
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

‘চেয়ারম্যানের ডিকলারের পরই সবাই হামলা চালায়’, ভিডিওতে বললেন বেঁচে যাওয়া তরুণী

কাকরাইলে অবস্থান নিয়েছে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা, জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না ঢাকার যেসব এলাকায়

গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্ত

সোমবার ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না ঢাকার যেসব এলাকায়

মাগুরা পৌর আ.লীগ সভাপতি বাকি ইমাম গ্রেফতার

ফিল্মি স্টাইলে স্পিডবোটে চড়ে গুলিবর্ষণ, আহত ১
মশা নিধন চোখে পড়ে না, চিকিৎসা নিয়ে কত কিছু!

ডেঙ্গু এখন শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। আগে বর্ষার পূর্বেই মশা নিধনের কর্মসূচি চোখে পড়ত, এখন সেটা চোখে পড়ে না। রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো, ওষুধ মজুত, ডাক্তার-নার্স আনা, ফি নির্ধারণ—সবই হয় দ্রুত। এ ব্যাপারে চিকিৎসা নিয়ে কিছু বিষয় দৃশ্যমান হলেও মশা মারার দিকে নজর ততটা নেই। ফলে মশার উপদ্রবে নাজেহাল নগরবাসী। মশক নিধনে কোনো কাজ করছে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই বাসাবাড়িতে মশা কামড়ায়। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দাবি, মশা নিধনে তারা নিয়মিত ওষুধ ছিটান। কিন্তু যে হারে মশার উপদ্রব বাড়ছে, তা নিধনে সিটি
করপোরেশনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার পরও তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করে মশা নিধনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা আমিমুল হাসান। তারা মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। তিনি বলেন, মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে, পাঁচতলার ওপরও মশা আসে। সন্ধ্যার পরে দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয়। অথবা মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। এমনকি এলাকার ফুটপাতের চায়ের দোকানেও দিনের বেলা মশায় কামড়ায়। একই রকম অভিযোগ যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকার বাসিন্দা ও একটি স্কুলের শিক্ষক রাকিব হাসানের। তার এলাকায় সরু গলিতে সিটি করপোরেশেনের কর্মীদের খুব একটা দেখা যায় না বলে তার আক্ষেপ। তিনি বলেন, গলিতে দাঁড়ালে মনে হবে, মশা উড়িয়ে নিয়ে যাবে। মৌমাছির মতো চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। সিটি
করপোরেশনের কর্মীরা আগে মাঝেমধ্যে ওষুধ ছিটিয়ে গেলেও এখন খুব একটা দেখা যায় না। তারা সরু গলিতে সাধারণত ওষুধ ছেটাতে চায় না। মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, আগে মশক নিধন কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে তদারকি করতেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। ৫ আগস্টের পর ডিএসসিসির সব ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন মশার উপদ্রব নিয়ে কারও কোনো জবাবদিহি নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৩ বছরের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে। অথচ মশা মারার কাজটা বারবার ঢিলেঢালা। বছরে শতকোটি টাকা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধনে খরচ করে। কিন্তু মশা কমে না; বরং বাড়ে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ—মারা
যাওয়া আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা। ২০১৯ সালে ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরই প্রথমবার ১ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন। দেড় শতাধিক মানুষ মারা যান। এরপর প্রতি বছর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩ সালে মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন, আর আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ। চলতি বছরও পৌনে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মারা গেছেন ৪৮ জন। এ পরিসংখ্যান বলছে, সরকার বেশি ব্যস্ত রোগী সামলাতে। হাসপাতালে শয্যা ঠিক করা হয়, কভিড হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড করা হয়, আইভি স্যালাইন মজুত করা হয়, আবার রোগীর চাপ বেশি হলে ডাক্তার-নার্স এনে যোগ করা হয়।
সরকারি হাসপাতালে ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়—পঞ্চাশ টাকা এনএস১, তিনশ টাকা বেসরকারিতে, সিবিসি চারশ টাকা। এ উদ্যোগগুলো রোগী দেখভালের দিকে, মশা মারার দিকে নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, আর সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন বলছেন, মশা না মেরে শুধু চিকিৎসায় জোর দিলে কিছু হবে না। বাহক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে ভেক্টর ম্যানেজমেন্টে জোর দেওয়া দরকার। অন্যদিকে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজির আহমেদ বলছেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা জবাবদিহি না থাকা। স্থানীয় সরকার আর স্বাস্থ্য বিভাগে দায় নেওয়ার কেউ নেই। ফলে মশা বাড়ে, ডেঙ্গু বাড়ে, আর সাধারণ
মানুষ মারা যায়। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১ লাখ মানুষ মশাবাহিত রোগে মারা যান। ৩ হাজার ৫০০-র বেশি প্রজাতির মশার মধ্যে ১০০ প্রজাতি মানুষের শরীরে রোগ ছড়ায়। অথচ এ মশা মারার কাজটিই বাংলাদেশের শহরে অবহেলার শিকার। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে যে টাকা খরচ করে, তাতে পরিবর্তন হওয়ার কথা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উত্তরে ১১০ কোটি, দক্ষিণে ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবু মশা কমে না। ১৩টি ওয়ার্ডে লার্ভার ঘনত্ব সীমার চেয়েও বেশি। এডিস মশা মারতে বিশেষ কর্মসূচি চালানো হচ্ছে কিছু ওয়ার্ডে, মাইকিং, মোবাইল কোর্ট, লার্ভিসাইডিং, লিফলেট বিতরণ চলছে। তবু মশা কমছে না। ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে বেশি এখন বরিশালে। গতকাল ১৫৪ জন সেখানে হাসপাতালে
ভর্তি হয়েছেন। সারা দেশে গতকাল ভর্তি হয়েছেন ৪৯২ জন। এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৭৬৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মারা গেছেন ৪৮ জন। পরিস্থিতি বলছে, সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যতটা ব্যস্ত রোগী দেখভালে, ততটা নয় মশা মারায়। ফলে রোগী বাড়ে, হাসপাতাল ভরে, পরিবারে কান্না নামে। অথচ সমাধানটা সরল—যদি মশা না থাকে, রোগও থাকবে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বিশেষ মশক নিধন এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযানের চতুর্থ পর্ব চলছে। বিশেষ এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় নাগরিকদের সম্পৃক্তকরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি। তিনি বলেন, এডাল্টিসাইডিংয়ে ব্যবহৃত প্রতিটি ফগার মেশিন প্রতি কীটনাশক ৩০ লিটার থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে ৬০ লিটার করা হয়েছে। এ ছাড়া, মশার ওষুধ ছিটানো নিশ্চিতকরণে অঞ্চলভিত্তিক তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সবার সচেতনতা। সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এডিস মশার উৎপত্তিস্থলের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে, যেন তারা তাদের বাসাবাড়ির আশপাশে পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমে থাকতে না দেয়। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কীটতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছয়টি ওয়ার্ডে মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে। সেসব ওয়ার্ডে সমন্বিতভাবে লার্ভা ও উড়ন্ত মশা নিধনে আজ থেকে একযোগে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযানের আওতায় এডিস মশার প্রজননস্থল অপসারণ, লার্ভিসাইডিং ও ফগিং, জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের অংশগ্রহণ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণ ছাড়া বিশাল জনসংখ্যার এই ঢাকা শহরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। আমরা যদি সচেতন হই, অন্তত নিজের আঙিনা নিজে পরিষ্কার করি, তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ডেঙ্গুতে এক দিনে আরও ৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ৪৯২ জন: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুজন বরিশালে এবং একজন খুলনা বিভাগে। এ নিয়ে চলতি বছর রোগটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কন্ট্রোল রুম জানায়, একই সময়ে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯২ জন, যা এক দিনের হিসাবে এ বছরের সর্বোচ্চ। এর আগে এক দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয় গত ২৪ জুন ৩৯৪ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৬৩ জনে।
করপোরেশনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার পরও তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করে মশা নিধনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা আমিমুল হাসান। তারা মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। তিনি বলেন, মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে, পাঁচতলার ওপরও মশা আসে। সন্ধ্যার পরে দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয়। অথবা মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। এমনকি এলাকার ফুটপাতের চায়ের দোকানেও দিনের বেলা মশায় কামড়ায়। একই রকম অভিযোগ যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকার বাসিন্দা ও একটি স্কুলের শিক্ষক রাকিব হাসানের। তার এলাকায় সরু গলিতে সিটি করপোরেশেনের কর্মীদের খুব একটা দেখা যায় না বলে তার আক্ষেপ। তিনি বলেন, গলিতে দাঁড়ালে মনে হবে, মশা উড়িয়ে নিয়ে যাবে। মৌমাছির মতো চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। সিটি
করপোরেশনের কর্মীরা আগে মাঝেমধ্যে ওষুধ ছিটিয়ে গেলেও এখন খুব একটা দেখা যায় না। তারা সরু গলিতে সাধারণত ওষুধ ছেটাতে চায় না। মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, আগে মশক নিধন কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে তদারকি করতেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। ৫ আগস্টের পর ডিএসসিসির সব ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন মশার উপদ্রব নিয়ে কারও কোনো জবাবদিহি নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৩ বছরের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে। অথচ মশা মারার কাজটা বারবার ঢিলেঢালা। বছরে শতকোটি টাকা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধনে খরচ করে। কিন্তু মশা কমে না; বরং বাড়ে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ—মারা
