংলাদেশিরাই করে। মালিকও জানে যে এরা বাংলাদেশ থেকে আসছে। কিন্তু কিছু বলে না। কারণ ওদের শ্রমিক দরকার। আর আমাদের দরকার টাকা। তরিকুলের মতোই ভারতের রাজস্থানে গিয়েছিলেন পাশের গ্রামের খালেক মন্ডল। ভূমিহীন পরিবারের খালেক

বলছেন, কৃষিকাজ ছাড়া আর কোনো কাজ পারেন না তিনি। কিন্তু বাংলাদেশে কৃষিকাজের যে অবস্থা, তাতে সংসার চালানোর মতো সারা বছর কাজ পাওয়া যায় না। খালেক মন্ডল বলেন, আমার তো পড়ালেখা নাই। ঢাকায় বা অন্য কোথাও যে যাবো, কে আমাকে চাকরি দেবে? এইজন্য ভারতে গেলাম। পাথর ভাঙার কাজ করলে মাসে বেতন পনের হাজার রুপি পাইতাম। প্রতিমাসে বাড়িতেও টাকা পাঠানো যায়। কাঁটাতারে মই, বেড়া টপকে ভারতে কিন্তু সীমান্তে যখন কাঁটাতারের বেষ্টনী এবং কঠোর নজরদারি, তখন কাজের জন্য অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ঘটনা কীভাবে ঘটছে? আবার কাজের ফাঁকে অনেকেই বাংলাদেশে ফেরতও আসছেন। সেটাই বা কীভাবে হয়? এমন প্রশ্নে দুটি উত্তর পাওয়া যায়। প্রথমটি হচ্ছে, কাঁটাতারের বেষ্টনি কেটে

ভারতে ঢুকে পড়া। এ কাজে বড় আকারের প্লায়ার্স ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কাঁটাতারের ওপরে মই লাগিয়ে বেড়া টপকে ওপারে চলে যাওয়া। তরিকুল ইসলাম জানাচ্ছেন, এই কাজে সহায়তা নিতে হয় দালালদের। সীমান্তের কাছে দালাল থাকে। আমরা বলি লাইনম্যান। প্রথমে লাইনম্যান আমাদেরকে আশ্রয় দেয়। তারপর যখন সীমান্তের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় বিজিবি বা বিএসএফের কেউ থাকে না। তখন সুযোগ বুঝে মই লাগিয়ে দেওয়া হয়। দুই পাশেই মই থাকে। আমরা পার হয়ে যাই। ওপারে আবার লাইনম্যান থাকে। সে আমাদের রিসিভি করে নেয়। বাংলাদেশের সীমান্তে বিজিবির টহল কার্যক্রম নিয়মিত চললেও খোদ বিজিবিই বিভিন্ন সময় স্বীকার করেছে যে বিশাল সীমান্ত এলাকা সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারি সম্ভব নয়। তবে এর মধ্যেই ভারত থেকে সাড়ে চারশত জনেরও বেশি মানুষের পুশ ইনের ঘটনা নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যাদেরকে পুশ ইন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আবার অন্তত ৪০ জন আছেন রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই নাগরিকত্ব যাচাই করে কোনো বাংলাদেশি পাওয়া গেলে আইন মেনে হস্তান্তরের কথা বলেছে ভারতকে। কিন্তু এই অনুরোধের পাশাপাশি বাংলাদেশি নাগরিকদের কেউ কেউ কেন অবৈধভাবে ভারতে ঢুকছে এবং এটা কীভাবে বন্ধ করা যাবে সেটাও এখন বাংলাদেশের সামনে বড় প্রশ্ন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
নীলক্ষেতেই ছাপা ডাকসুর ব্যালট: সংখ্যায় বিশাল গরমিল, নির্বাচনে ঘাপলা ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ: আটক নেতা-কর্মীদের পাশে কেন্দ্রীয় যুবলীগ ১০৪ সদস্যের লটবহর নিয়ে ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফর: জনগণের অর্থের শ্রাদ্ধ করে প্রাপ্তিযোগ কী? প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়ক ও উপদেষ্টাদের এলাকাপ্রীতিতে বঞ্চিত সমস্যাগ্রস্ত জেলার মানুষ ইউনূস আমলে ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশিরা, বিদেশি ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অনেককে শান্তিপূর্ণ ভিন্নমত প্রকাশ ও সমাবেশের উপর দমন-পীড়ন মানবাধিকারের লঙ্ঘন ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৫% হারে বৈদেশিক ঋণ: সরকারের নতুন ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকি’ নিয়ে উদ্বেগ থানায় পুলিশ কর্মকর্তার সামনেই দুই বিএনপি নেতার হাতে লাঞ্ছিত আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী পিপিআরসি জরিপ: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ৭০% মানুষের উদ্বেগ ও শঙ্কা কালীগঞ্জে হিন্দু নারী ধর্ষণ: মিমাংসার প্রস্তাবে রাজি না হলে গুম করার হুমকি ১০৪ সদস্যের লটবহর নিয়ে ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফর: জনগণের অর্থের শ্রাদ্ধ করে প্রাপ্তিযোগ কী? দেশে থেমে গেছে বিনিয়োগ: সংকোচন, স্থবিরতা ও অনিশ্চয়তার দুষ্টচক্রে অর্থনীতি জাতিসংঘে ট্রাম্পের বক্তৃতার সময় ‘নাশকতার’ অভিযোগ: তদন্তের দাবি জেএফকের মতোই ড. ইউনুস একদিন সঙ্গীদের ছেড়ে দেশ থেকে পালাবেন! আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরার প্রত্যাশা বাড়ছে ‘অন্যায় চলতে থাকলে প্রতিক্রিয়া আসবেই’— মোহাম্মদ এ. আরাফাতের হুঁশিয়ারি আন্তর্জাতিক অপশক্তির সাথে সম্পৃক্ত শিশু বক্তার দম্ভোক্তি: আমরা এখন আর আঞ্চলিক খেলোয়াড় না বন্ধ হচ্ছে সিইপিজেডের কারখানাগুলো: সংকট ধামাচাপায় সংবাদ প্রকাশে বাধা দিলেও দাবিয়ে রাখা যায়নি শ্রমিকদের অপহরণসহ সকল অপরাধ বেড়েছে কয়েক গুণ: ইউনূস-আমলে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি নিজ ভূখণ্ডে পাকি বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণ: নারী-শিশুসহ নিহত ৩০, অস্বীকার সরকারের