ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান? – U.S. Bangla News




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান?

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ৫ এপ্রিল, ২০২৪ | ৫:১৪
কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম কিছু সময় বই পড়তে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েটদের সেখানে বই পড়ার এবং একটি বই ধার নেওয়ার সুযোগ আছে। লাইব্রেরির রেফারেন্স সেকশনে বসে যখন বই পড়ছি, তখন লাইব্রেরি ভবনের সামনে কিছু ছাত্র জড়ো হয়ে লাইব্রেরিতে সিট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য স্লোগান দিচ্ছিল। আমি বাইরে সেই ছাত্রদের স্লোগান শুনছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। এমন সময় লাইব্রেরিয়ান এসে স্লোগানরত ছাত্রদের নিবৃত্ত করে বললেন, ‘তোমরা যদি চাও তবে আজ থেকে আইডি কার্ড দেখিয়ে লাইব্রেরি ভবনের ভেতরে ঢুকতে পার, তখন লাইব্রেরিতে আসন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হবে না।’ লাইব্রেরিয়ানের এ কথা শুনে কোনো ছাত্র ‘রা’ করল না এবং নিজ নিজ কাজে চলে

গেল। আমি এক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলাম, তারা এ প্রস্তাব কেন মেনে নিল এবং একটি নতুন লাইব্রেরি ভবনের জন্য কেন দাবি করছে না? ছাত্রটি আমার প্রশ্নের উত্তরে বলল, ‘সদ্য এমএ, এমএসএস ও এমকম পাশ করা ছেলেরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে প্রস্তুতি নিতে এ লাইব্রেরিতে এসে দলবদ্ধভাবে পড়ালেখা করে। তারা কেউ আমাদের বিভাগের ছাত্র, কেউ আমাদের হলের, কেউ কেউ সংগঠনের সমর্থক কিংবা কেউ জেলার ছাত্র। তাদের না করি কীভাবে? আমরা পাশ করে বের হলে তো একই অবস্থা হবে। আর একটি নতুন লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেটি নির্মাণ হতে হতে আমরা তা ব্যবহারের সুযোগ পাব না। তাই নতুন লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ না

করে যদি আসন সংখ্যা কোনোভাবে বাড়ানো যায় সেজন্য ধরনা দিচ্ছিলাম। কিন্তু লাইব্রেরিয়ান স্যারের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস পেলাম না।’ খোঁজ নিয়ে জানলাম বর্তমানে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় ৬০০ করে মোট আসন সংখ্যা ১২০০; আর নিচতলায় রেফারেন্স সেকশনে আসন সংখ্যা ৮০। প্রতিদিন বিভিন্ন হল ও স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা সকাল ৭টা থেকে লাইব্রেরির সামনে ব্যাগ রেখে প্রবেশের জন্য লাইন দিয়ে রাখে। লাইব্রেরি সকাল ৮টায় খোলার পর তারা এর ভেতরে প্রবেশ করে যে যার সুবিধামতো স্থানে বসে পড়ালেখা করতে থাকে। ওদের সংখ্যা হাজারেরও বেশি। এদের বেশির ভাগই বিসিএস পরীক্ষার্থী। কিন্তু নিয়মিত শিক্ষার্থীরা যখন ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে পড়তে আসে, তখনই বসতে না পেরে অসন্তুষ্ট

হয় এবং মাঝেমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। কিন্তু কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের ভেতর আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট। গত শতকের ষাট দশকে নির্মিত সেই তেতলা ভবনটি আজও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ অতিক্রম করেছে। বিভাগ, অনুষদ, ছাত্রাবাস, ছাত্র ও শিক্ষকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বৃদ্ধি পেলেও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির আসন সংখ্যা বৃদ্ধি কিংবা একটি সর্বাধুনিক লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ আজও হয়নি। সায়েন্স লাইব্রেরির জন্য নতুন ভবন তৈরি (১৯৮৩) হলেও আজও কিন্তু কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন নির্মাণের কোনো তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না। সায়েন্স লাইব্রেরিতে ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও স্থান সংকুলানের সমস্যা সেখানে নেই। উল্লেখ্য, সেখানেও

এমএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার আগে পড়ালেখা করতে আসে। দেশে ব্যাপক শিক্ষিত বেকারের বিপরীতে বিসিএস ক্যাডারে পদের সংখ্যা মাত্র ৩১০০। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানভান্ডার বলে বিবেচিত। বর্তমানে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বই, জার্নাল ইত্যাদি মিলে সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, যেখানে সব পত্রপত্রিকা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। এ কাজটি সম্পন্ন হয়েছে ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান তানজেবা রায়হান সোমার কল্যাণে। কিন্তু কাজটি পুরোপুরি শেষ করার আগেই তাকে বিজ্ঞান লাইব্রেরিতে বদলি করা হয়। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পেছনে প্রশাসনিক ভবন। বর্তমানে দুই শ কর্মকর্তা-কর্মচারী লাইব্রেরিতে কর্মরত আছেন। সেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সবাই বই বা গ্রন্থাগারপ্রেমিক নন। তাদের আচরণে বোঝা যায়, রাজনৈতিক কারণে তারা চাকরি

পেয়েছেন। লাইব্রেরিতে প্রবেশ করলেই তারা মুখ ভার করে থাকেন এবং কোনো বইয়ের সন্ধান চাইলে অনিচ্ছায় উত্তর দেন। অথচ বিদেশে দেখেছি, কেউ যদি স্থানীয় বা জাতীয় লাইব্রেরিতে প্রবেশ করে, তবে প্রত্যেক কর্মী তার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলেন, সাহায্য করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। শ্রেণি, পেশা, বৈধ বা অবৈধ নাগরিক কিনা জিজ্ঞেস করেন না। আরেকটি কথা। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি নতুন বই কেনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে স্থানাভাবের কারণে। ফলে সদ্য প্রকাশিত অতি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বই পাঠ থেকে শিক্ষক ও ছাত্রসমাজ বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া দক্ষ লোকের অভাবে ক্লাসিফিকেশন ও ক্যাটালগ তৈরি করার কাজটি অত্যন্ত মন্থর গতিতে চলছে। ফলে কেনা বই পাঠকের কাছে আসতেই বছর

