গাজায় একের পর এক হামলায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল। ভয়াবহ হামলায় নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে বেসামরিকদের ওপর। নারকীয় তাণ্ডবে করুণ অবস্থা অবরুদ্ধ গাজার। এমনকি প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদাগুলো থেকেও বঞ্চিত অসহায় বাসিন্দারা। ইসরাইলের এমন অমানবীয় অত্যাচারে দেশে দেশে বাড়ছে ইহুদি বিদ্বেষ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ইহুদিরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্সসহ কানাডার ইহুদিরাও ক্ষোভ এবং ঘৃণার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে জার্মানিতে। রাস্তাঘাটে রীতিমতো মুখ লুকিয়ে বা পরিচয় গোপন করে হাঁটতে হচ্ছে তাদের। গার্ডিয়ান, বিবিসি, সিএনএন। ইসরাইলি কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা ছড়িয়েছে জার্মানিতে। ইসরাইল এবং হামাসের চলমান দ্বন্দ্বে দেশটিতে সামাজিক বিভেদ দেখা দিচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি অতীতকে স্মরণ করাচ্ছে জার্মানে চলমান কিছু ঘটনা। তখনকার ইহুদিরা

যেমন পালিয়ে বেড়িয়েছে তেমনি এখনো অনেকে মুখ লুকিয়ে আছে। জনসমক্ষে ইহুদি পুরুষরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র দেখাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। অক্টোবরে বার্লিনের একটি সিনাগগের দিকে দুটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনাও ঘটেছে দেশটিতে। যুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের আরও একটি দেশ ইতালির কিছু স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে বিশ্বের প্রাচীনতম ইহুদি এলাকাগুলোর একটি হলো রোমের ঘেটো। ইউরোপের বৃহত্তম ইহুদি উপাসনালয়গুলোরও এটি একটি। ইহুদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলার আশঙ্কায় সেখানকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই দর্শনার্থীদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। সেখানকার জনপ্রিয় ইহুদি-রোমান রেস্তোরাঁর মালিক মিশেল পাভোনসেলো বলেন, গত কয়েক দিনে আমরা সম্ভবত ১০০-২০০টি অর্ডার বাতিল করেছি কারণ

দর্শনার্থীরা এখন ঘেটোতে আসতে ভয় পান।’ অনেকে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তবে কেউ কেউ বলেছেন, ‘পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিরাপদ বোধ করি না।’ অন্যদিকে ফ্রান্সে গত বছরের তুলনায় গত তিন সপ্তাহে বেশি ইহুদি-বিরোধী ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ যুদ্ধের প্রথম ১০ দিনে ৩২০টিরও বেশি ইহুদিবিরোধী কার্যকলাপ নথিভুক্ত করেছে। গালাগালসহ প্রাণঘাতী হুমকিরও সম্মুখীন হচ্ছেন ইহুদিরা। দেশটির রাজধানী প্যারিসেও ইহুদিরা ভয়ে ভয়ে চলছেন। উত্তর শহরতলির বৃহত্তর ইহুদিদের এলাকাটি পুরোপুরি শান্ত হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়রা নিয়মিত চলাচল কমিয়ে দিয়েছেন। রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফেগুলোতে গ্রাহক তুলনামূলক কমে গিয়েছে। কোশার পিজারিয়া রেস্তোরাঁর ম্যানেজার অ্যালেক্সিস টিমসিট বলেন, ‘মানুষ ভয় পায়, হতবাক হয়ে যায়, তারা জীবনের প্রতি তাদের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে। আমারও ব্যবসা

৫০ শতাংশ কমে গেছে, রাস্তায় কোনো কোলাহল নেই, কেউ হাঁটছে না।’ ইউরোপ ছাড়া উত্তর আমেরিকার কানাডার ইহুদিরাও ভীতসন্ত্রস্ত। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মন্ট্রিলে দুইটি ইহুদি স্কুলে হামলা চালানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে স্কুলগুলোতে। এমনটাই জানিয়েছেন সেখানকার স্থানীয় পুলিশ। শিক্ষকরা কোট-দেস-নেইজেসের স্কুলের মাঠের সামনে একটি বিধ্বস্ত দরজা দেখতে পান। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হননি। কানাডায় এ ধরনের ঘটনা এর আগেও হয়েছে। দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে রয়েছে, মন্ট্রিল সিনাগগে বোমা হামলা এবং শহরের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি এবং ইসরাইলপন্থি গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ। এ ঘটনায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জাতীয়ভাবে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ট্রিল সফরকালে তিনি বলেন, আমি জানি মানুষের আবেগ

বেশি এবং মানুষ ভয় পায়। কিন্তু একে অপরকে আক্রমণ করা আমরা কানাডিয়ান হিসাবে হতে পারে না। একই অবস্থা ব্রিটেনেও। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে মানুষ। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭ টায় শত শত ব্রিটিশ ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যরা দেশটির একটি অস্ত্র কারখানা অবরোধ করেন। গাজায় হামলায় কারখানাটি ইসরাইলকে অস্ত্র সরবারাহ করছে। অনলাইনে ফুটেজে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের রচেস্টারে অসংখ্য সদস্য ব্যানার পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যানারগুলোতে লেখা, ‘এই কারখানাটি গণহত্যার অস্ত্র তৈরি করে। ইসরাইলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করুন।’