ক্যানসারের বড় উৎস সিগারেটের ফিল্টার – U.S. Bangla News




ক্যানসারের বড় উৎস সিগারেটের ফিল্টার

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ১ জুন, ২০২৩ | ৬:৪৯
ক্যানসার শুধু জীবন কাড়ে তা নয়। আর্থিকভাবেও একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়। ক্যানসার নানা কারণেই হয়। যার মধ্যে সিগারেট অন্যতম। তবে ক্যানসারের সবচেয়ে বড় উৎস সিগারেটের ফিল্টার। এছাড়া পরিবেশের জন্য বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়েও দাঁড়াচ্ছে এই ফিল্টার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিগারেট উৎপাদন-বিক্রি বন্ধ হওয়া উচিত। এটি শুধু ধূমপায়ীর জন্যই ক্ষতিকর নয়, তামাকজাত বর্জ্য মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ঝুঁকির। মঙ্গলবার (৩১ মে) ছিল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। প্রতিবছরই ক্যালেন্ডার ধরে দিনটি আসে, চলেও যায়। দুনিয়াজুড়ে এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে নানা আঙ্গিকে আলোচনা হয়। তারপর যেমন চলার, চলে তেমনই। চিকিৎসকরা বলছেন, সিগারেট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা আসছে। তবে এটি শুধু প্রকাশ্যে ধূমপান ও

ব্যবহারের ক্ষেত্রে। কিন্তু এর উৎপাদন এবং ধূমপানের মাত্রা বাড়ছেই। বিক্রি কিংবা প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তামাকজাত বর্জ্য-সিগারেটের ফিল্টার নিয়ে কোনো আইন নেই। পোড়া সিগারেটের ফিল্টারে প্রায় চার হাজার বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে। যার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০টি থেকে ক্যানসার হতে পারে। এতে থাকা ক্যাডমিয়াম, সিসা ইত্যাদিও স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। এ ফিল্টার ফেলা কিংবা ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোথাও কারও বিন্দুমাত্র সচেতনতাও নেই। ফেলনা ফিল্টার থেকে প্রাণী ও জলজ প্রাণীরও ক্ষতি হচ্ছে। ভারতের ‘ভয়েজ অব টোব্যাকো ভিকটিমস’ নামের সংগঠনের গবেষণা থেকে জানা যায়, শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বেই ব্যাপক আকার নিয়েছে এ সমস্যা। বিভিন্ন পর্যটন ক্ষেত্রগুলোতে নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। সংগঠনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য

সংস্থার (হু) প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানায়, ভারতের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নদীনালায় যে পরিমাণ বর্জ্য ফেলা হয় তার বড় অংশই তামাকজাত। মূলত পোড়া বিড়ি এবং সিগারেটের ফিল্টার। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পার্ক, জলাশয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সংস্থার আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, কাঁড়ি কাঁড়ি সিগারেটের ফিল্টার। পার্কের ঘাস ভেদ করে দেখা গেছে, অসংখ্য সিগারেটের ফিল্টার। ফিল্টারের ভেতর সাদা সিনথেটিক বিষাক্ত লিকুইডে হলুদ হয়ে আছে। সচেতন অধূমপায়ী ব্যক্তিদের অনেকেই বলছেন, তামাকজাত বর্জ্য সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব প্রস্তুতকারক সংস্থার ওপরই বর্তায়। সিটি করপোরেশন কিংবা দায়িত্বশীল সংস্থা বিভিন্ন পৌরসভা-রাজধানী থেকে বিভিন্ন বর্জ্য সরালেও, তামাকজাত বর্জ্য, ফিল্টার সরানো কিংবা ধ্বংসের কোনো উদ্যোগ নেই। রাজধানীতে কর্মরত প্রায় ১০ জন বর্জ্য অপসারণকর্মীর সঙ্গে কথা

বলে জানা যায়, সিগারেট বর্জ্য-ফিল্টার মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। ফলে তা কখনই পরিষ্কার কিংবা অপসারণ করা হয় না। বরং তারা সিগারেটের অবশিষ্টাংশগুলো ড্রেন কিংবা পানিতে ফেলে দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একটি সিগারেটে ৭০ রকমের ক্যানসারের জীবাণু রয়েছে। অনেকে বলে থাকেন, সিগারেটের ফিল্টার থাকায় ক্ষতি কম হয়। হতে পারে, কিন্তু এ ফিল্টারে থাকা হাজার হাজার ক্ষতিকারক জীবাণু প্রাণী-জলজ প্রাণীসহ মানবজাতির জন্য ভয়ংকর ক্ষতি বয়ে আনছে। সিগারেট হয়তো পুড়ে ধ্বংস হয়, কিন্তু ফিল্টার বছরের পর বছর পরিবেশ ও মানবজাতির ক্ষতি বয়ে আনছে। প্রকাশ্যে ধূমপান কঠোরভাবে বন্ধ করা হলে-রাস্তাঘাটে, পার্কে তামাকজাত বর্জ্য ফেলাও

অনেকটা কমে আসবে। ক্যানসার শুধু ব্যক্তির জীবনই কাড়ে না, ওই ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিকভাবে শূন্য করে দেয়। মনে রাখতে হবে, ফিল্টারের বিষাক্ত রাসায়নিক পরিবেশের পাশাপাশি মানবস্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকির। দু-চারটে নয়, ৭ হাজার ক্ষতিকর রাসায়ানিক পাওয়া গেছে সিগারেট-বিড়ির ধোঁয়ায়। এর মধ্যে ৭০টি কার্সিনোজেনিক, অর্থাৎ ক্যানসার ডেকে আনতে পারে। আর ফিল্টারের বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়াচ্ছে ক্যানসারের মতো ভয়ানক রোগ। যখন ফিল্টার পানিতে পড়ছে, মাছ সেই ফিল্টার খাচ্ছে। একাধিক মৎস্যজীবী জানান, ফিল্টার পানিতে ভাসে। যে কোনো মাছের কাছে এ ফিল্টার লোভনীয়। ভেসে থাকা ফিল্টার খুব সহজেই মাছ খাচ্ছে। সেই মাছ মানুষ খাচ্ছে। এভাবেই ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৯

কোটি ৫০ লাখ সিগারেট ও বিড়ির অবশিষ্টাংশ বা ফিল্টার ফেলা হচ্ছে। এগুলো মাটি ও পানিতে মিশে অণুজীবগুলো ধ্বংস হচ্ছে। এতে পানি ও মাটির ক্ষতি হচ্ছে। হু’র হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১২ কোটি ৩০ লাখ সিগারেট খাওয়া হয়। বিড়ি খাওয়া হয় প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ। অর্থাৎ ১৯ কোটির বেশি বিড়ি ও সিগারেটের ফিল্টার প্রকৃতিতে মিশছে। সিগারেটের ফিল্টার দেখতে কাগজের মতো মনে হলেও তা এক ধরনের প্লাস্টিক-সিনথেটিক। এটি পচনযোগ্য হলেও দীর্ঘ সময় লাগে। এদিকে সিগারেট কিংবা বিড়ির অবশিষ্টাংশ অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম মাধ্যম বলেও প্রমাণিত। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সূত্রে জানা যায়, জ্বলন্ত সিগারেটের ফিল্টার থেকে বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। সেবনকারীরা অধিকাংশ জ্বলন্ত

সিগারেটের ফিল্টার ইচ্ছেমতো যেখানে-সেখানে ফেলে দেন। জ্বলন্ত ফিল্টার ১ থেকে ২ মিনিট পর্যন্ত জ্বলে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, দেশে প্রতিদিন তামাকজনিত রোগে ৪৫০ জন মানুষ মারা যান। এছাড়াও বিশ্বজুড়ে এই রোগে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সঙ্গেই তামাক জড়িত। আর সিগারেট কিংবা বিড়ির অবশিষ্টাংশ পরিবেশ, প্রাণী ও জলজ প্রাণীর ক্ষেত্রেও মারাত্মক ক্ষতি-ঝুঁকির। আমাদের সমাজে ধূমপানে কিছু সচেতনতা থাকলেও ফিল্টার নিয়ে কোনো প্রচারণা নেই। ধ্বংসের ব্যবস্থা নেই। ফিল্টার কিংবা তামাক বর্জ্য ধ্বংস না করলে ঘুরেফিরে মানব স্বাস্থ্যেই

এর ভয়ানক ক্ষতির দিকগুলো আঁকড়ে ধরবে।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী মাদকপাচার ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা ৭৬ বছরের তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভাঙল যে কারণে চাকরি ছাড়লেন দুদকের ১৫ কর্মকর্তা ‘উপজেলা নির্বাচনও দেশের জনগণ বর্জন করবে’ টাঙ্গাইল শাড়ি ও পোড়াবাড়ির চমচমের জিআইপণ্য সনদ পেল চীন সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যা বললেন শি জিনপিং ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে অস্ত্র জমা দেবে হামাস ‘বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা, সমাধানে সরকারের সদিচ্ছা দেখাতে হবে’ দিল্লির দাসত্ব গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি: জয়নুল আবদিন আরও ৭৩ নেতাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আরও বাড়তে পারে গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর মৃত্যু কেন্দ্রে ঢুকতে পারেনি ২০ বিসিএস পরীক্ষার্থী, কাঁদলেন হাউমাউ করে ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে অস্ত্র জমা দেবে হামাস তৃতীয় বিয়ে কবে করছেন আমির খান? কারাগারে কষ্টের বর্ণনা দিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বুবলীর দাদি চরিত্রে দিলারা জামান আ.লীগের ৩০ এপ্রিলের সভায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল কেন বেছে নিল না তুরস্ককে?