দল ও জোটের ঐক্যে জোর দেবে আ.লীগ – U.S. Bangla News




দল ও জোটের ঐক্যে জোর দেবে আ.লীগ

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ৩০ মে, ২০২৩ | ৬:০৬
দলের ভেতরের বিভেদ মেটানোর পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে নিবিড় ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছে আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতাসীনদের অন্দরমহলে শুরু হয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ। ‘ঘরের মধ্যে ঘর’ যারা তুলছেন-তাদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সঙ্গী শরিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ বিরোধী বলয়কে মোকাবিলায় এর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল দলটির জন্য এক

কথায় ‘ড্রেস রিহার্সেল’। বিএনপিবিহীন ভোটে অনেকটা হেসেখেলেই জয়ের সুফল ঘরে তোলার কথা তাদের। কিন্তু গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শাসক দলের হিসাব-নিকাশ এলোমেলো করে দিয়েছে। ২৫ মে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান পরাজিত হয়েছেন। একই দলের বহিষ্কৃত নেতা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের কাছে। বুকে নৌকার ব্যাজ পরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মূলত জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে কাজ করে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত করেন। আগামী ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এরপর ২১ জুন রাজশাহী এবং সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। খুলনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক

অনেকটাই নির্ভার। দলের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাকর্মীরাও ভোটের মাঠে তার সঙ্গে আছেন পুরোদমে। তবে বরিশালে আওয়ামী লীগের চিত্র ঠিক এর বিপরীত। এখানে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের বড় সমস্যা। দলটির একটি অংশ এখন পর্যন্ত নৌকা মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে মাঠে নামেননি। রাজশাহী এবং সিলেটেও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে নীরব ও নিষ্ক্রিয় দলটির একটি অংশ, যা ভাবিয়ে তুলেছে ক্ষমতাসীনদের। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু রোববার বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই জোটের শরিকরা

কাজ করবে। ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। নৌকার জয় নিশ্চিত করতে আমরা সর্বাত্মকভাবেই মাঠে আছি। আশা করছি আমরা জয়ী হয়েই ঘরে ফিরব। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম রোববার বলেন, গাজীপুরের বিষয়টা ভিন্ন। সেখানে একজন নারী প্রার্থী ছিলেন। বাকি চার সিটিতে এ রকম কোনো প্রার্থী নেই। তাই আমরা জয় নিয়ে চিন্তিত বা শঙ্কিত-কোনোটাই নই। বরিশালে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরিশালে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কারও কারও কিছুটা মনোকষ্ট আছে। দিনশেষে এটাও থাকবে না। আমরা আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল মিলে নৌকার সঙ্গে আছি। দিনশেষে নৌকাই জয়ী হবে। আশা করছি জাতীয়

সংসদ নির্বাচনেও আমরা একসঙ্গে ভোটের মাঠে থাকব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর থেকে শিক্ষা নিয়ে চার সিটিতেই দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে চান আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। এজন্য নির্বাচনের আগেই যে কোনো মূল্যে স্থানীয় পর্যায়ের বিরোধ মেটানোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে-এমন বার্তা চার সিটির নেতাকর্মীদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই বার্তা থাকবে। একই সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের নেতাকর্মীদেরও সিটির ভোটে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মান-অভিমান-টানাপোড়েন ভুলে ভোটের রাজনীতিতে তারা যাতে সরকার সমর্থক মেয়র প্রার্থীদের পাশে থাকেন-এজন্য চলছে নানা দেনদরবার। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনাও চলছে উভয়পক্ষের মধ্যে। ইতোমধ্যে নির্বাচনি বৈতরণী পার

