অরক্ষিত মহানগরী করণীয় কী – U.S. Bangla News




অরক্ষিত মহানগরী করণীয় কী

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ৫ এপ্রিল, ২০২৩ | ৫:১২
নিয়মিত বিরতিতে ঘটা মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের মুখে ঢাকা যেন এক অরক্ষিত মহানগর। যতটা বিপর্যয় ঘটছে; বিপদের হুমকি তার চেয়েও বড়। পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস– দুটি সদরদপ্তরের ঠিক মাঝে অবস্থিত বঙ্গবাজার বিপণিকেন্দ্র। সেখানকার প্রলয়ঙ্করী লেলিহান শিখা প্রশ্নটাকে জ্বলন্ত বিষয় করে তুলেছে। ‘ঘাতক’ পরিস্থিতিতে কাজ ও বসবাস : শহর ও শহরতলি মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষ ‘ঘাতক’ পরিস্থিতিতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে অগ্নিনিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন সরবরাহে নিরাপত্তা, কেমিক্যাল ও শিল্প নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা সংশ্লিষ্ট। আবাসন ও শিল্প-বাণিজ্যের অঞ্চল আলাদা করা নয় বলে ঢাকা মিশ্র মডেলে গড়ে উঠেছে। রাসায়নিক গুদামের পাশেই চলছে

তৈরি পোশাকের কারখানা, বাজার, ব্যবসা ও আবাসনের সব কাজ। এ থেকে মুক্তি পেতে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং ফায়ার কোডের বাস্তবায়ন। দরকার বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সরবরাহ ব্যবস্থার নিরাপদ সমন্বিত মডেল। দুর্নীতিবান্ধব নকশায় ইমারত নির্মাণের মডেল এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের আগুন লাগলে সহজে নেভানো যায় না। নেভানোর পানি মেলে না; সরঞ্জাম ও লোকবলের অভাব। পরিবেশগত বিষয়াদি বাদ দিলেও শুধু ভূমিকম্প মোকাবিলা কিংবা অগ্নিকাণ্ড ব্যবস্থাপনা সহজ করতে, মানুষকে নিরাপদে সরাতে, হাসপাতাল কিংবা ক্যাম্প তৈরির জন্য হলেও ঢাকায় এলাকাভিত্তিক পার্ক ও খেলার মাঠ রাখা দরকার। ঢাকার জন্য দরকার যথেষ্ট খোলা জায়গা ও জলাশয়। এতে ভূমিতে পানি পরিস্রাবণ (ফিল্ট্রেশান) বাড়বে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কাজের সুবিধার জন্য

হলেও এলাকাভিত্তিক খোলা জায়গা এবং জলাশয় রাখার পরিকল্পনা নেওয়া ও তা বাস্তবায়ন করা দরকার। দুর্বল পরোক্ষ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা : রাজউকের বহুতল ভবন সংখ্যার বিপরীতে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র মিলিয়ে দেখা যায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার ভবন ছাড়পত্রহীন। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই মাসের আগের ছয় বছরে সারাদেশে মোট অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০টি, তার মধ্যে শিল্পকারখানায় ৬ হাজার ৮১টি। আগুন লাগলে কোনো ভবনেরই নিরাপত্তাব্যবস্থা কাজ করে না। কিন্তু কেন? দেশে যেসব অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নেওয়া হয়, তার প্রায় সবই পরোক্ষ (প্যাসিভ)। সেখানে দুর্ঘটনা ঘটা সাপেক্ষে দায়িত্বরতকে পদক্ষেপ নিতে হয়। এসব প্রতিক্রিয়ানির্ভর ব্যবস্থা স্মোক ডিটেক্টর,

