আরবদের ৬ দিনের কলঙ্ক ঘোচাল ইরান, রচিত হচ্ছে নতুন ইতিহাস – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ২০ জুন, ২০২৫
     ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

আরবদের ৬ দিনের কলঙ্ক ঘোচাল ইরান, রচিত হচ্ছে নতুন ইতিহাস

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২০ জুন, ২০২৫ | ৮:৩১ 77 ভিউ
১৯৬৭ সালের ৫ জুন শুরু হয়েছিল এক যুদ্ধ—যেটি মাত্র ছয় দিন স্থায়ী হয়েছিল, কিন্তু তার অভিঘাত ছড়িয়ে পড়েছিল পরবর্তী অর্ধশতাব্দীজুড়ে। ইসরায়েলের সঙ্গে সেই সংক্ষিপ্ত যুদ্ধেই বিধ্বস্ত হয়েছিল আরব বিশ্বের তিন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র—মিশর, সিরিয়া ও জর্ডান। শুধু ভূখণ্ড নয়, তারা হারিয়েছিল সম্মান, আত্মবিশ্বাস ও রাজনৈতিক অবস্থান। আজও ইতিহাসে সেটিকে মনে করা হয় আরব জাতীয়তাবাদের সবচেয়ে বড় পরাজয় হিসেবে। ছয় দিনের সেই যুদ্ধে ইসরায়েল বিমান হামলার মাধ্যমে মিশরের বিমানবাহিনী ধ্বংস করে দেয় এক দিনে। সিনাই উপত্যকা, গাজা, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুসালেম এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। যুদ্ধের অব্যবহিত পর মিশর ও জর্ডান বাস্তবতা মেনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের একা সংগ্রামের

সময়কাল। সেই ছয় দিন, যা আরব বিশ্বকে একপ্রকার পঙ্গু করে দিয়েছিল—তা ছিল সামরিক দিক থেকে দ্রুততা, কূটনৈতিক বিচক্ষণতা এবং পশ্চিমা সমর্থনের জয়গাথা। কিন্তু ২০২৫ সালের জুন, ঠিক ৫৮ বছর পর, ইতিহাস যেন এক প্রতিধ্বনি তুললো। এবার যুদ্ধ শুরু হলো ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে। আর এই যুদ্ধ এখন সপ্তম দিনে গড়িয়েছে। অনেকেই বলছেন, এবার ইরান একা দাঁড়িয়ে, অথচ পেছনে যেন দাঁড়িয়ে আছে গোটা আরব জগতের অপমানিত ইতিহাস। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে, এটা সহজেই অনুমেয়। ইরান, যে একসময় শাহ আমলের পশ্চিমঘেঁষা শাসনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল, ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে নিজেকে রূপান্তরিত করে এক বিপরীত মেরুতে। তেলআবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, ইসরায়েলকে 'শত্রু

রাষ্ট্র' হিসেবে ঘোষণা করে। “ইসরায়েল ধ্বংস হোক”—এই স্লোগান তখন থেকে কেবল রাজনৈতিক মিথ নয়, বরং প্রতিরোধনীতি ও সামরিক কৌশলের ভিত্তি হয়ে ওঠে। ইরান বিশ্বাস করে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসনের মূল শিকার শুধু ফিলিস্তিন নয়—সার্বভৌমত্বের নামে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ইসলামি সংহতি, স্বাধীনতা ও ন্যায়ের ভিত্তি। এই বিশ্বাস থেকেই হিজবুল্লাহ, হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয় তারা। এই সমর্থনকে ইসরায়েল সবসময়ই দেখে এসেছে নিজের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে এক পরোক্ষ যুদ্ধ হিসেবে। এমন এক প্রেক্ষাপটে, ২০২৫ সালের ১৩ জুন, মধ্যরাতে ইসরায়েল যখন ইরানের ভেতরে গোপন বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দেশটির শীর্ষ সামরিক ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করে, তখন অনেকেই ধারণা করেছিলেন—এটা আরেকটি ছয় দিনের যুদ্ধ হবে। প্রথমেই 'প্রতিভা', 'ক্ষমতা' ও

'সারপ্রাইজ অ্যাটাক' দিয়ে প্রতিপক্ষকে অচল করে দেবে ইসরায়েল, যেমন করেছিল ১৯৬৭-তে। কিন্তু বাস্তবতা এবার আলাদা। যুদ্ধের সপ্তম দিনেও ইরান রয়ে গেছে দৃঢ়। বরং প্রতিউত্তরে তারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হাইফা, তেলআবিব ও বিভিন্ন শহরে এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর আশেপাশে একাধিক হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল বাহিনীর বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতেও লক্ষ্যভেদী ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রমাণ মিলেছে। ইরান শুধু নিজেকে রক্ষা করছে না, পাল্টা আঘাতও করছে—যা ৬৭’র আরবদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এমন অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন “ইরান যেন নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে”—এই আহ্বান জানান, তখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি জাতির উদ্দেশে বলেন, “ইরানিরা আত্মসমর্পণের জাতি নয়।” এই বক্তব্য আজ শুধুই ইরান নয়, গোটা আরব-ইসলামি জগতের দীর্ঘদিনের অবদমন,

পরাজয় ও লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক উচ্চারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে—ইরান কি তবে জয়ী হচ্ছে? উত্তর আপাতত “না”, অন্তত সামরিক অর্থে। তবে যুদ্ধের তাৎপর্য কি শুধু সেনা বা ক্ষেপণাস্ত্রের হিসাব-নিকাশে মাপা যায়? যুদ্ধ যদি মনোবল, ইতিহাসের ভার ও রাজনৈতিক বার্তার মঞ্চ হয়, তাহলে ইরান ইতোমধ্যে কিছু অর্জন করে ফেলেছে—যা অনেক আরব দেশ কয়েক দশকে পারেনি। ইরান এখনও একটি অপ্রতুল সামরিক শক্তি। তাদের বিরুদ্ধে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, পশ্চিমা গোয়েন্দা জোট। কিন্তু তারপরও তারা দাঁড়িয়ে আছে, লড়ছে, পাল্টা আঘাত করছে। এই লড়াই এক প্রকার ‘ঐতিহাসিক প্রতিশোধ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আরব বিশ্বের অসমাপ্ত আক্ষেপকে প্রতিরোধের ভাষা দিয়েছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ হয়তো দীর্ঘস্থায়ী হবে। হয়তো ইরান চূড়ান্ত বিজয় পাবে

না। তবে ইতিহাসে হয়তো এটিই লেখা থাকবে: “যখন কেউ ভেবেছিল ইতিহাস আবারও ছয় দিনে লিখে ফেলা যাবে, তখন একজন দাঁড়িয়ে বলেছিল—এইবার নয়।”

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সনিক টিউনার কুয়াশার দাপটে বাড়ছে শীতের অনুভূতি আন্দোলনের মুখে দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ ডিনের প্রধান আসামি ফয়সালের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এনএসআই’র ১৩ কর্মকর্তার সম্পদ অনুসন্ধানে মাঠে দুদক দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিরাপত্তাবেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা হয়নি: জয়সওয়াল ফয়সাল ও সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য ৬ শান্তিরক্ষীর অশ্রুসজল বিদায় পারাপারের সময় ফেরি থেকে পড়ে নদীতে ডুবল ৫ যান, ৩ জনের মৃত্যু মহাখালীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন আহত ছায়ানটে হামলা: ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা ৪০০ বছর পর চিঠি বিলি বন্ধ করছে ড্যানিশ পোস্ট অফিস দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্দুক হামলা, নিহত ১০ নজিরবিহীন অস্ত্র বিক্রি করেছে ইসরায়েল, শীর্ষ ক্রেতা কারা চুম্বন বিতর্কে রাকেশ বললেন, এসব হাস্যকর অবয়ব থেকেই নির্ধারণ হবে রোগীর চিকিৎসা শীতে খসখসে হাত পায়ের যত্ন নেবেন যেভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউবে কথা বলবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘জনপ্রিয়তা সহ্য করতে না পেরেই হাদিকে সরিয়েছে’— মির্জা আব্বাসের দিকে ইঙ্গিত জামায়াত আমিরের ভিডিও প্রমাণ: ময়মনসিংহে গণপিটুনিতে নিহত হিন্দু যুবক পুলিশের হেফাজতেই ছিলেন, কারখানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি