২০২৪ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি
২০২৪ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আস্ক) তার বার্ষিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে, যেখানে গণপিটুনি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও আদিবাসীদের ওপর হামলার মতো ঘটনা প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১. গণপিটুনি: ‘মব জাস্টিস’–এর নাম নিয়ে হত্যাকাণ্ড
২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল গত বছরের দ্বিগুণের বেশি। আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানাচ্ছে, এ বছর ১২৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে গণপিটুনির শিকার হয়ে। ঢাকা বিভাগের ৫৭ জন, রাজশাহী বিভাগের ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৭ জন এবং খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট বিভাগে যথাক্রমে ১৪, ৭, ৫, ৫, ৪ জন নিহত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনকি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকেও গণপিটুনির শিকার হয়ে প্রাণ হারান। আস্কের প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা 'মব জাস্টিস' এর শিকার হচ্ছেন। ২. বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড: পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুঃশাসন ২০২৪ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমেছে, তবে এখনও এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের অভাব এবং নিরপেক্ষ তদন্তের ঘাটতি রয়েছে। ২১ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে, যার মধ্যে ৬ জন পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং ৩ জন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এছাড়া, থানাগুলিতে আটক ব্যক্তিদের জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য নির্যাতনের
অভিযোগ রয়েছে, যা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। ৩. গণ–অভ্যুত্থান: শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সহিংসতা ২০২৪ সালের গোড়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গণ–অভ্যুত্থানের সময় ৮৫৮ জন নিহত হন এবং ১১ হাজার ৫৫১ জন আহত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিশেষত জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া সহিংসতার পর, শিশুদের মৃত্যু এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা প্রভাব ফেলেছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, নিহতদের মধ্যে ১২৯ জন ১৮ বছর বয়সী শিশু-কিশোর ছিলেন। ৪. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নিপীড়ন ২০২৪ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ১৪৭টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪০৮টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর, ৩৬টি অগ্নিসংযোগ, ১১৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা এবং ৩২টি মন্দির ও মসজিদে হামলা হয়েছে। এর
মধ্যে ৪ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৩ জন হিন্দু এবং ১ জন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ৫. আদিবাসী জনগণের ওপর হামলা ও নির্যাতন ২০২৪ সালে পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবানের সরই তংগোঝিরি এলাকায় ১৭টি ত্রিপুরা পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়ে যায়, এবং খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত এবং আহত হন। এ ছাড়াও, উত্তরাঞ্চলে আদিবাসীদের ওপর হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ৬. সিদ্ধান্ত: রাষ্ট্রের দায়িত্ব বছরের পর বছর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলেছে, যা বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় গভীর আঘাত হেনেছে। সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি রাখতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও
নির্যাতন বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গণপিটুনি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে, এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করতে আরও অনেক কাজ করতে হবে। এভাবে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সরকারের উচিত, প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষা করতে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করা।
এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনকি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকেও গণপিটুনির শিকার হয়ে প্রাণ হারান। আস্কের প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা 'মব জাস্টিস' এর শিকার হচ্ছেন। ২. বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড: পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুঃশাসন ২০২৪ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমেছে, তবে এখনও এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের অভাব এবং নিরপেক্ষ তদন্তের ঘাটতি রয়েছে। ২১ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে, যার মধ্যে ৬ জন পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং ৩ জন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এছাড়া, থানাগুলিতে আটক ব্যক্তিদের জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য নির্যাতনের
অভিযোগ রয়েছে, যা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। ৩. গণ–অভ্যুত্থান: শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সহিংসতা ২০২৪ সালের গোড়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গণ–অভ্যুত্থানের সময় ৮৫৮ জন নিহত হন এবং ১১ হাজার ৫৫১ জন আহত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিশেষত জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া সহিংসতার পর, শিশুদের মৃত্যু এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা প্রভাব ফেলেছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, নিহতদের মধ্যে ১২৯ জন ১৮ বছর বয়সী শিশু-কিশোর ছিলেন। ৪. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নিপীড়ন ২০২৪ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ১৪৭টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪০৮টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর, ৩৬টি অগ্নিসংযোগ, ১১৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা এবং ৩২টি মন্দির ও মসজিদে হামলা হয়েছে। এর
মধ্যে ৪ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৩ জন হিন্দু এবং ১ জন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ৫. আদিবাসী জনগণের ওপর হামলা ও নির্যাতন ২০২৪ সালে পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবানের সরই তংগোঝিরি এলাকায় ১৭টি ত্রিপুরা পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়ে যায়, এবং খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত এবং আহত হন। এ ছাড়াও, উত্তরাঞ্চলে আদিবাসীদের ওপর হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ৬. সিদ্ধান্ত: রাষ্ট্রের দায়িত্ব বছরের পর বছর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলেছে, যা বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় গভীর আঘাত হেনেছে। সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি রাখতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও
নির্যাতন বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গণপিটুনি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে, এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করতে আরও অনেক কাজ করতে হবে। এভাবে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সরকারের উচিত, প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষা করতে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করা।