হজ নিবন্ধনে সাড়া নেই
এবারের হজ নিবন্ধনে সাড়া নেই। দু দফা সময় বাড়ানোর পরও কোটার অর্ধেকও নিবন্ধন হয়নি। সর্বশেষ ৩০ নভেম্বর শনিবার শেষদিন পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছে ৪২ হাজারের মতো। এ অবস্থায় আবার সময় বাড়ানো হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ধর্ম মন্ত্রণালয় আশা করছে, হয়তো আরও হাজার ত্রিশেক বাড়তে পারে। কিন্তু হজ এজেন্সিগুলো বলছে, কিছুতেই এবার সেটা ৫০ হাজার অতিক্রম করবে না। কেননা হজে যেতে ইচ্ছুকরা নিবন্ধন করে ফেলেছেন। এখন হয়তো সামনে আর ৫/৭ হাজার বাড়তে পারে।
এ দিকে নিবন্ধনের এমন হতাশাজনক চিত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আগামী বছরের হজের জন্য অনুমোদিত ১০৯টি হজ এজেন্সির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে। এসব এজেন্সি থেকে একজনও প্রাক-নিবন্ধন করেননি।
চলতি
বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। ৪১ হাজার ৯৪১ জন হজে যাননি অর্থাৎ কোটার প্রায় ৩৩ শতাংশ খালি ছিল। আগামী বছরের অবস্থা আরও খারাপ হবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাব নেতৃবৃন্দ। আগামীতে অর্ধেকেরও বেশি কোটা খালি থাকতে পারে। জানা গেছে, এই এজেন্সিগুলোকে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন না করার জন্য কেন হজ ২০২৫ মৌসুমের যোগ্য তালিকা হতে বাদ দেওয়া হবে না তার ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হিজরি ১৪৪৬/২০২৫ সালের হজের জন্য এরই মধ্যে সর্বমোট ৯৩৭টি হজ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করেছে। কিন্তু অনুমোদিত তালিকায় প্রকাশিত হজ এজেন্সির মধ্যে ১০৯টি
হজ এজেন্সির কোনো প্রাক-নিবন্ধন না হওয়ায় ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কেন হজের প্রতি মানুষের এত অনীহা? কেন বার বার সময় বাড়ানোর পরও সেটা অর্ধ লাখও অতিক্রম করেনি। এসব বিষয়ে হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পাঁচই আগস্টের পর দেশজুড়ে সর্বত্র অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাংক থেকে আমানত না পাওয়া, বিমানবন্দরে হয়রানি বা আটকে দেওয়ার আশঙ্কা ও নিবন্ধনের এককালীন ফি ৩ লাখ টাকা করায় হজযাত্রীরা নিবন্ধন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের বেশিরভাগই এখন হজের পরিবর্তে ওমরাহ করার দিকে ঝুঁকছেন। এবার গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় হজের প্রাথমিক নিবন্ধন। শুরুর পর দু-একজন করে নিবন্ধন করছিলেন। তখন এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে বলা
হয়, হজের খরচ কত হচ্ছে সেটা না জানলে মানুষ নিবন্ধন করবে না, প্যাকেজ ঘোষণা হলে নিবন্ধনের হার বাড়বে। আগামী বছর হজের খরচ একলাখ টাকা কমছে। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর সরকারি ও বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। পরে হজ এজেন্সির দুই গ্রুপ ৬ ও ৭ নভেম্বর প্যাকেজ ঘোষণা করে। ঘোষিত প্যাকেজ অনুযায়ী খরচ গত বছরের চেয়ে কমেছে। হজ এজেন্সির মালিকরা জানান, এবার হজের প্রাথমিক নিবন্ধনের টাকা বেশি হয়ে গেছে। হজের এখনো ছয় মাস বাকি, এত আগে অনেকেরই টাকা গোছানো নেই। কিন্তু গত বছর থেকে হজের প্রস্তুতির কার্যক্রম আগেই করতে হচ্ছে। তাই অনেকেই না বোঝার কারণে ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারছেন
না। এ ছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বড় একটা শ্রেণি হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন বা করতে বাধ্য হয়েছেন। কারও কারও হজে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্যে কুলাচ্ছে না, তারা প্রাক-নিবন্ধন করেই থেমে গেছেন। কারও আবার টাকা জমা থাকলেও ব্যাংকগুলো রুগ্ন অবস্থায় চলে যাওয়ায় টাকা তুলতে পারছেন না। এরই মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য কয়েক দফা তাগিদ দেওয়া হয়। তাতেও সাড়া না মেলায় সময় বাড়ানো হয়েছে আরও পনের দিন অর্থাৎ আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর আর নিবন্ধনের কোনো সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তিন লাখ টাকা দিয়ে
নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু লোকজন বলছেন, আমাদের কাছে একসঙ্গে এখন এত টাকা নেই। হজের বাকি এখনো ছয় মাস, একজন গ্রামের হজযাত্রীর একসঙ্গে এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। শহরের কিছু লোকের পক্ষে এটা সম্ভব। জানতে চাইলে হাব নেতা মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেন, অর্থনৈতিক মন্দাই বড় কারণ। মানুষের হাতে টাকা নেই, হাহাকার চলছে, দ্রব্যমূল্যের চাপে ঘায়েল তাদের জীবন, ব্যাংকও টাকা দেয়নি। সব কিছু মিলিয়ে সংকট। এ সম্পর্কে হাবের এক অংশের নেতা ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, সামনের বছর কি হবে তা বলাই মুশকিল। কেননা প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকা এবার ধরা হয়েছে, সেটা বেশি। প্রাথমিকভাবে এমন প্রস্তুতি মানুষের থাকে না। কারও
সন্তান হয়তো বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবে। কেউ সম্পত্তি বিক্রি করে, গরু ছাগল বিক্রি করে হজের খরচ জোগাড় করবেন। অন্য বছর তো শুরুতে বিমান ভাড়ার টাকাটা দিয়েই প্রাথমিক নিবন্ধন করা যেত। এবার এটা তিন লাখ টাকা ধার্য করার জন্য একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। Pause Unmute Remaining Time -7:03 Close PlayerUnibots.com এ ছাড়া সরকার পরিবর্তন হওয়ার কারণে একটি শ্রেণির হাতে টাকা থাকলেও চাপে আছে। তাদের এবার হজে যাওয়ার নিয়ত থাকলেও তারা পারছেন না বলে আমাদের ধারণা। এ শ্রেণির মধ্যে এবার হজে যাওয়ার প্রবণতা কম। অর্থনৈতিক কারণে অনেকের বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা ছিল, সেটাও তো অনেকে তুলতে পারছেন না। সবকিছু মিলিয়ে এবার হজে যাওয়ার আগ্রহ কম বলে মনে করেন গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের মালিক ফরিদ। অপর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাধারণত প্রতিবছর সরকারি দলের মাঠ পর্যায়ে ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী বিত্তবান হওয়ায় হজে যায় দল বেঁধে। মন্ত্রী-এমপি চেয়ারম্যানরা তাদের কর্মীদের নিয়ে হজে যাওয়ার বাজেট করেন। এবার ওই গ্রুপটা দৌড়ের ওপর থাকায় নিবন্ধনের সংখ্যায় হতাশার চিত্র নেমে এসেছে। এ ছাড়া আরও একটা বড় কারণ হলো- বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে ঝামেলা বা আটকে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটনার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাধারণ ধর্মপ্রাণ ও বিত্তবান ব্যক্তিও হজের যাওয়ার ঝুঁকি নেননি। এসব কারণেই নিবন্ধনে সাড়া মিলছে না। এদিকে এজেন্সি মালিকদের অন্য গ্রুপ ‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকদের নেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, নতুন করে কোনো কৌশল অবলম্বন করা না হলে এবার হজযাত্রী ৫০ হাজারের বেশি হবে না বলে আমরা মনে করছি। মানুষ মনে করেই নিয়েছে যে হজ অসাধ্য বিষয়, সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। তবে ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন। মানুষ এখন ওমরা করে চলে আসে। ওমরা করলে যে তার ফরজ আদায় হচ্ছে না, সেটা প্রচারের বিষয় আছে। আমরা বৈষম্যবিরোধী এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম, দুই লাখ টাকার ফি করতে, যাতে প্রাথমিক নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়। এটা করলেও নিবন্ধনে কিছুটা গতি আসত। এ সব বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক গণমাধ্যমকে জানান, বর্ধিত সময়ে নিবন্ধন আরও বাড়বে। আসলে হজ হলো দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। এটি পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই। প্রাথমিক নিবন্ধনের জমা নেওয়া টাকা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে যে টাকা নেওয়া হচ্ছে, সেটা শুধু বাংলাদেশ প্রান্তের খরচের জন্য নেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচের জন্য সৌদি আরবে খরচের একটা অংশ তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হয়। ওই টাকাটা সময়মতো পাঠাতে না পারলে ওখানকার কাজগুলো পিছিয়ে যাবে। গত বছর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটা তহবিল ছিল, সেখান থেকে সেই টাকাটা পরিশোধ করে পরে সমন্বয় করা হয়েছিল। এবার সেই তহবিলটা নেই। তাই মিনিমাম এ টাকাটা প্রাথমিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে। গত বছর টাকা কম নেওয়ায় সমস্যা হয়েছিল বলে সহকর্মীরা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে আবার কথা বলব। অনেকে বিমান ভাড়া রিভিউ করার জন্য বলেছেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন।
বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। ৪১ হাজার ৯৪১ জন হজে যাননি অর্থাৎ কোটার প্রায় ৩৩ শতাংশ খালি ছিল। আগামী বছরের অবস্থা আরও খারাপ হবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাব নেতৃবৃন্দ। আগামীতে অর্ধেকেরও বেশি কোটা খালি থাকতে পারে। জানা গেছে, এই এজেন্সিগুলোকে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন না করার জন্য কেন হজ ২০২৫ মৌসুমের যোগ্য তালিকা হতে বাদ দেওয়া হবে না তার ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হিজরি ১৪৪৬/২০২৫ সালের হজের জন্য এরই মধ্যে সর্বমোট ৯৩৭টি হজ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করেছে। কিন্তু অনুমোদিত তালিকায় প্রকাশিত হজ এজেন্সির মধ্যে ১০৯টি
হজ এজেন্সির কোনো প্রাক-নিবন্ধন না হওয়ায় ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কেন হজের প্রতি মানুষের এত অনীহা? কেন বার বার সময় বাড়ানোর পরও সেটা অর্ধ লাখও অতিক্রম করেনি। এসব বিষয়ে হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পাঁচই আগস্টের পর দেশজুড়ে সর্বত্র অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাংক থেকে আমানত না পাওয়া, বিমানবন্দরে হয়রানি বা আটকে দেওয়ার আশঙ্কা ও নিবন্ধনের এককালীন ফি ৩ লাখ টাকা করায় হজযাত্রীরা নিবন্ধন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের বেশিরভাগই এখন হজের পরিবর্তে ওমরাহ করার দিকে ঝুঁকছেন। এবার গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় হজের প্রাথমিক নিবন্ধন। শুরুর পর দু-একজন করে নিবন্ধন করছিলেন। তখন এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে বলা
হয়, হজের খরচ কত হচ্ছে সেটা না জানলে মানুষ নিবন্ধন করবে না, প্যাকেজ ঘোষণা হলে নিবন্ধনের হার বাড়বে। আগামী বছর হজের খরচ একলাখ টাকা কমছে। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর সরকারি ও বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। পরে হজ এজেন্সির দুই গ্রুপ ৬ ও ৭ নভেম্বর প্যাকেজ ঘোষণা করে। ঘোষিত প্যাকেজ অনুযায়ী খরচ গত বছরের চেয়ে কমেছে। হজ এজেন্সির মালিকরা জানান, এবার হজের প্রাথমিক নিবন্ধনের টাকা বেশি হয়ে গেছে। হজের এখনো ছয় মাস বাকি, এত আগে অনেকেরই টাকা গোছানো নেই। কিন্তু গত বছর থেকে হজের প্রস্তুতির কার্যক্রম আগেই করতে হচ্ছে। তাই অনেকেই না বোঝার কারণে ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারছেন
না। এ ছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বড় একটা শ্রেণি হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন বা করতে বাধ্য হয়েছেন। কারও কারও হজে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্যে কুলাচ্ছে না, তারা প্রাক-নিবন্ধন করেই থেমে গেছেন। কারও আবার টাকা জমা থাকলেও ব্যাংকগুলো রুগ্ন অবস্থায় চলে যাওয়ায় টাকা তুলতে পারছেন না। এরই মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য কয়েক দফা তাগিদ দেওয়া হয়। তাতেও সাড়া না মেলায় সময় বাড়ানো হয়েছে আরও পনের দিন অর্থাৎ আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর আর নিবন্ধনের কোনো সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তিন লাখ টাকা দিয়ে
নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু লোকজন বলছেন, আমাদের কাছে একসঙ্গে এখন এত টাকা নেই। হজের বাকি এখনো ছয় মাস, একজন গ্রামের হজযাত্রীর একসঙ্গে এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। শহরের কিছু লোকের পক্ষে এটা সম্ভব। জানতে চাইলে হাব নেতা মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেন, অর্থনৈতিক মন্দাই বড় কারণ। মানুষের হাতে টাকা নেই, হাহাকার চলছে, দ্রব্যমূল্যের চাপে ঘায়েল তাদের জীবন, ব্যাংকও টাকা দেয়নি। সব কিছু মিলিয়ে সংকট। এ সম্পর্কে হাবের এক অংশের নেতা ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, সামনের বছর কি হবে তা বলাই মুশকিল। কেননা প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকা এবার ধরা হয়েছে, সেটা বেশি। প্রাথমিকভাবে এমন প্রস্তুতি মানুষের থাকে না। কারও
সন্তান হয়তো বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবে। কেউ সম্পত্তি বিক্রি করে, গরু ছাগল বিক্রি করে হজের খরচ জোগাড় করবেন। অন্য বছর তো শুরুতে বিমান ভাড়ার টাকাটা দিয়েই প্রাথমিক নিবন্ধন করা যেত। এবার এটা তিন লাখ টাকা ধার্য করার জন্য একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। Pause Unmute Remaining Time -7:03 Close PlayerUnibots.com এ ছাড়া সরকার পরিবর্তন হওয়ার কারণে একটি শ্রেণির হাতে টাকা থাকলেও চাপে আছে। তাদের এবার হজে যাওয়ার নিয়ত থাকলেও তারা পারছেন না বলে আমাদের ধারণা। এ শ্রেণির মধ্যে এবার হজে যাওয়ার প্রবণতা কম। অর্থনৈতিক কারণে অনেকের বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা ছিল, সেটাও তো অনেকে তুলতে পারছেন না। সবকিছু মিলিয়ে এবার হজে যাওয়ার আগ্রহ কম বলে মনে করেন গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের মালিক ফরিদ। অপর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাধারণত প্রতিবছর সরকারি দলের মাঠ পর্যায়ে ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী বিত্তবান হওয়ায় হজে যায় দল বেঁধে। মন্ত্রী-এমপি চেয়ারম্যানরা তাদের কর্মীদের নিয়ে হজে যাওয়ার বাজেট করেন। এবার ওই গ্রুপটা দৌড়ের ওপর থাকায় নিবন্ধনের সংখ্যায় হতাশার চিত্র নেমে এসেছে। এ ছাড়া আরও একটা বড় কারণ হলো- বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে ঝামেলা বা আটকে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটনার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাধারণ ধর্মপ্রাণ ও বিত্তবান ব্যক্তিও হজের যাওয়ার ঝুঁকি নেননি। এসব কারণেই নিবন্ধনে সাড়া মিলছে না। এদিকে এজেন্সি মালিকদের অন্য গ্রুপ ‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকদের নেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, নতুন করে কোনো কৌশল অবলম্বন করা না হলে এবার হজযাত্রী ৫০ হাজারের বেশি হবে না বলে আমরা মনে করছি। মানুষ মনে করেই নিয়েছে যে হজ অসাধ্য বিষয়, সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। তবে ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন। মানুষ এখন ওমরা করে চলে আসে। ওমরা করলে যে তার ফরজ আদায় হচ্ছে না, সেটা প্রচারের বিষয় আছে। আমরা বৈষম্যবিরোধী এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম, দুই লাখ টাকার ফি করতে, যাতে প্রাথমিক নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়। এটা করলেও নিবন্ধনে কিছুটা গতি আসত। এ সব বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক গণমাধ্যমকে জানান, বর্ধিত সময়ে নিবন্ধন আরও বাড়বে। আসলে হজ হলো দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। এটি পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই। প্রাথমিক নিবন্ধনের জমা নেওয়া টাকা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে যে টাকা নেওয়া হচ্ছে, সেটা শুধু বাংলাদেশ প্রান্তের খরচের জন্য নেওয়া হচ্ছে না। বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচের জন্য সৌদি আরবে খরচের একটা অংশ তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হয়। ওই টাকাটা সময়মতো পাঠাতে না পারলে ওখানকার কাজগুলো পিছিয়ে যাবে। গত বছর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটা তহবিল ছিল, সেখান থেকে সেই টাকাটা পরিশোধ করে পরে সমন্বয় করা হয়েছিল। এবার সেই তহবিলটা নেই। তাই মিনিমাম এ টাকাটা প্রাথমিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে। গত বছর টাকা কম নেওয়ায় সমস্যা হয়েছিল বলে সহকর্মীরা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে আবার কথা বলব। অনেকে বিমান ভাড়া রিভিউ করার জন্য বলেছেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন।