রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ॥ গলার কাঁটা – ইউ এস বাংলা নিউজ




রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ॥ গলার কাঁটা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:০১ 32 ভিউ
দেশের বিদ্যুতে চাহিদা মেটাতে বেশ তোড়জোড় করেই বিগত সরকারের আমলে উদ্বোধন করা হয়েছিল দেশের অন্যতম বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রামপালের। কিন্তু উদ্বোধনের প্রথম ৮ মাসেই যান্ত্রিক ত্রুটিসহ কয়লা সংকটে সাতবার বন্ধ হয় এর উৎপাদন। কোনো মাসেই উৎপাদন সক্ষমতার ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের মধ্যে কেন্দ্রটি ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করলেই কেন্দ্রটির বয়লারের ভেতরের টিউব ফেটে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু উৎপাদনক্ষম না হলেও প্রতিদিন ২৬৪ মেগাওয়াটের জন্য অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিচ্ছে। এতে করে প্রতিদিন রামপালের জন্য সরকার গচ্চা দিচ্ছে ৩ কোটি ৪০ লাখ ৬২ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মেয়াদ ২০ বছর ধরে হিসেব করলে কেন্দ্রটির

মোট গচ্চার পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্র সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এর জন্য মূল দায়ী গুটিকয়েক কর্মকর্তা। দেশের স্বার্থে এদের পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার তাগিদ দিয়েছেন তারা। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে যতগুলো বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অন্যতম। বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট ভেঞ্চারে নির্মাণ করা ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে গত বছরের ১৫ আগস্ট। তখন পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলেও এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন লোডে ইউনিটটির উৎপাদন ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর থেকে প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু উৎপাদন

শুরুর পর থেকেই কখনো কয়লা সংকট, কখনো কারিগরি ত্রুটি লেগেই আছে। এ নিয়ে গত আট মাসে সাত বার নানা কারণে সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। কেন্দ্রটি চালুর পর পরই প্রথম গত বছরের ১৪ জানুয়ারি কয়লা সংকটের কারণে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় এক মাসের মতো বন্ধ রাখা হয়। এরপর ২৩ এপ্রিল একই কারণে ১৫ দিন বন্ধ রাখা হয়, ৩০ জুলাই সাময়িক বন্ধ রাখা হয় ১৬ দিন। এভাবে প্রতি মাসে কখনো কয়লা সংকট, কখনো যান্ত্রিক ত্রুটিতে কোনো মাসে দুইবারও বন্ধ রাখতে হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে বিব্রত খোদ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসেই রানিং বিদ্যুৎকেন্দ্র

হঠাৎ বন্ধ ঘোষণা করতে হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক হতে পারে না। কয়লা সংকট ভিন্ন বিষয়, কিন্তু চালুর পর থেকেই কারিগরি ত্রুটি কতবার হতে পারে? এটিকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কোনো মানেই নেই। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের বেশকিছু যন্ত্রপাতিতে সমস্যা রয়েছে বলেও জানান তিনি। সুন্দরবনের পাশেই নির্মাণ করা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে শুরু থেকেই বাংলাদেশের পরিবেশবাদীদের বিরোধীতার মুখে পড়েছিল সরকার। এমনকি ইউনেসকো রামপাল ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নিয়েও বিদ্যুৎ কেন্দ্রর নির্মাণ ঠেকাতে পারেনি। ভারতীয় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যৌথভাবে ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে। বাগেরহাটের রামপালে সুন্দর বনের খুব কাছেই কেন্দ্রটি নির্মাণ করা

হয়েছে। রামপাল কিভাবে বাংলাদেশের গলার কাঁটা ॥ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট। কেন্দ্রটি নিজস্ব ব্যবহার বাদে গ্রিডে এক সঙ্গে ১২৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। অন্তত পিডিবি তার নিজের বিদ্যুৎ কেন্দ্রর বিষয়ে এমন ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন শুরুর পর থেকে কোনো দিন এক মিনিটের জন্যও ১২৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি। কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের সমান উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট করে। কিন্তু ৪৫০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট লোডের বেশি উৎপাদন করতে গেলেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রর বয়লারের মধ্যে থাকা টিউব ফেটে যায়। কেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর আগে যতবারই এই চেষ্টা করা হয়েছে ততবারই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎটির টিউব ফেটে কয়েক দিন বন্ধ

থেকেছে। এ জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার অনুমতি নিয়ে কেন্দ্রটির উৎপাদন সব সময় এক হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রের ছাড়পত্র যেহেতু ১২৬৪ মেগাওয়াটের সেহেতু কেন্দ্রটি যাই উৎপাদন করুক না কেন ১২৬৫ মেগাওয়াটের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেওয়া হয়। রামপালে প্রতিদিন রাষ্ট্রের গচ্চা ৩ কোটি ৪০ লাখ ৬২ হাজার টাকা ॥ কেন্দ্রটি যেহেতু এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না সেহেতু প্রতিদিন এক হাজার মেগাওয়াটের জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নির্ধারণ করা উচিত ছিল। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির কাছ থেকে ৪ দশমিক ৮৫ সেন্ট ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিয়ে থাকে। এখন প্রতি দিন কেন্দ্রটি যদি ২৬৪

মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিয়ে যায় তাহলে সে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নেয় (২৬৪* ১০০০*২৪* ৪.৮৫) /১২০*১২০ বা ৩ কোটি ৪০ লাখ ৬২ হাজার টাকা অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিচ্ছে যা পুরোপুরি অবৈধ। কেন্দ্রটির মেয়াদকাল ২০ বছরে এই লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। কাজী আবসার উদ্দিন কীভাবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ॥ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল)। এই কোম্পানিটির বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানির এক মেয়াদে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় পরের মেয়াদে বাংলাদেশের তরফ থেকে দেওয়া হয়। কোম্পানিটি বাংলাদেশে এক দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে মাত্র একটি কেন্দ্রই নির্মাণ করেছে। শুরুতে কোম্পানিতে একজন ভারতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন কাজী আবসার উদ্দিন। আর কাজী আবসার উদ্দিনের সময়ই কেন্দ্রটির পুরো নির্মাণকাজ করে ভারত হেব্বি ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানি বা ভেল। এই কাজী আবসার উদ্দিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার আগেও ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বিআইএফপিসিএল এর প্রধান ক্রয় কর্মকর্তা ছিলেন। অর্থাৎ ঠিকাদার কোম্পানি ভেল এর নিয়োগের পেছনেও তার জোরালো ভূমিকা ছিল। প্রথমের ভারতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক চলে গেলে সেখানে ঠিকাদার কোম্পানি ভেলের ইচ্ছা এবং সুপারিশে কাজী আবসার উদ্দিনকে বিআইএফপিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ভারতীয়দের ধরার শেষ চেষ্টাও নষ্ট করে দেন আবসার ॥ প্রথমত আবসার কেন্দ্র নির্মাণের সময় পুরনো যন্ত্রাংশ বসানোর বিষয়টি তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে টের পেতে দেননি। দ্বিতীয়ত সরকার যখন বুঝতে পারে কেন্দ্রটি ভবিষ্যতে দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে তখন তৃতীয় একটি পক্ষকে দিয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদনে কেন্দ্রটি কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে তা ঠিক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই কেন্দ্রটির পরামর্শক হিসেবে ভেল নিয়োগ দিয়েছিল জার্মান কোম্পানি ফিশনারকে। ফিশনার জার্মাণ কোম্পানি হলেও এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল সব ভারতীয়। বিআইএফপিসিএলএর চাকরি চলে যাওয়ার পর আবসার উদ্দিন মাসিক আট লাখ টাকা বেতনে ফিশনারের অলিখিত পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। সরকার বাণিজ্যিক উৎপাদন ঠিক করে দেয়ার জন্য ঠিকাদারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ দিলে আবসার আরও এক দফা সুযোগ পেয়ে যান। তখন ফিশনারের মাধ্যমে কেন্দ্রটির উৎপাদন ১২৬৪ মেগাওয়াটের কম নয় দেখিয়ে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। তবে নিজের বিরুদ্ধে যদি কোনো তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন কাজী আবসার উদ্দিন। তিনি বলেন, কেন্দ্রটি কমিশনিংয়ের আগেই আমি চলে এসেছি। বর্তমানে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মানুষের দাবি-দাওয়া তুলছে। এরই প্রেক্ষিতেই হয়তো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। যদি তেমন হয় তা হলে তদন্ত হোক। আমার কোনো অসুবিধা নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঢাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে রামপালের এই কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছিল। কেন্দ্রটি থেকে ঢাকায় দৈনিক প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। বাকি বিদ্যুৎ খুলনায় সরবরাহ করা হতো। কিন্তু বৈশ্বিক ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র খুলতে না পারায় গত বছরের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো বন্ধ করে দেওয়া হয় এর উৎপাদন। এর এক মাস পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ৩০ হাজার টন কয়লা জেটিতে আসার পর আনলোড করে ১৫ ফেব্রুয়ারি আবারও উৎপাদন শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এরপরে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরেকটি জাহাজ আসলে উৎপাদন কিছুটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু তারপর থেকে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি লেগেই আছে কেন্দ্রটির। যাকে গলার কাঁটা হিসেবেই বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আলিকদম সীমান্তে ৩৩ রোহিঙ্গা আটক নিজ আসনে কেজরিওয়ালের ভরাডুবি, বিজেপিকে অভিনন্দন বড় অর্থনীতিবিদ হয়েও দেশের অর্থনীতিকে ভালো করতে পারেন নাই: মান্না সুপ্রিমকোর্টে নিরাপত্তা জোরদার দিল্লির মসনদ হারালেন কেজরিওয়াল, বিজেপির জয় জেলেনস্কির সঙ্গে আগামী সপ্তাহে দেখা করতে পারেন ট্রাম্প আরও তিন জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস জিম্মি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আবারও ব্যাপক শােডাউন হামাসের ট্রাম্পের গাজা খালির প্রস্তাব ‘পুরোপুরি খারিজ’ করলেন জার্মান চ্যান্সেলর ‘মুরগির মতো প্রাণ বাঁচিয়ে বিড়ালের মতো বেঁচে থাকুন’, কাকে বললেন চমক ত্রিদেশীয় সিরিজে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ড মালয়েশিয়ায় ৭৪ বাংলাদেশিসহ আটক ১১৬ অভিবাসী মালয়েশিয়ায় ইন্দোনেশিয়াকে টপকে শীর্ষে বাংলাদেশ তিন জিম্মিকে আজ মুক্তি দেবে হামাস ফের বিধ্বস্ত মার্কিন বিমান, ১০ যাত্রী নিহত উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা ট্রাম্পের সংলাপে বসতে নতুন প্রস্তাব সরকারের, পিটিআইয়ের অবস্থান অনিশ্চিত মার্কেট-কাঁচাবাজারে সন্ত্রাসীদের থাবা ছাত্রদের ওপর মোজাম্মেল বাহিনীর হামলা, গাজীপুরে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ ধানমন্ডি ৩২ এ ভাঙচুর নিয়ে যা বললেন সোহেল তাজ