বছর বছর ঝিমোচ্ছে ১২১ প্রকল্প – ইউ এস বাংলা নিউজ




বছর বছর ঝিমোচ্ছে ১২১ প্রকল্প

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৯:৪৯ 14 ভিউ
উন্নয়নের নামে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে। প্রকল্প প্রণয়ন থেকে অনুমোদন পর্যন্তই সেই আগ্রহ থাকে তাদের প্রবলভাবে; কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে সেই আগ্রহ তেমন দেখা যায় না। এ কারণে কোনো কাজ ছাড়াই একের পর এক অর্থবছর পার করে দিচ্ছে শত শত প্রকল্প। অনেক ক্ষেত্রে দশক পেরিয়ে গেলেও কাজ হয় না। যুগ পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি শূন্য—এমন নজিরও রয়েছে। শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই এমন ১২১টি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোতে কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি, শুধু কর্মীদের বেতন ও অফিস খরচ বাবদ অর্থ ব্যয় করা ছাড়া কোনো কাজই হয়নি। এসব প্রকল্প শূন্য অগ্রগতি নিয়ে ঝুলে রয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি), যা বোঝা

বাড়াচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে (আইএমইডি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ওই অর্থবছরে ১২১ প্রকল্পের শূন্য ভৌত অগ্রগতির পাশাপাশি আর্থিক অগ্রগতি শূন্য রয়েছে ৮৯টি প্রকল্পে। যেটাকে আইএমইডি বলছে হতাশাব্যঞ্জক। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৬৫৯টি। কিন্তু অর্থবছর শেষে বেশিরভাগ প্রকল্পই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এডিপিতে থাকা মোট প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৩০০টির ভৌত অগ্রগতি ৫০ শতাংশের কম। আর ৬১টি প্রকল্পের অগ্রগতি ২৫ শতাংশেরও কম। এ ছাড়া রীতিমতো শূন্য অগ্রগতি নিয়েই অর্থবছর পার করেছে ১২১টি প্রকল্প। কাজ না হলেও

কিছু ক্ষেত্রে অর্থ খরচ হয়েছে কর্মীদের বেতন ও অফিস ব্যবস্থাপনা এবং ভাড়া করা গাড়ির খরচ বাবদ। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শূন্য অগ্রগতির তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৩টিতে এক দশকেও কোনো কাজ হয়নি। আর ৫ থেকে ১০ বছর ধরে শূন্য অগ্রগতি নিয়ে ঝুলে রয়েছে ৪০টি প্রকল্প। বাকি ৬৮টি প্রকল্প ১ থেকে ৫ বছর ধরে শূন্য অগ্রগতি নিয়েই অবস্থান করছে। দুই দশক ধরে ঝুলে থাকার নজিরও রয়েছে ‍এ তালিকায়। শুধু শূন্য অগ্রগতি নয়, পুরো অর্থবছরের ১ টাকাও খরচ করতে পারেনি—এমন প্রকল্পের সংখ্যাও কম নয়। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে বরাদ্দের ১ টাকাও খরচ হয়নি ৮৯টি প্রকল্পে। অথচ ওই অর্থবছরে

এসব প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৬২৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২৫ শতাংশের কম খরচ হয়েছে ৮৩টি প্রকল্পে। বরাদ্দের ৫০ শতাংশের নিচে খরচ হয়েছে ২৮৮টি প্রকল্পে। ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে ১৭৬টি প্রকল্পে। আইএমইডি বলছে, ২৯২টি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়, ১৭২টি প্রকল্পের অবস্থা হাতাশাব্যঞ্জক। মোটামুটি সন্তোষজনক ১৯৩টি প্রকল্পের অগ্রগতি। শূন্য অগ্রগতি নিয়ে এডিপিতে ঝুলে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে গুলশান, বারিধারা, বনানী লেক উন্নয়ন প্রকল্প। লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ২০১০ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৫ বছরেও কোনো কাজ করতে পারেনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ১০ বছর ধরে কাজ ছাড়াই ঝুলে আছে ‘আইন ও বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির

মাধ্যমে অধস্তন বিচার বিভাগ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প। আইন ও বিচার বিভাগের এ প্রকল্পটি ২০১৬-২০২৩ মেয়াদে বাস্তবানের কথা। কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও প্রায় এক দশকেও কোনো কাজ হয়নি, এমনকি বরাদ্দ থাকলেও কোনো অর্থ খরচ করতে পারেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছিল ২০১৫ সালে; কিন্তু এক দশকেও কোনো কাজ হয়নি। রংপুরের ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু কোনো কাজ ছাড়াই দশক ধরে এডিপিতে ঝুলে রয়েছে। দশ বছর ধরে কাজ ছাড়াই শূন্য অগ্রগতিতে ঝুলে রয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই বাজারের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস’