লেগে যাচ্ছে। লাইব্রেরির প্রশাসনিক ভবনের তেতলায় একটি কক্ষে রয়েছে অতি মূল্যবান প্রাচীন বই, নথি, পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি। বেশ কবছর আগে একসময় সেসব প্রাচীন পুথির প্রদর্শনী হয়েছিল এবং ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানেনই না এত প্রাচীন মূল্যবান পুথি, পুস্তক-পুস্তিকা এ বিদ্যাপীঠের অধীনে আছে। তারা এসব ধনরত্ন না দেখেই শিক্ষাজীবন শেষ করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্বতন্ত্র জাদুঘর থাকলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তা দেখতে ও জানতে পারতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ‘সেন্টেনিয়াল মনুমেন্ট’ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। বিগত উপাচার্যের মেয়াদের শেষদিকে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। বর্তমান উপাচার্য এর সামনের দিকের সামান্য অংশ রদবদল করে নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখেন। ফুটপাতের পাশে একটি নোটিশ বোর্ড টাঙ্গানো আছে।

তাতে মুনমেন্টের স্লোগান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম এবং মল চত্বরের গাছপালা অক্ষত রাখার কথা লেখা থাকলেও এর বাজেট ও নির্মাণ মেয়াদের কথা উল্লেখ নেই। প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জেনেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবার্ষিকী স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের জন্য সরকার ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। অথচ এত ব্যয়বহুল স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ না করে এ অঙ্কের টাকা দিয়ে একটি সর্বাধুনিক লাইব্রেরি ভবন, একটি জাদুঘর, ছাত্রাবাস নির্মাণ এবং রেজিস্ট্রার ভবন সম্প্রসারণের কাজ করা যেত। শতবার্ষিকী স্মৃতিস্তম্ভ যেমন দরকার, এর চেয়েও বেশি দরকার ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য একটি নতুন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন। লাইব্রেরি ভবনের সামনে ক্যাফেটেরিয়াসংলগ্ন জায়গাটিতে কিংবা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের পেছনের খালি জায়গায় শব্দনিরোধক একটি সর্বাধুনিক লাইব্রেরি ভবন

নির্মাণ করা যায়। আর বর্তমান ভবনটি জাদুঘর ও রেফারেন্স সেকশন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অমর ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম ও ত্যাগের মহিমা তুলে ধরার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি ভাষা জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। দেশের সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো জাদুঘর নেই, অথচ সব প্রাচীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জাদুঘর আছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জ্ঞানবিজ্ঞান প্রসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই প্রতিষ্ঠানটির অবদান শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরার জন্য একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুভূত হলেও আজ পর্যন্ত এর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ আজকের জাতীয় জাদুঘর (১৯৮৩), যা এককালে ঢাকা জাদুঘর নামে পরিচিত ছিল, তা ১৯১৩ সালে তৎকালীন সচিবালয়ের একটি কক্ষে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে সেই সচিবালয় ভবনটি নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয় এবং ঢাকা জাদুঘর নিমতলীর বারদুয়ারি ভবনে স্থানান্তর করা হয়। সেই ভবনটি ছিল ঢাকার নায়েব নাজিমদের বাসভবন। ঢাকা জাদুঘর সেখানে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব পালন করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও অব্যাহত ছিল। ১৯৮৩ সালে শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিটি সরকার অধিগ্রহণ করে জাতীয় জাদুঘর নির্মাণ করে সরকারীকরণ করে। বিনিময়ে নিমতলীর কম পরিমাণের জমি ও বারদুয়ারি ভবনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই ভবনের ওপর শিক্ষকদের আবাসন ভবন নির্মাণ করে। অথচ সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর নির্মাণ করা যেত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠে একটি জাদুঘর নেই, এটি কি কর্তৃপক্ষের মধ্যে লজ্জাবোধও সৃষ্টি করে না? স্বপন কুমার দাস : সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি যুদ্ধবিরতির মধ্যেই রাফাহে অভিযানের ঘোষণা নেতানিয়াহুর ৫৩ বছরেও হয়নি জাতীয় মজুরি কমিশন সংসার চলে না শ্রমিকের, বেঁচে থাকাই চ্যালেঞ্জ দীর্ঘদিন পর নিজের ভুল স্বীকার করে সামান্থাকে নিয়ে যা বললেন নাগা বিরাট-অনুশকার ডেটিং জীবনের তথ্য ফাঁস ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদ্মায় ঝাঁপ তরুণীর মেগান মার্কেল নতুন খবর দিলেন জীবন ওলটপালট করে গেল ‘আগ্রাসী’ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটিতে আলোচনা হয়নি: ওবায়দুল কাদের খালেদা জিয়াকে ফের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে কেন বাঙালি হত্যা, জবাব দিতে হবে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য অন্তহীন অপেক্ষা জোর করে নারীর হিজাব খুলল অ্যারিজোনা পুলিশ ঝুঁকির মধ্যেই ৩৭ জেলায় খোলা ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবৃদ্ধির দৌড়ে চীন মালয়েশিয়ার চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ নীতিমালা লঙ্ঘনে হজ চিকিৎসক দলের নার্সদের ৬ মাসের স্থগিতাদেশ রাজধানীর নিকুঞ্জে আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণ