অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে প্রেম কি অপরাধ, আইনি কী বলে? – ইউ এস বাংলা নিউজ




অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে প্রেম কি অপরাধ, আইনি কী বলে?

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ৫:১১ 11 ভিউ
গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ১১ বছর বয়সি একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়। শুরুতে অনেকেই ধারণা করছিলেন, মেয়েটি হয়তো কোনো বিপদে পড়েছে। তবে ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় পর ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেয়েটি তার কথিত প্রেমিকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় দেশের উত্তরের জেলা নওগাঁয় চলে গিয়েছিল এবং পুলিশ মেয়েটিকে সেখানে ছেলেটির বাড়িতেই খুঁজে পেয়েছে। মেয়েটির নিখোঁজ হওয়ার পেছনে প্রেম সংক্রান্ত বিষয় ছিল এই তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনরা উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, ফলে মেয়েটি ও তার পরিবার এখন ট্রলের শিকার হচ্ছে। শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে পরিচয়, তারপর বিয়ে! কিংবা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে প্রেম, এরপর প্রতারণা! সম্প্রতি বছরগুলোতে

এই ধরনের খবর প্রায়ই দেখা গেছে গণমাধ্যমে। এসবের পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ও প্রায়ই নজরে আসে, তা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রেমের সম্পর্ক। যার একটু উৎকৃষ্ট উদাহরণ উপরে উল্লেখ সম্প্রতি সময় ঘটে যাওয়া আলোচিত এই ঘটনাটি। উপরে উল্লেখ্য, ওই মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও যে ছেলেটির বাসায় তাকে পাওয়া যায় তার বয়স প্রায় ২১ বছর। ওই ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় টিকটকে এবং সেটিও এখন থেকে দুই বছর আগে। সে হিসাবে তখন তার বয়স ছিল নয় বছর ও ছেলেটির বয়স ছিল ১৯ বছর। অর্থাৎ, আইনের বিচারে ছেলেটি তখনও প্রাপ্তবয়স্ক। ঘটনাটিকে কেউ কেউ ভিন্নভাবে দেখছেন। তারা বলছেন, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মানুষের প্রেমের

সম্পর্ক গড়ে তোলা তো পরের ব্যাপার, প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াটাই এক অর্থে অপরাধ। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে এ সম্পর্কে কি কিছু বলা আছে? থাকলেও কী আছে? বিদ্যমান আইনে যা করা যায় ওই প্রশ্নের উত্তর জানতে একাধিক আইনজীবী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ’র সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। তারা প্রত্যেকে জানিয়েছেন, সাধারণত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ এবং ‘শিশু আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী সাধারণত এই ধরনের ঘটনার বিচার করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ‘দণ্ডবিধি, ১৮৬০’ ও ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন’-এরও সহায়তা নেওয়া হয়। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি’র ২৬১ ধারা অনুসারে, যদি কেউ ১৪ বছরের কম বয়সের ছেলে বা ১৬ বছরের কম বয়সের মেয়েকে তার অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া ছিনিয়ে বা প্রলোভন

দেখিয়ে নিয়ে যায়, তবে তাকে বলা হয় ‘শিশু অপহরণ’। সেই হিসাবে, মোহাম্মদপুর থেকে পালিয়ে যাওয়া মেয়েটির ক্ষেত্রে পুলিশ যত-ই বলুক যে মেয়েটি ‘স্বেচ্ছায়’ পালিয়েছে, আদতে আইনের চোখে সেটি অপহরণ হিসেবেই গণ্য হবে। এছাড়া, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, কোনো অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্য ব্যতীত কেউ যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোনো নারী বা শিশুকে অপহরণ করে, তাহলে ওই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা কমপক্ষে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। অর্থাৎ, কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে বিদ্যমান আইনে তার বিচার করা হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম বলেন, সম্পর্ক ঘটার পর কোনো অপরাধ করলে, যেমন জোরপূর্বক কিছু বা বিয়ে করে, তখন

তা অপরাধ। তার ভাষ্য, মেয়েটিকে যদি ঘর থেকে বের করে আনে, ধর্ষণ করে, তাহলে তা নারী শিশু আইনের আওতায় বিচার করা যাবে। ফুঁসলিয়ে বা বিয়ের নাম করে ১৬ বছরের কম বয়সী মেয়েদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যাবে। বিদ্যমান আইনের ফাঁক মোহাম্মদপুরের ওই মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়ার পর পুলিশ জানিয়েছে যে মেয়েটি স্বেচ্ছায় গিয়েছে। কিন্তু আইনের বিচারে মেয়েটির এখানে স্বেচ্ছায় ছেলেটির সঙ্গে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানার ভাষ্য, যদি মেয়েটি কোনো ধরনের সম্মতিও দেয়, সেই সম্মতি কোনো কাজে লাগে না। সে ১১ বছরের বাচ্চা, তার এখানে সম্মতি দেওয়ার কোনো ক্যাপাসিটি-ই নাই। সে খুশি হয়ে হয়তো বললো, যেতে

চাই। কিন্তু আইনে তার সেই সম্মতির কোনো মূল্য নেই। এটা স্পষ্টভাবে অপহরণ। মানে এটা ফৌজদারি অপরাধ। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে এই ধরনের অনেক অপরাধ প্রতিনিয়ত ঘটছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের সঙ্গে বিয়ের পরও যদি সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়, তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে। মেয়েটির সন্ধান পাওয়ার পর মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা সাংবাদিকদের বলেছেন, এটি প্রেম-সম্পর্কিত ঘটনা। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ও অপরাধ গবেষক মো. শওকত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, এটা প্রেম না। ১০-১১ বছরের শিশু কীভাবে প্রেম করে? পুলিশের বলা উচিত ছিল, দিস কিড ওয়াজ গ্রুমড। বাচ্চারা

