
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ইসরাইলকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে: হামাস

৫ বাংলাদেশিসহ ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র

আইসিসির গ্রেফতার এড়িয়ে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালেন নেতানিয়াহু

‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’ স্লোগানে মুখর বায়তুল মোকাররম এলাকা

আফগানিস্তানের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে আইপিএল

গাজার জন্য ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির ডাক এলো কোথা থেকে?

‘আমার গল্পটা মনে রেখো, আমি কেবল একটা সংখ্যা নই’
গাজাবাসীকে রক্ষায় দরকার বাংলাদেশি ক্যাপ্টেনের মতো সাহসী এয়ার স্ট্রাইকার

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে দীর্ঘ ১৫ মাসের আগ্রাসনের পর ৪২ দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি পেয়েছিল গাজাবাসী। স্বস্তি ফিরেছিল নারী-শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। তবে সেই স্বস্তিটা দীর্ঘ হতে দিলো না দখলদার ইসরাইল।
গত ১৮ মার্চ থেকে গাজাবাসীর ওপর নতুন করে বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইলের বর্বর বাহিনী। এতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। বিপরীতে কমে যাচ্ছে বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা।
যারাও বা বেঁচে যাচ্ছেন, তাদেরকেও উচ্ছেদ করা হচ্ছে বাড়িঘর থেকে। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের অবরোধের কারণে ক্ষুধা-দারিদ্র পীড়িত ফিলিস্তিনিরা এখন রোগে-শোকে ধুঁকে মরতে বসেছে। ক্রমাগত বোমাবর্ষণ ও হামলায় গোটা গাজা উপত্যকা যেন এক ধ্বংসস্তুপ ও মৃত্যুপুরীতে পরিণত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
ও তথ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় উপত্যকাটিকে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহতের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। এর বিপরীতে ইসরাইলকে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করে যাচ্ছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা জবাব হিসেবে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইল অভিমুখে এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। যার অধিকাংশই আয়রন ডোম প্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিহত করেছে ইসরাইল। সমর বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, পালটা বিমান হামলা করা না গেলে ইসরাইল সব সময়ই অপ্রতিরোধ্য। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই স্মরণ করেছেন ১৯৬৭ সালের তৃতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস। যে যুদ্ধে ইসরাইলের যমদূত হয়ে হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তা সাইফুল আজম সুজা। সাইফুল আজম পৃথিবীর
ইতিহাসের একমাত্র যোদ্ধা, যিনি একক ব্যক্তি হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন। একাই নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন বর্বর ইসরাইলি সেনাদের। এমন কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশের এই বৈমানিককে সেই সময় ‘নাত আল-সুজাহ’ সামরিক সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। এই বীর যোদ্ধার সেই গৌরবময় ইতিহাস হয়তো অনেকেরই অজানা। চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন পরিস্থিতিতে বাঙালি এই যোদ্ধার ইসরাইলকে প্রতিহত করার সেই ইতিহাস পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- সাইফুল আজম সুজা ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। এর আগে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত থাকাকালে ১৯৬৭ সালের জুন মাসে তৃতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে অংশ নিতে ইরাকি বিমানবাহিনীতে বদলি হন সাইফুল আজম সুজা। পশ্চিম
ইরাকে অবস্থান নিয়ে ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন তিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র ৫ দিনের মাথায় গাজা ও সিনাইয়ের কর্তৃত্ব নিয়েছিল ইসরাইল। জুনের ৫ তারিখে সিরীয় বিমানবাহিনীর দুই-তৃতীয়াংশ শক্তি ধ্বংস করে দেয় ইসরাইলের বিমান সেনারা। তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই ইসরাইল পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম দখল করে নেয়। দখল করে নেয় সিরিয়ার গোলান মালভূমিও। তাদের সামনে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ তৈরি করতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলিদের যমদূত হয়ে জর্ডানে যান সাইফুল আজম। ৬ জুন আকাশ থেকে প্রচণ্ড আক্রমণে মিসরীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধ-সরঞ্জাম গুঁড়িয়ে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। একই দিন বেলা ১২টা ৪৮ মিনিটে চারটি ইসরাইলি সুপারসনিক ‘ডাসল্ট সুপার মিস্টেরে’ জঙ্গি বিমান ধেয়ে আসে জর্ডানের
মাফরাক বিমান ঘাঁটির দিকে। এবার তাদের লক্ষ্য জর্ডানের ছোট্ট বিমানবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। সেই সময় ইসরাইলি সুপারসনিকের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো সমকক্ষ বিমান আরবীয়দের ছিল না। তবু ইসরাইলিদের ঠেকাতে মাফরাক বিমান ঘাঁটি থেকে ‘হকার হান্টার’ জঙ্গি বিমান নিয়ে বুক চিতিয়ে উড়াল দেন সাইফুল আজম। আর সেই হকার হান্টার দিয়েই ক্ষিপ্রগতির দুটি ইসরাইলি সুপারসনিক ঘায়েল করে ফেলেন বাংলাদেশি বৈমানিক। তার অব্যর্থ আঘাতে ভূপাতিত হয় একটি ইসরাইলি ‘সুপার মিস্টেরে’। আরেক আঘাতে প্রায় অকেজো হয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কোনো মতে পালিয়ে ইসরাইলি সীমানায় গিয়ে আছড়ে পড়ে আরেকটি বিমান। সেদিন অকুতোভয় বৈমানিক সাইফুল আজমের অকল্পনীয় বীরত্বের কারণে ইসরাইলের পুরো পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়। উল্টো নিজেদেরই দুটো
বিমান হারায় তারা। এমন বীরত্বের জন্য পুরস্কারস্বরূপ সাইফুল আজমকে ‘হুসাম-ই-ইস্তিকলাল’ সম্মাননায় ভূষিত করে জর্ডান সরকার। সাইফুল আজমের কাছে ইসরাইলি বৈমানিকদের ধরাশায়ী হওয়ার পরদিনই তার কৃতিত্বে ইরাকি বৈমানিক দলের কাছে চরমভাবে পরাজিত হয় ইসরাইল। ৭ জুন ইরাকের ‘এইচ-থ্রি’ ও ‘আল-ওয়ালিদ’ ঘাঁটি রক্ষা করার দায়িত্ব পড়ে এক ইরাকি বৈমানিক দলের কাঁধে। সাইফুল আজম ছিলেন সেই দলের অধিনায়ক। সেদিন চারটি ‘ভেটোর বোম্বার’ ও দুটি ‘মিরেজ থ্রিসি’ জঙ্গি বিমান নিয়ে আক্রমণ চালায় ইসরাইল। একটি ‘মিরেজ থ্রিসি’ বিমানে ছিলেন ইসরাইলি ক্যাপ্টেন গিডিওন দ্রোর। দ্রোরের গুলিতে নিহত হন আজমের উইংম্যান। তার হামলায় ভূপাতিত হয় দুটি ইরাকি বিমান। পরক্ষণেই এর জবাব দেন আজম। তার অব্যর্থ টার্গেটে পরিণত হয় দ্রোরের ‘মিরেজ থ্রিসি’।
সেই আঘাতের পর বাঁচার উপায় না পেয়ে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধরা দেন ক্যাপ্টেন দ্রোর। পরে ওই যুদ্ধবন্দির বিনিময়ে জর্ডান ও ইরাকের সহস্রাধিক সৈন্যকে মুক্ত করে দেয় ইসরাইল। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের প্রথম ৭২ ঘণ্টায় সাইফুল আজম একটি অনন্য রেকর্ড গড়েন। ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সর্বোচ্চ চারটি ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করেছেন। যে জন্য তাকে ‘নাত আল-সুজাহ’ সামরিক সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। সাইফুল আজমই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বৈমানিক যিনি চারটি দেশের বিমানবাহিনীর সৈন্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই চারটি দেশ হলো- পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক ও মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এছাড়া ৮টি ভিন্ন দেশের আট বাহিনীর বিমান পরিচালনা করেছেন আজম। যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, জর্ডান, ইরাক, রাশিয়া, চীন ও নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের হয়ে বিমান চালিয়েছেন তিনি। যুদ্ধক্ষেত্রে অনন্য সব অর্জন আর ইতিহাস গড়া সাইফুল আজমকে ২০০১ সালে ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার যেসব কর্মকাণ্ড বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে গর্বিত করে, সেসব ঘটনার কথা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই অজানা। অনেকে হয়তো তার পরিচয়ও জানেন না। তিনি পাবনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যও ছিলেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম তার ভাই। কিংবদন্তি এই বীর বাঙালি ২০২০ সালের জুনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। আজ গাজাবাসীকে রক্ষায় বাংলাদেশী ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের মতো এমন কয়েকজন সাহসী ও দক্ষ এয়ার স্ট্রাইকার দরকার। দরকার মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত সামরিক হস্তক্ষেপ।
ও তথ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় উপত্যকাটিকে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহতের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। এর বিপরীতে ইসরাইলকে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করে যাচ্ছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা জবাব হিসেবে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইল অভিমুখে এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। যার অধিকাংশই আয়রন ডোম প্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিহত করেছে ইসরাইল। সমর বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, পালটা বিমান হামলা করা না গেলে ইসরাইল সব সময়ই অপ্রতিরোধ্য। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই স্মরণ করেছেন ১৯৬৭ সালের তৃতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস। যে যুদ্ধে ইসরাইলের যমদূত হয়ে হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তা সাইফুল আজম সুজা। সাইফুল আজম পৃথিবীর
ইতিহাসের একমাত্র যোদ্ধা, যিনি একক ব্যক্তি হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন। একাই নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন বর্বর ইসরাইলি সেনাদের। এমন কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশের এই বৈমানিককে সেই সময় ‘নাত আল-সুজাহ’ সামরিক সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। এই বীর যোদ্ধার সেই গৌরবময় ইতিহাস হয়তো অনেকেরই অজানা। চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন পরিস্থিতিতে বাঙালি এই যোদ্ধার ইসরাইলকে প্রতিহত করার সেই ইতিহাস পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- সাইফুল আজম সুজা ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। এর আগে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত থাকাকালে ১৯৬৭ সালের জুন মাসে তৃতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে অংশ নিতে ইরাকি বিমানবাহিনীতে বদলি হন সাইফুল আজম সুজা। পশ্চিম
ইরাকে অবস্থান নিয়ে ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন তিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র ৫ দিনের মাথায় গাজা ও সিনাইয়ের কর্তৃত্ব নিয়েছিল ইসরাইল। জুনের ৫ তারিখে সিরীয় বিমানবাহিনীর দুই-তৃতীয়াংশ শক্তি ধ্বংস করে দেয় ইসরাইলের বিমান সেনারা। তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই ইসরাইল পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম দখল করে নেয়। দখল করে নেয় সিরিয়ার গোলান মালভূমিও। তাদের সামনে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ তৈরি করতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলিদের যমদূত হয়ে জর্ডানে যান সাইফুল আজম। ৬ জুন আকাশ থেকে প্রচণ্ড আক্রমণে মিসরীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধ-সরঞ্জাম গুঁড়িয়ে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। একই দিন বেলা ১২টা ৪৮ মিনিটে চারটি ইসরাইলি সুপারসনিক ‘ডাসল্ট সুপার মিস্টেরে’ জঙ্গি বিমান ধেয়ে আসে জর্ডানের
মাফরাক বিমান ঘাঁটির দিকে। এবার তাদের লক্ষ্য জর্ডানের ছোট্ট বিমানবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। সেই সময় ইসরাইলি সুপারসনিকের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো সমকক্ষ বিমান আরবীয়দের ছিল না। তবু ইসরাইলিদের ঠেকাতে মাফরাক বিমান ঘাঁটি থেকে ‘হকার হান্টার’ জঙ্গি বিমান নিয়ে বুক চিতিয়ে উড়াল দেন সাইফুল আজম। আর সেই হকার হান্টার দিয়েই ক্ষিপ্রগতির দুটি ইসরাইলি সুপারসনিক ঘায়েল করে ফেলেন বাংলাদেশি বৈমানিক। তার অব্যর্থ আঘাতে ভূপাতিত হয় একটি ইসরাইলি ‘সুপার মিস্টেরে’। আরেক আঘাতে প্রায় অকেজো হয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কোনো মতে পালিয়ে ইসরাইলি সীমানায় গিয়ে আছড়ে পড়ে আরেকটি বিমান। সেদিন অকুতোভয় বৈমানিক সাইফুল আজমের অকল্পনীয় বীরত্বের কারণে ইসরাইলের পুরো পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়। উল্টো নিজেদেরই দুটো
বিমান হারায় তারা। এমন বীরত্বের জন্য পুরস্কারস্বরূপ সাইফুল আজমকে ‘হুসাম-ই-ইস্তিকলাল’ সম্মাননায় ভূষিত করে জর্ডান সরকার। সাইফুল আজমের কাছে ইসরাইলি বৈমানিকদের ধরাশায়ী হওয়ার পরদিনই তার কৃতিত্বে ইরাকি বৈমানিক দলের কাছে চরমভাবে পরাজিত হয় ইসরাইল। ৭ জুন ইরাকের ‘এইচ-থ্রি’ ও ‘আল-ওয়ালিদ’ ঘাঁটি রক্ষা করার দায়িত্ব পড়ে এক ইরাকি বৈমানিক দলের কাঁধে। সাইফুল আজম ছিলেন সেই দলের অধিনায়ক। সেদিন চারটি ‘ভেটোর বোম্বার’ ও দুটি ‘মিরেজ থ্রিসি’ জঙ্গি বিমান নিয়ে আক্রমণ চালায় ইসরাইল। একটি ‘মিরেজ থ্রিসি’ বিমানে ছিলেন ইসরাইলি ক্যাপ্টেন গিডিওন দ্রোর। দ্রোরের গুলিতে নিহত হন আজমের উইংম্যান। তার হামলায় ভূপাতিত হয় দুটি ইরাকি বিমান। পরক্ষণেই এর জবাব দেন আজম। তার অব্যর্থ টার্গেটে পরিণত হয় দ্রোরের ‘মিরেজ থ্রিসি’।
সেই আঘাতের পর বাঁচার উপায় না পেয়ে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধরা দেন ক্যাপ্টেন দ্রোর। পরে ওই যুদ্ধবন্দির বিনিময়ে জর্ডান ও ইরাকের সহস্রাধিক সৈন্যকে মুক্ত করে দেয় ইসরাইল। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের প্রথম ৭২ ঘণ্টায় সাইফুল আজম একটি অনন্য রেকর্ড গড়েন। ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সর্বোচ্চ চারটি ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করেছেন। যে জন্য তাকে ‘নাত আল-সুজাহ’ সামরিক সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। সাইফুল আজমই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বৈমানিক যিনি চারটি দেশের বিমানবাহিনীর সৈন্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই চারটি দেশ হলো- পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক ও মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এছাড়া ৮টি ভিন্ন দেশের আট বাহিনীর বিমান পরিচালনা করেছেন আজম। যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, জর্ডান, ইরাক, রাশিয়া, চীন ও নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের হয়ে বিমান চালিয়েছেন তিনি। যুদ্ধক্ষেত্রে অনন্য সব অর্জন আর ইতিহাস গড়া সাইফুল আজমকে ২০০১ সালে ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার যেসব কর্মকাণ্ড বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে গর্বিত করে, সেসব ঘটনার কথা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই অজানা। অনেকে হয়তো তার পরিচয়ও জানেন না। তিনি পাবনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যও ছিলেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম তার ভাই। কিংবদন্তি এই বীর বাঙালি ২০২০ সালের জুনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। আজ গাজাবাসীকে রক্ষায় বাংলাদেশী ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের মতো এমন কয়েকজন সাহসী ও দক্ষ এয়ার স্ট্রাইকার দরকার। দরকার মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত সামরিক হস্তক্ষেপ।