শীর্ষক প্রকল্প। জাতীয় উৎপাদনশীলতা সংস্থা এবং পেটেন্ট নকশা ও ট্রেডমার্ক বিভাগের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজও দশ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ‘ঢাকা সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পটির অনুমোদনের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হয়নি। ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে কারাগার নিরাপত্তার আধুনিকীকরণ প্রকল্পটির কাজও এক দশকে শুরু হয়নি। এ তালিকায় রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের একটি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পও। বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি দৈনদশা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্পে। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তিনটি প্রকল্প ১০ থেকে ১৩ বছর ধরে শূন্য অগ্রগতি নিয়ে ঝুলে রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ বছর ধরে কোনো কাজ ছাড়াই ঝুলে আছে

‘ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলায় উন্নয়ন আবাসিক প্লট’ নির্মাণ প্রকল্প, এক দশক ধরে ঝুলে রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসিক এবং বাণিজ্যিক প্লট সাইট ও পরিষেবা উন্নয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় আবাসিক এলাকায় আবাসিক প্লট ও পরিষেবার উন্নয়ন প্রকল্পটির অবস্থাও একই রকম। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এ প্রকল্পটি ২০১৫ সালে বাস্তবায়ন শুরুর কথা থাকলেও এখনো কোনো কাজ হয়নি। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্পটিও ৫ বছরের অধিক সময় ধরে কোনো কাজ ছাড়াই ঝুলে রয়েছে। সমাপ্ত প্রকল্পের চিত্র: ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩২৫টি প্রকল্প। কিন্তু শেষ হয়েছে ৩০৩টি। অনেকগুলোর আবার শতভাগ কাজ না করেই শেষ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সমাপ্তির তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করা হয়েছে মাত্র ১৭৪টির। বাকি ১২৯টি প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ না করেই সমাপ্ত করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশেরও কম কাজ করেই শেষ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি শেষ হওয়া ২৪টি প্রকল্প। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রতি বছরের মতো এবারও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা, ব্যয় প্রাক্কলন অতিক্রম, অভিজ্ঞতার অভাব, টেন্ডার জটিলতা এবং প্রশাসনিক ধীরগতির মতো পুরোনো সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব মামুন আল রশীদ বলেন, কোনো কাজ ছাড়াই প্রকল্পগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকা এডিপি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জন্য বোঝা। বছরের পর বছর ধরে কেন অগ্রগতি শূন্য অবস্থায়, এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকদের জবাবদিহি অবশ্যই প্রয়োজন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও দায় এড়াতে পারে না। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে মূল দায়দায়িত্ব হচ্ছে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এবং ওই সব মন্ত্রণালয়ের। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রকল্পের তো একটা উদ্দেশ্য থাকে; কিন্তু সেটা যেমন পূরণ হচ্ছে না, একইভাবে প্রকল্প বছরের পর বছর চলমান থাকায় নানারকম খরচ হচ্ছে; কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। কিছু গতানুগতিক কারণ তুলে ধরা হলেও এগুলোর সমাধান হচ্ছে না কিংবা দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়াও হচ্ছে না। শুধু অর্থ ও সময়ের অপচয় ঘটছে। কেন এমন হচ্ছে, সেটা ‍খুঁজে বের করতে হবে, সমস্যা থাকলে বন্ধ করে দিতে হবে। অন্যথায় অপচয় হতেই থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
শোবিজে হেনস্তার শিকার, অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিলেন আলিজাহ বছর বছর ঝিমোচ্ছে ১২১ প্রকল্প সাংবাদিক বুলুর মৃত্যু ঘিরে সামনে এলো ‘ভিডিও’, বাড়ছে রহস্য এলপি গ্যাসের দাম বাড়বে না কমবে, সিদ্ধান্ত আজ আজ ২৪ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যে জেলায় ঢাকায় আসছেন টিআই চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পুতিনের মন্তব্য বিদেশে বসে আদালতে ‘সশরীরে’ হাজিরা দেন আসামি সুদানে এক গ্রামে ভূমিধসে প্রাণহানি ১ হাজার, বেঁচে রইলেন মাত্র একজন আপ্যায়ন উপঢৌকন টাকার ছড়াছড়ি! জুতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সাপের কামড়ে যুবকের মৃত্যু সুমনার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শার্শায় বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১০ জন এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ চবির সব পরীক্ষা ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ঢাবি ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শার্শায় বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১০ জন ধূমকেতু বাংলাদেশে মুক্তির পথে ৩৮ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে কর কর্মকর্তা মিতু বরখাস্ত ফোর্বসের তালিকায় এশিয়ার শীর্ষ ১০০ স্টার্টআপে বাংলাদেশের পাঠাও ও সম্ভব