হতে খুলনা এবং বরিশাল সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে শরিক দলের মাঠ পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। অনেকেই মনে করছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোটকে মাঠ পর্যায়ে শক্তিশালী করার এটি একটি প্রাথমিক উদ্যোগ। যা অব্যাহত থাকবে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনের ‘ফলাফল’ ঘরে তুলতে পুরোমাত্রায় মনোনিবেশ করেছেন। এর অংশ হিসাবে আওয়ামী লীগের একাধিক টিম এখন চার সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ দলটির একটি টিম এই মুহূর্তে বরিশালে আছেন। শিগগিরই এই টিমে সম্পৃক্ত হবেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারাও। আগামী ৩ জুন বরিশাল বিভাগ আওয়ামী

লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা নিয়ে আলোচনা হবে। একইভাবে খুলনা, রাজশাহী এবং সিলেটেও আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের নেতারা ভোটের মাঠে পুরোদমে থাকবেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি রোববার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয়ের একটা বড় কারণ তাদের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিরোধেও জর্জরিত দলটি। এর সঙ্গে রয়েছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও বিক্ষোভ। যার কারণে নির্বাচনে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার জন্ম হচ্ছে। পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামাল দিতে না পারলে ভবিষ্যতে

এই সংকট আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগকে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি যত্নবান এবং সতর্ক হতে হবে। বিতর্কিত কাউকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হবে না। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন, আগামীতে বিতর্কিত কাউকে দল থেকে মনোনয়ন দেবেন না। এর অর্থ দাঁড়ায় তার দলে বিতর্কিত লোকজন আছে। এই বিতর্কিতদের বিষয়ে সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বিতর্কিত ব্যক্তিরাই সমস্যা সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে তাদের দলের আন্তঃবিরোধ মেটানো ও স্তিমিত ১৪ দলীয় জোটকে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের

আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। তার ওপর টানা ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন কায়েমি স্বার্থবাদী, সুবিধাভোগী এবং সুযোগসন্ধানীরা দলটিতে জায়গা করে নিয়েছে। পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়েছে। তারাই এখন সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা হারিয়ে গেছে, না হয় পেছনের সারিতে অনেকটা না থাকার মতো করে পড়ে আছে। যার প্রভাব পড়ছে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, আওয়ামী লীগই এখন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগকে হারাতে আওয়ামী লীগই কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, সর্বত্র বিরাজনীতিকরণ করার কারণেই এসব ঘটছে। আওয়ামী লীগের ভেতরেই এখন কোনো রাজনীতি নেই। কে কত টাকা লুটপাট করবে, কে কীভাবে দ্রুত সম্পদশালী হবে, ধনী হবে, লুটপাট করবে, বিদেশে অর্থ পাচার করবে-এই প্রতিযোগিতা চলছে দলটির ভেতরে। দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগে যেমন এখন রাজনীতি নেই। ১৪ দলীয় জোটেও তেমনি এখন কোনো রাজনীতি নেই। সব চলছে প্রশাসন দিয়ে অথবা প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মূল সে াতধারায় ফিরে আসতে হবে। একইভাবে ১৪ দলীয় জোটকেও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় করতে হবে। রাজনীতি দিয়েই বিরুদ্ধ রাজনীতিকে মোকাবিলা করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করুন: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী তীব্র দাবদাহে গাজায় মহামারির শঙ্কা ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড বছরে একটি বিসিএস সম্পন্ন করার পরিকল্পনা পিএসসির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ট্রাম্পের বিচার নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে বিভক্তি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা না বলতে ইমরান খানকে নির্দেশ বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী মাদকপাচার ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা ৭৬ বছরের তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভাঙল যে কারণে চাকরি ছাড়লেন দুদকের ১৫ কর্মকর্তা ‘উপজেলা নির্বাচনও দেশের জনগণ বর্জন করবে’ টাঙ্গাইল শাড়ি ও পোড়াবাড়ির চমচমের জিআইপণ্য সনদ পেল চীন সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যা বললেন শি জিনপিং ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে অস্ত্র জমা দেবে হামাস ‘বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা, সমাধানে সরকারের সদিচ্ছা দেখাতে হবে’ দিল্লির দাসত্ব গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি: জয়নুল আবদিন আরও ৭৩ নেতাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আরও বাড়তে পারে গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর মৃত্যু