যাওয়া আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা। ২০১৯ সালে ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরই প্রথমবার ১ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন। দেড় শতাধিক মানুষ মারা যান। এরপর প্রতি বছর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩ সালে মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন, আর আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ। চলতি বছরও পৌনে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মারা গেছেন ৪৮ জন। এ পরিসংখ্যান বলছে, সরকার বেশি ব্যস্ত রোগী সামলাতে। হাসপাতালে শয্যা ঠিক করা হয়, কভিড হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড করা হয়, আইভি স্যালাইন মজুত করা হয়, আবার রোগীর চাপ বেশি হলে ডাক্তার-নার্স এনে যোগ করা হয়।
সরকারি হাসপাতালে ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়—পঞ্চাশ টাকা এনএস১, তিনশ টাকা বেসরকারিতে, সিবিসি চারশ টাকা। এ উদ্যোগগুলো রোগী দেখভালের দিকে, মশা মারার দিকে নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, আর সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন বলছেন, মশা না মেরে শুধু চিকিৎসায় জোর দিলে কিছু হবে না। বাহক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে ভেক্টর ম্যানেজমেন্টে জোর দেওয়া দরকার। অন্যদিকে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজির আহমেদ বলছেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা জবাবদিহি না থাকা। স্থানীয় সরকার আর স্বাস্থ্য বিভাগে দায় নেওয়ার কেউ নেই। ফলে মশা বাড়ে, ডেঙ্গু বাড়ে, আর সাধারণ
মানুষ মারা যায়। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১ লাখ মানুষ মশাবাহিত রোগে মারা যান। ৩ হাজার ৫০০-র বেশি প্রজাতির মশার মধ্যে ১০০ প্রজাতি মানুষের শরীরে রোগ ছড়ায়। অথচ এ মশা মারার কাজটিই বাংলাদেশের শহরে অবহেলার শিকার। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে যে টাকা খরচ করে, তাতে পরিবর্তন হওয়ার কথা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উত্তরে ১১০ কোটি, দক্ষিণে ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবু মশা কমে না। ১৩টি ওয়ার্ডে লার্ভার ঘনত্ব সীমার চেয়েও বেশি। এডিস মশা মারতে বিশেষ কর্মসূচি চালানো হচ্ছে কিছু ওয়ার্ডে, মাইকিং, মোবাইল কোর্ট, লার্ভিসাইডিং, লিফলেট বিতরণ চলছে। তবু মশা কমছে না। ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে বেশি এখন বরিশালে। গতকাল ১৫৪ জন সেখানে হাসপাতালে
ভর্তি হয়েছেন। সারা দেশে গতকাল ভর্তি হয়েছেন ৪৯২ জন। এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৭৬৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মারা গেছেন ৪৮ জন। পরিস্থিতি বলছে, সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যতটা ব্যস্ত রোগী দেখভালে, ততটা নয় মশা মারায়। ফলে রোগী বাড়ে, হাসপাতাল ভরে, পরিবারে কান্না নামে। অথচ সমাধানটা সরল—যদি মশা না থাকে, রোগও থাকবে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বিশেষ মশক নিধন এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযানের চতুর্থ পর্ব চলছে। বিশেষ এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় নাগরিকদের সম্পৃক্তকরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি। তিনি বলেন, এডাল্টিসাইডিংয়ে ব্যবহৃত প্রতিটি ফগার মেশিন প্রতি কীটনাশক ৩০ লিটার থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে ৬০ লিটার করা হয়েছে। এ ছাড়া, মশার ওষুধ ছিটানো নিশ্চিতকরণে অঞ্চলভিত্তিক তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সবার সচেতনতা। সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এডিস মশার উৎপত্তিস্থলের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে, যেন তারা তাদের বাসাবাড়ির আশপাশে পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমে থাকতে না দেয়। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কীটতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছয়টি ওয়ার্ডে মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে। সেসব ওয়ার্ডে সমন্বিতভাবে লার্ভা ও উড়ন্ত মশা নিধনে আজ থেকে একযোগে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযানের আওতায় এডিস মশার প্রজননস্থল অপসারণ, লার্ভিসাইডিং ও ফগিং, জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের অংশগ্রহণ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণ ছাড়া বিশাল জনসংখ্যার এই ঢাকা শহরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। আমরা যদি সচেতন হই, অন্তত নিজের আঙিনা নিজে পরিষ্কার করি, তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ডেঙ্গুতে এক দিনে আরও ৩ মৃত্যু, হাসপাতালে ৪৯২ জন: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুজন বরিশালে এবং একজন খুলনা বিভাগে। এ নিয়ে চলতি বছর রোগটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কন্ট্রোল রুম জানায়, একই সময়ে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯২ জন, যা এক দিনের হিসাবে এ বছরের সর্বোচ্চ। এর আগে এক দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয় গত ২৪ জুন ৩৯৪ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৬৩ জনে।