ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
নিবিড় হচ্ছে ঢাকা-ইসলামাবাদ সামরিক বন্ধন: অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেলের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর রাওয়ালপিন্ডি যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
ঢাকায় স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল: অবৈধ ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আওয়ামী লীগ, ১০ মাসে গ্রেপ্তার ৩ হাজার
ইউনূস সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকার ৪০ স্থানে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল
রাউজান-গাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র থানা লুটের
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিভিন্ন পশ্চিমা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
অক্টোবরে হেফাজতে মৃত্যু ও অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার বৃদ্ধি, মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’
অধস্তন আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার বসছে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা
বর্তমান বাস্তবতায় অন্তবর্তী সরকার গঠনকল্পে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে পাঠানো মহামান্য রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সটি রি-কল (Recall) হওয়া উচিত
বাংলাদেশে বর্তমানে এক চরম নাজুক পরিস্থিতি বিরাজমান। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুঃশাসন, জুলাই সনদের নামে সংবিধান লঙ্ঘন, আইনের অপপ্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, শান্তি শৃঙ্খলার চরম অবনতি, মানুষের মৌলিক অধিকার পদদলিত, রাষ্ট্রীয় মদদে মবসন্ত্রাস ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া, ব্যবসা-বানিজ্যের মন্দাভাব, একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া, বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়া, মানুষের জীবন যাপনে চরম অসন্তোষ, বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা তথা জাতীয় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন কর্তৃক জাতির সাথে প্রতারণা, রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথেও প্রতারণা মর্মে বিএনপির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় যেই ধরনের অস্থিতিশীলতা বিরাজমান, তাতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে পাঠানো সংবিধানের ১০৬
অনুচ্ছেদের রেফারেন্স এবং কথিত মতামতটি রি-কল (Recall) করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিলুপ্ত করণ অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, রেফারেন্স এবং তার প্রেক্ষিতে আপীল বিভাগের মতামতটি কে বা কার কর্তৃক রি-কল (Recall) হবে? দেখুন, রি-কল (Recall) আমাদের আইন আদালতের একটি ভাষা। কোন আদালত কর্তৃক যদি কোন আদেশ সময়ের ব্যবধানে ভুল বা ত্রুটিযুক্ত বা অপ্রয়োজনীয় বলে প্রতীয়মান হয়, তখন পক্ষগণের কেউ যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আদেশটি রি-কল করণের জন্য আবেদন করতে পারে। আবার আদালত স্বপ্রণোদিত হয়েও কোনো আদেশ রি-কল করতে পারে। এর অর্থ হলো আদেশটি অনবধানতাবশত হয়েছে মর্মে বা অপ্রয়োজনীয় হয়েছে বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেয়া। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমি একাধিক মামলায় আদেশ
রি-কল করণের আবেদন করেছি এবং আদালত শুনানী গ্রহণ শেষে যৌক্তিক বিবেচনায় আদেশ রি-কল করেছেন। এইক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অথবা সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ, তাদের যে কেউ রেফারেন্স এবং মতামতটি প্রত্যাহার করে নিতে পারে। যদি রাষ্ট্রপতি তার পাঠানো রেফারেন্স প্রত্যাহার করেন, তাহলে তার যুক্তি থাকবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ পত্র রাষ্ট্রপতির কাছে নাই। অপরদিকে আপীল বিভাগ তাদের মতামতটি প্রত্যাহার করে নিতে পারেন এই মর্মে যে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সটি আপীল বিভাগে উত্থাপন ও শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়েও আপীল বিভাগের কাছে অস্পষ্টতা প্রতীয়মান। আসলে এই কাজটি বিগত বছরের ২৬ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিনে জনাব মতিউর রহমান চৌধুরীর সাথে মহামান্য
রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পরদিনই করা উচিত ছিলো। ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান চৌধুরী মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে আলাপচারিতার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাতে তিনি লিখেছেন, “সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মিডিয়ার সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর জানিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের মুখোমুখি হলাম। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন। প্রশ্ন করলাম, আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে? রাষ্ট্রপতি
বললেন, আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও সংগ্রহ করতে আমি ব্যর্থ হয়েছি।” দেখুন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ পত্রের দালিলিক প্রমাণ নাই, সেহেতু তিনি তাঁর পাঠানো রেফারেন্সটি অনবধানতাবশত হয়েছে মর্মে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এটি করতে না চাইলে, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদটি জাতির সামনে তুলে ধরে, মতামতটি প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “যদি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রীম
কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপীল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানীর পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।” দেখুন, সংবিধানের প্রদত্ত অনুচ্ছেদের স্পষ্ট কথা হলো, উপযুক্ত শুনানীর পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন। আপীল বিভাগের কাছে এটি স্পষ্ট যে, ০৫ আগস্টের পর আপীল বিভাগের কাছে পাঠানো রাষ্ট্রপতির প্রশ্নটির উপযুক্ত শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি, ০৫ আগস্ট থেকে ০৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠান পর্যন্ত আপীল বিভাগ এজলাসে বসেনি, প্রত্যক্ষভাবে এজলাসে বা ভার্চুয়ালি শুনানী হওয়ার কোনো রেকর্ড আপীল বিভাগের কাছে নাই। এখন প্রশ্ন হলো, ঐ মতামত অথবা
রেফারেন্সটি যদি প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে পরবর্তী করণীয় কি হবে? দেশে কি কোন সাংবিধানিক সংকট দেখা দিবে? আমার মতামত হলো, মোটেও সাংবিধানিক সংকট দেখা দিবে না। বরং সংকট দূরীকরণে সুযোগ সৃষ্টি হবে। আপীল বিভাগ মতামতটি প্রত্যাহার করে নিলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি পুনরায় সংকট নিরসনে মতামতের জন্য প্রশ্নটি আপীল বিভাগে পাঠাবেন, সংবিধানের প্রদত্ত অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুসরণ করে আপীল বিভাগ শুনানীর ব্যবস্থা করবেন এবং শুনানীর পর স্বীয় মতামত প্রদান করবেন। যদি মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি রেফারেন্সটি প্রত্যাহার করে নেন, তাহলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব পালন করতে বলবেন অথবা যথাযথ নিয়মে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করবেন। এসবের কোনটিই না হলে অদূর ভবিষ্যতে বর্তমান সেনাপ্রধান এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসকল আদালতে বিচার চলছে, সকলেই আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের সম্মুখীন হবেন। কারণ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মিডিয়ার সামনে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর জানিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেননি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে যেসকল আদালতে বিচার চলছে, সেসব আদালতের বিচারকগণ কিভাবে বিপদে পড়বেন? দেখুন, দেশের প্রধানমন্ত্রী তার স্বীয় পদে বহাল থাকাবস্থায় তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা দায়ের হতে পারে না। তার বিরুদ্ধে কোনো বিচার চলতে পারে না। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেননি, তৎমর্মে গতবছরের ২৬ অক্টোবরে মহামান্য রাষ্ট্রপতির উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরপরই সকল আদালত এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উচিত ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর বিলুপ্তি ঘোষণা করা। এখানে উল্লেখ করতে চাই, ঢাকার পল্টন থানায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রুজু হওয়া একটি হত্যা মামলার দলিলাদি আমার হস্তগত হয়েছে। উক্ত মামলায় শেখ হাসিনার সাথে একজন ব্যবসায়ীকে আসামী করা হয়েছে, তিনি মামলার দলিলাদির ৩৮ পাতা আমার কাছে পাঠালেন। আমি দলিলাদি পর্যালোচনা করে হতবাক হয়েছি, পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সম্পূর্ণ বেআইনি একটি কাজ করেছেন। হত্যা মামলাটি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সি. আর. মামলা হিসেবে দায়ের হয়। আদালত মামলার ভিকটিম অর্থাৎ মৃতকের নামে কোথায় কোন মামলা আছে কি-না তা তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঐ আদেশ বলেই মামলা এফআইআর করেছেন, অথচ ঐ আদেশে আদালত তাকে এফআইআর করতে বলেনি। তুঘলকি কান্ড। এসব রেকর্ড তো থাকবে। আজ হয়তো আইনের শাসন নাই, কোনদিন যদি আইনের শাসন ফিরে আসে, তাহলে এসব দলিলাদি অবশ্যই কথা বলবে। অতএব, মাননীয় সেনাপ্রধান, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং সংশ্লিষ্ট বিচারকগণ যার যার অবস্থান থেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন, এমনটিই প্রত্যাশা করছি। আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও যথাযথ প্রয়োগ, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের অঙ্গীকার। সংবিধানের সুরক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। গোলাম হোসেন, আইনজীবী। ৩১ অক্টোবর, ২০২৫।
অনুচ্ছেদের রেফারেন্স এবং কথিত মতামতটি রি-কল (Recall) করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিলুপ্ত করণ অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, রেফারেন্স এবং তার প্রেক্ষিতে আপীল বিভাগের মতামতটি কে বা কার কর্তৃক রি-কল (Recall) হবে? দেখুন, রি-কল (Recall) আমাদের আইন আদালতের একটি ভাষা। কোন আদালত কর্তৃক যদি কোন আদেশ সময়ের ব্যবধানে ভুল বা ত্রুটিযুক্ত বা অপ্রয়োজনীয় বলে প্রতীয়মান হয়, তখন পক্ষগণের কেউ যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আদেশটি রি-কল করণের জন্য আবেদন করতে পারে। আবার আদালত স্বপ্রণোদিত হয়েও কোনো আদেশ রি-কল করতে পারে। এর অর্থ হলো আদেশটি অনবধানতাবশত হয়েছে মর্মে বা অপ্রয়োজনীয় হয়েছে বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেয়া। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমি একাধিক মামলায় আদেশ
রি-কল করণের আবেদন করেছি এবং আদালত শুনানী গ্রহণ শেষে যৌক্তিক বিবেচনায় আদেশ রি-কল করেছেন। এইক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অথবা সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ, তাদের যে কেউ রেফারেন্স এবং মতামতটি প্রত্যাহার করে নিতে পারে। যদি রাষ্ট্রপতি তার পাঠানো রেফারেন্স প্রত্যাহার করেন, তাহলে তার যুক্তি থাকবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ পত্র রাষ্ট্রপতির কাছে নাই। অপরদিকে আপীল বিভাগ তাদের মতামতটি প্রত্যাহার করে নিতে পারেন এই মর্মে যে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সটি আপীল বিভাগে উত্থাপন ও শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়েও আপীল বিভাগের কাছে অস্পষ্টতা প্রতীয়মান। আসলে এই কাজটি বিগত বছরের ২৬ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিনে জনাব মতিউর রহমান চৌধুরীর সাথে মহামান্য
রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পরদিনই করা উচিত ছিলো। ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান চৌধুরী মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে আলাপচারিতার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাতে তিনি লিখেছেন, “সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মিডিয়ার সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর জানিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের মুখোমুখি হলাম। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন। প্রশ্ন করলাম, আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে? রাষ্ট্রপতি
বললেন, আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও সংগ্রহ করতে আমি ব্যর্থ হয়েছি।” দেখুন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ পত্রের দালিলিক প্রমাণ নাই, সেহেতু তিনি তাঁর পাঠানো রেফারেন্সটি অনবধানতাবশত হয়েছে মর্মে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এটি করতে না চাইলে, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদটি জাতির সামনে তুলে ধরে, মতামতটি প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “যদি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রীম
কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হইলে তিনি প্রশ্নটি আপীল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করিতে পারিবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানীর পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।” দেখুন, সংবিধানের প্রদত্ত অনুচ্ছেদের স্পষ্ট কথা হলো, উপযুক্ত শুনানীর পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারিবেন। আপীল বিভাগের কাছে এটি স্পষ্ট যে, ০৫ আগস্টের পর আপীল বিভাগের কাছে পাঠানো রাষ্ট্রপতির প্রশ্নটির উপযুক্ত শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি, ০৫ আগস্ট থেকে ০৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠান পর্যন্ত আপীল বিভাগ এজলাসে বসেনি, প্রত্যক্ষভাবে এজলাসে বা ভার্চুয়ালি শুনানী হওয়ার কোনো রেকর্ড আপীল বিভাগের কাছে নাই। এখন প্রশ্ন হলো, ঐ মতামত অথবা
রেফারেন্সটি যদি প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে পরবর্তী করণীয় কি হবে? দেশে কি কোন সাংবিধানিক সংকট দেখা দিবে? আমার মতামত হলো, মোটেও সাংবিধানিক সংকট দেখা দিবে না। বরং সংকট দূরীকরণে সুযোগ সৃষ্টি হবে। আপীল বিভাগ মতামতটি প্রত্যাহার করে নিলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি পুনরায় সংকট নিরসনে মতামতের জন্য প্রশ্নটি আপীল বিভাগে পাঠাবেন, সংবিধানের প্রদত্ত অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুসরণ করে আপীল বিভাগ শুনানীর ব্যবস্থা করবেন এবং শুনানীর পর স্বীয় মতামত প্রদান করবেন। যদি মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি রেফারেন্সটি প্রত্যাহার করে নেন, তাহলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব পালন করতে বলবেন অথবা যথাযথ নিয়মে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করবেন। এসবের কোনটিই না হলে অদূর ভবিষ্যতে বর্তমান সেনাপ্রধান এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসকল আদালতে বিচার চলছে, সকলেই আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের সম্মুখীন হবেন। কারণ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মিডিয়ার সামনে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর জানিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেননি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে যেসকল আদালতে বিচার চলছে, সেসব আদালতের বিচারকগণ কিভাবে বিপদে পড়বেন? দেখুন, দেশের প্রধানমন্ত্রী তার স্বীয় পদে বহাল থাকাবস্থায় তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা দায়ের হতে পারে না। তার বিরুদ্ধে কোনো বিচার চলতে পারে না। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেননি, তৎমর্মে গতবছরের ২৬ অক্টোবরে মহামান্য রাষ্ট্রপতির উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরপরই সকল আদালত এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উচিত ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর বিলুপ্তি ঘোষণা করা। এখানে উল্লেখ করতে চাই, ঢাকার পল্টন থানায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রুজু হওয়া একটি হত্যা মামলার দলিলাদি আমার হস্তগত হয়েছে। উক্ত মামলায় শেখ হাসিনার সাথে একজন ব্যবসায়ীকে আসামী করা হয়েছে, তিনি মামলার দলিলাদির ৩৮ পাতা আমার কাছে পাঠালেন। আমি দলিলাদি পর্যালোচনা করে হতবাক হয়েছি, পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সম্পূর্ণ বেআইনি একটি কাজ করেছেন। হত্যা মামলাটি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সি. আর. মামলা হিসেবে দায়ের হয়। আদালত মামলার ভিকটিম অর্থাৎ মৃতকের নামে কোথায় কোন মামলা আছে কি-না তা তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঐ আদেশ বলেই মামলা এফআইআর করেছেন, অথচ ঐ আদেশে আদালত তাকে এফআইআর করতে বলেনি। তুঘলকি কান্ড। এসব রেকর্ড তো থাকবে। আজ হয়তো আইনের শাসন নাই, কোনদিন যদি আইনের শাসন ফিরে আসে, তাহলে এসব দলিলাদি অবশ্যই কথা বলবে। অতএব, মাননীয় সেনাপ্রধান, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং সংশ্লিষ্ট বিচারকগণ যার যার অবস্থান থেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন, এমনটিই প্রত্যাশা করছি। আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও যথাযথ প্রয়োগ, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের অঙ্গীকার। সংবিধানের সুরক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। গোলাম হোসেন, আইনজীবী। ৩১ অক্টোবর, ২০২৫।