সম্মতি দিতে পারে নাকি? প্রেম হয় কীভাবে? ঘটনা ঘটে যাওয়ার কারণে এটি এখন অপহরণ হিসেবে গণ্য হয়েছে ঠিক-ই, কিন্তু বাসা থেকে বেরিয়ে না গেলে তা আইনে অপরাধ বলে গণ্য হতো না বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, বাসা থেকে মেয়েটা বেরিয়ে গেল। সে নারী ও শিশু আইনে অপহরণের অপরাধ করলো। যদি বেরিয়ে না যেত এবং বেরিয়ে যাওয়ার একদিন আগে যদি তার বাবা-মা মোবাইল নিয়ে দেখতে পেত যে একটি অ্যাডাল্ট ছেলে তার নয় বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে পাতার পর পাতা ইঙ্গিতপূর্ণ চ্যাটিং করেছে...বাংলাদেশের আইনে সেটা তখন অপরাধ না। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আপনি জানেন এই ছেলেটি আপনার মেয়েকে গ্রুম করছিলো ধীরে ধীরে, কিন্তু কোনো আইনে তাকে সাজা দেওয়া যাবে না। ঘটনাটা ঘটতে হবে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আমার শিশু কন্যাকে এইজ ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট (বয়স অনুযায়ী যা সঙ্গত নয়) কথা বলছে, আমি তাকে থামাতে পারবো না। আইনে এখানে একটি ফাঁকা মাঠ পড়ে আছে। তার মতে, কোনো শিশুকে, নারী হোক বা পুরুষ, তাকে ভবিষ্যত যৌন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে লোভ দেখানো, প্রশংসা করা এসব আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে এই আইন নাই বলে আমরা বলি যে শিশুদের হাতে আমরা মোবাইল-ই দিবো না। আইনজীবী ফাওজিয়া করিমও মনে করেন, বাংলাদেশের সাইবার ক্রাইমে এই ধরনের বিষয়গুলো খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। বিদ্যমান আইনগুলো সময়ের সঙ্গে চলছে না। সময়ের সঙ্গে চলতে হবে। সেখানে এই বিষয়গুলো আনতে হবে। কারণ ১১-১২ বছরের মেয়েরা যখন কোনো সুন্দর কথা শুনে, তখন তো মুগ্ধ হবেই। যা করণীয় হতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই অবাধ ব্যবহারের যুগে সন্তানদের ওপর সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখা বাবা-মা’দের জন্য কঠিন। কিন্তু তারপরও এটি করা প্রয়োজন। ফাওজিয়া করিম বলেন, মেয়েটি পরিবারের সাথে থাকতো। এই দু’বছরে তারা কেউ কিছু জানলো না? এখানে সমস্যা হলো, আমাদের পরিবারের ভিতটাই শক্তিশালী না। সে কারণে বাবা-মা বাচ্চাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে না। অনেক ধরনের ট্যাবু কাজ করে। এখানে সামাজিকভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের সঙ্গে বাবা-মায়েদের যেমন বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি স্কুলগুলোতেও যথাযথ ব্যবস্থা রাখাটা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। স্কুলে তিনি বলছেন, যখন কোনো মেয়ে এই ধরনের দোটানায় পড়ে, সে হয়তো কথা বলতে চায়। সেখানে যদি কাউন্সেলর থাকে, তাহলে সে পড়াশুনার বাইরের বিষয় নিয়েও তার সঙ্গে কথা বলতে পারে। শিশুদেরকে নানা ধরনের শারীরিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি এও বলেন, এখানে কমিউনিটি ক্লাব নেই। সবাই ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীল। শারীরিক কোনো কর্মকাণ্ড নেই এখানে। শিশুদেরকে নানা ধরনের শারীরিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন। সেগুলো থাকলে মন থেকে ওগুলো চলে যাবে। অন্যান্য দেশের চিত্র এই সমস্যা থেকে শিশুদের বাঁচাতে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইতিমধ্যে। গত বছরের নভেম্বরে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির সংসদে এ সংক্রান্ত আইন অনুমোদন করা হয়েছে, যেটিকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর কঠোরতম আইন। শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রচেষ্টা এবারই প্রথম নয়। তবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৬ বছর নির্ধারণ করাটা সর্বোচ্চ। যদিও তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলো এই সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেয়নি। ২০২৩ সালে ফ্রান্সও ১৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য বাবা-মা’র অনুমতি ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আইন প্রণয়ন করেছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যেও অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি আইন প্রণীত হয়েছিলো। যদিও পরে একজন ফেডারেল বিচারক সেটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেন। এছাড়া, গতবছর নরওয়েও এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার পথ অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। সেইসঙ্গে, অস্ট্রেলিয়া যখন ওই ঘোষণা দেয়, তখন যুক্তরাজ্যের টেকনোলজি সেক্রেটারিও বলেছিলেন যে ওই একইরকম নিষেধাজ্ঞা দেওয়াটা তাদের ভাবনাতেও রয়েছে। তথ্যসূত্র: বিবিসি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
এবার চাঁদে পাওয়া যাবে ৪জি নেটওয়ার্ক এস কে সুর পরিবারের ৩৯ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, ফ্ল্যাট-জমি জব্দ তুরস্ক ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ সমর্থন করে: জেলেনস্কি কিমের পরমাণু কার্যক্রমের হ্রাস টানতে তৎপর আইএইএ সাবেক গভর্নর আতিউর ও অর্থনীতিবিদ বারাকাতের বিরুদ্ধে মামলা নাফিজ সরাফতের ২ সহযোগী ও স্ত্রীসহ সরওয়ারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ‘আলেপের বিরুদ্ধে গুম করা ব্যক্তির স্ত্রীকে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে’ এখন থেকেই নির্বাচনের কাজ শুরু করার নির্দেশনা ডিসিদের চার জিম্মির লাশ হস্তান্তর করল হামাস এবার ইসরাইলি হামলায় নিহত জিম্মিদের লাশ ফেরতের মঞ্চ করেছে হামাস ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান আমিরাতের গুরু না চাইলে জীবনে কিছুই হয় না: অপরাজিতা টপ অর্ডারে সেই পুরোনো রোগ প্রথমবারের মতো তিন ডিসপ্লের ফোল্ডিং ফোন আনল হুয়াওয়ে কোহলির জন্য প্রস্তুত তাসকিন, বাকিদের টেক্কা দেবেন কারা গাজা পুনর্গঠনে প্রয়োজন ৫ হাজার ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার আওয়ামীপন্থি ১২ শিক্ষক বরখাস্ত রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়াই সীমানা আইন চূড়ান্ত বায়ুদূষণের শীর্ষে কলকাতা, ঢাকার পরিস্থিতি কী? গাজায় ১১০০টির বেশি মসজিদ ধ্বংস করেছে ইসরাইল