কমছে বাজেটের আকার – ইউ এস বাংলা নিউজ




কমছে বাজেটের আকার

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ | ৮:৪৯ 5 ভিউ
অর্থনৈতিক সংকটের মুখে দেশে প্রথমবারের মতো চলতি বাজেটের আকারের চেয়ে কম দেখিয়ে আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। সম্ভাব্য নতুন বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আর সেটি বাস্তবায়ন করতে দেশি ও বিদেশি মিলে দু লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ করতে হবে। যার মধ্যে বিদেশি ঋণ প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (এক লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা)। যদিও জাতীয় সংসদে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আইএমএফ অন্তর্বর্তী সরকারকে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় আনার পরামর্শ দিয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় বাজেটের আকার অহেতুক বড় না করে যৌক্তিক

পর্যায়ে কমিয়ে আনার প্রেসক্রিপশন দিয়েছে। এরপরেই আগামী অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা আগের বছরের তুলনায় কমিয়ে আনা হয়। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের মতে, বড় বাজেট দিলে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি রাজস্ব আদায়ের হার খুব বেশি ভালো নয়। এছাড়া ব্যয় কমাতে কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি অব্যাহত আছে। ফলে আগামীতে ব্যয় না বাড়িয়ে ছোট বাজেট দেওয়া হবে। মঙ্গলবার ‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখার অনুমোদন দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈঠকে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। বেলা ৩টায় জুমে বৈঠক শুরু হয়ে চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। দুটি

বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব অংশ নিয়েছেন। ‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল অর্থনীতি খাতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠক। প্রতি তিন মাস অন্তর দেশের অর্থনীতি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয় ওই বৈঠকে। পাশাপাশি বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়। নতুন বাজেট প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ বলেছিলেন, বাজেটের লক্ষ্য হবে সাধারণ মানুষের জন্য এবং ব্যবসাবান্ধব। আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে একটি সমতাভিত্তিক এবং কল্যাণমুখী বাজেট দেওয়া। দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও স্বল্পমেয়াদি দিকনির্দেশনা থাকবে সেখানে। জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ জানান,

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নেওয়া হয়েছে। এর সাপোর্ট হিসাবে সংকোচনমূলক বাজেট হওয়া উচিত। আগের মতো বড় ও রাজনৈতিক প্রকল্প নেওয়া হবে না। আমাদের অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। বাজেট করলে ঠিকমতো খরচ করতে হবে। সেটিও করা যাচ্ছে না। এছাড়া অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অপ্রয়োজনীয় অনেক ব্যয় বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বাজেটের ছোট আকার দীর্ঘমেয়াদি করা ঠিক হবে না। দীর্ঘমেয়াদি হলে প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থা কমবে, দারিদ্র্য কমবে না। এমনিতে দেশের বাজেটের আকার জিডিপির অনুপাতে কম। জিডিপির ১৫ শতাংশ ধরে বাজেট ঘোষণা করা হলেও বাস্তবায়ন হয় মাত্র ১২ শতাংশ। সে দিক থেকে স্বল্পমেয়াদে এ সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। আগামী

বাজেটের সম্ভাব্য আকার : মোট ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, আয় ৫ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে এনবিআর কর ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং নন এনবিআর কর ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত কর ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিগত সময়ে একটি কাল্পনিক সংখ্যা হিসাবে বাজেট দেখেছি যা কোনো দিন শতভাগ বাস্তবায়ন হয় না। এখন কল্পনা কিঞ্চিৎ কমেছে এরপরও এটি কল্পনায় রয়েছে। বর্তমান সার্বিক

অর্থনীতি ও সরকারের আর্থিক অবস্থায় সেখানে বড় বাজেটের সুযোগ নেই। আগামী বাজেটের রূপরেখায় ঘাটতি চলতি বাজেটের চেয়ে বেশি। সে হিসাবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আমার কাছে মনে হয় বড়। ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে যে ঋণ নেওয়া হবে সেক্ষেত্রে বেসরকারি ঋণ মিলবে কম। তাহলে আগের সরকারের মতোই এটি উচ্চাভিলাষী বাজেট। এখন বাজেটে কাঠামোগত সংস্কার অগ্রাধিকার দিতে হবে। সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জিডিপির হার বাড়ানো বা অর্জনকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের মতে, বিগত সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বেশি হলেও এর সুফল

সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌঁছেনি। এখন প্রবৃদ্ধি বেশি বা কম সেদিকে নজর নয়, কিভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাময়িকভাবে এটি মেনে নিলেও কত দিন জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে কম প্রাধান্য দেওয়া হবে বা এভাবে চলবে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। সংস্থাটির মতে, দীর্ঘদিন প্রবৃদ্ধি অর্জনকে গুরুত্ব না দিলে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। যা অর্থনীতিতে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে। অর্থ বিভাগের বাজেট নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বড় আকারের বাজেট ঘোষণা করলেও সংশোধিত বাজেটে সেটি সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনা হয়। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর বাজেটের প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১২ শতাংশ ধরেই প্রাক্কলন করা হয়। অর্থাৎ চলতি বছরের বাজেটের চেয়ে আগামী বাজেটের আকার ১০ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এবার সেটি ৮ শতাংশের নিচে বাড়বে। এর কারণ হচ্ছে, বড় বাজেট দিতে হলে রাজস্ব আদায় সে রকম থাকতে হবে। রাজস্ব আদায় কম, আমদানি ও রপ্তানি কমছে। এসব বিষয় বিবেচনায় বড় বাজেট দেওয়া সম্ভব নয়। সূত্রমতে, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক উভয় দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে আগামী বাজেটের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে সর্বশেষ ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পণ্যে শুল্ক অরোপ এবং পরে স্থগিত এ নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। অভ্যন্তরীণভাবে বৈরী রাজনৈতিক অবস্থায় রাজস্ব আহরণ কম, বিনিয়োগ না হওয়া, ডলার সংকট, ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক ঋণের অত্যধিক সুদহার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। আগামী বছরও এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে-এমন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্র মতে বৈঠকে দেশের খাদ্য উৎপাদন, শিল্পের উৎপাদন, ঋণের সুদ বৃদ্ধি বিশ্লেষণ করে বলা হয়, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। যদিও মার্চে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে জুনে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশের ঘরে আসবে অর্থ বিভাগের এমন পূর্বাভাস অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আইএমএফ মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়ে বলেছে এ বছর গড় মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশ হবে। সূত্রে জানায়, বৈঠকে বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বৈশ্বিক অর্থনীতি ২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, যা ২০২৪ সালের মতোই থাকবে। এই ধীরগতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রবৃদ্ধি হ্রাস, দুর্বল বিনিয়োগ, উচ্চ ঋণের পরিমাণ এবং জনসংখ্যাগত চাপের মতো কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলো দায়ী। প্রবৃদ্ধিকে খুব বেশিপ্রাধান্য না দেওয়া হলেও অর্থ বিভাগ যে প্রাক্কলন করেছে সেখানে আগামী অর্থ বছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। উচ্চঋণ, দুর্বল বিনিয়োগ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এই প্রবৃদ্ধিকে সীমিত করতে পারে। এদিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসা বাণিজ্য ধীরগতির কারণে রাজস্ব আহরণ কমছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে এনবিআরকে। জুলাই-মার্চ (প্রথম ৯ মাসে) এনবিআর প্রায় ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বাকি তিন মাসে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের প্রয়োজন হবে। ফলে রাজস্ব আদায় নিয়ে বড় ধরনের চাপের মুখে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
টিকিটে দুর্নীতি বিসিবিতে দুদকের অভিযান আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ইরানকে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হবে: মার্কিন বিশেষ দূত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বাজেট ৫০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা ট্রাম্পের কমছে বাজেটের আকার আতঙ্কে চলন্ত ট্রেন থেকে দম্পতির লাফ, কোলে থাকা শিশুর মৃত্যু এলডিপিতে যোগ দিচ্ছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী কেনাকাটার কুতুবরা রেলে এখনো সদর্পে স্বজনের মনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক আয়োজনে মন ছুঁয়ে যায় দর্শকদের কৃষি গুচ্ছের ফল প্রকাশ জিলাপি খেতে চাওয়া সেই ওসি প্রত্যাহার গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, বাবা-মা ও ছেলে দগ্ধ এজলাসেই পুলিশকে মারধর, বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আটক কুয়েট ভিসির পদত্যাগে এক দফা দাবি ঘোষণা শিক্ষার্থীদের প্রতি লিটার বোতল সয়াবিন ১৮৯ ও খোলা সয়াবিন ১৬৯ টাকা নির্ধারণ জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা… দৌলতপুরে অস্ত্রসহ ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার ভূট্টা ক্ষেতে পড়েছিল শিশুর লাশ, পরিবারের দাবি হত্যা আল-আকসা ভেঙে ‘থার্ড টেম্পল’ নির্মাণে ‘লাল গরু’ জবাই শুরু পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকা আসছেন বুধবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে