নতুন পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পরিবর্তন
বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে নতুন বছরে, যা দেশের ইতিহাসের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের সৌজন্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে নতুন তথ্য পড়ানো হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকে। ‘প্রথম আলো’-র রিপোর্টে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিভিন্ন অংশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে বিশেষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকায় পরিবর্তন ও বিতর্কিত তথ্যের সংযোজন ঘটানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর নামের বাদ পড়া ও নতুন তথ্যের সংযোজন
এতদিন পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে লেখা ছিল যে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে নতুন পাঠ্যপুস্তকের
তথ্যমতে, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে এবং পরবর্তীতে ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পাশাপাশি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের গুরুত্বকেও নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে মেজর জিয়াউর রহমানের ছবি এবং তাঁদের ভূমিকা নিয়ে নতুন আঙ্গিকে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া, পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামে নতুন সংস্করণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি স্থান পেয়েছে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানির ছবি সহ। আগের সংস্করণে মুজিবুরের ছবি একমাত্র ছিল, কিন্তু এখন এটি পরিবর্তিত হয়ে প্রথমে ভাসানির ছবি এবং তার পাশে মুজিবুরের ছবি রাখা হয়েছে। অন্যান্য স্বাধীনতা
সংগ্রামীদের স্থান দেওয়া এ পরিবর্তনটি সেই সময়কার নেতাদের প্রতি অবহেলা দূর করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান ‘প্রথম আলো’কে বলেন, "জুলাই বিপ্লবের পর এই বিষয়ে গণদাবি তোলা হয়েছিল। ইতিহাসের বইয়ে না দিয়ে বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য নায়কদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অতিবন্দনা পরিহার করা হয়েছে, এবং পাঠ্যবইকে রাজনৈতিক দলের প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বন্ধ করা হয়েছে।" এদিকে, পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গও সংযোজন করা হয়েছে, যেখানে আন্দোলনে প্রাণ হারানো আবু সাঈদ এবং মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবি সহ তাঁদের অবদান তুলে ধরা
হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী মুগ্ধ এবং আবু সাঈদ আন্দোলনকালে পুলিশের রবার বুলেটে নিহত হন। ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এসব পরিবর্তন নতুন নয়, অতীতে বহুবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বিতর্ক এবং বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ এবং বিকৃত বলে অনেকে দাবি করেন। ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম অধিকারী হিসেবে শেখ মুজিবুরের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টাও এর আগে বহুবার হয়েছে, কিন্তু কোনোভাবেই তা সফল হয়নি। বিশ্বব্যাপী শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামে অপরিসীম অবদান রয়েছে এবং স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে তাঁর ভূমিকা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এই নতুন পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনগুলির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার সঙ্কুচিতি এবং অন্যান্য নেতাদের গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা নিয়ে
প্রশ্ন উঠেছে। পরিণতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব পাঠ্যবইয়ে এই ধরনের পরিবর্তন শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, বরং এটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেও প্রভাবিত করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সরকারী উদ্যোগে এ ধরনের পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় ইতিহাসের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে, তবে এতে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কও বাড়বে। বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বিকৃতির চেষ্টাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সরকার পক্ষের পক্ষ থেকে চলমান বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এসব পরিবর্তন কখনোই সহজভাবে মেনে নেওয়া হবে না, কারণ এটি বাংলাদেশের জাতিগত চেতনা এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতি মানুষের আবেগের সঙ্গে মিশে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিষয়ে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক নতুন
অধ্যায়ের সূচনা করছে। এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে, যা দেশের ঐতিহাসিক পরম্পরা এবং জাতীয় চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।
তথ্যমতে, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে এবং পরবর্তীতে ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পাশাপাশি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের গুরুত্বকেও নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে মেজর জিয়াউর রহমানের ছবি এবং তাঁদের ভূমিকা নিয়ে নতুন আঙ্গিকে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া, পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামে নতুন সংস্করণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি স্থান পেয়েছে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানির ছবি সহ। আগের সংস্করণে মুজিবুরের ছবি একমাত্র ছিল, কিন্তু এখন এটি পরিবর্তিত হয়ে প্রথমে ভাসানির ছবি এবং তার পাশে মুজিবুরের ছবি রাখা হয়েছে। অন্যান্য স্বাধীনতা
সংগ্রামীদের স্থান দেওয়া এ পরিবর্তনটি সেই সময়কার নেতাদের প্রতি অবহেলা দূর করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান ‘প্রথম আলো’কে বলেন, "জুলাই বিপ্লবের পর এই বিষয়ে গণদাবি তোলা হয়েছিল। ইতিহাসের বইয়ে না দিয়ে বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য নায়কদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অতিবন্দনা পরিহার করা হয়েছে, এবং পাঠ্যবইকে রাজনৈতিক দলের প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বন্ধ করা হয়েছে।" এদিকে, পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গও সংযোজন করা হয়েছে, যেখানে আন্দোলনে প্রাণ হারানো আবু সাঈদ এবং মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবি সহ তাঁদের অবদান তুলে ধরা
হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী মুগ্ধ এবং আবু সাঈদ আন্দোলনকালে পুলিশের রবার বুলেটে নিহত হন। ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এসব পরিবর্তন নতুন নয়, অতীতে বহুবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বিতর্ক এবং বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ এবং বিকৃত বলে অনেকে দাবি করেন। ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম অধিকারী হিসেবে শেখ মুজিবুরের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টাও এর আগে বহুবার হয়েছে, কিন্তু কোনোভাবেই তা সফল হয়নি। বিশ্বব্যাপী শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামে অপরিসীম অবদান রয়েছে এবং স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে তাঁর ভূমিকা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এই নতুন পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনগুলির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার সঙ্কুচিতি এবং অন্যান্য নেতাদের গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা নিয়ে
প্রশ্ন উঠেছে। পরিণতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব পাঠ্যবইয়ে এই ধরনের পরিবর্তন শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, বরং এটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেও প্রভাবিত করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সরকারী উদ্যোগে এ ধরনের পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় ইতিহাসের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে, তবে এতে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কও বাড়বে। বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বিকৃতির চেষ্টাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সরকার পক্ষের পক্ষ থেকে চলমান বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এসব পরিবর্তন কখনোই সহজভাবে মেনে নেওয়া হবে না, কারণ এটি বাংলাদেশের জাতিগত চেতনা এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতি মানুষের আবেগের সঙ্গে মিশে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিষয়ে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক নতুন
অধ্যায়ের সূচনা করছে। এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে, যা দেশের ঐতিহাসিক পরম্পরা এবং জাতীয় চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।