ফায়ার ডিটেক্টর, অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার এবং অগ্নিনির্বাপণ হোসপাইপকেন্দ্রিক। বড় দুর্ঘটনার প্রাণঘাতী আগুন, ধোঁয়া ও অতি উচ্চ তাপে প্রশিক্ষিত ব্যক্তির পক্ষেও ভবনের ভেতর থেকে এসব পরোক্ষ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনা করা অসম্ভব। মাঝারি ও বৃহৎ পরিসরের বাণিজ্যিক ও শিল্প ভবনে দরকার প্রত্যক্ষ ও স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা। এটা নিজে থেকেই ছোট কিংবা মাঝারি পরিসরের আগুন শনাক্ত করে নিজে নিজেই পরিমাণমতো পানি বা গ্যাস ছিটিয়ে তাৎক্ষণিক আগুন নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। তলাপ্রতি একটি অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার ফ্লোর স্পেস ও মাথাপিছু ক্যাপাসিটির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। কিছু বহুতল ভবনে হোসপাইপ বসানো থাকে; বাস্তবে পাম্প সংযোগহীন। এগুলো বছরে দু’বার পরিদর্শন করে তার ওপর দিনক্ষণ উল্লেখসহ যাচাইকারী কর্তৃপক্ষের

স্টিকার থাকার কথা। বিল্ডিং কোডের নাজুকতার জন্য বিপজ্জনক মাত্রার বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় মজুত থাকার কথা। বর্তমানে ফায়ার বল জনপ্রিয় হচ্ছে। এসব বল আগুনে বিস্ফোরিত হয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। বাস্তবায়ন কিছুটা ব্যয়বহুল বলে বাংলাদেশের স্বল্পব্যয়ী শিল্প উৎপাদন মডেলের কর্মী-অবান্ধব কাজের পরিবেশে, শপিং মলে, অফিসে বা ব্যবসাকেন্দ্রে এসব নিরাপদ কারিগরি সমাধান একেবারেই গুরুত্ব পাচ্ছে না। ভবনের প্রাথমিক বৈদ্যুতিক ড্রাফটিং অর্থাৎ পরিবাহী তার, সার্কিট ব্রেকার ও অন্যান্য সরঞ্জামের বৈদ্যুতিক লোড সক্ষমতার সঙ্গে এসিসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সক্ষমতা সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে না। বুয়েটের গবেষণা বলছে, দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড শর্টসার্কিট থেকে ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের উচ্চতা সক্ষমতা: ভবনের উচ্চতা ফায়ার সার্ভিসের পানি পৌঁছানোর সক্ষমতার সঙ্গে সমন্বিত নয়।

ফায়ার সার্ভিস সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ তলা পর্যন্ত পানি স্প্রে করতে পারে। একটি শহরে ফায়ার সার্ভিস যদি ১২ তলার ওপরে পানি, গ্যাস বা রাসায়নিককেন্দ্রিক অগ্নিনিরোধে অক্ষম হয়; তাহলে সেখানে ১২ তলার বেশি উচ্চতার ভবন করতে যাওয়ার কথা না। অগ্নিনির্বাপণের জন্য শহরের একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে (ধরুন ৪০০ মিটার) ওয়াসার ওয়াটার হাইড্র্যান্ট থাকার কথা, যা নেই। বিকল্প হচ্ছে জলাধার রাখা। ফায়ার হাইড্র্যান্ট কিংবা নির্দিষ্ট দূরত্বে জলাধার না থাকায় প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন বাসাবাড়ি বা মসজিদের পানির ট্যাঙ্ক থেকে পানি সংগ্রহের অক্ষম চেষ্টা। বিষয়টা বেশ হতাশার। এসব ছোট ট্যাঙ্কের পানি দিয়ে অগ্নিনির্বাপণের কাজ হয় না। অর্থাৎ সক্ষমতা তো বাড়েইনি, বরং হাতে থাকা যন্ত্রপাতি

কিংবা টুলগুলো কাজ করে কিনা, তার তদারকিও ঠিকঠাক নেই। প্রতিটি ভবনের ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম এবং ফায়ার ডিফেন্স প্রসেস ও টুলস কাজ করে কিনা, তা বছরে দু’বার পরিদর্শন করার কথা। বছরে দু’বার ফায়ার ড্রিল হওয়ার কথা, যা ডকুমেন্টেড হবে। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের বিপদ : বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেলে ব্যক্তির নিজ জন্মস্থানে বেড়ে ওঠা, শিক্ষা নেওয়া, কর্ম করা, সেবা পাওয়া ও বিনোদনের সুযোগ নেই। সবকিছুর জন্য ঢাকা যেতে হয়। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে গণপরিবহনে চড়ে ‘কর্মের রাজধানী ঢাকায়’ গিয়ে দিনশেষে আবাসে ফিরে আসার উপযোগী পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা (সড়ক ও রেল নেটওয়ার্ক) উন্নয়ন দর্শনে গুরুত্ব পায়নি। পরিযায়ী শ্রমিকের চাপ, কেন্দ্রীভূত প্রশাসন, কেন্দ্রীভূত সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ঢাকার

জনসংখ্যা বিস্ফোরণের জন্য অনেকাংশে দায়ী। কার্যকর স্থানীয় শাসন এবং ডিজিটাল প্রশাসনের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে না বলে জনজীবনের সবই ঢাকাকে সামলাতে হয়। সব স্রোত হয় ঢাকামুখী। ডিজিটাল প্রশাসনের যুগে একটা শহরে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস রাখার যুক্তিটা কোথায়! উপায় নেই, উপায় আছে : অগ্নিকাণ্ড, জলাবদ্ধতা, বন্যা, দূষণ কিংবা ভূমিকম্প থেকে ঢাকাকে বাঁচাতে হলে ঢাকার জলাশয়কে বাঁচাতে হবে। ঢাকার পুকুর এবং খালগুলো উদ্ধার করতে হবে। খালগুলোর মাধ্যমে (অথবা ভূগর্ভস্থ ক্যানেল নেটওয়ার্ক) সব লেককে সংযুক্ত করতে হবে। এমনকি মশা নিধনের জন্য পাখি হাঁস পালন করতে হলেও এসব লেকের পানি পরিষ্কার রাখতে হবে। উন্মুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। লাগাতার দুর্ঘটনা থেকে ঢাকাকে বাঁচানোর

উপায় কি একেবারেই নেই? কঠিন হলেও উপায় এখনও আছে। দরকার সরকারের রাজনৈতিক সততা, যেখানে নগর ব্যবস্থাপনার দূরদর্শিতাকে কার্পেটের তলায় লুকানো হবে না; ঢাকায় উন্নয়ন দর্শনের ভঙ্গুরতাকে সহ্য করা হবে না। বঙ্গবাজারের ভয়াবহ আগুন আমাদের সামনে এসব করণীয় কর্তব্য হাজির করেছে।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
পাবনায় অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, শাখা ব্যবস্থাপকসহ গ্রেফতার ৩ গরমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায় যেসব খাবারে তীব্র গরমে রাজধানীতে পুলিশ ক্যাম্পে আগুন কোম্পানীগঞ্জে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা ঋণের ছক পূর্ণাঙ্গ রায়: রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয় ব্যারিস্টার খোকন ইস্যুর আপাতত ‘নিষ্পত্তি’ করল বিএনপি এক দিনে ২৩ হাজার কোটি টাকা ধার আ.লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা নজর ৩০ এপ্রিলের দিকে আজ রাহুল-শশী হেমামালিনীদের ভাগ্য নির্ধারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক শেয়ারবাজার বাংলাদেশ-চীন সামরিক মহড়া নিয়ে যা বলল ভারত বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে লজ্জায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ই-সিম বদলাবেন যেভাবে ব্যাংকের তারল্য সংকট এক দিনে ২৩ হাজার কোটি টাকা ধার মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে নতুন কাউন্সিলর মোরশেদ আলম ফসলি জমি ধ্বংসের মহোৎসব কেমন হবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন? নিউইয়র্কে বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবে উপচে পড়া ভিড় অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধের ঘোষণা